আমিনুর রহমান টুকু
যদিও জেলার নামের সঙ্গে মিশে রয়েছে মুক্তা ও চুনের উৎস ও আধার ঝিনুক, তবু আজকের ঝিনাইদহের প্রাণ যদি বলতে হয়, তবে তা কলা ও পান। পুরো জেলার অর্থনীতির মূল শক্তি কৃষি। সে গল্পে পরে আসা যাবে। তার আগে চুন ও মুক্তার একটা রফা হোক।
প্রসঙ্গটি এসেছে একটি জনশ্রুতি থেকে। কথিত আছে ঝিনাইদহ শহরের কাছেই রয়েছে নবগঙ্গার দোহা বা দহ (বড় জলাশয়)। এখানে একসময় প্রচুর ঝিনুক পাওয়া যেত। এই ঝিনুক থেকে উৎপাদন করা হতো চুন ও বোতাম। সংগ্রহ করা হতো মুক্তাও। এই ঝিনুককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা বেশ প্রসার পেয়েছিল। এই ‘ঝিনুক’ ও ‘ঝিনুকের দোহা’—এই দুইয়ের সংমিশ্রণে প্রথমে ‘ঝিনেদা’ এবং পরে ‘ঝিনাইদহ’ নামে অঞ্চলটি পরিচিতি লাভ করে। ১৮৬১ সালে প্রশাসনিক কাঠামো হিসেবে প্রথমে মহকুমা, তারপর ১৯৮৪ সালে এটি জেলায় উন্নীত হয়। বর্তমানে এ জেলার লোকসংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ।
সারা দেশের মতোই এ অঞ্চলও কৃষিনির্ভর। এ জেলার মধ্য দিয়ে ১৩টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই জেলা কৃষির দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতিগতভাবে এ জেলার মাটি কৃষির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার কলা ও পান আঞ্চলিক চাহিদা মিটিয়েও সারা দেশের চাহিদা পূরণ করছে। একটু হিসাব তুলে ধরলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। গড়ে প্রতিবছর ৩০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন পান ও ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কলা উৎপাদন হয় এখানে। এখানে উৎপাদিত পান দেশের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে। শুধু কলা ও পান নয়, এখানে অন্যান্য প্রচলিত ফসলও উৎপন্ন হয়। বিশেষ করে তুলা, আখ, তামাক ইত্যাদি অর্থকরী ফসল উৎপাদনে এ জেলা অনেকটাই এগিয়ে। এই ফসলগুলো দেশের অন্যান্য জেলায় তেমন ভালো হয় না। তবে সব ছাড়িয়ে এখানকার প্রধান ফসল ধান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ধানের মোট চাহিদা ৩ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টনের কিছু বেশি। তবে এখানে উৎপাদন হয় ৮ লাখ ১০ হাজার টনের বেশি। ফলে শুধু এই জেলা থেকেই ৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি উদ্বৃত্ত ধান পাচ্ছে দেশ।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত এ জেলায় ধানের পাশাপাশি প্রচুর শাকসবজি ও ফলও উৎপাদন হয়। বাঁওড় এলাকা হওয়ায় ঝিনাইদহ মৎস্য সম্পদেও সমৃদ্ধ। এখানে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজি প্রতিনিয়ত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়।
অন্য ফসলের মধ্যে পাট, তুলা, গম, ভুট্টা, আখ, তামাক ইত্যাদি ব্যাপকভাবে চাষ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে টমেটো, তরমুজ, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, সরিষা, মসুর, মুগ ইত্যাদি আবাদেও কৃষকেরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছেন। পেয়ারা, আম, লিচু, ড্রাগন, লেবু ইত্যাদি ফলের বাণিজ্যিক চাষের সম্প্রসারণ হচ্ছে দ্রুত। সম্প্রতি কৃষকদের মধ্যে ফুল চাষও সাড়া ফেলেছে।
কৃষির দক্ষতা ও উন্নয়ন নির্ভর করে লাঙলের পেছনে থাকা লোকটি, অর্থাৎ কৃষকের ওপর। এই নির্ভরতার প্রতিদান কৃষক নিষ্ঠার সঙ্গে দিলেও তাঁদের ভাগ্যের উন্নয়ন হচ্ছে ধীরলয়ে। জেলার ৩ লাখ ১৫ হাজারের বেশি কৃষক পরিবারের ৮০ শতাংশই ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, যাঁদের প্রধান ফসল ধান। প্রতিবছর ধানের দাম নিয়ে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। কারণ, এটাই তাঁদের জীবনধারণের একমাত্র উপায়। তবে সম্প্রতি ধানের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কারণে তাঁদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও তা যথেষ্ট নয়। স্বল্প জমি, অর্থাভাব, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রিত ত্রুটিপূর্ণ বাজারব্যবস্থা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে ফসলের দাম না পাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করেও এ দেশের দারিদ্র্যপীড়িত কৃষক দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর এ দেশের প্রভূত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থা আজও ভালো হয়নি। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে তাঁরা বেশি বেশি ফসল উৎপাদন করছেন। এটিই আবার তাঁর উৎপাদিত ফসলের দাম কমিয়ে দিচ্ছে। এই ফাঁদ থেকে সারা দেশের কৃষকের মতো ঝিনাইদহের কৃষকেরও মুক্তি মেলেনি।
কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তির বিষয়ে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সরাসরি প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। এরই মধ্যে বিষয়টি শুরু হয়েছে। এর পরিসর আরও বাড়াতে হবে। কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করার পাশাপাশি এ খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি এবং কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি ও এর প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। সেচসুবিধা সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে জরুরি ভিত্তিতে ফসল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাজারব্যবস্থা একটি সমাধান হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কিছু কারণে কৃষি ক্ষেত্র বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে। নতুন নতুন বাড়িঘর তৈরি, ইটের ভাটা, কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদির কারণে প্রতিবছর প্রায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে কৃষিজমি কমছে। ইটভাটাগুলো অবৈধভাবে টপসয়েল (ওপরের স্তরের মাটি) ব্যবহারের কারণে জমির উর্বরতা এখন হুমকির মুখে। পানির স্তরও ক্রমেই নেমে যাচ্ছে।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা ঝিনাইদহসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে কৃষি। নতুন কৃষিপদ্ধতি, সরঞ্জাম ও ফসল এ জেলার কৃষিকে করেছে সমৃদ্ধ। এখন প্রয়োজন টেকসই ও নিরাপদ কৃষি। এ লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক চাহিদার ভিত্তিতে উপযুক্ত ফসল ও ফল উৎপাদন, জৈব সার ও বালাইনাশকের ব্যবহার সম্প্রসারণ, সেচব্যবস্থার উন্নয়ন, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি, জলাধার সংরক্ষণ, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাঁওড় খননের মাধ্যমে কৃষিকে নিরাপদ রাখা প্রয়োজন।
কৃষিকে সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন তরুণেরাও। বিদেশ থেকে ফিরে এসে অনেক যুবক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা, লেবু, আম, ড্রাগন, মাল্টা, কমলা ইত্যাদি ফলের চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। নতুন নতুন এসব চাষের দিকে অনেকেই ঝুঁকছেন। এটি জেলার কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় করে তুলছে।
জেলার কিছু অঞ্চলে শতভাগ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টরসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। এখন প্রয়োজন কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন। তাহলে কৃষকের দারিদ্র্যও ঘুচবে। তাঁদের অনেকেই তখন উদ্যোক্তা ও সরবরাহকারীর ভূমিকায় চলে আসবেন। উৎপাদিত ফসলের বাজার নিশ্চিত হবে।
আমিনুর রহমান টুকু
সাবেক অধ্যক্ষ, নারিকেলবাড়িয়া আমেনা
খাতুন ডিগ্রি কলেজ
যদিও জেলার নামের সঙ্গে মিশে রয়েছে মুক্তা ও চুনের উৎস ও আধার ঝিনুক, তবু আজকের ঝিনাইদহের প্রাণ যদি বলতে হয়, তবে তা কলা ও পান। পুরো জেলার অর্থনীতির মূল শক্তি কৃষি। সে গল্পে পরে আসা যাবে। তার আগে চুন ও মুক্তার একটা রফা হোক।
প্রসঙ্গটি এসেছে একটি জনশ্রুতি থেকে। কথিত আছে ঝিনাইদহ শহরের কাছেই রয়েছে নবগঙ্গার দোহা বা দহ (বড় জলাশয়)। এখানে একসময় প্রচুর ঝিনুক পাওয়া যেত। এই ঝিনুক থেকে উৎপাদন করা হতো চুন ও বোতাম। সংগ্রহ করা হতো মুক্তাও। এই ঝিনুককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা বেশ প্রসার পেয়েছিল। এই ‘ঝিনুক’ ও ‘ঝিনুকের দোহা’—এই দুইয়ের সংমিশ্রণে প্রথমে ‘ঝিনেদা’ এবং পরে ‘ঝিনাইদহ’ নামে অঞ্চলটি পরিচিতি লাভ করে। ১৮৬১ সালে প্রশাসনিক কাঠামো হিসেবে প্রথমে মহকুমা, তারপর ১৯৮৪ সালে এটি জেলায় উন্নীত হয়। বর্তমানে এ জেলার লোকসংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ।
সারা দেশের মতোই এ অঞ্চলও কৃষিনির্ভর। এ জেলার মধ্য দিয়ে ১৩টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই জেলা কৃষির দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতিগতভাবে এ জেলার মাটি কৃষির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার কলা ও পান আঞ্চলিক চাহিদা মিটিয়েও সারা দেশের চাহিদা পূরণ করছে। একটু হিসাব তুলে ধরলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। গড়ে প্রতিবছর ৩০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন পান ও ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কলা উৎপাদন হয় এখানে। এখানে উৎপাদিত পান দেশের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে। শুধু কলা ও পান নয়, এখানে অন্যান্য প্রচলিত ফসলও উৎপন্ন হয়। বিশেষ করে তুলা, আখ, তামাক ইত্যাদি অর্থকরী ফসল উৎপাদনে এ জেলা অনেকটাই এগিয়ে। এই ফসলগুলো দেশের অন্যান্য জেলায় তেমন ভালো হয় না। তবে সব ছাড়িয়ে এখানকার প্রধান ফসল ধান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ধানের মোট চাহিদা ৩ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টনের কিছু বেশি। তবে এখানে উৎপাদন হয় ৮ লাখ ১০ হাজার টনের বেশি। ফলে শুধু এই জেলা থেকেই ৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি উদ্বৃত্ত ধান পাচ্ছে দেশ।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত এ জেলায় ধানের পাশাপাশি প্রচুর শাকসবজি ও ফলও উৎপাদন হয়। বাঁওড় এলাকা হওয়ায় ঝিনাইদহ মৎস্য সম্পদেও সমৃদ্ধ। এখানে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজি প্রতিনিয়ত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়।
অন্য ফসলের মধ্যে পাট, তুলা, গম, ভুট্টা, আখ, তামাক ইত্যাদি ব্যাপকভাবে চাষ ও উৎপাদন হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে টমেটো, তরমুজ, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, সরিষা, মসুর, মুগ ইত্যাদি আবাদেও কৃষকেরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছেন। পেয়ারা, আম, লিচু, ড্রাগন, লেবু ইত্যাদি ফলের বাণিজ্যিক চাষের সম্প্রসারণ হচ্ছে দ্রুত। সম্প্রতি কৃষকদের মধ্যে ফুল চাষও সাড়া ফেলেছে।
কৃষির দক্ষতা ও উন্নয়ন নির্ভর করে লাঙলের পেছনে থাকা লোকটি, অর্থাৎ কৃষকের ওপর। এই নির্ভরতার প্রতিদান কৃষক নিষ্ঠার সঙ্গে দিলেও তাঁদের ভাগ্যের উন্নয়ন হচ্ছে ধীরলয়ে। জেলার ৩ লাখ ১৫ হাজারের বেশি কৃষক পরিবারের ৮০ শতাংশই ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, যাঁদের প্রধান ফসল ধান। প্রতিবছর ধানের দাম নিয়ে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। কারণ, এটাই তাঁদের জীবনধারণের একমাত্র উপায়। তবে সম্প্রতি ধানের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কারণে তাঁদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও তা যথেষ্ট নয়। স্বল্প জমি, অর্থাভাব, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রিত ত্রুটিপূর্ণ বাজারব্যবস্থা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে ফসলের দাম না পাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করেও এ দেশের দারিদ্র্যপীড়িত কৃষক দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর এ দেশের প্রভূত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থা আজও ভালো হয়নি। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে তাঁরা বেশি বেশি ফসল উৎপাদন করছেন। এটিই আবার তাঁর উৎপাদিত ফসলের দাম কমিয়ে দিচ্ছে। এই ফাঁদ থেকে সারা দেশের কৃষকের মতো ঝিনাইদহের কৃষকেরও মুক্তি মেলেনি।
কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তির বিষয়ে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সরাসরি প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। এরই মধ্যে বিষয়টি শুরু হয়েছে। এর পরিসর আরও বাড়াতে হবে। কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করার পাশাপাশি এ খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি এবং কৃষিঋণের আওতা বৃদ্ধি ও এর প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। সেচসুবিধা সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে জরুরি ভিত্তিতে ফসল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাজারব্যবস্থা একটি সমাধান হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কিছু কারণে কৃষি ক্ষেত্র বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে। নতুন নতুন বাড়িঘর তৈরি, ইটের ভাটা, কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদির কারণে প্রতিবছর প্রায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে কৃষিজমি কমছে। ইটভাটাগুলো অবৈধভাবে টপসয়েল (ওপরের স্তরের মাটি) ব্যবহারের কারণে জমির উর্বরতা এখন হুমকির মুখে। পানির স্তরও ক্রমেই নেমে যাচ্ছে।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা ঝিনাইদহসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে কৃষি। নতুন কৃষিপদ্ধতি, সরঞ্জাম ও ফসল এ জেলার কৃষিকে করেছে সমৃদ্ধ। এখন প্রয়োজন টেকসই ও নিরাপদ কৃষি। এ লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক চাহিদার ভিত্তিতে উপযুক্ত ফসল ও ফল উৎপাদন, জৈব সার ও বালাইনাশকের ব্যবহার সম্প্রসারণ, সেচব্যবস্থার উন্নয়ন, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি, জলাধার সংরক্ষণ, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাঁওড় খননের মাধ্যমে কৃষিকে নিরাপদ রাখা প্রয়োজন।
কৃষিকে সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন তরুণেরাও। বিদেশ থেকে ফিরে এসে অনেক যুবক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা, লেবু, আম, ড্রাগন, মাল্টা, কমলা ইত্যাদি ফলের চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। নতুন নতুন এসব চাষের দিকে অনেকেই ঝুঁকছেন। এটি জেলার কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় করে তুলছে।
জেলার কিছু অঞ্চলে শতভাগ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টরসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। এখন প্রয়োজন কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন। তাহলে কৃষকের দারিদ্র্যও ঘুচবে। তাঁদের অনেকেই তখন উদ্যোক্তা ও সরবরাহকারীর ভূমিকায় চলে আসবেন। উৎপাদিত ফসলের বাজার নিশ্চিত হবে।
আমিনুর রহমান টুকু
সাবেক অধ্যক্ষ, নারিকেলবাড়িয়া আমেনা
খাতুন ডিগ্রি কলেজ
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪