আবুল ইসলাম শিকদার
১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর ঢাকা জেলার একটি মহকুমা ছিল মানিকগঞ্জ। ওই বছরেই তৎকালীন সরকার একযোগে সব মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করে। মানিকগঞ্জ মহকুমাটিও সেই ধারাবাহিকতায় জেলায় পরিণত হয়। পুরোনো মহকুমার অবকাঠামোর মধ্যেই শুরু হয় নতুন জেলা প্রশাসনের কর্মযজ্ঞ। শুধু কতিপয় প্রশাসকের পদ–পদবি পরিবর্তন ছাড়া দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন ও পরিবর্তন জনসমক্ষে দৃশ্যমান হয়নি।
মানিকগঞ্জ জেলার উন্নয়ন–ভাবনা নিয়ে জেলাবাসীর সাধারণ উদ্বেগ এবং অসন্তোষ ছিল দীর্ঘদিন পর্যন্ত। ঢাকার নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও জেলার রাস্তাঘাট, অফিস–আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবার মান ও অবকাঠামো–সবই ছিল অনেকটা স্থবির প্রকৃতির। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি কেন যেন একটু বিরাগভাজনই ছিল।
মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাসহ মোট উপজেলা সাতটি। এগুলোর সাবেক নাম ছিল থানা বা সার্কেল। সেখানে সিভিল প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন আলাদাই ছিল। ১৯৮৪ সালে এগুলোকে প্রথমে আপগ্রেড থানা এবং পরে উপজেলায় পরিণত করা হয়। এসব উপজেলার অফিস–আদালত এবং যাতায়াতব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। বিশেষ করে জেলার হরিরামপুর, দৌলতপুর, সিঙ্গাইর ও সাটুরিয়া উপজেলার রাস্তাঘাট ছিল খুবই খারাপ। পাকা সড়ক তখন গ্রামাঞ্চলে ছিল না বললেই চলে। কাঁচা রাস্তার পাশাপাশি ছিল কিছু ইট বিছানো রাস্তা। আশির দশক পর্যন্ত হরিরামপুর ও দৌলতপুরে ঘোড়ার গাড়ির দাপট ভালোই ছিল। নদী ও খালগুলোতে ব্রিজ–কালভার্ট ছিল না বললেই চলে। ফলে জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলাগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা ছিল নানা সমস্যায় জর্জরিত।
মানিকগঞ্জ শহরটি ছিল মূলত এক গলির শহর। খালপাড় থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত তেমন কোনো স্থাপনা ছিল না। কোর্ট বিল্ডিং থেকে বাজার পর্যন্ত ছিল শহরের বিস্তৃতি। হেঁটেও মাত্র ১০-১৫ মিনিটেই শহর অতিক্রম করা যেত। এখনকার শহীদ রফিক সড়কটি ছিল শহরের একমাত্র সড়ক। এই সড়কের তেমন কোনো নামকরণও করা হয়নি। কোর্ট বিল্ডিংসহ সারা শহরে দু–চারটি পাকা দালান ছিল। আর সবই ছিল মরচে ধরা টিনের ঘর।
মূলত নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এসে মানিকগঞ্জের চেহারা বদলাতে থাকে। উপজেলাগুলোর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও কোর্ট–কাচারি স্থাপনের মধ্য দিয়ে উপজেলাগুলো প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে ওঠে এবং মানুষের কোলাহলে গ্রামীণ জনপদ মুখরিত হয়ে ওঠে। ১৯৯০ সালের পর থেকে নির্বাচিত সরকারগুলোর সময় এই উন্নয়নের গতি আরও বৃদ্ধি পায়। এসব উন্নয়নকর্ম কতটুকু সাধারণ মানুষের উপকারে এসেছে, সে প্রশ্ন বিবেচনায় রেখেও সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন এবং পরিবর্তনপ্রক্রিয়াকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
মানিকগঞ্জ শহরে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন কোর্ট বিল্ডিং, ডায়াবেটিস হাসপাতাল, জেলা পরিষদ ভবন, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, পাবলিক লাইব্রেরি. ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস, নার্সিং ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, মডেল মসজিদসহ আরও অনেক সরকারি অফিস–আদালতের নিজস্ব ভবন। এ ছাড়া ডিসি, এসপির বাসভবন নতুন করে নির্মিত হয়। এসব সরকারি স্থাপনার পাশাপাশি শহরে দুই শতাধিক বহুতল বেসরকারি ভবন নির্মিত হয়েছে। শহরের গঙ্গধরপট্টি, পোড়রা, দাশড়া, বেউথা, সেওতা ও বান্দুটিয়ার আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক নান্দনিক বাড়িঘর। প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নতুন ভবন শহরের সৌন্দর্যকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। সরকারি স্কুল–কলেজগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাপক অনুদান পেয়েছে এবং তা অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে ২০ হাজার ছুঁই ছুঁই। এই কলেজকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা বিপণিবিতান এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি কতিপয় ডেভেলপার কোম্পানি শহর উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অনেক বহুতল ভবন তাদের হাতে নির্মিত হচ্ছে। শহরের চারপাশে শুরু হয়েছে বড় বড় প্রস্থের সড়ক নির্মাণের কাজ। সম্প্রতি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বেউথার সংযোগ সড়কটি অত্যন্ত নজরকাড়া সৌন্দর্য নিয়ে তৈরি হচ্ছে। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে শহরের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
অতিসম্প্রতি ঢাকা-মানিকগঞ্জের বিকল্প সড়ক তৈরি হয়েছে সিঙ্গাইরের বুকের ওপর দিয়ে। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে সড়কটি সিঙ্গাইর হয়ে বেউথা ঘাটে এসে মিশেছে। সড়কটি খুবই দৃষ্টিনন্দন হয়েছে এবং দ্রুতই একটি আঞ্চলিক ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়েছে।
কালীগঙ্গা মানিকগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরস্থ প্রধান নদী। এ নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে অনেক দীর্ঘ সেতু। তরা সেতু ছাড়াও বেউথা, বালিরটেক এবং জামসা ঘাটে নির্মিত সেতু দক্ষিণ–পশ্চিম মানিকগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এ ছাড়া ঘিওরে পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ওপর একাধিক সেতু, তিল্লী সেতু ইত্যাদি যাতায়াতব্যবস্থায় মাইলফলক রচনা হয়েছে। ঘিওর-দৌলতপুর ও সাটুরিয়া হয়ে টাঙ্গাইল জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সোনালি দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। দক্ষিণ মানিকগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
উপজেলার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটগুলো জালের মতো বিছিয়ে আছে জেলার গ্রামীণ জনপদ। এসব রাস্তায় যানবাহনেরও কমতি নেই।নতুন করে প্রতিটি উপজেলায় স্কুল-কলেজ সরকারীকরণ হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নও হয়েছে ব্যাপকভাবে।
দর্শনীয় স্থানসমূহের উন্নয়ন আশানুরূপ না হলেও সম্প্রতি সাটুরিয়ার বালিয়াটি জমিদারবাড়ি, শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদারবাড়ি, যমুনা নদীর ভাঙন রোধে জাফরগঞ্জের ব্লক নির্মিত বাঁধ, হরিরামপুর উপজেলার পদ্মাপারের ছোটখাটো হোটেল, মোটেল, পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের পদ্মা রিভারভিউ মানুষের চিত্তবিনোদনের জায়গায় পরিণত হয়েছে।
যাদের চোখের সামনে দিয়ে এসব উন্নয়ন ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তাদের কাছে বিষয়টি তেমন চমকপ্রদ না হলেও ২০ বছর আগের কোনো প্রবাসী যদি এখন মানিকগঞ্জের মাটিতে পা রাখেন, তবে তাঁকে অনেকটা অবাকই হতে হবে। বলাবাহুল্য, তিনি তাঁর নিজের বাড়িটি খুঁজে পেতেও ভুল করতে পারেন।
এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, সুধীজন, জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আরও সচেতন এবং কর্মতৎপর হবেন, সেটিই জেলাবাসীর প্রত্যাশা।
আবুল ইসলাম শিকদার, অধ্যাপক
১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর ঢাকা জেলার একটি মহকুমা ছিল মানিকগঞ্জ। ওই বছরেই তৎকালীন সরকার একযোগে সব মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করে। মানিকগঞ্জ মহকুমাটিও সেই ধারাবাহিকতায় জেলায় পরিণত হয়। পুরোনো মহকুমার অবকাঠামোর মধ্যেই শুরু হয় নতুন জেলা প্রশাসনের কর্মযজ্ঞ। শুধু কতিপয় প্রশাসকের পদ–পদবি পরিবর্তন ছাড়া দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন ও পরিবর্তন জনসমক্ষে দৃশ্যমান হয়নি।
মানিকগঞ্জ জেলার উন্নয়ন–ভাবনা নিয়ে জেলাবাসীর সাধারণ উদ্বেগ এবং অসন্তোষ ছিল দীর্ঘদিন পর্যন্ত। ঢাকার নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও জেলার রাস্তাঘাট, অফিস–আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবার মান ও অবকাঠামো–সবই ছিল অনেকটা স্থবির প্রকৃতির। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি কেন যেন একটু বিরাগভাজনই ছিল।
মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাসহ মোট উপজেলা সাতটি। এগুলোর সাবেক নাম ছিল থানা বা সার্কেল। সেখানে সিভিল প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন আলাদাই ছিল। ১৯৮৪ সালে এগুলোকে প্রথমে আপগ্রেড থানা এবং পরে উপজেলায় পরিণত করা হয়। এসব উপজেলার অফিস–আদালত এবং যাতায়াতব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। বিশেষ করে জেলার হরিরামপুর, দৌলতপুর, সিঙ্গাইর ও সাটুরিয়া উপজেলার রাস্তাঘাট ছিল খুবই খারাপ। পাকা সড়ক তখন গ্রামাঞ্চলে ছিল না বললেই চলে। কাঁচা রাস্তার পাশাপাশি ছিল কিছু ইট বিছানো রাস্তা। আশির দশক পর্যন্ত হরিরামপুর ও দৌলতপুরে ঘোড়ার গাড়ির দাপট ভালোই ছিল। নদী ও খালগুলোতে ব্রিজ–কালভার্ট ছিল না বললেই চলে। ফলে জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলাগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা ছিল নানা সমস্যায় জর্জরিত।
মানিকগঞ্জ শহরটি ছিল মূলত এক গলির শহর। খালপাড় থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত তেমন কোনো স্থাপনা ছিল না। কোর্ট বিল্ডিং থেকে বাজার পর্যন্ত ছিল শহরের বিস্তৃতি। হেঁটেও মাত্র ১০-১৫ মিনিটেই শহর অতিক্রম করা যেত। এখনকার শহীদ রফিক সড়কটি ছিল শহরের একমাত্র সড়ক। এই সড়কের তেমন কোনো নামকরণও করা হয়নি। কোর্ট বিল্ডিংসহ সারা শহরে দু–চারটি পাকা দালান ছিল। আর সবই ছিল মরচে ধরা টিনের ঘর।
মূলত নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এসে মানিকগঞ্জের চেহারা বদলাতে থাকে। উপজেলাগুলোর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও কোর্ট–কাচারি স্থাপনের মধ্য দিয়ে উপজেলাগুলো প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে ওঠে এবং মানুষের কোলাহলে গ্রামীণ জনপদ মুখরিত হয়ে ওঠে। ১৯৯০ সালের পর থেকে নির্বাচিত সরকারগুলোর সময় এই উন্নয়নের গতি আরও বৃদ্ধি পায়। এসব উন্নয়নকর্ম কতটুকু সাধারণ মানুষের উপকারে এসেছে, সে প্রশ্ন বিবেচনায় রেখেও সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন এবং পরিবর্তনপ্রক্রিয়াকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
মানিকগঞ্জ শহরে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন কোর্ট বিল্ডিং, ডায়াবেটিস হাসপাতাল, জেলা পরিষদ ভবন, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, পাবলিক লাইব্রেরি. ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস, নার্সিং ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, মডেল মসজিদসহ আরও অনেক সরকারি অফিস–আদালতের নিজস্ব ভবন। এ ছাড়া ডিসি, এসপির বাসভবন নতুন করে নির্মিত হয়। এসব সরকারি স্থাপনার পাশাপাশি শহরে দুই শতাধিক বহুতল বেসরকারি ভবন নির্মিত হয়েছে। শহরের গঙ্গধরপট্টি, পোড়রা, দাশড়া, বেউথা, সেওতা ও বান্দুটিয়ার আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক নান্দনিক বাড়িঘর। প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নতুন ভবন শহরের সৌন্দর্যকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। সরকারি স্কুল–কলেজগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাপক অনুদান পেয়েছে এবং তা অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে ২০ হাজার ছুঁই ছুঁই। এই কলেজকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা বিপণিবিতান এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি কতিপয় ডেভেলপার কোম্পানি শহর উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অনেক বহুতল ভবন তাদের হাতে নির্মিত হচ্ছে। শহরের চারপাশে শুরু হয়েছে বড় বড় প্রস্থের সড়ক নির্মাণের কাজ। সম্প্রতি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বেউথার সংযোগ সড়কটি অত্যন্ত নজরকাড়া সৌন্দর্য নিয়ে তৈরি হচ্ছে। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে শহরের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
অতিসম্প্রতি ঢাকা-মানিকগঞ্জের বিকল্প সড়ক তৈরি হয়েছে সিঙ্গাইরের বুকের ওপর দিয়ে। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে সড়কটি সিঙ্গাইর হয়ে বেউথা ঘাটে এসে মিশেছে। সড়কটি খুবই দৃষ্টিনন্দন হয়েছে এবং দ্রুতই একটি আঞ্চলিক ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়েছে।
কালীগঙ্গা মানিকগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরস্থ প্রধান নদী। এ নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে অনেক দীর্ঘ সেতু। তরা সেতু ছাড়াও বেউথা, বালিরটেক এবং জামসা ঘাটে নির্মিত সেতু দক্ষিণ–পশ্চিম মানিকগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এ ছাড়া ঘিওরে পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ওপর একাধিক সেতু, তিল্লী সেতু ইত্যাদি যাতায়াতব্যবস্থায় মাইলফলক রচনা হয়েছে। ঘিওর-দৌলতপুর ও সাটুরিয়া হয়ে টাঙ্গাইল জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সোনালি দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। দক্ষিণ মানিকগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
উপজেলার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটগুলো জালের মতো বিছিয়ে আছে জেলার গ্রামীণ জনপদ। এসব রাস্তায় যানবাহনেরও কমতি নেই।নতুন করে প্রতিটি উপজেলায় স্কুল-কলেজ সরকারীকরণ হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নও হয়েছে ব্যাপকভাবে।
দর্শনীয় স্থানসমূহের উন্নয়ন আশানুরূপ না হলেও সম্প্রতি সাটুরিয়ার বালিয়াটি জমিদারবাড়ি, শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদারবাড়ি, যমুনা নদীর ভাঙন রোধে জাফরগঞ্জের ব্লক নির্মিত বাঁধ, হরিরামপুর উপজেলার পদ্মাপারের ছোটখাটো হোটেল, মোটেল, পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের পদ্মা রিভারভিউ মানুষের চিত্তবিনোদনের জায়গায় পরিণত হয়েছে।
যাদের চোখের সামনে দিয়ে এসব উন্নয়ন ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তাদের কাছে বিষয়টি তেমন চমকপ্রদ না হলেও ২০ বছর আগের কোনো প্রবাসী যদি এখন মানিকগঞ্জের মাটিতে পা রাখেন, তবে তাঁকে অনেকটা অবাকই হতে হবে। বলাবাহুল্য, তিনি তাঁর নিজের বাড়িটি খুঁজে পেতেও ভুল করতে পারেন।
এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, সুধীজন, জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আরও সচেতন এবং কর্মতৎপর হবেন, সেটিই জেলাবাসীর প্রত্যাশা।
আবুল ইসলাম শিকদার, অধ্যাপক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪