মফিদুল হক
১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনেকভাবে খতিয়ে দেখার রয়েছে। ঘটনাস্থলে সামনে ছিল যে ঘাতকদল, চারপাশে যারা ছিল তাদের সহযোগী, তাদেরও পেছনে ছিল ক্ষমতাধর আরও কিছু মানুষ, সেই সঙ্গে ছিল পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। বিশদ পরিকল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন কেউ কেউ, ইঙ্গিতে সায় দিয়েছেন আরও কেউ, যাঁদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। ১৫ আগস্টের হত্যাভিযান কোনো হঠাৎ নেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না, ঠান্ডা মাথায় নেওয়া হয়েছে এমন পরিকল্পনা, যেখানে সামনে যাদের দেখা যায় তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি থাকে অদেখা। দেশের সীমা ছাড়িয়ে এই কুশীলবদের খোঁজ পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। সেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সহজ নয়, তবে নানাভাবে এর হদিস বের করা সম্ভব। আজকের দিনে এই বাস্তবতা আবার আমাদের স্মরণ করতে হয় এবং সেই নিরীখে অনেক অসমাপ্ত কর্তব্য আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। তবে এখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করা গুরুত্ববহ হলেও একই সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে স্বদেশ ও বিশ্বরাজনীতির প্রবণতা ও ধারা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার যা ছিল পটভূমি, দক্ষতার সঙ্গে যা ব্যবহৃত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যা তো কেবল ক্ষমতার পালাবদল সূচিত করেনি, তা ছিল মতাদর্শ হত্যারও চেষ্টা। আর তাই হত্যাকারীরা তাদের খুনের মিশন সমাপ্ত করে হাজির হয়েছিল বেতারকেন্দ্রে। সেখানে দম্ভভরে হত্যার কথা ঘোষণার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ‘বাংলাদেশ বেতার’ নাম পাল্টে বেতারকেন্দ্রকে চিহ্নিত করল ‘রেডিও বাংলাদেশ’ হিসেবে, শ্রুতি-কল্যাণে যা ছিল ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর সমার্থক। হত্যার বার্তা পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের সরকারকে অভিনন্দন জানাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রের নাম স্বেচ্ছায় পাল্টে অভিহিত করলেন ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ রূপে।
ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত মধ্য-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্ণতর রূপ আমাদের খুঁজে ফিরতে হবে এবং এর জন্য বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষ্য ও ইঙ্গিত যাচাই-বাছাই করার রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড যে রাষ্ট্রপতি হত্যায় সীমিত ছিল না, প্রবল এক শ্রেণি-ঘৃণা এখানে কাজ করেছে, যে শ্রেণিকে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির শক্ত আসনচ্যুত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেটা তলিয়ে দেখার রয়েছে। যে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় উগ্রতার অন্ধতা মোকাবিলা করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর বিপরীত শক্তি দিনে দিনে ঘৃণা ও বিদ্বেষের পাত্র ভরে তুলেছিল ষড়যন্ত্রমূলক নানা কাজ দ্বারা। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আঘাত হানার এই কৌশলে উগ্র ডানপন্থী শক্তির সঙ্গে উগ্র বামের যোগসাজশ রাজনীতির অন্যতর এক সমীকরণ করে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে উপমহাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তান মরিয়া হয়েছিল হৃত পাকিস্তান না উদ্ধার পেলেও হৃত ক্ষমতা যেন আবার তারা ফিরে পায় পূর্বাংশে।
ফলে কেন ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু-হত্যা, সেটা বোঝার জন্য হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাধারার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়বিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তি ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা-গোষ্ঠী। অস্ত্রধারী ঘাতক গোষ্ঠী যখন মেজর জেনারেল খালেদ মোশররফের পাল্টা-অভ্যুত্থানে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছিল, তখন কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশত্যাগ করে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশে আশ্রয় পায় লিবিয়ায়, মুয়াম্মার গাদ্দাফির তথাকথিত ইসলামি বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লবের দেশে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলেন রক্তপাতের মধ্যে, যে রক্তধারা ছিল অগ্রণী মুক্তিযোদ্ধাদের। এরপর ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দুই দিনের মধ্যে জিয়াউর রহমান সংবিধানের চার জাতীয় নীতি খণ্ডিত ও খর্ব করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি পরিবর্তিত করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও মূল্যবোধ পদদলিত করে উলট-পুরাণ চাপিয়ে দেন জাতির ওপর। এই দুর্লক্ষণ অবশ্য এর আগেই ফুটে উঠেছিল যখন ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি সায়েম ফরমান-বলে বাতিল করলেন একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে যোগসাজশকারীদের বিচারের দালাল আইন এবং অভিযুক্তরা বের হয়ে এল কারাগার থেকে, এমনকি যারা সাজাপ্রাপ্ত ছিল তারাও।
জেনারেল জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ইমেজ এবং তাঁর সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবস্থান নিয়ে যে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সেটা ব্যবহৃত হয়েঠিল বহু মানুষকে বহুভাবে বিভ্রান্ত করার জন্য, যাকে বা যে গোষ্ঠীকে যেভাবে সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় প্রাণ দিতে হয়েছে বহু মুক্তিযোদ্ধাকে, বিশেষভাবে যাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অব্যাহত রক্তধারায় জিয়াউর রহমানের রক্তও যুক্ত হলো সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব-সংঘাত উপজাত হয়ে। জিয়াউর রহমান হত্যা ও ক্ষমতার পালাবদল যে আদর্শিক ছিল না, সেটা জেনারেল এরশাদের কর্মকাণ্ড ভালোভাবেই বুঝিয়ে দেয়; বরং একইভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ধর্মকে ঢাল করে সংবিধানের ওপর জেনারেল সাহেব চাপিয়ে দিলেন রাষ্ট্রধর্মের ঘোষণা, সংবিধানের ও বাংলাদেশের মৌল আদর্শের সঙ্গে যা সাংঘর্ষিক।
আমরা এখন উদযাপন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিষণ্ণ আগস্টে এই স্মরণকালে জোর তাগিদ উঠছে বঙ্গবন্ধু-হত্যার নেপথ্যের ঘটনা উদঘাটনের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার আইন জারির মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, খুনিরা পুরস্কৃত হয়েছিল বিভিন্নভাবে রাজনীতিতে তাদের অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা হলেও সেটা সফল হতে পারেনি। বস্তুত বিশাল প্রয়াস চলছিল বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার, তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলদেশের সব অঙ্গ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবহ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক ঝেড়ে-মুছে রাষ্ট্র ও সংবিধানকে ভিন্ন পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুসলিম বাংলা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মোড়কে নানা আদর্শ ফেরি করা হয়েছে, যার ক্ষেত্রে যেটা কার্যকর হয়।
এখন সময় হয়েছে পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস সামগ্রিকতায় বিচার করা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার পূর্বাপর আরও তলিয়ে দেখা। সস্তা রাজনৈতিক তরজার বাইরে গভীর বিচার-বিশ্লেষণের জন্য আরও অনেক তথ্য আহরণ প্রয়োজন, দেশে এবং দেশের বাইরে যেখানে যেভাবে সম্ভব। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার যে হয়েছে প্রচলিত আইনে, অভিযুক্তদের সব ধরনের আইনি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, সেটা বাংলাদেশে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক পন্থা অনুসরণের উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছে। তবে আদালত তো মনোযোগ নিবিষ্ট রাখে অপরাধ সংঘটনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের দিকে, এর কার্যকারণ বিচার গবেষক ও ইতিহাসবিদের কাজ। এই দাবি মেটাতে আমরা এখনো তেমন সক্রিয় হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু-হত্যার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পটভূমি, সংশ্লিষ্ট প্রধান দেশগুলো, তাদের সরকারপ্রধান ও নীতি-নির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক কথাবার্তা অনেক হয়েছে, গবেষণা হয়েছে একান্ত কম। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাক-লড়াই যখন চলছিল, তখন ১৯৭০ সালের নভেম্বরে আমেরিকার গৃহ-আঙিনার দেশ চিলিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন বামপন্থী সমাজতন্ত্রী নেতা সালভাদর আলেন্দে। বিপুলভাবে জনসমর্থিত এই আলেন্দে সরকারকে সুস্থিরভাবে শাসন পরিচালনার সুযোগ দেয়নি প্রবল পরাক্রমী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ১৯৭৩ সালে প্রাণ হারান প্রেসিডেন্ট আলেন্দে, সামরিক শাসনের অধীনে চিলিতে শুরু হয় উল্টোযাত্রা, যার অবসান ঘটে জেনারেল পিনোশের জারি করা অ্যামনেস্টি বা অপরাধ মওকুফ আইন বাতিল এবং তাঁর বিচার শুরুর মাধ্যমে, যে বিচারকালে ২০০১ সালে তাঁর মৃত্যু ঘটে। আলেন্দে-হত্যাসংক্রান্ত বহু দলিলপত্র উদ্ধার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ, যে নাম থেকে মনে হতে পারে এটা কোনো সরকারি সংস্থা। প্রকৃতপক্ষে এটা সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থা এবং ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করে তারা তথ্য আহরণ করে থাকে। সালভেদর আলেন্দে হত্যা নিয়ে তাদের আহরিত তথ্য ঘটনার অনেক অজানা দিক প্রকাশ্য করেছে এবং গবেষকদের বিপুল সহায়তা জুগিয়েছে ঘটনার পূর্বাপর সাজিয়ে তুলতে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালের অনেক দলিল এনএসএ উদঘাটন করেছে, সেটাও গবেষকদের কাজে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুজিব হত্যা নিয়ে কোনো দলিল এখানে পাওয়া যাবে না। তার কারণ অবশ্য জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই প্রতিষ্ঠানে এমন তথ্য ও দলিলপত্র উদ্ধারে কেউ কখনো কাজ করেননি। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের অর্থে পরিচালিত হয়, তাই তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো কাজ হাতে নিতে পারে না, কোনো গবেষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এমন কাজ করতে পারেন। সে জন্য সেই গবেষককে কোনো প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি নিয়ে কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। কেননা এটি শ্রম ও সময়সাধ্য কাজ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র চালাচালি করে অনেক সময় ব্যয় করে একেকটি দলিল উদ্ধার করতে হয়। এনএসএতে কাজ করার জন্য আমাদেরও উপযুক্তসংখ্যক গবেষক নিয়োগ করা দরকার।
এমনি তথ্য-দলিলপত্র তো দেশের নানা দপ্তরে নানাভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। সেসব নিয়ে আমাদের কাজ হয়েছে খুব কম। সম্প্রতি এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পুলিশের রেকর্ড পর্যালোচনা করে চৌদ্দ খণ্ডে তার প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাধারা নিয়ে এমন কর্তব্য পালন আবশ্যকীয়, আমরা দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় না দিলে বাংলাদেশের উলট-পুরাণের পাঠ নিতে কখনোই সক্ষম হব না, সেই পাঠ ছাড়া সত্য-পুরাণের হদিসও আমরা পাব না। সেই কর্মের আহ্বান যেন আমরা শুনি, এমন প্রত্যাশা সবার।
লেখক: ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার যে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা, তার পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। তারপরও এই রক্তপাতের উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে ঘাতকেরা অভিযান পরিচালনা করেছিল বত্রিশ নম্বর সড়কের অরক্ষিত বাসভবনে, নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা যারা করেছিল ভাবলেশহীনভাবে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু-হত্যার বর্বরতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনেকভাবে খতিয়ে দেখার রয়েছে। ঘটনাস্থলে সামনে ছিল যে ঘাতকদল, চারপাশে যারা ছিল তাদের সহযোগী, তাদেরও পেছনে ছিল ক্ষমতাধর আরও কিছু মানুষ, সেই সঙ্গে ছিল পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। বিশদ পরিকল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছেন কেউ কেউ, ইঙ্গিতে সায় দিয়েছেন আরও কেউ, যাঁদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। ১৫ আগস্টের হত্যাভিযান কোনো হঠাৎ নেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না, ঠান্ডা মাথায় নেওয়া হয়েছে এমন পরিকল্পনা, যেখানে সামনে যাদের দেখা যায় তার চেয়ে বেশি ব্যক্তি থাকে অদেখা। দেশের সীমা ছাড়িয়ে এই কুশীলবদের খোঁজ পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। সেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা সহজ নয়, তবে নানাভাবে এর হদিস বের করা সম্ভব। আজকের দিনে এই বাস্তবতা আবার আমাদের স্মরণ করতে হয় এবং সেই নিরীখে অনেক অসমাপ্ত কর্তব্য আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। তবে এখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করা গুরুত্ববহ হলেও একই সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে স্বদেশ ও বিশ্বরাজনীতির প্রবণতা ও ধারা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার যা ছিল পটভূমি, দক্ষতার সঙ্গে যা ব্যবহৃত হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যা তো কেবল ক্ষমতার পালাবদল সূচিত করেনি, তা ছিল মতাদর্শ হত্যারও চেষ্টা। আর তাই হত্যাকারীরা তাদের খুনের মিশন সমাপ্ত করে হাজির হয়েছিল বেতারকেন্দ্রে। সেখানে দম্ভভরে হত্যার কথা ঘোষণার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ‘বাংলাদেশ বেতার’ নাম পাল্টে বেতারকেন্দ্রকে চিহ্নিত করল ‘রেডিও বাংলাদেশ’ হিসেবে, শ্রুতি-কল্যাণে যা ছিল ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর সমার্থক। হত্যার বার্তা পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের সরকারকে অভিনন্দন জানাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে রাষ্ট্রের নাম স্বেচ্ছায় পাল্টে অভিহিত করলেন ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ রূপে।
ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত মধ্য-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্ণতর রূপ আমাদের খুঁজে ফিরতে হবে এবং এর জন্য বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষ্য ও ইঙ্গিত যাচাই-বাছাই করার রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড যে রাষ্ট্রপতি হত্যায় সীমিত ছিল না, প্রবল এক শ্রেণি-ঘৃণা এখানে কাজ করেছে, যে শ্রেণিকে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির শক্ত আসনচ্যুত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেটা তলিয়ে দেখার রয়েছে। যে সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় উগ্রতার অন্ধতা মোকাবিলা করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর বিপরীত শক্তি দিনে দিনে ঘৃণা ও বিদ্বেষের পাত্র ভরে তুলেছিল ষড়যন্ত্রমূলক নানা কাজ দ্বারা। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে আঘাত হানার এই কৌশলে উগ্র ডানপন্থী শক্তির সঙ্গে উগ্র বামের যোগসাজশ রাজনীতির অন্যতর এক সমীকরণ করে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে উপমহাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তান মরিয়া হয়েছিল হৃত পাকিস্তান না উদ্ধার পেলেও হৃত ক্ষমতা যেন আবার তারা ফিরে পায় পূর্বাংশে।
ফলে কেন ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু-হত্যা, সেটা বোঝার জন্য হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাধারার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়বিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তি ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা-গোষ্ঠী। অস্ত্রধারী ঘাতক গোষ্ঠী যখন মেজর জেনারেল খালেদ মোশররফের পাল্টা-অভ্যুত্থানে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় পড়েছিল, তখন কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশত্যাগ করে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশে আশ্রয় পায় লিবিয়ায়, মুয়াম্মার গাদ্দাফির তথাকথিত ইসলামি বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লবের দেশে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলেন রক্তপাতের মধ্যে, যে রক্তধারা ছিল অগ্রণী মুক্তিযোদ্ধাদের। এরপর ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দুই দিনের মধ্যে জিয়াউর রহমান সংবিধানের চার জাতীয় নীতি খণ্ডিত ও খর্ব করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি পরিবর্তিত করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও মূল্যবোধ পদদলিত করে উলট-পুরাণ চাপিয়ে দেন জাতির ওপর। এই দুর্লক্ষণ অবশ্য এর আগেই ফুটে উঠেছিল যখন ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি সায়েম ফরমান-বলে বাতিল করলেন একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে যোগসাজশকারীদের বিচারের দালাল আইন এবং অভিযুক্তরা বের হয়ে এল কারাগার থেকে, এমনকি যারা সাজাপ্রাপ্ত ছিল তারাও।
জেনারেল জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ইমেজ এবং তাঁর সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অবস্থান নিয়ে যে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সেটা ব্যবহৃত হয়েঠিল বহু মানুষকে বহুভাবে বিভ্রান্ত করার জন্য, যাকে বা যে গোষ্ঠীকে যেভাবে সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় প্রাণ দিতে হয়েছে বহু মুক্তিযোদ্ধাকে, বিশেষভাবে যাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অব্যাহত রক্তধারায় জিয়াউর রহমানের রক্তও যুক্ত হলো সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব-সংঘাত উপজাত হয়ে। জিয়াউর রহমান হত্যা ও ক্ষমতার পালাবদল যে আদর্শিক ছিল না, সেটা জেনারেল এরশাদের কর্মকাণ্ড ভালোভাবেই বুঝিয়ে দেয়; বরং একইভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ধর্মকে ঢাল করে সংবিধানের ওপর জেনারেল সাহেব চাপিয়ে দিলেন রাষ্ট্রধর্মের ঘোষণা, সংবিধানের ও বাংলাদেশের মৌল আদর্শের সঙ্গে যা সাংঘর্ষিক।
আমরা এখন উদযাপন করছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিষণ্ণ আগস্টে এই স্মরণকালে জোর তাগিদ উঠছে বঙ্গবন্ধু-হত্যার নেপথ্যের ঘটনা উদঘাটনের। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার আইন জারির মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, খুনিরা পুরস্কৃত হয়েছিল বিভিন্নভাবে রাজনীতিতে তাদের অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা হলেও সেটা সফল হতে পারেনি। বস্তুত বিশাল প্রয়াস চলছিল বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার, তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলদেশের সব অঙ্গ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবহ অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক ঝেড়ে-মুছে রাষ্ট্র ও সংবিধানকে ভিন্ন পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুসলিম বাংলা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি মোড়কে নানা আদর্শ ফেরি করা হয়েছে, যার ক্ষেত্রে যেটা কার্যকর হয়।
এখন সময় হয়েছে পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস সামগ্রিকতায় বিচার করা, বঙ্গবন্ধু-হত্যার পূর্বাপর আরও তলিয়ে দেখা। সস্তা রাজনৈতিক তরজার বাইরে গভীর বিচার-বিশ্লেষণের জন্য আরও অনেক তথ্য আহরণ প্রয়োজন, দেশে এবং দেশের বাইরে যেখানে যেভাবে সম্ভব। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার যে হয়েছে প্রচলিত আইনে, অভিযুক্তদের সব ধরনের আইনি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, সেটা বাংলাদেশে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক পন্থা অনুসরণের উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছে। তবে আদালত তো মনোযোগ নিবিষ্ট রাখে অপরাধ সংঘটনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের দিকে, এর কার্যকারণ বিচার গবেষক ও ইতিহাসবিদের কাজ। এই দাবি মেটাতে আমরা এখনো তেমন সক্রিয় হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু-হত্যার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পটভূমি, সংশ্লিষ্ট প্রধান দেশগুলো, তাদের সরকারপ্রধান ও নীতি-নির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক কথাবার্তা অনেক হয়েছে, গবেষণা হয়েছে একান্ত কম। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাক-লড়াই যখন চলছিল, তখন ১৯৭০ সালের নভেম্বরে আমেরিকার গৃহ-আঙিনার দেশ চিলিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন বামপন্থী সমাজতন্ত্রী নেতা সালভাদর আলেন্দে। বিপুলভাবে জনসমর্থিত এই আলেন্দে সরকারকে সুস্থিরভাবে শাসন পরিচালনার সুযোগ দেয়নি প্রবল পরাক্রমী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ১৯৭৩ সালে প্রাণ হারান প্রেসিডেন্ট আলেন্দে, সামরিক শাসনের অধীনে চিলিতে শুরু হয় উল্টোযাত্রা, যার অবসান ঘটে জেনারেল পিনোশের জারি করা অ্যামনেস্টি বা অপরাধ মওকুফ আইন বাতিল এবং তাঁর বিচার শুরুর মাধ্যমে, যে বিচারকালে ২০০১ সালে তাঁর মৃত্যু ঘটে। আলেন্দে-হত্যাসংক্রান্ত বহু দলিলপত্র উদ্ধার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ, যে নাম থেকে মনে হতে পারে এটা কোনো সরকারি সংস্থা। প্রকৃতপক্ষে এটা সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থা এবং ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করে তারা তথ্য আহরণ করে থাকে। সালভেদর আলেন্দে হত্যা নিয়ে তাদের আহরিত তথ্য ঘটনার অনেক অজানা দিক প্রকাশ্য করেছে এবং গবেষকদের বিপুল সহায়তা জুগিয়েছে ঘটনার পূর্বাপর সাজিয়ে তুলতে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালের অনেক দলিল এনএসএ উদঘাটন করেছে, সেটাও গবেষকদের কাজে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুজিব হত্যা নিয়ে কোনো দলিল এখানে পাওয়া যাবে না। তার কারণ অবশ্য জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই প্রতিষ্ঠানে এমন তথ্য ও দলিলপত্র উদ্ধারে কেউ কখনো কাজ করেননি। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের অর্থে পরিচালিত হয়, তাই তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনো কাজ হাতে নিতে পারে না, কোনো গবেষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এমন কাজ করতে পারেন। সে জন্য সেই গবেষককে কোনো প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি নিয়ে কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। কেননা এটি শ্রম ও সময়সাধ্য কাজ, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র চালাচালি করে অনেক সময় ব্যয় করে একেকটি দলিল উদ্ধার করতে হয়। এনএসএতে কাজ করার জন্য আমাদেরও উপযুক্তসংখ্যক গবেষক নিয়োগ করা দরকার।
এমনি তথ্য-দলিলপত্র তো দেশের নানা দপ্তরে নানাভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। সেসব নিয়ে আমাদের কাজ হয়েছে খুব কম। সম্প্রতি এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছে পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পুলিশের রেকর্ড পর্যালোচনা করে চৌদ্দ খণ্ডে তার প্রকাশনা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাধারা নিয়ে এমন কর্তব্য পালন আবশ্যকীয়, আমরা দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় না দিলে বাংলাদেশের উলট-পুরাণের পাঠ নিতে কখনোই সক্ষম হব না, সেই পাঠ ছাড়া সত্য-পুরাণের হদিসও আমরা পাব না। সেই কর্মের আহ্বান যেন আমরা শুনি, এমন প্রত্যাশা সবার।
লেখক: ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪