মনোজ কুমার সাহা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জ। এ নিয়ে গোপালগঞ্জের মানুষ গর্বিত। একসময়ের পশ্চাৎপদ এই জেলা আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কল্যাণে উন্নয়নের পথে অনেক দূর এগিয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর গোপালগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এসব উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে একসময়ের পশ্চাৎপদ ও অবহেলিত গোপালগঞ্জ জনপদের মানুষ। ব্যাপক উন্নয়নে এ জেলার মানুষের জীবনমানে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এ জেলার আর্থসামাজিক অবস্থা গেছে পাল্টে।
গোপালগঞ্জ ছিল ভৌগোলিকভাবে নিম্ন জলাভূমিবেষ্টিত একটি পশ্চাৎপদ জেলা। বিল, বাঁওড়, নদী, খালের অপরূপ শোভামণ্ডিত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেন শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ঘুমিয়ে আছেন জাতির পিতা। এটি এখন বাঙালির তীর্থস্থান। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসন থেকে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে মুসলিম লীগের প্রার্থী ও পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী অহেদুজ্জামানকে পরাজিত করেন। এ কারণে গোপালগঞ্জ পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে। কিন্তু সেই থেকে গোপালগঞ্জের নির্বাচনী আসনগুলো আওয়ামী লীগের দখলে ছিল।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে মনোনিবেশ করেন। তাঁর সরকার গোপালগঞ্জের উন্নয়নে অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর গোপালগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যায় বন্ধ হয়ে। ১৯৭৫ সালের পর খোন্দকার মোশতাক আহমদ, জিয়াউর রহমান, এ এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার গোপালগঞ্জের কোনো উন্নয়ন করেনি। উন্নয়নবঞ্চিত গোপালগঞ্জ অবহেলিত ও অনুন্নত জনপদে পরিণত হয়।
সে সময় ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে আসতে প্রায় দুই দিন লাগত। জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলা সদর ও ইউনিয়নের যোগাযোগব্যবস্থা ছিল না। গোটা জেলা ছিল বিচ্ছিন্ন। কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেত না। কৃষিপণ্য বাজারজাতের ব্যবস্থা ছিল না। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গোপালগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করা হয়। সে সময় মহাসড়ক, সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, গ্রামীণ সড়ক, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, বিদ্যুৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন ভবন নির্মাণ, শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্র, শেখ কামাল যুব প্রশিক্ষণকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স, পর্যটন মোটেল, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স ও পল্লি উন্নয়ন একাডেমি, ঘাঘর সেতু, মোল্লাহাট সেতু, হরিদাসপুর সেতু, মানিকহার সেতু, উলপুর সেতুসহ গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে গোপালগঞ্জের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন প্রকল্পের ১ হাজার কোটি টাকা ফেরত নিয়ে যায় সে সরকার। তারপর গোপালগঞ্জের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে পুনরায় গোপালগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, পিটিআই, শেখ হাসিনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ চালু করা হয়েছে। শেষ হয়েছে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শেখ লুৎফর রহমান ডেন্টাল কলেজ, ট্রমা সেন্টারের নির্মাণকাজও। কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের তৃতীয় প্ল্যান্টে ওষুধ উৎপাদন শুরু হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানে গোপালগঞ্জের ১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। গোপালগঞ্জ-গোবরা-রাজশাহী রেললাইনে ২০১৮ সাল থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের প্রায় সব সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে কৃষির উন্নয়ন ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধান গবেষণা, কৃষি গবেষণা, পরমাণু কৃষি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি সব সেবা পৌঁছে দিতে গোপালগঞ্জে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসসহ ৩১টি সরকারি দপ্তরের অফিস বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশ বেতার গোপালগঞ্জ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর প্রতিদিন সেখান থেকে সম্প্রচারিত হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল অ্যান্ড জিমনেসিয়াম, মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য শেখ ফজলুল হক মণি স্মৃতি অডিটরিয়াম, কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্তের উনশিয়া গ্রামের বাড়িতে মিলনায়তন, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় মিলনায়তন নির্মিত হয়েছে। চিত্তবিনোদনের জন্য গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় শেখ রাসেল শিশুপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া পাটগাতী সেতু, চাপাইল সেতু, সাতপাড় সেতু, জলিরপাড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত পাটগাতী লঞ্চঘাটে ল্যান্ডিং স্টেশন ও টুঙ্গিপাড়া স্টিমার ঘাটে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলায় তারাইল পাচুড়িয়া সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জেলার প্রধান নদী মধুমতী খনন করে বরিশাল-খুলনা নৌরুটের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেচকাজ সচল রাখতে ৫ উপজেলার ২৫ হাজার কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। শিল্পকারখানা স্থাপনে গোপালগঞ্জের হরিদাসপুরে সম্প্রসারিত বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে গোপালগঞ্জের মানিকহার, চরশুকতাইল, উলপুর, কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা, ভাটিয়াপাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে কোটালীপাড়ায় হেমায়েত বাহিনীর অবদানের স্মৃতি ধরে রাখতে হেমায়েত বাহিনী জাদুঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। গোপালগঞ্জ জেলা ও এর পাঁচ উপজেলায় মোট ছয়টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় নতুন নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জনগণকে একটি স্থান থেকে সব সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যথাক্রমে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের করে দেওয়া হয়েছে বীর নিবাস।
এই সার্বিক উন্নয়নের প্রভাব পড়েছে জেলার অর্থনীতিতে। এ জেলায় মাছ, দুধ, মাংস, ডিম ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে। সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে ন্যায্যমূল্যে জমি অধিগ্রহণ করায় অনেক পরিবারে অর্থাগম হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকায় এ জেলার অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। এখানে জমির দাম বেড়েছে বহুগুণ। প্রসার ঘটেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সম্প্রসারিত হয়েছে।
জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা সদর ও গ্রাম পর্যায়েও এখন সুউচ্চ ভবনের দেখা মিলছে। ব্যাপক উন্নয়নে গোপালগঞ্জের প্রায় ১৬ লাখ মানুষ যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রে সুফল পাচ্ছে। সেচ প্রকল্প, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ কৃষি প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকায় গোপালগঞ্জে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। সহজেই উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন। এ জেলায় শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত হয়েছে। অন্তত ৬ লাখ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী নিরাপদ ও সুপেয় পানির আওতায় এসেছে। জেলার টোটাল শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে এ জেলায় শিক্ষিতের হার বেড়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছে। গৃহহীন ও ভূমিহীন ৭৮৬ পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছে এরই মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আরও ৭০০ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া গৃহহীন আরও ১ হাজার পরিবারকে সরকার ঘর করে দিয়েছে।
সরকার গোপালগঞ্জের উন্নয়নে নতুন নতুন আরও অনেক কল্যাণকর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে জাতির পিতার জেলা গোপালগঞ্জ– এমনটিই প্রত্যাশা সবার।
মনোজ কুমার সাহা, সাংবাদিক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জ। এ নিয়ে গোপালগঞ্জের মানুষ গর্বিত। একসময়ের পশ্চাৎপদ এই জেলা আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কল্যাণে উন্নয়নের পথে অনেক দূর এগিয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর গোপালগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এসব উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে একসময়ের পশ্চাৎপদ ও অবহেলিত গোপালগঞ্জ জনপদের মানুষ। ব্যাপক উন্নয়নে এ জেলার মানুষের জীবনমানে এসেছে আমূল পরিবর্তন। এ জেলার আর্থসামাজিক অবস্থা গেছে পাল্টে।
গোপালগঞ্জ ছিল ভৌগোলিকভাবে নিম্ন জলাভূমিবেষ্টিত একটি পশ্চাৎপদ জেলা। বিল, বাঁওড়, নদী, খালের অপরূপ শোভামণ্ডিত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেন শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ঘুমিয়ে আছেন জাতির পিতা। এটি এখন বাঙালির তীর্থস্থান। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসন থেকে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে মুসলিম লীগের প্রার্থী ও পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী অহেদুজ্জামানকে পরাজিত করেন। এ কারণে গোপালগঞ্জ পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে। কিন্তু সেই থেকে গোপালগঞ্জের নির্বাচনী আসনগুলো আওয়ামী লীগের দখলে ছিল।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে মনোনিবেশ করেন। তাঁর সরকার গোপালগঞ্জের উন্নয়নে অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর গোপালগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যায় বন্ধ হয়ে। ১৯৭৫ সালের পর খোন্দকার মোশতাক আহমদ, জিয়াউর রহমান, এ এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার গোপালগঞ্জের কোনো উন্নয়ন করেনি। উন্নয়নবঞ্চিত গোপালগঞ্জ অবহেলিত ও অনুন্নত জনপদে পরিণত হয়।
সে সময় ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে আসতে প্রায় দুই দিন লাগত। জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলা সদর ও ইউনিয়নের যোগাযোগব্যবস্থা ছিল না। গোটা জেলা ছিল বিচ্ছিন্ন। কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেত না। কৃষিপণ্য বাজারজাতের ব্যবস্থা ছিল না। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গোপালগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করা হয়। সে সময় মহাসড়ক, সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, গ্রামীণ সড়ক, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, বিদ্যুৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন ভবন নির্মাণ, শেখ রাসেল দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্র, শেখ কামাল যুব প্রশিক্ষণকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স, পর্যটন মোটেল, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স ও পল্লি উন্নয়ন একাডেমি, ঘাঘর সেতু, মোল্লাহাট সেতু, হরিদাসপুর সেতু, মানিকহার সেতু, উলপুর সেতুসহ গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে গোপালগঞ্জের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন প্রকল্পের ১ হাজার কোটি টাকা ফেরত নিয়ে যায় সে সরকার। তারপর গোপালগঞ্জের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে পুনরায় গোপালগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, পিটিআই, শেখ হাসিনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ চালু করা হয়েছে। শেষ হয়েছে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শেখ লুৎফর রহমান ডেন্টাল কলেজ, ট্রমা সেন্টারের নির্মাণকাজও। কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের তৃতীয় প্ল্যান্টে ওষুধ উৎপাদন শুরু হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানে গোপালগঞ্জের ১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। গোপালগঞ্জ-গোবরা-রাজশাহী রেললাইনে ২০১৮ সাল থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের প্রায় সব সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে কৃষির উন্নয়ন ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধান গবেষণা, কৃষি গবেষণা, পরমাণু কৃষি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি সব সেবা পৌঁছে দিতে গোপালগঞ্জে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসসহ ৩১টি সরকারি দপ্তরের অফিস বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশ বেতার গোপালগঞ্জ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর প্রতিদিন সেখান থেকে সম্প্রচারিত হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল অ্যান্ড জিমনেসিয়াম, মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য শেখ ফজলুল হক মণি স্মৃতি অডিটরিয়াম, কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্তের উনশিয়া গ্রামের বাড়িতে মিলনায়তন, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় মিলনায়তন নির্মিত হয়েছে। চিত্তবিনোদনের জন্য গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় শেখ রাসেল শিশুপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া পাটগাতী সেতু, চাপাইল সেতু, সাতপাড় সেতু, জলিরপাড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত পাটগাতী লঞ্চঘাটে ল্যান্ডিং স্টেশন ও টুঙ্গিপাড়া স্টিমার ঘাটে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলায় তারাইল পাচুড়িয়া সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জেলার প্রধান নদী মধুমতী খনন করে বরিশাল-খুলনা নৌরুটের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেচকাজ সচল রাখতে ৫ উপজেলার ২৫ হাজার কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। শিল্পকারখানা স্থাপনে গোপালগঞ্জের হরিদাসপুরে সম্প্রসারিত বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে গোপালগঞ্জের মানিকহার, চরশুকতাইল, উলপুর, কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা, ভাটিয়াপাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে কোটালীপাড়ায় হেমায়েত বাহিনীর অবদানের স্মৃতি ধরে রাখতে হেমায়েত বাহিনী জাদুঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। গোপালগঞ্জ জেলা ও এর পাঁচ উপজেলায় মোট ছয়টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় নতুন নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জনগণকে একটি স্থান থেকে সব সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যথাক্রমে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের করে দেওয়া হয়েছে বীর নিবাস।
এই সার্বিক উন্নয়নের প্রভাব পড়েছে জেলার অর্থনীতিতে। এ জেলায় মাছ, দুধ, মাংস, ডিম ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে। সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে ন্যায্যমূল্যে জমি অধিগ্রহণ করায় অনেক পরিবারে অর্থাগম হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকায় এ জেলার অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। এখানে জমির দাম বেড়েছে বহুগুণ। প্রসার ঘটেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সম্প্রসারিত হয়েছে।
জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা সদর ও গ্রাম পর্যায়েও এখন সুউচ্চ ভবনের দেখা মিলছে। ব্যাপক উন্নয়নে গোপালগঞ্জের প্রায় ১৬ লাখ মানুষ যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রে সুফল পাচ্ছে। সেচ প্রকল্প, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ কৃষি প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকায় গোপালগঞ্জে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। সহজেই উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন। এ জেলায় শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত হয়েছে। অন্তত ৬ লাখ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী নিরাপদ ও সুপেয় পানির আওতায় এসেছে। জেলার টোটাল শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে এ জেলায় শিক্ষিতের হার বেড়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছে। গৃহহীন ও ভূমিহীন ৭৮৬ পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছে এরই মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আরও ৭০০ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া গৃহহীন আরও ১ হাজার পরিবারকে সরকার ঘর করে দিয়েছে।
সরকার গোপালগঞ্জের উন্নয়নে নতুন নতুন আরও অনেক কল্যাণকর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাবে জাতির পিতার জেলা গোপালগঞ্জ– এমনটিই প্রত্যাশা সবার।
মনোজ কুমার সাহা, সাংবাদিক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪