মুজিব রহমান
সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চাষাবাদ, পুকুর খনন এবং অন্যান্য খননের ফলে বর্তমানেও বিক্রমপুর থেকে বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্নসহ ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের মাধ্যমে বিক্রমপুর অঞ্চলে সমৃদ্ধ মানববসতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯১২-১৩ সালে শ্রীযুক্ত পরেশনাথের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং ১৯১৬-১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধীনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এই অঞ্চলে সীমিত উৎখনন করেন। কালের প্রবাহে মাটি চাপা পড়ে থাকা সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস পুনরুদ্ধারে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন অতীত সমৃদ্ধির সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান খুবই ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং যৌথ সহায়তানির্ভর কর্মযজ্ঞ। বিক্রমপুর অঞ্চলে নতুন করে ২০১০ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’- এর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাকেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের গবেষক দল, জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং অন্যান্য গবেষকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু হয়। রামপাল, বজ্রযোগিনী, বল্লালবাড়িসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থানের নাম থেকে বিক্রমপুরের ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে বিক্রমপুর অঞ্চলে বৌদ্ধবিহার থাকার তথ্য পাওয়া যায়। অতীশ দীপঙ্করের সময় (৯৮২-১০৫৪ খ্রি.) বিক্রমপুরের বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রে নেপাল, তিব্বত, চীন, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ও ১০০ শিক্ষক ছিলেন। এই অঞ্চলে চন্দ্র, বর্মণ ও সেন রাজবংশের আধিপত্য বিস্তারের সুস্পষ্ট লিপিপ্রমাণ রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সুলতানি ও মোগল আমল এবং ব্রিটিশ সময়পর্ব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এখানে সমৃদ্ধ মানব বসতি দেখা যায়। প্রাচীন অবশেষগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে হারিয়ে গেলেও সুলতানি (বাবা আদমের মসজিদ), মোগল (মীরকাদিম পুল, ইদ্রাকপুর দুর্গ) ও ঔপনিবেশিক সময়ের বেশ কিছু স্থাপনা এখনো টিকে আছে। বিক্রমপুর অঞ্চল থেকে বেশ কিছু বৌদ্ধ ও হিন্দু ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে।
শুরুতে অনুসন্ধানকৃত প্রত্নস্থানসমূহের মধ্যে সুখবাসপুর, রঘুরামপুর, বজ্রযোগিনী, গুহপাড়া, খানকা প্রভৃতি গ্রামে ৯টি উৎখনন খাদে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করা হয়। প্রথম দিকেই উৎখননে স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্ন হিসেবে ইট, ইটের দেয়াল, পাথরের স্লাব প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ, মৃৎপাত্রের টুকরোসহ বিভিন্ন আকৃতির মৃৎপাত্র, পাথরের নিদর্শনসমূহের মধ্যে পাথরের স্লাব, ভাঙা টুকরোসহ নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন টুকরো, কিছু ধাতব নিদর্শন, উদ্ভিজ ও প্রাণিজ অবশেষ প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়। প্রতিটি উৎখনন খাদে ইটের পুরু স্তরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বসতির ধারাবাহিক অনুক্রম দেখা গেছে। বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে এ ধরনের ইটের বিস্তৃতি উন্নত, বিকশিত ও বিস্তৃত নগরের ইঙ্গিতবাহী ছিল। উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত এসব স্থাপত্যিক নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ইট-নির্মিত দেয়াল ও পার্শ্ব দেয়ালের সংযুক্তির চিহ্ন একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপত্যের অস্তিত্বের ইঙ্গিত বহন করে। উৎখননে আস্তে আস্তে স্থাপত্যটির প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়। উৎখননকৃত বিভিন্ন প্রত্নপীঠ থেকে বিভিন্ন পরিমাপের ইট আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত ইটের পরিমাপ দেখে আপেক্ষিক তারিখ নির্ণয় পদ্ধতি অনুসারে প্রাথমিকভাবে কোনো কোনো প্রত্নপীঠে প্রাক-মধ্যযুগের বসতির চিহ্ন হিসেবে ওই সময়েরই ধারণা করা হয়েছিল। উৎখননে প্রাপ্ত জৈব অবশেষসমূহের তেজস্ক্রিয় কার্বন-১৪ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্নস্থানসমূহের পরম কালানুক্রম জানা সম্ভব হয়েছে। এগুলো দশম ও একাদশ শতকের (৭৮০ থেকে ১২২৩ খ্রিষ্টাব্দ) নিদর্শন।
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে একটি বৌদ্ধবিহার। এখানে অনেকগুলো ভিক্ষুকক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। বিক্রমপুর অঞ্চলে একটি বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত স্মরণীয় ঘটনা। এই অমূল্য আবিষ্কার বাংলাদেশকে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা করে দিচ্ছে। কারণ বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর কীর্তিমান সন্তান ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ জগতে দ্বিতীয় বুদ্ধ এবং পরম পূজনীয়। কিন্তু তাঁর বাল্যজীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। প্রশ্ন জাগে, বাল্যজীবনে তিনি কোথায় বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা-দীক্ষা নেন? বৌদ্ধ ধর্মে তাঁর পাণ্ডিত্যলাভ কি হঠাৎ হয়েছে? জগদ্বিখ্যাত বিক্রমশীলা এবং সোমপুর মহাবিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগলাভ তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি এ কথা সহজে অনুমেয়। বৌদ্ধ ধর্মের অবক্ষয় রোধে তিব্বতের রাজা একাধিকবার দূত পাঠান অতীশের কাছে তিব্বতে গমনের জন্য। এই আমন্ত্রণে তাঁর পাণ্ডিত্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে। অতীশ দীপঙ্কর শুধু স্বনামধন্য পণ্ডিতই ছিলেন না, তদানীন্তন রাজনীতিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আমাদের ধারণা, প্রাচীন বিক্রমপুরের রঘুরামপুর গ্রামে সদ্য আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহারের সঙ্গে অতীশ দীপঙ্করের একটি গভীর সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক জরিপেই মনে হয়েছিল বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী, রামপাল, সুখবাসপুর, মীরকাদিম, পঞ্চসার, নগর কসবা, সিপাহীপাড়া, দেওসার, সোনারং টঙ্গিবাড়ী প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে প্রাচীন বিক্রমপুর নগর সুবিস্তৃত ছিল। অসংখ্য গ্রাম থেকে মূর্তি, ভাস্কর্য, শিলালিপি পাওয়া গেছে এবং ইট–পাথর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের বিশাল আকৃতির (প্রায় ৬ একর) দেলে (দেউলে) ২০১৩-১৪ সাল থেকে ধারাবাহিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে আসে একের পর এক স্থাপত্যিক নিদর্শন—বৌদ্ধ মন্দির, মণ্ডপ, অষ্টকোনাকৃতির পঞ্চ স্তূপ, দেয়াল, ইট নির্মিত নালা প্রভৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে পাথরনির্মিত নিদর্শনের পাশাপাশি ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতির পাথরের ছিলকা, নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের অসংখ্য ভেঙে যাওয়া টুকরো থেকে পাথরের শিল্প নির্মাণকেন্দ্র হিসেবেও এখানকার কিছু কিছু স্থানকে চিহ্নিত করা যায়। উৎখননে প্রাচীন শুষ্ক নদী খাতের ওপর মানব বসতির চিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ থেকে প্রাচীন নদী খাত ও সমৃদ্ধ মানব বসতির ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। উৎখননের পাশাপাশি অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে বিকশিত নগরের ইঙ্গিতবাহী স্থাপত্যিক নিদর্শন, প্রস্তর নিদর্শন, মাটি ও পাথরের তৈজসপত্র আবিষ্কার চলমান। আশা করা যায়, প্রাপ্ত এসব সূত্র ধরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অঞ্চলে জরিপ ও উৎখনন পরিচালনার মাধ্যমে প্রাচীন বিক্রমপুর অঞ্চলের সমৃদ্ধ অতীত খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে আবিষ্কৃত হয় পিরামিড আকৃতির স্তূপ। এটি বৌদ্ধধর্মীয় সমাধি। এর উচ্চতা সাড়ে ৪৩ মিটার, যা ভারতের সাঁচি, ভারহুত, অমরাবতীর সমগোত্রীয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খননকাজে ৫ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা উন্মোচিত হয়। ২০১৮-১৯ সালে পরীক্ষামূলক খননে বল্লালবাড়ী থেকে প্রাচীন বসতির আলামত পাওয়া যায়। রঘুরামপুরের খননে বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার এক অনন্য ঘটনা। নাটেশ্বর দেউলে অতীশ দীপঙ্করের সময়ের বৃহৎ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। বৃহৎ ও সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স আবিষ্কার বাংলাদেশে এটাই প্রথম। দেশের সর্ববৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোনাকৃতির স্তূপের চারদিকে চারটি স্তূপ হলঘরও ছিল। ওই স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোনাকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশ ও নকশাকৃত ইট। অষ্টকোনাকৃতি স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্থাপত্য স্মারক কুঠুরিটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। এখানে গৌতম বুদ্ধ বা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহভস্ম ও ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো।
শুরুতে ইটের তৈরি সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। পরেতে দেখা যায় পুরো স্তূপ কমপ্লেক্সজুড়েই রয়েছে সুরক্ষাপ্রাচীরটি। পুরো বসতিজুড়ে সুরক্ষাপ্রাচীর আবিষ্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এর আগে উৎখননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যাচ্ছিল না।
রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর দেউলের এই অনুসন্ধান ও আবিষ্কারকে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৌদ্ধ স্থাপনা দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ইতিমধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নাটেশ্বর থেকে রঘুরামপুর পর্যন্ত একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এমন প্রাচীন নিদর্শন দেখতে পর্যটকেরা এখানে আসবেনই। তাঁদের আকৃষ্ট করতে রঘুরামপুর বৌদ্ধবিহার প্রত্নস্থানে বিক্রমপুর উন্মুক্ত জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারের সহযোগিতায় বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির কর্মসূচি পরিচালক নূহ-উল-আলম লেনিন ও গবেষণা পরিচালক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু ও মুন্সিগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছে এই অঞ্চলের অবয়ব। সেই সঙ্গে রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরের প্রত্ননিদর্শনকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হলে অঞ্চলটি আরও উন্নত হয়ে উঠবে।
মুজিব রহমান
সভাপতি, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
সাম্প্রতিক সময়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে উৎখননে একটি বৌদ্ধবিহার ও একটি বৌদ্ধমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এই আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চাষাবাদ, পুকুর খনন এবং অন্যান্য খননের ফলে বর্তমানেও বিক্রমপুর থেকে বিভিন্ন ধরনের স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্নসহ ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের মাধ্যমে বিক্রমপুর অঞ্চলে সমৃদ্ধ মানববসতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ১৯১২-১৩ সালে শ্রীযুক্ত পরেশনাথের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং ১৯১৬-১৭ সালে ঢাকা জাদুঘরের অধীনে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এই অঞ্চলে সীমিত উৎখনন করেন। কালের প্রবাহে মাটি চাপা পড়ে থাকা সমৃদ্ধ বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস পুনরুদ্ধারে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন অতীত সমৃদ্ধির সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধান খুবই ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং যৌথ সহায়তানির্ভর কর্মযজ্ঞ। বিক্রমপুর অঞ্চলে নতুন করে ২০১০ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’- এর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাকেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের গবেষক দল, জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং অন্যান্য গবেষকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু হয়। রামপাল, বজ্রযোগিনী, বল্লালবাড়িসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থানের নাম থেকে বিক্রমপুরের ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে বিক্রমপুর অঞ্চলে বৌদ্ধবিহার থাকার তথ্য পাওয়া যায়। অতীশ দীপঙ্করের সময় (৯৮২-১০৫৪ খ্রি.) বিক্রমপুরের বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রে নেপাল, তিব্বত, চীন, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ও ১০০ শিক্ষক ছিলেন। এই অঞ্চলে চন্দ্র, বর্মণ ও সেন রাজবংশের আধিপত্য বিস্তারের সুস্পষ্ট লিপিপ্রমাণ রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সুলতানি ও মোগল আমল এবং ব্রিটিশ সময়পর্ব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এখানে সমৃদ্ধ মানব বসতি দেখা যায়। প্রাচীন অবশেষগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে হারিয়ে গেলেও সুলতানি (বাবা আদমের মসজিদ), মোগল (মীরকাদিম পুল, ইদ্রাকপুর দুর্গ) ও ঔপনিবেশিক সময়ের বেশ কিছু স্থাপনা এখনো টিকে আছে। বিক্রমপুর অঞ্চল থেকে বেশ কিছু বৌদ্ধ ও হিন্দু ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে।
শুরুতে অনুসন্ধানকৃত প্রত্নস্থানসমূহের মধ্যে সুখবাসপুর, রঘুরামপুর, বজ্রযোগিনী, গুহপাড়া, খানকা প্রভৃতি গ্রামে ৯টি উৎখনন খাদে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করা হয়। প্রথম দিকেই উৎখননে স্থাপত্যিক অবশেষের চিহ্ন হিসেবে ইট, ইটের দেয়াল, পাথরের স্লাব প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ, মৃৎপাত্রের টুকরোসহ বিভিন্ন আকৃতির মৃৎপাত্র, পাথরের নিদর্শনসমূহের মধ্যে পাথরের স্লাব, ভাঙা টুকরোসহ নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের ভেঙে যাওয়া বিভিন্ন টুকরো, কিছু ধাতব নিদর্শন, উদ্ভিজ ও প্রাণিজ অবশেষ প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়। প্রতিটি উৎখনন খাদে ইটের পুরু স্তরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বসতির ধারাবাহিক অনুক্রম দেখা গেছে। বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে এ ধরনের ইটের বিস্তৃতি উন্নত, বিকশিত ও বিস্তৃত নগরের ইঙ্গিতবাহী ছিল। উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত এসব স্থাপত্যিক নিদর্শনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ইট-নির্মিত দেয়াল ও পার্শ্ব দেয়ালের সংযুক্তির চিহ্ন একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপত্যের অস্তিত্বের ইঙ্গিত বহন করে। উৎখননে আস্তে আস্তে স্থাপত্যটির প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়। উৎখননকৃত বিভিন্ন প্রত্নপীঠ থেকে বিভিন্ন পরিমাপের ইট আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত ইটের পরিমাপ দেখে আপেক্ষিক তারিখ নির্ণয় পদ্ধতি অনুসারে প্রাথমিকভাবে কোনো কোনো প্রত্নপীঠে প্রাক-মধ্যযুগের বসতির চিহ্ন হিসেবে ওই সময়েরই ধারণা করা হয়েছিল। উৎখননে প্রাপ্ত জৈব অবশেষসমূহের তেজস্ক্রিয় কার্বন-১৪ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্নস্থানসমূহের পরম কালানুক্রম জানা সম্ভব হয়েছে। এগুলো দশম ও একাদশ শতকের (৭৮০ থেকে ১২২৩ খ্রিষ্টাব্দ) নিদর্শন।
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে একটি বৌদ্ধবিহার। এখানে অনেকগুলো ভিক্ষুকক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। বিক্রমপুর অঞ্চলে একটি বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত স্মরণীয় ঘটনা। এই অমূল্য আবিষ্কার বাংলাদেশকে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা করে দিচ্ছে। কারণ বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর কীর্তিমান সন্তান ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান (৯৮০-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ)। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ জগতে দ্বিতীয় বুদ্ধ এবং পরম পূজনীয়। কিন্তু তাঁর বাল্যজীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। প্রশ্ন জাগে, বাল্যজীবনে তিনি কোথায় বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা-দীক্ষা নেন? বৌদ্ধ ধর্মে তাঁর পাণ্ডিত্যলাভ কি হঠাৎ হয়েছে? জগদ্বিখ্যাত বিক্রমশীলা এবং সোমপুর মহাবিহারের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগলাভ তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি এ কথা সহজে অনুমেয়। বৌদ্ধ ধর্মের অবক্ষয় রোধে তিব্বতের রাজা একাধিকবার দূত পাঠান অতীশের কাছে তিব্বতে গমনের জন্য। এই আমন্ত্রণে তাঁর পাণ্ডিত্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে। অতীশ দীপঙ্কর শুধু স্বনামধন্য পণ্ডিতই ছিলেন না, তদানীন্তন রাজনীতিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
আমাদের ধারণা, প্রাচীন বিক্রমপুরের রঘুরামপুর গ্রামে সদ্য আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহারের সঙ্গে অতীশ দীপঙ্করের একটি গভীর সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক জরিপেই মনে হয়েছিল বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী, রামপাল, সুখবাসপুর, মীরকাদিম, পঞ্চসার, নগর কসবা, সিপাহীপাড়া, দেওসার, সোনারং টঙ্গিবাড়ী প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে প্রাচীন বিক্রমপুর নগর সুবিস্তৃত ছিল। অসংখ্য গ্রাম থেকে মূর্তি, ভাস্কর্য, শিলালিপি পাওয়া গেছে এবং ইট–পাথর ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের বিশাল আকৃতির (প্রায় ৬ একর) দেলে (দেউলে) ২০১৩-১৪ সাল থেকে ধারাবাহিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে আসে একের পর এক স্থাপত্যিক নিদর্শন—বৌদ্ধ মন্দির, মণ্ডপ, অষ্টকোনাকৃতির পঞ্চ স্তূপ, দেয়াল, ইট নির্মিত নালা প্রভৃতি। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে পাথরনির্মিত নিদর্শনের পাশাপাশি ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতির পাথরের ছিলকা, নির্মিতব্য পাথরের নিদর্শনের অসংখ্য ভেঙে যাওয়া টুকরো থেকে পাথরের শিল্প নির্মাণকেন্দ্র হিসেবেও এখানকার কিছু কিছু স্থানকে চিহ্নিত করা যায়। উৎখননে প্রাচীন শুষ্ক নদী খাতের ওপর মানব বসতির চিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ থেকে প্রাচীন নদী খাত ও সমৃদ্ধ মানব বসতির ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। উৎখননের পাশাপাশি অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে বিকশিত নগরের ইঙ্গিতবাহী স্থাপত্যিক নিদর্শন, প্রস্তর নিদর্শন, মাটি ও পাথরের তৈজসপত্র আবিষ্কার চলমান। আশা করা যায়, প্রাপ্ত এসব সূত্র ধরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অঞ্চলে জরিপ ও উৎখনন পরিচালনার মাধ্যমে প্রাচীন বিক্রমপুর অঞ্চলের সমৃদ্ধ অতীত খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে আবিষ্কৃত হয় পিরামিড আকৃতির স্তূপ। এটি বৌদ্ধধর্মীয় সমাধি। এর উচ্চতা সাড়ে ৪৩ মিটার, যা ভারতের সাঁচি, ভারহুত, অমরাবতীর সমগোত্রীয়। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খননকাজে ৫ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা উন্মোচিত হয়। ২০১৮-১৯ সালে পরীক্ষামূলক খননে বল্লালবাড়ী থেকে প্রাচীন বসতির আলামত পাওয়া যায়। রঘুরামপুরের খননে বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার এক অনন্য ঘটনা। নাটেশ্বর দেউলে অতীশ দীপঙ্করের সময়ের বৃহৎ একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। বৃহৎ ও সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স আবিষ্কার বাংলাদেশে এটাই প্রথম। দেশের সর্ববৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোনাকৃতির স্তূপের চারদিকে চারটি স্তূপ হলঘরও ছিল। ওই স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোনাকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশ ও নকশাকৃত ইট। অষ্টকোনাকৃতি স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্থাপত্য স্মারক কুঠুরিটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। এখানে গৌতম বুদ্ধ বা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহভস্ম ও ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো।
শুরুতে ইটের তৈরি সুরক্ষাপ্রাচীরের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। পরেতে দেখা যায় পুরো স্তূপ কমপ্লেক্সজুড়েই রয়েছে সুরক্ষাপ্রাচীরটি। পুরো বসতিজুড়ে সুরক্ষাপ্রাচীর আবিষ্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এর আগে উৎখননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরা পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যাচ্ছিল না।
রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর দেউলের এই অনুসন্ধান ও আবিষ্কারকে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৌদ্ধ স্থাপনা দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ইতিমধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নাটেশ্বর থেকে রঘুরামপুর পর্যন্ত একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এমন প্রাচীন নিদর্শন দেখতে পর্যটকেরা এখানে আসবেনই। তাঁদের আকৃষ্ট করতে রঘুরামপুর বৌদ্ধবিহার প্রত্নস্থানে বিক্রমপুর উন্মুক্ত জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারের সহযোগিতায় বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির কর্মসূচি পরিচালক নূহ-উল-আলম লেনিন ও গবেষণা পরিচালক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু ও মুন্সিগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়ে আস্তে আস্তে বদলে দিচ্ছে এই অঞ্চলের অবয়ব। সেই সঙ্গে রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরের প্রত্ননিদর্শনকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হলে অঞ্চলটি আরও উন্নত হয়ে উঠবে।
মুজিব রহমান
সভাপতি, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪