শিশির ভট্টাচার্য
সুশোষিত জাতি মাত্রেই স্বশোষিত। ২০০ বছর ধরে ইংরেজ এবং চব্বিশ বছর ধরে পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে যে পরিমাণ শোষণ করেছে, বাঙালি নিজেকে নিজে তার চেয়ে কম শোষণ করেনি গত ৫০ বছরে।
বাঙালি জাতি যে কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি, দুর্নীতি তার একমাত্র কারণ না হলেও অন্যতম কারণ তো বটেই। অর্থের জোগান নয়, আমি মনে করি, যেকোনো অর্থনীতির প্রধান সমস্যা সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, যার অন্যতম লক্ষণ বেহিসাব ও দুর্নীতি। হিসাবের গরুকে বাঘে খায় না। বারো ভূতে বা বারো বাঘে বাংলাদেশের বেহিসাবের গরু খেয়ে নিচ্ছে।
চালুনি জিনিসটা কাজের অবশ্যই, কিন্তু তেল বা জল জমিয়ে রাখার জন্য নয়। দুর্নীতিপ্রবণ সমাজও চালুনির মতো। উন্নয়নের সুবিধাটুকু এখানে অনর্থক অপচয় ও নষ্ট হয়।
দুই রকমের চোর ছিল প্রাচীন ভারতবর্ষে: প্রকাশ চোর ও অপ্রকাশ চোর। চাণক্য খান বিশেক রকমের অপ্রকাশ চোরের উল্লেখ করেছেন অর্থশাস্ত্রে। প্রকাশ্যে চুরি-ছিনতাই যারা করত, তাদের বলা হতো প্রকাশ চোর। আমলা-পুলিশের মতো গোপনে যারা ঘুষ খেত, তাদের বলা হতো অপ্রকাশ চোর। কোন চুরি সমাজের বেশি ক্ষতি করে? প্রকাশ্য চুরি, নাকি অপ্রকাশ্য চুরি?
‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’, ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়’, ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?’, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ যুগান্তরের ইত্যাদি বাংলা প্রবাদ প্রমাণ করে যে বাঙালি সমাজে অতীতেও দুর্নীতি ছিল। ব্রিটিশরাজ যখন ভারতবর্ষে প্রথম দারোগা নিয়োগ করে, দারোগার নাকি বেতন ছিল না। একে মেরে, ওকে ধরে দারোগাকে নিজের আয়ের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হতো। দারোগার এতটাই প্রতাপ ছিল যে গ্রামের এক অশিক্ষিতা, সরল বৃদ্ধা একবার কোর্টে সুবিচার পেয়ে এক জজকে নাকি আশীর্বাদ করে বলেছিল: ‘বাবা, প্রমোশন পেয়ে তুমি দারোগা হও!’ আধুনিক ভারতবর্ষে দুর্নীতির শুরুই সম্ভবত বাঙালিকে দিয়ে। প্রথম ক্যালকাটা করপোরেশনে নাকি এত দুর্নীতি হয়েছিল যে লোকে সেটাকে ‘ক্যালকাটা চোরপোরেশন’ বলত।
গুরু, লঘু ও মাঝারি—দুর্নীতি তিন প্রকার। প্রশান্ত হালদার কয়েক হাজার কোটি টাকা মেরে ফেরার হয়েছেন। এটা গুরু দুর্নীতির উদাহরণ। পিয়ন আপনার হাতে চিঠি দিয়ে বকশিশের জন্য হাত কচলাচ্ছেন। এটা লঘু দুর্নীতির নমুনা। ধরা যাক, ঢাকা নিউমার্কেটে ফুটপাতের অতি দুস্থ এক চা-দোকানিকে মাসে কমপক্ষে ছয় হাজার টাকা ঘুষ বা তোলা গুনতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষক দল এবং যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ধামাধরা ছাত্রসংগঠনকে দিতে হয় এই টাকা। এটা মাঝারি দুর্নীতির উদাহরণ।
গুরু দুর্নীতিবাজেরা যেকোনো সরকারের কাছের লোক হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে হাতেনাতে ধরা পড়লেও বেশির ভাগ সময় তারা অধরা থেকে যায়। এদের কারণে এবং এদের প্রতি সরকারের সমর্থন কিংবা কৌশলগত উদাসীনতার কারণে লঘু দুর্নীতি সমাজে ছড়িয়ে যায়। বড়কে দেখেই তো ছোটরা শেখে।
গুরু দুর্নীতি সমাজের গুরুতর ক্ষতি করে সন্দেহ নেই, এই উভয় প্রকার দুর্নীতিই দমন করার বিকল্প নেই সেটাও সত্য, কিন্তু আমার মতে, লঘু দুর্নীতি গুরুতর বিপদের কারণ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় লঘু ও মাঝারি দুর্নীতি, ভেতরে ভেতরে উইপোকার মতো খেয়ে ফোকলা করে দেয় সমাজকাঠামোকে।
উপরিকাঠামো ফিটফাট আছে বলে মনে হলেও ভেতর থেকে সমাজ এতটাই ধসে যায় যে সামান্য ধাক্কাতেই ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সভ্য দেশে সমাজের উচ্চপর্যায়ে গুরু দুর্নীতি আছে, জাপান ও কোরিয়ার মতো দেশেও আছে। কিন্তু এসব দেশে সমাজের সর্বস্তরে লঘু ও মাঝারি দুর্নীতি দুরারোগ্য কর্কট রোগের মতো ছড়িয়ে যায়নি, যেমনটা হয়েছে বাংলাদেশে, গত ১০০ বছরে বা তারও আগে থেকে।
যেহেতু আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্য নেই, সেহেতু বাংলাদেশের সর্বস্তরে দুর্নীতির বীজতলা তৈরি হয়েই আছে। কাজি-কায়স্থ-কোতোয়ালের মতো অতি ‘ঘুষপ্রবণ’ পেশাগুলোতে ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের বিবরণ দেখলেই এই সত্য উঠে আসবে। দেখা যাবে, মাসিক বেতন ৫০ হাজার, কিন্তু মাসিক খরচ দেড়-দুই লাখ। স্ত্রী-পুত্র, পিতা-মাতা কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই যে তারা হারামের টাকায় শরীর-মন পুষ্ট করছে। ‘সুই বলে চালুনিরে, তোর পিছনে ফুটা!’ বাংলাদেশে এক ঘুষখোর আরেক ঘুষখোর সম্পর্কে বলে: ‘আমি তো সৎ থেকে কিছুই করতে পারলাম না এই জীবনে। ওমুকের তো চোখের লজ্জাটুকুও নাই’!
শূন্য দুর্নীতি আকাশকুসুম কল্পনা। লক্ষ রাখতে হবে, দুর্নীতি যেন সীমা ছাড়িয়ে না যায়। দুর্নীতি দমনের অন্যতম উপায় সব গরুকে হিসাবের আওতায় আনা। হিসাব থাকলে চুরি হলেও জানা যাবে, ঠিক কত টাকা চুরি হয়েছে বা হচ্ছে।
কার কত আয়, সরকারকে কম–বেশি জানতে হবে। নাগরিকমাত্রেরই একটি টিন নম্বর থাকবে, থাকতে হবে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর, তিনি রাস্তার অতি নগণ্য ফুচকা বিক্রেতাই হোন না কেন, কমপক্ষে একটা ট্রেড লাইসেন্স থাকতেই হবে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রকার পণ্য কেনাবেচা নিষিদ্ধ। ট্রেড লাইসেন্সের ফি ছাড়াও ব্যবসায়ীকে প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে সরকারকে।
প্রশ্ন হতে পারে, এই টাকা অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোথায় পাবেন? যে পরিমাণ টাকা তোলাবাজ বা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে কিংবা প্রতি মাসে (একেক এলাকায় একেক রকম তোলা সংস্কৃতি বাংলাদেশে!), সেই পরিমাণ বা তার চেয়ে কম পরিমাণ টাকা ফি হিসেবে দিতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।
এই ব্যবস্থায় গরিবের টাকা সরকারের তহবিলে আসবে, ভুঁইফোড় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে যাবে না। বছরে যে ব্যবসায়ী ৭২ হাজার টাকা তোলা বা ঘুষ দিতে সক্ষম, তিনি বছরে কমবেশি ১২ হাজার টাকা আয়কর দিতে আপত্তি করবেন না নিশ্চয়ই। ব্যবসায়ীরা সাধারণত বলেন যে ঘুষ–তোলা বন্ধ হলে আইনসংগতভাবে সরকারকে টাকা দিতে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। টাকাটা এখনো তাঁরা দিচ্ছেন, বহুগুণ বেশিই দিচ্ছেন, কিন্তু সরকারের খাতায় টাকাটা আসছে না, বারো ভূতে লুটে খাচ্ছে।
চোরা কি ধর্মের কাহিনি শুনবে? প্রশ্ন করতে পারেন কেউ। আমার উত্তর: ব্যর্থতাটা চোরের নয় নয়, ধর্মের।
দুর্নীতিকে সামাজিকভাবে ঘৃণার সংস্কৃতি চালু করার চেষ্টা করতে হবে। দুর্নীতিকে উপজীব্য করে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন-নাটক-সিনেমা নিয়মিত প্রচার করা যেতে পারে। প্রতিটি ব্যাংকের দেয়ালে ঋণখেলাপিদের ছবি ও নামসহ তালিকা টাঙিয়ে রাখলে কেমন হয়?
চোরাকে শোনানো হোক রাষ্ট্রধর্মের কাহিনি। দুর্নীতি দমনে অন্যতম হাতিয়ার হতে পারেন ধর্মগুরুরা। সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সমাজ ও ধর্মের উপযুক্ত ‘হেফাজত’ করতে পারেন তাঁরা।
তবে ‘সরিষায় ভূত’ যুগান্তরের বাঙালি প্রবাদ এবং ধর্মগুরুরা সবাই যে ‘মামুন’ (আরবি শব্দ। অর্থ ‘বিশ্বস্ত’) নন, তাও আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি বটে।
দুর্নীতি দূর করতে হলে দুর্নীতিকে অপ্রয়োজনীয়, অগ্রহণীয় করে তুলতে হবে। বাংলাদেশের বেতনকাঠামো কেন অন্ততপক্ষে পাকিস্তান বা ভারতের সমান হবে না? এমন বেতন দিতে হবে, যাতে উপরি আয় ছাড়াই নাগরিকেরা সাদামাটাভাবে খেয়ে–পরে চলতে পারে। দ্রব্যমূল্যের ওপরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে বৈকি। ‘বাড়িভাড়া, রিকশাভাড়াসহ সব জিনিসপত্রের দামের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে! তা যদি না করতে পারে, তো সরকার ব্যর্থ! দাম এমন উল্টাপাল্টা বাড়লে আমরা তো বাঁচবার পারি না।
গরিবের কথা সরকার না ভাবলে আর কে ভাববে?’ কথাটা বলেছিলেন এক অশিক্ষিত রিকশাচালক। হয়তো একটু বেশিই দাবি করছেন তিনি সরকারের কাছে, কিন্তু কথাটার মধ্যে সত্য যে একেবারে নেই, তা তো নয়। ‘সরকারের কাজই হইল গিয়া (প্রয়োজনে) নিয়ন্ত্রণ করা। (দরকারমতো) নিয়ন্ত্রণই যদি না করতে পারল, তবে সরকার থাইকা কী লাভ?’ নিউমার্কেটে আমাকে নামিয়ে দিয়ে রিকশাওয়ালা বলেন।
বেতন বাড়লে অর্থনীতির ক্ষতি যত, লাভ তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। কম বেতন শ্রমিককে অতি দুর্বল করে, মালিককে অতি সবল করে, আখেরে পুরো জাতিকে অতি দুর্বল করে দেয়। বেতন বেশি হলে বাজারচক্রে বেশি টাকা প্রবেশ করবে এবং বেশি মূলধন সৃষ্টি হবে। বেতন বেশি হলে বেতনভোগীর আয়করও বেশি হবে। সৎভাবে উপার্জিত অর্থ কোনো প্রকার মনোবেদনা ছাড়াই খরচ করবে মানুষ খাদ্য, বিনোদন, সন্তানের শিক্ষা ও ভ্রমণে। এতে সমাজে বিচিত্র সেবা ও পেশার সৃষ্টি হবে, বিদ্যমান পেশা ও সেবার সমৃদ্ধি হবে। সব মিলিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সামগ্রিকভাবে জাতির মান বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশে যে লেবেঞ্চুস খাওয়ার বেতন দেয় সরকার, তা সৎ মানুষকে স্বস্তিতে থাকতে দেয় না এবং অসৎকে অধিকতর অসৎ হতে প্রণোদনা দেয়। উপযুক্ত বেতন দিলে দুর্নীতিবাজের কাছে জবাবদিহি দাবি করতে পারত সমাজ। লেবেঞ্চুসের বেতন দিলে দুর্নীতির ব্যাপারে প্রশ্ন করার মতো নৈতিক ভিত্তিটাই সমাজের থাকে না।
কী বললেন, টাকা নেই? ‘মানি ইজ নো প্রবলেম! বাট আই উইল মেক পলিটিকস ডিফিকাল্ট!’ বাংলাদেশের এক পাতাবাহার রাষ্ট্রপ্রধান বলেছিলেন বটে এমন কথা। হলমার্ক না কোন এক কোম্পানি কয়েক বছর আগে যখন কয়েক হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছিল, তখন ‘এটা কোনো টাকাই না!’ বলেছিলেন বাংলাদেশের বয়োবৃদ্ধ, ঝানু অর্থমন্ত্রী।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নাকি উপচে পড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের নারকীয় গরমে মরুভূমিতে মাথার ঘাম শাবলে ফেলে এই রিজার্ভ বাড়াচ্ছে লাখ লাখ আম বাঙালি। প্রবাদ আছে: ধন গোবরের মতো, এক জায়গায় জমিয়ে রাখলে দুর্গন্ধ বের হয়, খেতে ছড়িয়ে দিলে ফসল ফলে। রিজার্ভে টাকা যদি থেকেই থাকে, তবে সতর্কতা, বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনার সঙ্গে সেই সম্পদ দেশের মানুষের নগদ অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রয়োজনমতো ব্যক্তির আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে। সঠিক রাজনীতি মূলত রাষ্ট্রের সম্পদের সুষম বণ্টন ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশে সম্পদ আছে, কিন্তু সেই সম্পদের সুষম বণ্টন হচ্ছে না এবং সে কারণে টেকসই উন্নয়নও থেমে আছে।
অস্থাবর সম্পদ খামাখা জমিয়ে রাখলে আখেরে বিপদেরও সম্ভাবনা থাকে। ‘নেপোয় মারে দই!’ ফিলিপাইনের কোনো হ্যাকার নেপো কখন যে দেশি নেপোদের সহায়তায় রিজার্ভের দই আবারও ‘মেরে দেবে না’, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? তার চেয়ে বরং আমরা খেয়ে মরি না কেন, বিশেষ করে এই করোনার আকালে, যখন কিনা কার কখন শ্বাস উঠবে (আক্ষরিক অর্থে) তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।
দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে সামাজিক মিডিয়ার বিকল্প নেই। দুর্নীতির যাবতীয় খবর সামাজিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে দেওয়া হোক এবং সরকার সামাজিক মিডিয়াসহ সব মিডিয়ায় কড়া নজর রাখুক। প্রকৃত অপরাধীকে আটক করা হোক এবং নিরপরাধকে স্বস্তি ও শান্তির নিশ্চয়তা দেওয়া হোক। বন্ধনে নয়, মুক্তিতেই স্বস্তি ব্যক্তির, সমাজের এবং রাষ্ট্রের—এই সত্য আমাদের সরকারগুলো কবে বুঝবে? তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সামাজিক মিডিয়া অধিদপ্তর গঠনের প্রয়োজনীয়তা এখনই অনুভূত হচ্ছে।
আর্থরাজনীতিতে অনধিকারী আমার কথাটি আপাতত ফুরোল। অধিকারী সরকার সদিচ্ছা থাকলে একে একে নটে গাছগুলো মুড়োতে শুরু করুক। পথ আটকে থাকা সমস্যা পর্বতপ্রমাণ, কিন্তু কোদাল দিয়ে একটানা কোপাতে শুরু করলে যেকোনো পর্বতই একসময় পথ করে দিতে বাধ্য হয়—এমন গল্প নামমাত্র মূল্যে কেনা মাও সেতুংয়ের লাল বইয়ে কিশোর বয়সে পড়েছিলাম বটে। খাওবাদী এই যুগে এসব তামাদি হয়ে যাওয়া মাওবাদী আলাপের কি আর কোনো মূল্য আছে? সুহৃদ কুদরাত–এ–খুদা যেমন বলে থাকেন, উলুবনে মুক্তাই হয়তো ছড়ালাম আবার, বরাবরের মতো।
শিশির ভট্টাচার্য
অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সুশোষিত জাতি মাত্রেই স্বশোষিত। ২০০ বছর ধরে ইংরেজ এবং চব্বিশ বছর ধরে পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে যে পরিমাণ শোষণ করেছে, বাঙালি নিজেকে নিজে তার চেয়ে কম শোষণ করেনি গত ৫০ বছরে।
বাঙালি জাতি যে কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি, দুর্নীতি তার একমাত্র কারণ না হলেও অন্যতম কারণ তো বটেই। অর্থের জোগান নয়, আমি মনে করি, যেকোনো অর্থনীতির প্রধান সমস্যা সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, যার অন্যতম লক্ষণ বেহিসাব ও দুর্নীতি। হিসাবের গরুকে বাঘে খায় না। বারো ভূতে বা বারো বাঘে বাংলাদেশের বেহিসাবের গরু খেয়ে নিচ্ছে।
চালুনি জিনিসটা কাজের অবশ্যই, কিন্তু তেল বা জল জমিয়ে রাখার জন্য নয়। দুর্নীতিপ্রবণ সমাজও চালুনির মতো। উন্নয়নের সুবিধাটুকু এখানে অনর্থক অপচয় ও নষ্ট হয়।
দুই রকমের চোর ছিল প্রাচীন ভারতবর্ষে: প্রকাশ চোর ও অপ্রকাশ চোর। চাণক্য খান বিশেক রকমের অপ্রকাশ চোরের উল্লেখ করেছেন অর্থশাস্ত্রে। প্রকাশ্যে চুরি-ছিনতাই যারা করত, তাদের বলা হতো প্রকাশ চোর। আমলা-পুলিশের মতো গোপনে যারা ঘুষ খেত, তাদের বলা হতো অপ্রকাশ চোর। কোন চুরি সমাজের বেশি ক্ষতি করে? প্রকাশ্য চুরি, নাকি অপ্রকাশ্য চুরি?
‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’, ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়’, ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?’, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ যুগান্তরের ইত্যাদি বাংলা প্রবাদ প্রমাণ করে যে বাঙালি সমাজে অতীতেও দুর্নীতি ছিল। ব্রিটিশরাজ যখন ভারতবর্ষে প্রথম দারোগা নিয়োগ করে, দারোগার নাকি বেতন ছিল না। একে মেরে, ওকে ধরে দারোগাকে নিজের আয়ের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হতো। দারোগার এতটাই প্রতাপ ছিল যে গ্রামের এক অশিক্ষিতা, সরল বৃদ্ধা একবার কোর্টে সুবিচার পেয়ে এক জজকে নাকি আশীর্বাদ করে বলেছিল: ‘বাবা, প্রমোশন পেয়ে তুমি দারোগা হও!’ আধুনিক ভারতবর্ষে দুর্নীতির শুরুই সম্ভবত বাঙালিকে দিয়ে। প্রথম ক্যালকাটা করপোরেশনে নাকি এত দুর্নীতি হয়েছিল যে লোকে সেটাকে ‘ক্যালকাটা চোরপোরেশন’ বলত।
গুরু, লঘু ও মাঝারি—দুর্নীতি তিন প্রকার। প্রশান্ত হালদার কয়েক হাজার কোটি টাকা মেরে ফেরার হয়েছেন। এটা গুরু দুর্নীতির উদাহরণ। পিয়ন আপনার হাতে চিঠি দিয়ে বকশিশের জন্য হাত কচলাচ্ছেন। এটা লঘু দুর্নীতির নমুনা। ধরা যাক, ঢাকা নিউমার্কেটে ফুটপাতের অতি দুস্থ এক চা-দোকানিকে মাসে কমপক্ষে ছয় হাজার টাকা ঘুষ বা তোলা গুনতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষক দল এবং যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ধামাধরা ছাত্রসংগঠনকে দিতে হয় এই টাকা। এটা মাঝারি দুর্নীতির উদাহরণ।
গুরু দুর্নীতিবাজেরা যেকোনো সরকারের কাছের লোক হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে হাতেনাতে ধরা পড়লেও বেশির ভাগ সময় তারা অধরা থেকে যায়। এদের কারণে এবং এদের প্রতি সরকারের সমর্থন কিংবা কৌশলগত উদাসীনতার কারণে লঘু দুর্নীতি সমাজে ছড়িয়ে যায়। বড়কে দেখেই তো ছোটরা শেখে।
গুরু দুর্নীতি সমাজের গুরুতর ক্ষতি করে সন্দেহ নেই, এই উভয় প্রকার দুর্নীতিই দমন করার বিকল্প নেই সেটাও সত্য, কিন্তু আমার মতে, লঘু দুর্নীতি গুরুতর বিপদের কারণ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় লঘু ও মাঝারি দুর্নীতি, ভেতরে ভেতরে উইপোকার মতো খেয়ে ফোকলা করে দেয় সমাজকাঠামোকে।
উপরিকাঠামো ফিটফাট আছে বলে মনে হলেও ভেতর থেকে সমাজ এতটাই ধসে যায় যে সামান্য ধাক্কাতেই ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সভ্য দেশে সমাজের উচ্চপর্যায়ে গুরু দুর্নীতি আছে, জাপান ও কোরিয়ার মতো দেশেও আছে। কিন্তু এসব দেশে সমাজের সর্বস্তরে লঘু ও মাঝারি দুর্নীতি দুরারোগ্য কর্কট রোগের মতো ছড়িয়ে যায়নি, যেমনটা হয়েছে বাংলাদেশে, গত ১০০ বছরে বা তারও আগে থেকে।
যেহেতু আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্য নেই, সেহেতু বাংলাদেশের সর্বস্তরে দুর্নীতির বীজতলা তৈরি হয়েই আছে। কাজি-কায়স্থ-কোতোয়ালের মতো অতি ‘ঘুষপ্রবণ’ পেশাগুলোতে ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের বিবরণ দেখলেই এই সত্য উঠে আসবে। দেখা যাবে, মাসিক বেতন ৫০ হাজার, কিন্তু মাসিক খরচ দেড়-দুই লাখ। স্ত্রী-পুত্র, পিতা-মাতা কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই যে তারা হারামের টাকায় শরীর-মন পুষ্ট করছে। ‘সুই বলে চালুনিরে, তোর পিছনে ফুটা!’ বাংলাদেশে এক ঘুষখোর আরেক ঘুষখোর সম্পর্কে বলে: ‘আমি তো সৎ থেকে কিছুই করতে পারলাম না এই জীবনে। ওমুকের তো চোখের লজ্জাটুকুও নাই’!
শূন্য দুর্নীতি আকাশকুসুম কল্পনা। লক্ষ রাখতে হবে, দুর্নীতি যেন সীমা ছাড়িয়ে না যায়। দুর্নীতি দমনের অন্যতম উপায় সব গরুকে হিসাবের আওতায় আনা। হিসাব থাকলে চুরি হলেও জানা যাবে, ঠিক কত টাকা চুরি হয়েছে বা হচ্ছে।
কার কত আয়, সরকারকে কম–বেশি জানতে হবে। নাগরিকমাত্রেরই একটি টিন নম্বর থাকবে, থাকতে হবে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর, তিনি রাস্তার অতি নগণ্য ফুচকা বিক্রেতাই হোন না কেন, কমপক্ষে একটা ট্রেড লাইসেন্স থাকতেই হবে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রকার পণ্য কেনাবেচা নিষিদ্ধ। ট্রেড লাইসেন্সের ফি ছাড়াও ব্যবসায়ীকে প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে সরকারকে।
প্রশ্ন হতে পারে, এই টাকা অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোথায় পাবেন? যে পরিমাণ টাকা তোলাবাজ বা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে কিংবা প্রতি মাসে (একেক এলাকায় একেক রকম তোলা সংস্কৃতি বাংলাদেশে!), সেই পরিমাণ বা তার চেয়ে কম পরিমাণ টাকা ফি হিসেবে দিতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।
এই ব্যবস্থায় গরিবের টাকা সরকারের তহবিলে আসবে, ভুঁইফোড় মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে যাবে না। বছরে যে ব্যবসায়ী ৭২ হাজার টাকা তোলা বা ঘুষ দিতে সক্ষম, তিনি বছরে কমবেশি ১২ হাজার টাকা আয়কর দিতে আপত্তি করবেন না নিশ্চয়ই। ব্যবসায়ীরা সাধারণত বলেন যে ঘুষ–তোলা বন্ধ হলে আইনসংগতভাবে সরকারকে টাকা দিতে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। টাকাটা এখনো তাঁরা দিচ্ছেন, বহুগুণ বেশিই দিচ্ছেন, কিন্তু সরকারের খাতায় টাকাটা আসছে না, বারো ভূতে লুটে খাচ্ছে।
চোরা কি ধর্মের কাহিনি শুনবে? প্রশ্ন করতে পারেন কেউ। আমার উত্তর: ব্যর্থতাটা চোরের নয় নয়, ধর্মের।
দুর্নীতিকে সামাজিকভাবে ঘৃণার সংস্কৃতি চালু করার চেষ্টা করতে হবে। দুর্নীতিকে উপজীব্য করে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন-নাটক-সিনেমা নিয়মিত প্রচার করা যেতে পারে। প্রতিটি ব্যাংকের দেয়ালে ঋণখেলাপিদের ছবি ও নামসহ তালিকা টাঙিয়ে রাখলে কেমন হয়?
চোরাকে শোনানো হোক রাষ্ট্রধর্মের কাহিনি। দুর্নীতি দমনে অন্যতম হাতিয়ার হতে পারেন ধর্মগুরুরা। সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সমাজ ও ধর্মের উপযুক্ত ‘হেফাজত’ করতে পারেন তাঁরা।
তবে ‘সরিষায় ভূত’ যুগান্তরের বাঙালি প্রবাদ এবং ধর্মগুরুরা সবাই যে ‘মামুন’ (আরবি শব্দ। অর্থ ‘বিশ্বস্ত’) নন, তাও আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি বটে।
দুর্নীতি দূর করতে হলে দুর্নীতিকে অপ্রয়োজনীয়, অগ্রহণীয় করে তুলতে হবে। বাংলাদেশের বেতনকাঠামো কেন অন্ততপক্ষে পাকিস্তান বা ভারতের সমান হবে না? এমন বেতন দিতে হবে, যাতে উপরি আয় ছাড়াই নাগরিকেরা সাদামাটাভাবে খেয়ে–পরে চলতে পারে। দ্রব্যমূল্যের ওপরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে বৈকি। ‘বাড়িভাড়া, রিকশাভাড়াসহ সব জিনিসপত্রের দামের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে! তা যদি না করতে পারে, তো সরকার ব্যর্থ! দাম এমন উল্টাপাল্টা বাড়লে আমরা তো বাঁচবার পারি না।
গরিবের কথা সরকার না ভাবলে আর কে ভাববে?’ কথাটা বলেছিলেন এক অশিক্ষিত রিকশাচালক। হয়তো একটু বেশিই দাবি করছেন তিনি সরকারের কাছে, কিন্তু কথাটার মধ্যে সত্য যে একেবারে নেই, তা তো নয়। ‘সরকারের কাজই হইল গিয়া (প্রয়োজনে) নিয়ন্ত্রণ করা। (দরকারমতো) নিয়ন্ত্রণই যদি না করতে পারল, তবে সরকার থাইকা কী লাভ?’ নিউমার্কেটে আমাকে নামিয়ে দিয়ে রিকশাওয়ালা বলেন।
বেতন বাড়লে অর্থনীতির ক্ষতি যত, লাভ তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। কম বেতন শ্রমিককে অতি দুর্বল করে, মালিককে অতি সবল করে, আখেরে পুরো জাতিকে অতি দুর্বল করে দেয়। বেতন বেশি হলে বাজারচক্রে বেশি টাকা প্রবেশ করবে এবং বেশি মূলধন সৃষ্টি হবে। বেতন বেশি হলে বেতনভোগীর আয়করও বেশি হবে। সৎভাবে উপার্জিত অর্থ কোনো প্রকার মনোবেদনা ছাড়াই খরচ করবে মানুষ খাদ্য, বিনোদন, সন্তানের শিক্ষা ও ভ্রমণে। এতে সমাজে বিচিত্র সেবা ও পেশার সৃষ্টি হবে, বিদ্যমান পেশা ও সেবার সমৃদ্ধি হবে। সব মিলিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সামগ্রিকভাবে জাতির মান বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশে যে লেবেঞ্চুস খাওয়ার বেতন দেয় সরকার, তা সৎ মানুষকে স্বস্তিতে থাকতে দেয় না এবং অসৎকে অধিকতর অসৎ হতে প্রণোদনা দেয়। উপযুক্ত বেতন দিলে দুর্নীতিবাজের কাছে জবাবদিহি দাবি করতে পারত সমাজ। লেবেঞ্চুসের বেতন দিলে দুর্নীতির ব্যাপারে প্রশ্ন করার মতো নৈতিক ভিত্তিটাই সমাজের থাকে না।
কী বললেন, টাকা নেই? ‘মানি ইজ নো প্রবলেম! বাট আই উইল মেক পলিটিকস ডিফিকাল্ট!’ বাংলাদেশের এক পাতাবাহার রাষ্ট্রপ্রধান বলেছিলেন বটে এমন কথা। হলমার্ক না কোন এক কোম্পানি কয়েক বছর আগে যখন কয়েক হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছিল, তখন ‘এটা কোনো টাকাই না!’ বলেছিলেন বাংলাদেশের বয়োবৃদ্ধ, ঝানু অর্থমন্ত্রী।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নাকি উপচে পড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের নারকীয় গরমে মরুভূমিতে মাথার ঘাম শাবলে ফেলে এই রিজার্ভ বাড়াচ্ছে লাখ লাখ আম বাঙালি। প্রবাদ আছে: ধন গোবরের মতো, এক জায়গায় জমিয়ে রাখলে দুর্গন্ধ বের হয়, খেতে ছড়িয়ে দিলে ফসল ফলে। রিজার্ভে টাকা যদি থেকেই থাকে, তবে সতর্কতা, বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনার সঙ্গে সেই সম্পদ দেশের মানুষের নগদ অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রয়োজনমতো ব্যক্তির আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে। সঠিক রাজনীতি মূলত রাষ্ট্রের সম্পদের সুষম বণ্টন ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশে সম্পদ আছে, কিন্তু সেই সম্পদের সুষম বণ্টন হচ্ছে না এবং সে কারণে টেকসই উন্নয়নও থেমে আছে।
অস্থাবর সম্পদ খামাখা জমিয়ে রাখলে আখেরে বিপদেরও সম্ভাবনা থাকে। ‘নেপোয় মারে দই!’ ফিলিপাইনের কোনো হ্যাকার নেপো কখন যে দেশি নেপোদের সহায়তায় রিজার্ভের দই আবারও ‘মেরে দেবে না’, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? তার চেয়ে বরং আমরা খেয়ে মরি না কেন, বিশেষ করে এই করোনার আকালে, যখন কিনা কার কখন শ্বাস উঠবে (আক্ষরিক অর্থে) তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।
দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে সামাজিক মিডিয়ার বিকল্প নেই। দুর্নীতির যাবতীয় খবর সামাজিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে দেওয়া হোক এবং সরকার সামাজিক মিডিয়াসহ সব মিডিয়ায় কড়া নজর রাখুক। প্রকৃত অপরাধীকে আটক করা হোক এবং নিরপরাধকে স্বস্তি ও শান্তির নিশ্চয়তা দেওয়া হোক। বন্ধনে নয়, মুক্তিতেই স্বস্তি ব্যক্তির, সমাজের এবং রাষ্ট্রের—এই সত্য আমাদের সরকারগুলো কবে বুঝবে? তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সামাজিক মিডিয়া অধিদপ্তর গঠনের প্রয়োজনীয়তা এখনই অনুভূত হচ্ছে।
আর্থরাজনীতিতে অনধিকারী আমার কথাটি আপাতত ফুরোল। অধিকারী সরকার সদিচ্ছা থাকলে একে একে নটে গাছগুলো মুড়োতে শুরু করুক। পথ আটকে থাকা সমস্যা পর্বতপ্রমাণ, কিন্তু কোদাল দিয়ে একটানা কোপাতে শুরু করলে যেকোনো পর্বতই একসময় পথ করে দিতে বাধ্য হয়—এমন গল্প নামমাত্র মূল্যে কেনা মাও সেতুংয়ের লাল বইয়ে কিশোর বয়সে পড়েছিলাম বটে। খাওবাদী এই যুগে এসব তামাদি হয়ে যাওয়া মাওবাদী আলাপের কি আর কোনো মূল্য আছে? সুহৃদ কুদরাত–এ–খুদা যেমন বলে থাকেন, উলুবনে মুক্তাই হয়তো ছড়ালাম আবার, বরাবরের মতো।
শিশির ভট্টাচার্য
অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪