শেখ মনোয়ার হোসেন
যোগাযোগব্যবস্থা অনুকূল না হওয়ার কারণে উত্তরবঙ্গ চিরকালই ছিল উন্নয়নের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন জনপদ। অথচ এখানকার তাঁতবস্ত্র, খাদ্যশস্য, দুগ্ধজাত খাবার ও ফলফলাদি দিয়ে সারা দেশের মানুষের নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানো হতো। প্রাথমিকভাবে এই সংকটের বিমোচন শুরু হয় যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ তৈরির মধ্য দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাঁতশিল্পের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ঐতিহাসিক সিরাজগঞ্জে ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন’ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আমাদের উদেশ্য হলো রাজধানী ও দেশের বড় বড় শহরকেন্দ্রিক কর্মস্থান তথা জীবন ও জীবীকার জন্য কষ্টসাধ্য উপায় থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়ে কর্মসংস্থানকে তাদের স্থায়ী ঠিকানার নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা; যেন মানুষ তাদের চিরকালীন নিজস্ব গ্রামীণ নিসর্গের আবহে বসবাস করেই জীবন ও জীবীকার সংস্থান করতে পারে; যেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এখান থেকেই আধুনিক জীবনযাপনের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে; যেন রোগশোকে তাদের আর দৌড়াতে না হয় দূর-দূরান্তে।
একটি সুখী–সমৃদ্ধ আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন ও ভিশন সামনে রেখে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার যে বিশাল কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, আমরা তারই আলোকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম তীরে ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন’ গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এই মহতি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় এ দেশের স্বনামধন্য ১১টি প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান। নগদ অর্থে ১০৪১ দশমিক ৪৩ একর ভূমি ক্রয় করে এখানে বেসরকারি পর্যায়ে দেশের সর্ববৃহৎ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার যাবতীয় অবকাঠামো তৈরির কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনকে কেন্দ্র করে সিঙ্গাপুর, দুবাই, সাংহাই কিংবা হংকংয়ের মতো বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র ও একটি সুপরিকল্পিত আধুনিক শিল্পনগরী খুব অল্প সময়ের মধ্যই দৃশ্যমান হবে।
মূলত ‘মানুষের কাছে শিল্প যাবে, ঘরে থেকেই কর্ম হবে’—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গড়ে উঠছে বেসরকারি মালিকানাধীন এদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন লিমিটেড’। শ্রমঘন শিল্প গড়ে তুলে এখানে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে উঠবে বিভিন্ন খাতের প্রায় ৪০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠান । এই অঞ্চলের উন্নয়ন হলে উত্তরবঙ্গের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার বড় পরিবর্তন আসবে । সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে দেশে বেকারত্ব কমে যাবে, প্রকৃত অর্থেই দেশ থেকে নির্মূল হবে দারিদ্র্য।
একটি আধুনিক সবুজ শিল্পনগরীতে সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানবিক ও পরিবেশগত সুবিধা বজায় থাকে। সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্ল্যাটিনাম গ্রিন কনসেপ্টে গড়ে উঠবে, যেখানে গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না করে আধুনিক শিল্পনগরীর সুযোগ–সুবিধাসহ দক্ষ জনগোষ্ঠীর বাসস্থান ও কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। শহরমুখী শ্রমজীবী মানুষ তখন শহরের মানের শিক্ষালয়, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন ও যোগাযোগব্যবস্থা সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের মধ্যে উপভোগ করতে পারলে তারা কাজের সন্ধানে গ্রাম বা পরিবারচ্যুত হবে না।
পরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল আশীর্বাদ। এতে জমির অপচয় রোধ হবে। ব্যাপক হারে কৃষিজমি বা বনভূমি ধ্বংস না করে বরং অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে পরিকল্পিত সবুজায়ন হবে। এককভাবে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অবকাঠামোর খরচ এককভাবে বহন করতে হয়। ফলে খরচ অনেক বেশি পড়ে এবং অনেক অপচয় হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে প্রয়োজনীয় সব সেবা মিলবে এক ছাতার নিচে। এককভাবে সবাই সব ধরনের সুবিধা নিতে পারবে। পণ্য ঐ অঞ্চল থেকেই দেশে-বিদেশে বাজারজাত করা যাবে। বন্দরগুলোকেও অযথা জটের মুখোমুখি হতে হবে না। পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে শিল্পায়নের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ। বিনিয়োগকারীরা সব সেবা ও সুযোগ-সুবিধা এই অঞ্চলের মধ্যেই পাবেন । আবার শিল্পকারখানার বর্জ্যে নদী ও বায়ুদূষণের ঘটনা ঘটবে না। অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে অত্যাধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রাখা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায় কর্মসংস্থান পৌঁছে দেওয়া এবং উৎপাদিত পণ্য দেশীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা।
উত্তরবঙ্গের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের বসবাস এই সিরাজগঞ্জ জেলার চারপাশের ১৬টি জেলায়। তারা বিভিন্ন সময়ে কর্মসংস্থানের তাগিদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা শহরে চলে যায়। তখন ঐ সমস্ত শহর পরিণত হয় যানজটযুক্ত অস্বাস্থ্যকর নগরীতে। কিন্তু সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের উদ্যোক্তারা ‘মানুষের কাছে শিল্প যাবে, ঘরে থেকেই কর্ম হবে’ স্লোগান নিয়ে ইকোনমিক জোন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। ঢাকা নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ঢাকায় এসে কর্মসংস্থান খুঁজে নেয়। একজন শ্রমজীবী যখন ঢাকায় এসে শ্রম দিয়ে মাস শেষে বেতন পায় এবং তার সিংহভাগ খরচ হয়ে যায় বাড়িভাড়া ও অন্যান্য দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনে; আধুনিক শিল্পনগরীতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এই একই ব্যক্তি তার নিজ গ্রামে নিজের পরিবারের কাছাকাছি থেকে ও আনন্দচিত্তে কর্মক্ষমভাবে উৎপাদনমূলক কাজ সফলতার সঙ্গে করবে। সদ্ব্যবহার করতে পারবে বেতনের পুরো টাকা। ঘরের কাছে মানসন্মত শিক্ষা, বাসস্থান, বিনোদন ও জীবনমান পেলে এসব কর্মজীবী মানুষ আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে। আর এভাবেই তারা উৎপাদন বাড়াতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের স্থানটি দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারী ও শ্রমজীবীদের জন্য অপার সম্ভাবনাময়। কারণ, এই অঞ্চলে রয়েছে রেলপথ, জলপথ ও সড়কপথ, সর্বোপরি থাকবে নতুনভাবে নির্মিত আইসিডি ব্যবহারের সুবিধা। এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ফোর লেন ও ফ্লাইওভার হয়ে গেলে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজেই এখানে বিনিয়োগ করতে পারবে। সেই হিসাবে তারা উৎসাহও দেখাচ্ছে। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনে পৌঁছানো যাবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আজ দিনের আলোর মতো এক দৃশ্যমান বাস্তবতা।
শেখ মনোয়ার হোসেন
সিনেট সদস্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
যোগাযোগব্যবস্থা অনুকূল না হওয়ার কারণে উত্তরবঙ্গ চিরকালই ছিল উন্নয়নের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন জনপদ। অথচ এখানকার তাঁতবস্ত্র, খাদ্যশস্য, দুগ্ধজাত খাবার ও ফলফলাদি দিয়ে সারা দেশের মানুষের নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানো হতো। প্রাথমিকভাবে এই সংকটের বিমোচন শুরু হয় যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ তৈরির মধ্য দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাঁতশিল্পের রাজধানী হিসেবে খ্যাত ঐতিহাসিক সিরাজগঞ্জে ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন’ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আমাদের উদেশ্য হলো রাজধানী ও দেশের বড় বড় শহরকেন্দ্রিক কর্মস্থান তথা জীবন ও জীবীকার জন্য কষ্টসাধ্য উপায় থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়ে কর্মসংস্থানকে তাদের স্থায়ী ঠিকানার নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা; যেন মানুষ তাদের চিরকালীন নিজস্ব গ্রামীণ নিসর্গের আবহে বসবাস করেই জীবন ও জীবীকার সংস্থান করতে পারে; যেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এখান থেকেই আধুনিক জীবনযাপনের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে; যেন রোগশোকে তাদের আর দৌড়াতে না হয় দূর-দূরান্তে।
একটি সুখী–সমৃদ্ধ আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন ও ভিশন সামনে রেখে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার যে বিশাল কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, আমরা তারই আলোকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম তীরে ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন’ গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এই মহতি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় এ দেশের স্বনামধন্য ১১টি প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান। নগদ অর্থে ১০৪১ দশমিক ৪৩ একর ভূমি ক্রয় করে এখানে বেসরকারি পর্যায়ে দেশের সর্ববৃহৎ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার যাবতীয় অবকাঠামো তৈরির কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনকে কেন্দ্র করে সিঙ্গাপুর, দুবাই, সাংহাই কিংবা হংকংয়ের মতো বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র ও একটি সুপরিকল্পিত আধুনিক শিল্পনগরী খুব অল্প সময়ের মধ্যই দৃশ্যমান হবে।
মূলত ‘মানুষের কাছে শিল্প যাবে, ঘরে থেকেই কর্ম হবে’—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গড়ে উঠছে বেসরকারি মালিকানাধীন এদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন লিমিটেড’। শ্রমঘন শিল্প গড়ে তুলে এখানে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে উঠবে বিভিন্ন খাতের প্রায় ৪০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠান । এই অঞ্চলের উন্নয়ন হলে উত্তরবঙ্গের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার বড় পরিবর্তন আসবে । সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে দেশে বেকারত্ব কমে যাবে, প্রকৃত অর্থেই দেশ থেকে নির্মূল হবে দারিদ্র্য।
একটি আধুনিক সবুজ শিল্পনগরীতে সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানবিক ও পরিবেশগত সুবিধা বজায় থাকে। সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্ল্যাটিনাম গ্রিন কনসেপ্টে গড়ে উঠবে, যেখানে গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না করে আধুনিক শিল্পনগরীর সুযোগ–সুবিধাসহ দক্ষ জনগোষ্ঠীর বাসস্থান ও কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। শহরমুখী শ্রমজীবী মানুষ তখন শহরের মানের শিক্ষালয়, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন ও যোগাযোগব্যবস্থা সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের মধ্যে উপভোগ করতে পারলে তারা কাজের সন্ধানে গ্রাম বা পরিবারচ্যুত হবে না।
পরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল আশীর্বাদ। এতে জমির অপচয় রোধ হবে। ব্যাপক হারে কৃষিজমি বা বনভূমি ধ্বংস না করে বরং অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে পরিকল্পিত সবুজায়ন হবে। এককভাবে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অবকাঠামোর খরচ এককভাবে বহন করতে হয়। ফলে খরচ অনেক বেশি পড়ে এবং অনেক অপচয় হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে প্রয়োজনীয় সব সেবা মিলবে এক ছাতার নিচে। এককভাবে সবাই সব ধরনের সুবিধা নিতে পারবে। পণ্য ঐ অঞ্চল থেকেই দেশে-বিদেশে বাজারজাত করা যাবে। বন্দরগুলোকেও অযথা জটের মুখোমুখি হতে হবে না। পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে শিল্পায়নের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ। বিনিয়োগকারীরা সব সেবা ও সুযোগ-সুবিধা এই অঞ্চলের মধ্যেই পাবেন । আবার শিল্পকারখানার বর্জ্যে নদী ও বায়ুদূষণের ঘটনা ঘটবে না। অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে অত্যাধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রাখা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায় কর্মসংস্থান পৌঁছে দেওয়া এবং উৎপাদিত পণ্য দেশীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা।
উত্তরবঙ্গের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের বসবাস এই সিরাজগঞ্জ জেলার চারপাশের ১৬টি জেলায়। তারা বিভিন্ন সময়ে কর্মসংস্থানের তাগিদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা শহরে চলে যায়। তখন ঐ সমস্ত শহর পরিণত হয় যানজটযুক্ত অস্বাস্থ্যকর নগরীতে। কিন্তু সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের উদ্যোক্তারা ‘মানুষের কাছে শিল্প যাবে, ঘরে থেকেই কর্ম হবে’ স্লোগান নিয়ে ইকোনমিক জোন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। ঢাকা নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ঢাকায় এসে কর্মসংস্থান খুঁজে নেয়। একজন শ্রমজীবী যখন ঢাকায় এসে শ্রম দিয়ে মাস শেষে বেতন পায় এবং তার সিংহভাগ খরচ হয়ে যায় বাড়িভাড়া ও অন্যান্য দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনে; আধুনিক শিল্পনগরীতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এই একই ব্যক্তি তার নিজ গ্রামে নিজের পরিবারের কাছাকাছি থেকে ও আনন্দচিত্তে কর্মক্ষমভাবে উৎপাদনমূলক কাজ সফলতার সঙ্গে করবে। সদ্ব্যবহার করতে পারবে বেতনের পুরো টাকা। ঘরের কাছে মানসন্মত শিক্ষা, বাসস্থান, বিনোদন ও জীবনমান পেলে এসব কর্মজীবী মানুষ আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে। আর এভাবেই তারা উৎপাদন বাড়াতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের স্থানটি দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারী ও শ্রমজীবীদের জন্য অপার সম্ভাবনাময়। কারণ, এই অঞ্চলে রয়েছে রেলপথ, জলপথ ও সড়কপথ, সর্বোপরি থাকবে নতুনভাবে নির্মিত আইসিডি ব্যবহারের সুবিধা। এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ফোর লেন ও ফ্লাইওভার হয়ে গেলে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহজেই এখানে বিনিয়োগ করতে পারবে। সেই হিসাবে তারা উৎসাহও দেখাচ্ছে। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনে পৌঁছানো যাবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আজ দিনের আলোর মতো এক দৃশ্যমান বাস্তবতা।
শেখ মনোয়ার হোসেন
সিনেট সদস্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪