মহা. হবিবুর রহমান
করোনার প্রাদুর্ভাবে স্থবির বিশ্ব। দেশেও পড়েছে এর বিরূপ প্রভাব। তারপরও নানা প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী। আর এটি সম্ভব হচ্ছে পরিকল্পনামাফিক সবকিছু করার কারণে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) এ মহানগরকে নিয়ে যাচ্ছে এক অনন্য উচ্চতায়। অথচ ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর শতকোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। বলতেই হয়, তিনি রাজশাহীকে একটি পরিচ্ছন্ন, উন্নত ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছেন। শুরুতেই সিটি করপোরেশনে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন মাসের শুরুতেই পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি।
রাসিক এখন নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের দিকে গুরুত্ব দিয়েছে। তাই ধীরে ধীরে রাজশাহী পরিণত হয়েছে সবুজ ও ফুলের নগরীতে। এর ফলও মিলেছে। দেশের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অব দ্য ইয়ার-২০২০ সম্মাননা অর্জন করেছে এই নগর। গত দুই বছরে শহরের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। আলিফ-লাম-মিম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত প্রায় ৬.৮ কিলোমিটারের চার লেনবিশিষ্ট সংযোগ সড়কটির কথাই ধরা যাক। প্রায় ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহানগরের রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক থেকে মোহনপুর-রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই সড়কের দুপাশে রয়েছে ফুটপাত। রয়েছে পদচারী-সেতু, আটটি কালভার্ট, মেডিয়ান ও ট্রাফিক কাঠামো। একই প্রকল্পের আওতায় হয়েছে রাজশাহীর প্রথম ফ্লাইওভার, যা নগরবাসীর নজর কেড়েছে।
মহানগরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আলুপট্টি মোড় থেকে তালাইমারী। প্রায় ১৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের আওতায় বর্তমান সড়কটিকে প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। মহানগরীর মণিচত্বর থেকে ফায়ার সার্ভিস মোড় পর্যন্ত সড়কটি সরু হওয়ায় তীব্র যানজট হয়। এ সড়কও চার লেনে উন্নীত করছে সিটি করপোরেশন। সদর হাসপাতাল পর্যন্ত সড়কের পাশে চলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সীমানাপ্রাচীর, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণকাজ।
বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত সড়কটি রাজশাহী নগরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এটিও চার লেনে উন্নীত হয়েছে। আগে যে সড়ক ৩০ ফুট প্রশস্ত ছিল, এখন তা ৮০ ফুটে উন্নীত হয়েছে। এক পাশে রাখা হয়েছে বাইসাইকেল লেন। রয়েছে প্রশস্ত ফুটপাত ও ড্রেন। মাঝের সড়ক বিভাজকে করা হয়েছে বৃক্ষরোপণ। সেখানে নানা রং-বেরঙের ফুল শোভা ছড়াচ্ছে।
এই প্রকল্পগুলো ছাড়াও নগরের বিভিন্ন ছোট-বড় সড়কের অধিকাংশের প্রশস্তকরণের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। কোনো কোনোটির কাজ চলমান। বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলছে সড়ক মেরামতের কাজ। এখানেই শেষ নয়, থেমে থাকা বহুতল বাণিজ্যিক ভবনগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করতেও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাসিক। বদলে যাচ্ছে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী সোনাদিঘি। ১৬ তলাবিশিষ্ট সিটি সেন্টার ও আধুনিক মসজিদের পাশাপাশি দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হচ্ছে ওয়াকওয়ে, বসার স্থানসহ দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র। ঐতিহ্যবাহী ভুবনমোহন পার্কেরও উন্নয়ন করা হচ্ছে।
নগরের গোরস্থান এবং কাঁচাবাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোর উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রাজশাহী শিশুপার্কে নতুন নতুন রাইড স্থাপন, সিটি কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণসহ অনেক ছোট-বড় অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এর অনেক কিছুই এরই মধ্যে দৃশ্যমান। করোনাও এসব কাজের গতি রুখতে পারেনি।
শুধু অবকাঠামো উন্নয়নই নয়, বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান ও রাজশাহীর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চলছে। সিটি মেয়রের এই চেষ্টায় সাড়াও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছেন। করোনার মধ্যেই গত বছরের ৪ জুলাই বিসিক শিল্পনগরী-২ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নকাজের উদ্বোধন হয়েছে। পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের কেচুয়াতৈল এলাকায় ৫০ একর এলাকায় ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠছে বিসিক-২। এর পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চামড়া শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও কাজ চলছে। এগিয়ে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজও, যেখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে পদ্মা নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে এনে আন্তর্জাতিক নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১০৯টি পরিবার পেয়েছে পাকা বাড়ি। পদ্মাপাড়ের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফেরাতে লালন শাহ মুক্তমঞ্চ, পদ্মা গার্ডেনসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। ফলে নতুন রূপ পেয়েছে রাজশাহীবাসীর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র পদ্মাপাড়। যোগাযোগের ক্ষেত্রে রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। হজরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়।
আলোকায়নের ফলে রাজশাহী এখন আলো ঝলমলে শহর। প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আলোকায়ন করা হয়েছে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এবং অনেক উঁচুতে স্থাপিত এই সড়কবাতিগুলো নগরকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। শিক্ষার্থীদের দিকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ মনোযোগ। বেসরকারি লোকনাথ স্কুলসহ নগরীর ছয়টি সরকারি স্কুল পাচ্ছে নতুন ভবন।
এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর রাজশাহী মহানগর। একে সবুজের মহানগরীতে পরিণত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘জিরো সয়েল প্রকল্প’ নামে একটি সবুজায়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সিটি করপোরেশন। পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ঠেকাতে, শহরের রাস্তা ও ফুটপাত বাদে অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গা সবুজ গাছে ঢেকে দিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পদ্মা নদীর চরে নেওয়া হয়েছে সবুজ বনায়নের পরিকল্পনা। দূষণ রোধে নগরের মধ্যে ডিজেলচালিত অটোরিকশার বদলে ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়ক আলোকায়নের জন্য সৌরবিদ্যুচ্চালিত বাতি লাগানো হয়েছে। পুকুর সংরক্ষণে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে ৪০ জন কাউন্সিলরের মাধ্যমে প্রায় ৭ হাজার ৫২০টি ফলদ ও ঔষধি গাছ জনগণের মধ্যে বিতরণ করে তা রোপণ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এসব উদ্যোগের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে। ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণা কমানোয় দক্ষতা দেখিয়ে বিশ্বের সেরা শহর নির্বাচিত হয় রাজশাহী।
২০১৮ সালে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় দায়িত্ব গ্রহণের সময় মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছিলেন, তিনি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। রাজশাহীবাসীকে তিনি স্বপ্ন দেখাতে চান এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে চান। তিনি সেটা করেছেন ও করছেন। এখন নগরবাসীর দায়িত্ব সুন্দর শহরকে সুন্দর রাখা। আমরা যেন একটু সচেতন থাকি। পরিচ্ছন্ন নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখি।
মহা. হবিবুর রহমান
সাবেক অধ্যক্ষ, রাজশাহী কলেজ
করোনার প্রাদুর্ভাবে স্থবির বিশ্ব। দেশেও পড়েছে এর বিরূপ প্রভাব। তারপরও নানা প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী। আর এটি সম্ভব হচ্ছে পরিকল্পনামাফিক সবকিছু করার কারণে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) এ মহানগরকে নিয়ে যাচ্ছে এক অনন্য উচ্চতায়। অথচ ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর শতকোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। বলতেই হয়, তিনি রাজশাহীকে একটি পরিচ্ছন্ন, উন্নত ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছেন। শুরুতেই সিটি করপোরেশনে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন মাসের শুরুতেই পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি।
রাসিক এখন নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের দিকে গুরুত্ব দিয়েছে। তাই ধীরে ধীরে রাজশাহী পরিণত হয়েছে সবুজ ও ফুলের নগরীতে। এর ফলও মিলেছে। দেশের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অব দ্য ইয়ার-২০২০ সম্মাননা অর্জন করেছে এই নগর। গত দুই বছরে শহরের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। আলিফ-লাম-মিম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত প্রায় ৬.৮ কিলোমিটারের চার লেনবিশিষ্ট সংযোগ সড়কটির কথাই ধরা যাক। প্রায় ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহানগরের রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক থেকে মোহনপুর-রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই সড়কের দুপাশে রয়েছে ফুটপাত। রয়েছে পদচারী-সেতু, আটটি কালভার্ট, মেডিয়ান ও ট্রাফিক কাঠামো। একই প্রকল্পের আওতায় হয়েছে রাজশাহীর প্রথম ফ্লাইওভার, যা নগরবাসীর নজর কেড়েছে।
মহানগরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আলুপট্টি মোড় থেকে তালাইমারী। প্রায় ১৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের আওতায় বর্তমান সড়কটিকে প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। মহানগরীর মণিচত্বর থেকে ফায়ার সার্ভিস মোড় পর্যন্ত সড়কটি সরু হওয়ায় তীব্র যানজট হয়। এ সড়কও চার লেনে উন্নীত করছে সিটি করপোরেশন। সদর হাসপাতাল পর্যন্ত সড়কের পাশে চলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সীমানাপ্রাচীর, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণকাজ।
বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত সড়কটি রাজশাহী নগরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এটিও চার লেনে উন্নীত হয়েছে। আগে যে সড়ক ৩০ ফুট প্রশস্ত ছিল, এখন তা ৮০ ফুটে উন্নীত হয়েছে। এক পাশে রাখা হয়েছে বাইসাইকেল লেন। রয়েছে প্রশস্ত ফুটপাত ও ড্রেন। মাঝের সড়ক বিভাজকে করা হয়েছে বৃক্ষরোপণ। সেখানে নানা রং-বেরঙের ফুল শোভা ছড়াচ্ছে।
এই প্রকল্পগুলো ছাড়াও নগরের বিভিন্ন ছোট-বড় সড়কের অধিকাংশের প্রশস্তকরণের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। কোনো কোনোটির কাজ চলমান। বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলছে সড়ক মেরামতের কাজ। এখানেই শেষ নয়, থেমে থাকা বহুতল বাণিজ্যিক ভবনগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করতেও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাসিক। বদলে যাচ্ছে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী সোনাদিঘি। ১৬ তলাবিশিষ্ট সিটি সেন্টার ও আধুনিক মসজিদের পাশাপাশি দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হচ্ছে ওয়াকওয়ে, বসার স্থানসহ দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র। ঐতিহ্যবাহী ভুবনমোহন পার্কেরও উন্নয়ন করা হচ্ছে।
নগরের গোরস্থান এবং কাঁচাবাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোর উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রাজশাহী শিশুপার্কে নতুন নতুন রাইড স্থাপন, সিটি কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণসহ অনেক ছোট-বড় অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এর অনেক কিছুই এরই মধ্যে দৃশ্যমান। করোনাও এসব কাজের গতি রুখতে পারেনি।
শুধু অবকাঠামো উন্নয়নই নয়, বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান ও রাজশাহীর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চলছে। সিটি মেয়রের এই চেষ্টায় সাড়াও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছেন। করোনার মধ্যেই গত বছরের ৪ জুলাই বিসিক শিল্পনগরী-২ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নকাজের উদ্বোধন হয়েছে। পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের কেচুয়াতৈল এলাকায় ৫০ একর এলাকায় ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠছে বিসিক-২। এর পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চামড়া শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও কাজ চলছে। এগিয়ে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজও, যেখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে পদ্মা নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে এনে আন্তর্জাতিক নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১০৯টি পরিবার পেয়েছে পাকা বাড়ি। পদ্মাপাড়ের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফেরাতে লালন শাহ মুক্তমঞ্চ, পদ্মা গার্ডেনসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। ফলে নতুন রূপ পেয়েছে রাজশাহীবাসীর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র পদ্মাপাড়। যোগাযোগের ক্ষেত্রে রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করা নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। হজরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়।
আলোকায়নের ফলে রাজশাহী এখন আলো ঝলমলে শহর। প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আলোকায়ন করা হয়েছে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এবং অনেক উঁচুতে স্থাপিত এই সড়কবাতিগুলো নগরকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। শিক্ষার্থীদের দিকেও দেওয়া হয়েছে বিশেষ মনোযোগ। বেসরকারি লোকনাথ স্কুলসহ নগরীর ছয়টি সরকারি স্কুল পাচ্ছে নতুন ভবন।
এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর রাজশাহী মহানগর। একে সবুজের মহানগরীতে পরিণত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘জিরো সয়েল প্রকল্প’ নামে একটি সবুজায়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সিটি করপোরেশন। পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ঠেকাতে, শহরের রাস্তা ও ফুটপাত বাদে অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গা সবুজ গাছে ঢেকে দিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পদ্মা নদীর চরে নেওয়া হয়েছে সবুজ বনায়নের পরিকল্পনা। দূষণ রোধে নগরের মধ্যে ডিজেলচালিত অটোরিকশার বদলে ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়ক আলোকায়নের জন্য সৌরবিদ্যুচ্চালিত বাতি লাগানো হয়েছে। পুকুর সংরক্ষণে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে ৪০ জন কাউন্সিলরের মাধ্যমে প্রায় ৭ হাজার ৫২০টি ফলদ ও ঔষধি গাছ জনগণের মধ্যে বিতরণ করে তা রোপণ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এসব উদ্যোগের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে। ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণা কমানোয় দক্ষতা দেখিয়ে বিশ্বের সেরা শহর নির্বাচিত হয় রাজশাহী।
২০১৮ সালে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় দায়িত্ব গ্রহণের সময় মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছিলেন, তিনি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। রাজশাহীবাসীকে তিনি স্বপ্ন দেখাতে চান এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে চান। তিনি সেটা করেছেন ও করছেন। এখন নগরবাসীর দায়িত্ব সুন্দর শহরকে সুন্দর রাখা। আমরা যেন একটু সচেতন থাকি। পরিচ্ছন্ন নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখি।
মহা. হবিবুর রহমান
সাবেক অধ্যক্ষ, রাজশাহী কলেজ
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪