মো. ছোলজার রহমান
বাংলাদেশের অনেক প্রথমের সঙ্গেই যশোর জেলার নাম জড়িয়ে আছে। দু–একটি বলা যেতে পারে। এই যেমন—ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন জেলাও যশোর। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর এই জেলা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়।
অতীতে খুলনা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ যশোরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেললাইনটি বাংলাদেশের প্রথম রেললাইন। এ হিসাবে বাংলাদেশের যশোর জেলাতেই প্রথম রেললাইন স্থাপিত হয়। যশোর পৌরসভা দেশের পুরোনো পৌরসভা। দেশের অন্যতম বড় কালেক্টরেট ভবনটি রয়েছে যশোরে, যা ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। এমনকি বাংলা কবিতার এক অনন্য ঘটনার সঙ্গেও যশোরের নাম জড়িয়ে আছে। বাংলায় প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও সনেটের প্রবক্তা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান এই জেলা।
এই জেলায় রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের সদর দপ্তর, বিমান বাহিনীর অন্যতম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি মতিউর রহমান ঘাঁটির কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। খেজুরের রস ও গুড়, ফুলের চাষ ও রপ্তানি, সবজি উৎপাদন, নকশিকাঁথা ও যশোর স্টিচ, মৎস্য রেণুপোনা উৎপাদন, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদনে বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় হলেও অতীতে যশোর কই মাছ ও চিরুনি উৎপাদনে সমৃদ্ধ ছিল। সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের একজন এখানে ঘুমিয়ে আছেন। একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শেখ হাসিনা আইটি পার্ক, দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা বোর্ড, বিমানবন্দর, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালসহ (সিএমএইচ) বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল যশোর জেলার গুরুত্ব অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বন্দরকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে নানা ব্যবসা–বাণিজ্য। বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি–রপ্তানিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের কাজের সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে পুরোনো এই জেলার সমৃদ্ধি ও নাগরিক সেবা বৃদ্ধিতে কিছু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পৌর এলাকার প্রধান রাস্তা ও আন্তজেলা সড়কগুলো আরও প্রশস্ত করা জরুরি। একই সঙ্গে ভৈরব নদের নাব্য ফেরাতে প্রয়োজন খনন। নৌ–যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে বারোবাজার থেকে অভয়নগর পর্যন্ত নদের উভয় তীরে তিন কিলোমিটার পরপর ঘাট বা ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন করা দরকার, যাতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন সহজ হয়। এতে নৌভ্রমণেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা অবদান রাখতে পারে স্থানীয় পর্যটনের বিকাশে।
শিক্ষার উন্নয়নে শহরের ১, ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন তিনটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও খেলার মাঠের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। এতে শিশু–কিশোরদের সুস্থ বিনোদনের পথ উন্মুক্ত হবে। নাগরিক সেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গণশৌচাগার স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন গণশৌচাগারের সংকট শুধু যশোরের নয়, বাংলাদেশের প্রায় সব ছোট–বড় শহরের। আন্তজেলা যোগাযোগের ক্ষেত্রে যশোর থেকে দর্শনা পর্যন্ত রেললাইনকে ডাবল গেজে রূপান্তর এবং বসুন্দিয়া থেকে চূড়ামনকাটি পর্যন্ত রেললাইনকে আন্ডারপাস বা ওভারপাসের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করানো প্রয়োজন।
পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যাতায়াত করছে। অথচ এইি জেলার নাগরিকদের সুচিকিৎসার পর্যাপ্ত ও উন্নত ব্যবস্থা নেই। ২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা যশোরবাসীকে স্বস্তি ও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। এই হাসপাতাল ঘিরে বেশ কিছু বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠলেও তা মানুষের আস্থা কুড়াতে পারছে না। আবার ব্যয় বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নেওয়াও কঠিন। এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান ও কলেবর বাড়ানো প্রয়োজন।
চিকিৎসার প্রসঙ্গ যখন এলই, তখন বলা প্রয়োজন, এই জেলার অনেক রোগী ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়। এ অবস্থায় এই জেলায় আরেকটি ২৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল স্থাপন এবং সদর উপজেলার জন্য উপজেলা কোটায় একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা যেতে পারে। এটি করা হলে চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রনির্ভরতা অনেকাংশে কমবে। এটি শুধু যশোর নয়, বড় জেলা শহরের সবগুলোতেই করা দরকার।
কেবল যাতায়াতব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে বেশি দিন উন্নয়ন ধরে রাখা যাবে না। একে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও নাগরিক গড়ে তোলা জরুরি। তাকাতে হবে প্রকৃতির দিকেও। পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন শুধু মুখে নয়, কাজে পরিণত করতে হবে।
যশোর আগের তুলনায় অনেক এগিয়েছে এ কথা সত্য। কিন্তু কিছু সংকটও রয়েছে, যার আশু সমাধান জরুরি। মুক্তেশ্বরী, ভৈরব, কপোতাক্ষ, চিত্রা, কাজলী, ভদ্রা, হরিহর, শ্রী, টেকা ইত্যাদি নদনদী দীর্ঘকাল প্রবাহহীন। বছরের কয়েক মাস এসব নদনদী পানিশূন্য থাকে। বিভিন্ন বিলের পানি নির্গমন পথে বাঁধ ও পাটা দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ফলে যশোরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মৎস্য প্রজনন ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। মুক্তেশ্বরী নদীর মুখে রাস্তা নির্মাণ করায় নদীর প্রবাহে স্থায়ী বাধার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে হরিণা বিল, মনিরামপুর ও কেশবপুরের এক বিশাল অংশে দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তেশ্বরীর উজানের বাধা না তুলে এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ভাটিতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ভদ্রা নদীর গতিপথকে পুকুর হিসেবে বেঁধে নিয়ে তিন দশক ধরে ব্যক্তি পর্যায়ে মাছের চাষ করা হচ্ছে। এর প্রভাবে জীববৈচিত্র্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামাজিক বনায়নের হার ও গতি সাম্প্রতিককালে কমে গেছে। ভূপৃষ্ঠের জলাধারগুলো ভরাট করে ফেলায় সেগুলো পানিশূন্য থাকছে। কমে যাচ্ছে মাটির আর্দ্রতা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন সংকটের সঙ্গে এগুলো যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল করে তুলছে। এ বিষয়গুলোর দিকে যথাযথভাবে নজর দিলে এবং সে অনুযায়ী উন্নয়নের পরিকল্পনা নিলে যশোর সামনে আরও এগিয়ে যাবে।
এটা নিশ্চিত যে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এলাকা হওয়ায় যশোরের সামনে রয়েছে বিরাট সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনা মাথায় রেখে করতে হবে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা। যোগাযোগব্যবস্থার যে উন্নয়ন হয়েছে, তার সুফল যাতে তরুণ উদ্যোক্তারা পান, তার জন্য নীতিসহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে দেশের সবচেয়ে পুরোনো এই জেলা চমক দেখাতে পারবে।
মো. ছোলজার রহমান
সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি এম এম কলেজ
বাংলাদেশের অনেক প্রথমের সঙ্গেই যশোর জেলার নাম জড়িয়ে আছে। দু–একটি বলা যেতে পারে। এই যেমন—ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর। বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন জেলাও যশোর। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর এই জেলা পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়।
অতীতে খুলনা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ যশোরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেললাইনটি বাংলাদেশের প্রথম রেললাইন। এ হিসাবে বাংলাদেশের যশোর জেলাতেই প্রথম রেললাইন স্থাপিত হয়। যশোর পৌরসভা দেশের পুরোনো পৌরসভা। দেশের অন্যতম বড় কালেক্টরেট ভবনটি রয়েছে যশোরে, যা ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। এমনকি বাংলা কবিতার এক অনন্য ঘটনার সঙ্গেও যশোরের নাম জড়িয়ে আছে। বাংলায় প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও সনেটের প্রবক্তা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান এই জেলা।
এই জেলায় রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের সদর দপ্তর, বিমান বাহিনীর অন্যতম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি মতিউর রহমান ঘাঁটির কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। খেজুরের রস ও গুড়, ফুলের চাষ ও রপ্তানি, সবজি উৎপাদন, নকশিকাঁথা ও যশোর স্টিচ, মৎস্য রেণুপোনা উৎপাদন, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদনে বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় হলেও অতীতে যশোর কই মাছ ও চিরুনি উৎপাদনে সমৃদ্ধ ছিল। সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের একজন এখানে ঘুমিয়ে আছেন। একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শেখ হাসিনা আইটি পার্ক, দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা বোর্ড, বিমানবন্দর, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালসহ (সিএমএইচ) বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল যশোর জেলার গুরুত্ব অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বন্দরকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে নানা ব্যবসা–বাণিজ্য। বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি–রপ্তানিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের কাজের সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে পুরোনো এই জেলার সমৃদ্ধি ও নাগরিক সেবা বৃদ্ধিতে কিছু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পৌর এলাকার প্রধান রাস্তা ও আন্তজেলা সড়কগুলো আরও প্রশস্ত করা জরুরি। একই সঙ্গে ভৈরব নদের নাব্য ফেরাতে প্রয়োজন খনন। নৌ–যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে বারোবাজার থেকে অভয়নগর পর্যন্ত নদের উভয় তীরে তিন কিলোমিটার পরপর ঘাট বা ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন করা দরকার, যাতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন সহজ হয়। এতে নৌভ্রমণেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা অবদান রাখতে পারে স্থানীয় পর্যটনের বিকাশে।
শিক্ষার উন্নয়নে শহরের ১, ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন তিনটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও খেলার মাঠের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। এতে শিশু–কিশোরদের সুস্থ বিনোদনের পথ উন্মুক্ত হবে। নাগরিক সেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গণশৌচাগার স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন গণশৌচাগারের সংকট শুধু যশোরের নয়, বাংলাদেশের প্রায় সব ছোট–বড় শহরের। আন্তজেলা যোগাযোগের ক্ষেত্রে যশোর থেকে দর্শনা পর্যন্ত রেললাইনকে ডাবল গেজে রূপান্তর এবং বসুন্দিয়া থেকে চূড়ামনকাটি পর্যন্ত রেললাইনকে আন্ডারপাস বা ওভারপাসের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করানো প্রয়োজন।
পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যাতায়াত করছে। অথচ এইি জেলার নাগরিকদের সুচিকিৎসার পর্যাপ্ত ও উন্নত ব্যবস্থা নেই। ২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা যশোরবাসীকে স্বস্তি ও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। এই হাসপাতাল ঘিরে বেশ কিছু বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠলেও তা মানুষের আস্থা কুড়াতে পারছে না। আবার ব্যয় বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নেওয়াও কঠিন। এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান ও কলেবর বাড়ানো প্রয়োজন।
চিকিৎসার প্রসঙ্গ যখন এলই, তখন বলা প্রয়োজন, এই জেলার অনেক রোগী ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়। এ অবস্থায় এই জেলায় আরেকটি ২৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল স্থাপন এবং সদর উপজেলার জন্য উপজেলা কোটায় একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা যেতে পারে। এটি করা হলে চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রনির্ভরতা অনেকাংশে কমবে। এটি শুধু যশোর নয়, বড় জেলা শহরের সবগুলোতেই করা দরকার।
কেবল যাতায়াতব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে বেশি দিন উন্নয়ন ধরে রাখা যাবে না। একে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে শিক্ষা ও চিকিৎসাব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও নাগরিক গড়ে তোলা জরুরি। তাকাতে হবে প্রকৃতির দিকেও। পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন শুধু মুখে নয়, কাজে পরিণত করতে হবে।
যশোর আগের তুলনায় অনেক এগিয়েছে এ কথা সত্য। কিন্তু কিছু সংকটও রয়েছে, যার আশু সমাধান জরুরি। মুক্তেশ্বরী, ভৈরব, কপোতাক্ষ, চিত্রা, কাজলী, ভদ্রা, হরিহর, শ্রী, টেকা ইত্যাদি নদনদী দীর্ঘকাল প্রবাহহীন। বছরের কয়েক মাস এসব নদনদী পানিশূন্য থাকে। বিভিন্ন বিলের পানি নির্গমন পথে বাঁধ ও পাটা দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ফলে যশোরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মৎস্য প্রজনন ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। মুক্তেশ্বরী নদীর মুখে রাস্তা নির্মাণ করায় নদীর প্রবাহে স্থায়ী বাধার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে হরিণা বিল, মনিরামপুর ও কেশবপুরের এক বিশাল অংশে দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তেশ্বরীর উজানের বাধা না তুলে এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ভাটিতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ভদ্রা নদীর গতিপথকে পুকুর হিসেবে বেঁধে নিয়ে তিন দশক ধরে ব্যক্তি পর্যায়ে মাছের চাষ করা হচ্ছে। এর প্রভাবে জীববৈচিত্র্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামাজিক বনায়নের হার ও গতি সাম্প্রতিককালে কমে গেছে। ভূপৃষ্ঠের জলাধারগুলো ভরাট করে ফেলায় সেগুলো পানিশূন্য থাকছে। কমে যাচ্ছে মাটির আর্দ্রতা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন সংকটের সঙ্গে এগুলো যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল করে তুলছে। এ বিষয়গুলোর দিকে যথাযথভাবে নজর দিলে এবং সে অনুযায়ী উন্নয়নের পরিকল্পনা নিলে যশোর সামনে আরও এগিয়ে যাবে।
এটা নিশ্চিত যে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এলাকা হওয়ায় যশোরের সামনে রয়েছে বিরাট সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনা মাথায় রেখে করতে হবে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা। যোগাযোগব্যবস্থার যে উন্নয়ন হয়েছে, তার সুফল যাতে তরুণ উদ্যোক্তারা পান, তার জন্য নীতিসহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে দেশের সবচেয়ে পুরোনো এই জেলা চমক দেখাতে পারবে।
মো. ছোলজার রহমান
সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি এম এম কলেজ
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪