সিজুল ইসলাম
বগুড়া ভৌগোলিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও ঐতিহ্যের স্মারক বহন করা অনন্য এক নাম। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হলো বগুড়া শহর। শুধু বগুড়ার বনানী মোড় যদি কোনো কারণে বন্ধ থাকে, তবে সারা দেশ থেকে উত্তরবঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই জেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন বন্ধ থাকলেও একই অবস্থা তৈরি হবে। আবার একসময় নদীপথেও বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে ভিড়ত কতশত নৌযান। সেসব এখন বদলে গেছে। নদীখেকোদের কবল থেকে নদী বাঁচানো যায়নি, নাব্য ফিরিয়ে এনে নৌপথে বাণিজ্য তো পরের কথা। তবু বাঙ্গালী, যমুনা, করতোয়া, ইছামতী নদী যেন প্রাচুর্য নিয়েই বগুড়ার বুক চিরে বয়ে গেছে। বগুড়ায় প্রায় দুই দশক আগে বিমান বাহিনীর রানওয়ে স্থাপিত হলেও বিমান চলাচল শুরু হয়নি। বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য বিমানবন্দরটি ব্যবহৃত হয়। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হেলিকপ্টার নিয়মিত যাতায়াত করছে।
শিল্প–বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে তৈরি হয়েছে পাঁচ তারকা, চার তারকা হোটেল। রয়েছে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের মতো একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বগুড়া থেকে জাতীয় ক্রিকেট একাদশ, অনূর্ধ্ব-১৯ এবং জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলেও খেলোয়াড় নেতৃত্ব দিচ্ছে, দেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ক্রিকেটার
মুশফিকুর রহিম এ জেলার উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। অ্যাথলেটিক, সাঁতারেও চমকপ্রদ অবদান রয়েছে বগুড়ার সন্তানদের।
বগুড়া আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় পৌরসভা। ইতিহাসবিদেরা বলেন, একসময় নাকি দিনাজপুরের হিলি পার হয়ে সীমান্তের ওপারে যে বালুরঘাট শহর, সেটিও বগুড়ার মধ্যে ছিল। সম্প্রতি বগুড়া শহরের ২০০ বছর উদ্যাপন করেছে বগুড়া পৌরসভা।
বগুড়া দেশের বড় পৌরসভা। অনেকে অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক কারণে বগুড়া পৌরসভা সিটি করপোরেশন হয়নি।
বগুড়াকে অনেকেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর তৃতীয় বাণিজ্যিক রাজধানী বলে থাকেন। কী নেই বগুড়ায়? সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছোট, মাঝারি ও বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বগুড়া জেলায় ১২০টি বড় শিল্পকারখানা, ১৯টি মাঝারি শিল্পকারখানা, ২ হাজার ৩৫১টি ক্ষুদ্র শিল্প এবং ৭৪৫টি কৃষিভিত্তিক শিল্প রয়েছে।
কৃষিতেও বগুড়ার অবদান অনেক। এই জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দির লাল মরিচ দেশসেরা। অনেকে মজা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জেলার ছেলেমেয়েদের বগুড়ার ঝাল মরিচ বলে ডাকেন। বছরে ১০০ কোটি টাকা আয় হয় শুধু বগুড়ার লাল মরিচ থেকে।
মসলাজাতীয় ফসলের সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ফসলেরই বাম্পার ফলন হয়। বগুড়ার শিবগঞ্জ যেন ফসলের স্বর্গরাজ্য। এখানকার চার ফসলি জমি থেকে যা উৎপন্ন হয়, তা দিয়েই চলে ঢাকার কারওয়ান বাজার। এক দিন যদি শিবগঞ্জের মহাস্থান বাজার বন্ধ থাকে, তবে কারওয়ান বাজারে সবজির দোকানে টান পড়বে, ঢাকার মানুষ সবজির অভাবে কষ্ট পাবে। শিবগঞ্জে মসলা গবেষণা কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে হয়তো এ কারণেই।
জেলার প্রধান কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, আলু, মরিচ, গম, সরিষা, ভুট্টা, কলা, সবজি, আখ ইত্যাদি।
বগুড়ায় মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর। পতিত জমি ৫ হাজার ৩৪৩ হেক্টর। মাথাপিছু জমির পরিমাণ শূন্য দশিমক ২১ হেক্টর। জেলায় খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য ২৯টি হিমাগার রয়েছে। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে আলু, মরিচ, ভুট্টা ও সবজি নেপাল, ভারতসহ অনেক দেশে রপ্তানি হয়। পাটজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাটের সুতা, সুতলি ও পাটের ব্যাগ।
জেলার শেরপুর ও কাহালু উপজেলার নারীদের তৈরি নানা ধরনের হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয় জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ইতালি, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের ১৮টি দেশে। বগুড়ায় তৈরি বিশেষ ধরনের পোশাক সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়।
জেলার শেরপুর ও ধুনট উপজেলার শতাধিক গ্রামে তৈরি জালি সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, দুবাই, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশে রপ্তানি হয়। সেচপাম্প রপ্তানির মধ্য দিয়ে বগুড়ায় উৎপাদিত যান্ত্রিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়। রপ্তানি হওয়া যন্ত্রাংশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সেচপাম্প ও এর যন্ত্রাংশ, লাইনার, ধান মাড়াইয়ের যন্ত্র, ডিজিটাল স্কেল, ট্রান্সফর্মার ও টিউবওয়েল। বর্তমানে বগুড়ার এসব পণ্য ভারত, নেপাল ছাড়াও ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপানের বাজারে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে ভারত ও নেপালের বাজারে রপ্তানি হয়েছে প্রায় সোয়া সাত কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। এর বড় অংশ এসেছে ধানের কুড়ার তেল থেকে।
শিবগঞ্জের মহাস্থানগড়ে বেহুলার বাসরঘর, গোকুল মেধ, ভাসু বিহার, শাহ সুলতান বলখী মাহীসওয়ার (রহ.) এবং বোরহান উদ্দীনের (রহ.) টানে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক, ইতিহাসপিপাসুরা ছুটে আসেন। অশোক লিপি পাওয়া গেছে এখানে। মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন বংশের সামন্তপ্রধানরাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বংশের আধিপত্য ছিল এবং তাঁরা শাসন করে গেছেন।
প্রাচীন অবিভক্ত বাংলার রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বগুড়া মৌর্য শাসনাধীনে ছিল। মৌর্যের পরে এই অঞ্চলে চলে গুপ্তযুগ। এরপর শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও সেনরাজ বংশ। সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়া ১২৭৯ থেকে ১২৮২ পর্যন্ত এই অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তাঁর নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে বগড়া (English: Bogra)। ইংরেজি উচ্চারণ বগড়া হলেও বাংলায় কালের বিবর্তনে নামটি পরিবর্তিত হয়ে ‘বগুড়া’ শব্দে পরিচিতি পেয়েছে। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস–সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে বগুড়ার ইংরেজি নাম Bogura করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ছাড়া মোহম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম, শেরপুরের হিন্দুদের পীঠস্থান ভবানী মন্দির, শেরপুরের খেরুয়া মসজিদ, সোনাতলার বিবি সাইবানি দরগাহ ও দেশের একমাত্র বৃহৎ পারুলগাছ, দুঁপচাচিয়ার গুণাহার জমিদারবাড়ি, বগুড়ার দই, মহাস্থানের কটকটি, পোড়াদহ মেলা, কেল্লাপোষী, বগুড়া থিয়েটারের বৈশাখী মেলা, গাংনগর মেলা নানা ঐহিত্য বহন করে যাচ্ছে।
বগুড়া জেলা শিক্ষায়ও অনেক এগিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বগুড়া এগিয়ে থাকে। বোর্ড-সেরা ১০টি স্কুল বা কলেজের মধ্যে বগুড়ার পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান শীর্ষস্থান দখল করে নেয়।
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ। দেশসেরা পণ্ডিত জ্ঞানতাপস ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো বহু গুণীজন অধ্যাপনা করেছেন এখানে। এই কলেজের কৃতী শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ২০২০ সালে সরকার বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে।
সংস্কৃতি অঙ্গনেও বগুড়া ইয়ূথ কয়্যার, বগুড়া থিয়েটার, কলেজ থিয়েটার, কাহালু থিয়েটার, আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীসহ ৮০টির ওপরে সংগঠন দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বগুড়া জেলা।
সিজুল ইসলাম
নাট্যকর্মী, উন্নয়নকর্মী ও প্রাবন্ধিক
বগুড়া ভৌগোলিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও ঐতিহ্যের স্মারক বহন করা অনন্য এক নাম। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হলো বগুড়া শহর। শুধু বগুড়ার বনানী মোড় যদি কোনো কারণে বন্ধ থাকে, তবে সারা দেশ থেকে উত্তরবঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই জেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন বন্ধ থাকলেও একই অবস্থা তৈরি হবে। আবার একসময় নদীপথেও বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে ভিড়ত কতশত নৌযান। সেসব এখন বদলে গেছে। নদীখেকোদের কবল থেকে নদী বাঁচানো যায়নি, নাব্য ফিরিয়ে এনে নৌপথে বাণিজ্য তো পরের কথা। তবু বাঙ্গালী, যমুনা, করতোয়া, ইছামতী নদী যেন প্রাচুর্য নিয়েই বগুড়ার বুক চিরে বয়ে গেছে। বগুড়ায় প্রায় দুই দশক আগে বিমান বাহিনীর রানওয়ে স্থাপিত হলেও বিমান চলাচল শুরু হয়নি। বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য বিমানবন্দরটি ব্যবহৃত হয়। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হেলিকপ্টার নিয়মিত যাতায়াত করছে।
শিল্প–বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে তৈরি হয়েছে পাঁচ তারকা, চার তারকা হোটেল। রয়েছে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের মতো একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বগুড়া থেকে জাতীয় ক্রিকেট একাদশ, অনূর্ধ্ব-১৯ এবং জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলেও খেলোয়াড় নেতৃত্ব দিচ্ছে, দেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ক্রিকেটার
মুশফিকুর রহিম এ জেলার উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। অ্যাথলেটিক, সাঁতারেও চমকপ্রদ অবদান রয়েছে বগুড়ার সন্তানদের।
বগুড়া আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় পৌরসভা। ইতিহাসবিদেরা বলেন, একসময় নাকি দিনাজপুরের হিলি পার হয়ে সীমান্তের ওপারে যে বালুরঘাট শহর, সেটিও বগুড়ার মধ্যে ছিল। সম্প্রতি বগুড়া শহরের ২০০ বছর উদ্যাপন করেছে বগুড়া পৌরসভা।
বগুড়া দেশের বড় পৌরসভা। অনেকে অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক কারণে বগুড়া পৌরসভা সিটি করপোরেশন হয়নি।
বগুড়াকে অনেকেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর তৃতীয় বাণিজ্যিক রাজধানী বলে থাকেন। কী নেই বগুড়ায়? সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছোট, মাঝারি ও বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বগুড়া জেলায় ১২০টি বড় শিল্পকারখানা, ১৯টি মাঝারি শিল্পকারখানা, ২ হাজার ৩৫১টি ক্ষুদ্র শিল্প এবং ৭৪৫টি কৃষিভিত্তিক শিল্প রয়েছে।
কৃষিতেও বগুড়ার অবদান অনেক। এই জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দির লাল মরিচ দেশসেরা। অনেকে মজা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জেলার ছেলেমেয়েদের বগুড়ার ঝাল মরিচ বলে ডাকেন। বছরে ১০০ কোটি টাকা আয় হয় শুধু বগুড়ার লাল মরিচ থেকে।
মসলাজাতীয় ফসলের সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ফসলেরই বাম্পার ফলন হয়। বগুড়ার শিবগঞ্জ যেন ফসলের স্বর্গরাজ্য। এখানকার চার ফসলি জমি থেকে যা উৎপন্ন হয়, তা দিয়েই চলে ঢাকার কারওয়ান বাজার। এক দিন যদি শিবগঞ্জের মহাস্থান বাজার বন্ধ থাকে, তবে কারওয়ান বাজারে সবজির দোকানে টান পড়বে, ঢাকার মানুষ সবজির অভাবে কষ্ট পাবে। শিবগঞ্জে মসলা গবেষণা কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে হয়তো এ কারণেই।
জেলার প্রধান কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, আলু, মরিচ, গম, সরিষা, ভুট্টা, কলা, সবজি, আখ ইত্যাদি।
বগুড়ায় মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর। পতিত জমি ৫ হাজার ৩৪৩ হেক্টর। মাথাপিছু জমির পরিমাণ শূন্য দশিমক ২১ হেক্টর। জেলায় খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য ২৯টি হিমাগার রয়েছে। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে আলু, মরিচ, ভুট্টা ও সবজি নেপাল, ভারতসহ অনেক দেশে রপ্তানি হয়। পাটজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাটের সুতা, সুতলি ও পাটের ব্যাগ।
জেলার শেরপুর ও কাহালু উপজেলার নারীদের তৈরি নানা ধরনের হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয় জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ইতালি, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের ১৮টি দেশে। বগুড়ায় তৈরি বিশেষ ধরনের পোশাক সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়।
জেলার শেরপুর ও ধুনট উপজেলার শতাধিক গ্রামে তৈরি জালি সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, দুবাই, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশে রপ্তানি হয়। সেচপাম্প রপ্তানির মধ্য দিয়ে বগুড়ায় উৎপাদিত যান্ত্রিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়। রপ্তানি হওয়া যন্ত্রাংশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সেচপাম্প ও এর যন্ত্রাংশ, লাইনার, ধান মাড়াইয়ের যন্ত্র, ডিজিটাল স্কেল, ট্রান্সফর্মার ও টিউবওয়েল। বর্তমানে বগুড়ার এসব পণ্য ভারত, নেপাল ছাড়াও ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপানের বাজারে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে ভারত ও নেপালের বাজারে রপ্তানি হয়েছে প্রায় সোয়া সাত কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। এর বড় অংশ এসেছে ধানের কুড়ার তেল থেকে।
শিবগঞ্জের মহাস্থানগড়ে বেহুলার বাসরঘর, গোকুল মেধ, ভাসু বিহার, শাহ সুলতান বলখী মাহীসওয়ার (রহ.) এবং বোরহান উদ্দীনের (রহ.) টানে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক, ইতিহাসপিপাসুরা ছুটে আসেন। অশোক লিপি পাওয়া গেছে এখানে। মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন বংশের সামন্তপ্রধানরাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বংশের আধিপত্য ছিল এবং তাঁরা শাসন করে গেছেন।
প্রাচীন অবিভক্ত বাংলার রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বগুড়া মৌর্য শাসনাধীনে ছিল। মৌর্যের পরে এই অঞ্চলে চলে গুপ্তযুগ। এরপর শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও সেনরাজ বংশ। সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়া ১২৭৯ থেকে ১২৮২ পর্যন্ত এই অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তাঁর নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে বগড়া (English: Bogra)। ইংরেজি উচ্চারণ বগড়া হলেও বাংলায় কালের বিবর্তনে নামটি পরিবর্তিত হয়ে ‘বগুড়া’ শব্দে পরিচিতি পেয়েছে। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস–সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে বগুড়ার ইংরেজি নাম Bogura করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ছাড়া মোহম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম, শেরপুরের হিন্দুদের পীঠস্থান ভবানী মন্দির, শেরপুরের খেরুয়া মসজিদ, সোনাতলার বিবি সাইবানি দরগাহ ও দেশের একমাত্র বৃহৎ পারুলগাছ, দুঁপচাচিয়ার গুণাহার জমিদারবাড়ি, বগুড়ার দই, মহাস্থানের কটকটি, পোড়াদহ মেলা, কেল্লাপোষী, বগুড়া থিয়েটারের বৈশাখী মেলা, গাংনগর মেলা নানা ঐহিত্য বহন করে যাচ্ছে।
বগুড়া জেলা শিক্ষায়ও অনেক এগিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বগুড়া এগিয়ে থাকে। বোর্ড-সেরা ১০টি স্কুল বা কলেজের মধ্যে বগুড়ার পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান শীর্ষস্থান দখল করে নেয়।
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ। দেশসেরা পণ্ডিত জ্ঞানতাপস ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো বহু গুণীজন অধ্যাপনা করেছেন এখানে। এই কলেজের কৃতী শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ২০২০ সালে সরকার বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে।
সংস্কৃতি অঙ্গনেও বগুড়া ইয়ূথ কয়্যার, বগুড়া থিয়েটার, কলেজ থিয়েটার, কাহালু থিয়েটার, আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠীসহ ৮০টির ওপরে সংগঠন দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বগুড়া জেলা।
সিজুল ইসলাম
নাট্যকর্মী, উন্নয়নকর্মী ও প্রাবন্ধিক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪