মনসুর উদ্দিন
প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি বৃহত্তর সিলেট। এই বিভাগেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হবিগঞ্জ। প্রকৃতি অকৃপণভাবে সাজিয়েছে হবিগঞ্জকে। খোয়াই, করাঙ্গী, সুতাং, সুনাই, রত্না, ভেড়ামোহনা, কুশিয়ারা, বিবিয়ানা নদীবিধৌত এই জনপদ। এর একদিকে বিস্তীর্ণ হাওর অপরদিকে বনজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা। প্রকৃতির রম্য নিকেতন বৃহত্তর সিলেটের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ। পাহাড়, হাওর, নদী, চা ও রাবার বাগান, বনজসম্পদ, গ্যাসসহ অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, খাসিয়া, টিপরা উপজাতি এবং মণিপুরি সম্প্রদায়ের বসবাসে সমৃদ্ধ হবিগঞ্জ। ৮টি উপজেলা, ৭৭টি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভাসহ ২ হাজার ১৯৬টি গ্রামের জনসংখ্যা ১৮ লক্ষাধিক। ১৮৭৮ সালে হবিগঞ্জ মহকুমায় এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়।
পুরাতন ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক দিয়ে তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে ম্যানেজার বাংলোর পাশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত বুলেট আকৃতির ব্যতিক্রমধর্মী স্মৃতিসৌধ রয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিসৌধের পাশেই মনোরম লেক। স্মৃতিসৌধের পর পুরোনো মহাসড়ক ধরে আরও কিছুদূর এগিয়ে গেলে রঘুনন্দন পাহাড়ের অবস্থিত সাতছড়ি ফরেস্টরেঞ্জ অফিস। এখানে রয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। ২০০৫ সালে ২৪৩ হেক্টর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এই জাতীয় উদ্যান। এখানে রয়েছে ১৯৭ প্রজাতির জীব, যার মধ্যে ১৪৯ প্রজাতির পাখি, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী জীব, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬ প্রজাতির উভচর জীব। এই জাতীয় উদ্যান ঘিরে আছে ৯টি চা–বাগান, পাশেই রয়েছে পাম তেলের বাগান।
বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত আগরগাছ, বাঁশ ও বেত চাষ প্রকল্প। সাতছড়ি এলাকায় রয়েছে ২০টি টিপরা পরিবারের বসবাস। তারা জুম চাষ করে এবং বন বিভাগের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ১৯৬৪ সালে নির্মিত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডেরআওতাধীন শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পাওয়ার প্ল্যান্টের পাশে রয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত আরও দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এর পূর্ব পাশে রয়েছে ২০৪০ একর এলাকাজুড়ে স্থাপিত শাহজিবাজার রাবার চাষ প্রকল্প; দক্ষিণে রয়েছে হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড। গ্যাসফিল্ড এলাকায় ফিল্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ উদ্যোগে ৭ একর এলাকায় গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম ফ্রুটস ভ্যালি। এতে বিভিন্ন জাতের ঔষধি, ফুল ও ফলের ২০০ প্রজাতির গাছ, রং-রেঙের পোষা পাখি রয়েছে। প্যাগোডা আকৃতির পাকা প্যাভিলিয়ন, রেস্ট হাউস এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এ ভ্যালি পরিদর্শন করা যায়। মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বির্স্তীণ এলাকাজুড়ে ইদানীং তৈরি হচ্ছে দেশের বড় বড় শিল্পকারখানার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। শাহজিবাজার থেকে সাত কিলোমিটার দূরে রয়েছে উত্তর-পশ্চিম দিকে রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামে রয়েছে সুলতানি আমলে নির্মিত শংকর পাশা শাহি মসজিদ; যা তখনকার সময়ের অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বহন করছে।
যেতে পারেন, বাহুবল উপজেলার ফয়েজাবাদ পাহাড়ে। পুরাতন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জি এলাকায় রয়েছে ১২৫টি খাসিয়া পরিবারের বসবাস। নিকটবর্তী মুছাই ও বৈরাগী খাসিয়াপুঞ্জিতে রয়েছে কয়েকটি খাসিয়া পরিবার। এই উপজাতিদের পুঞ্জিপ্রধান ‘মন্ত্রীর’ অনুমতি নিয়ে খাসিয়া পুঞ্জিতে গেলে এদের জীবনযাত্রার বৈচিত্র্য দেখা যায়। আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জি বাজারে প্রায় সারা বছরই আনারস ও লেবু পাইকারিদরে বিক্রি হয়। এ এলাকায় প্রচুর কাঁঠালও উৎপাদন হয়। এখানে রয়েছে রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, রাবার ও চা–বাগান। আলিয়াছড়া থেকে চুনারুঘাটের দিকে এগিয়ে গেলে পথে পড়বে মুরারবন্দ মাজার শরিফ। এখানে হজরত শাহজালাল (র.) সফর সঙ্গীদের অন্যতম হজরত সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহশালার (র.) এবং হজরত কুতুবুল আউলিয়াসহ অনেক পীর–আউলিয়ার মাজার। মাজার এলাকায় শত শত জামগাছ দেখে মনে হবে কোনো অভিজ্ঞ উদ্যান বিশেষজ্ঞ পরিকল্পিতভাবে এই গাছগুলো রোপণ করেছেন। জানা যায়, প্রাকৃতিক নিয়মেই এই গাছগুলো জন্মেছে। হবিগঞ্জের বাজারে মুরারবন্দের সু-স্বাদু জামের কদর অনেক বেশি। মাজার দেখা শেষে আরও দক্ষিণে চলে যেতে পারেন সীমান্তবর্তী বাল্লা রোডে। চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ও আহমদাবাদ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি জনগোষ্ঠীর বসবাস। শিক্ষা ক্ষেত্রে মণিপুরিরা এগিয়ে যাওয়ায় দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তারা বিভিন্ন অফিস–আদালতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। এখানকার কালেঙ্গা পাহাড়ে রয়েছে কয়েকটি টিপরা পরিবার। রেমায় রয়েছে বন্য প্রাণী ও জীবজন্তু সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত অভয়ারণ্য। সীমান্তবর্তী এলাকা বাল্লায় খোয়াই নদীর এপারে দাঁড়িয়ে ওপারে ভারতের খোয়াই মহকুমা শহরের একাংশ দেখা যায়। ফেরার পথে বিকল্প সড়কে চাঁনপুর চা–বাগান ঘুরে আসা যায়। শহরের উত্তর দিকে ২২ কিলোমিটার দূরবর্তী উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ গ্রাম বানিয়াচং। বহিঃশক্রর আক্রমণ থেকে গ্রামকে রক্ষার জন্য খননকৃত গড়ের খালবেষ্টিত বানিয়াচং গ্রামের আয়তন ৪ বর্গকিলোমিটার। এখানে রয়েছে রাজা গৌড়গোবিন্দের বংশধরদের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, সুলতানি আমলে নির্মিত বিবির মোকাম ও পুরানবাগ মসজিদ। এ ছাড়া গ্রামের মাঝখানে রয়েছে ইতিহাস খ্যাত রানি কমলাবতীর দিঘি, যা সাগরদিঘি নামেও পরিচিত। বানিয়াচং উপজেলা সদরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রায় ১০ মাইল দূরে রয়েছে প্রাচীন বিথঙ্গল আখড়া। ত্রিপুরার মহারাজা প্রতিবছরই এ আখড়ায় আসতেন। এইআখড়ায় যাওয়ার জন্য বর্ষাকালই উপযুক্ত সময়। তখন শহরের পার্শ্ববর্তী কালারডোবা নৌকাঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে ১ ঘণ্টায় বিথঙ্গল যাওয়া যায়।
বর্ষাকালে হবিগঞ্জের ভাটি অঞ্চলের আরেকরূপ। চারদিকে শুধু অথৈ পানি। হাওর এলাকায় দূরের গ্রামগুলোকে দেখে মনে হয় যেন পানির ওপর হাঁস ভাসছে। বর্ষায় সারা দিনের জন্য ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা পরিদর্শনকালে মাছ ধরা, নৌকাবাইচসহ বর্ষার শাশ্বত রূপ দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন। নাগুড়ায় রয়েছে দেশের প্রাচীনতম ধান গবেষণা কেন্দ্র। পাশেই রয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত শচীন্দ্র কলেজ। নাগুড়া থেকে ১৫ মাইল উত্তরে নবীগঞ্জ উপজেলা সদর। এই উপজেলা ‘লন্ডনি উপজেলা’ হিসেবে খ্যাত। এখানকার জনসংখ্যার একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ইংল্যান্ডে বসবাস করছে। নবীগঞ্জ থেকে পূর্ব দিকে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড। বাহুবল উপজেলার রূপাইছড়া রাবার বাগান। ১৯৬২ একর এলাকাজুড়ে এই বাগানে রয়েছে ২ সহস্রাধিক রাবারগাছ। পাশেই রয়েছে বৃন্দাবন চা-বাগান। জেলায় চাবাগানের সংখ্যা ২৪টি। রূপাইছড়া থেকে বের হয়ে আরও কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে মধুপুর চা–বাগানের নিকটস্থ পাহাড়িয়া এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত দ্য প্যালেস রিসোর্ট ও স্পাদেখে যেতে পারেন। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন থাকা-খাওয়া ও বিনোদনের সুযোগসংবলিত এই রিসোর্টটি ইতিমধ্যেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রকৃতির লীলা ভূমি বৃহত্তর সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ জেলা হবিগঞ্জের পর্যটন স্পটগুলোকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা গেলে এ জেলা সারা দেশে পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
মনসুর উদ্দিন
আহমেদ ইকবাল সাংবাদিক
প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি বৃহত্তর সিলেট। এই বিভাগেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হবিগঞ্জ। প্রকৃতি অকৃপণভাবে সাজিয়েছে হবিগঞ্জকে। খোয়াই, করাঙ্গী, সুতাং, সুনাই, রত্না, ভেড়ামোহনা, কুশিয়ারা, বিবিয়ানা নদীবিধৌত এই জনপদ। এর একদিকে বিস্তীর্ণ হাওর অপরদিকে বনজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা। প্রকৃতির রম্য নিকেতন বৃহত্তর সিলেটের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ। পাহাড়, হাওর, নদী, চা ও রাবার বাগান, বনজসম্পদ, গ্যাসসহ অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, খাসিয়া, টিপরা উপজাতি এবং মণিপুরি সম্প্রদায়ের বসবাসে সমৃদ্ধ হবিগঞ্জ। ৮টি উপজেলা, ৭৭টি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভাসহ ২ হাজার ১৯৬টি গ্রামের জনসংখ্যা ১৮ লক্ষাধিক। ১৮৭৮ সালে হবিগঞ্জ মহকুমায় এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়।
পুরাতন ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক দিয়ে তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে ম্যানেজার বাংলোর পাশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত বুলেট আকৃতির ব্যতিক্রমধর্মী স্মৃতিসৌধ রয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিসৌধের পাশেই মনোরম লেক। স্মৃতিসৌধের পর পুরোনো মহাসড়ক ধরে আরও কিছুদূর এগিয়ে গেলে রঘুনন্দন পাহাড়ের অবস্থিত সাতছড়ি ফরেস্টরেঞ্জ অফিস। এখানে রয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। ২০০৫ সালে ২৪৩ হেক্টর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এই জাতীয় উদ্যান। এখানে রয়েছে ১৯৭ প্রজাতির জীব, যার মধ্যে ১৪৯ প্রজাতির পাখি, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী জীব, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬ প্রজাতির উভচর জীব। এই জাতীয় উদ্যান ঘিরে আছে ৯টি চা–বাগান, পাশেই রয়েছে পাম তেলের বাগান।
বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত আগরগাছ, বাঁশ ও বেত চাষ প্রকল্প। সাতছড়ি এলাকায় রয়েছে ২০টি টিপরা পরিবারের বসবাস। তারা জুম চাষ করে এবং বন বিভাগের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ১৯৬৪ সালে নির্মিত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডেরআওতাধীন শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পাওয়ার প্ল্যান্টের পাশে রয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত আরও দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এর পূর্ব পাশে রয়েছে ২০৪০ একর এলাকাজুড়ে স্থাপিত শাহজিবাজার রাবার চাষ প্রকল্প; দক্ষিণে রয়েছে হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ড। গ্যাসফিল্ড এলাকায় ফিল্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ উদ্যোগে ৭ একর এলাকায় গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম ফ্রুটস ভ্যালি। এতে বিভিন্ন জাতের ঔষধি, ফুল ও ফলের ২০০ প্রজাতির গাছ, রং-রেঙের পোষা পাখি রয়েছে। প্যাগোডা আকৃতির পাকা প্যাভিলিয়ন, রেস্ট হাউস এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এ ভ্যালি পরিদর্শন করা যায়। মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বির্স্তীণ এলাকাজুড়ে ইদানীং তৈরি হচ্ছে দেশের বড় বড় শিল্পকারখানার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। শাহজিবাজার থেকে সাত কিলোমিটার দূরে রয়েছে উত্তর-পশ্চিম দিকে রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল গ্রামে রয়েছে সুলতানি আমলে নির্মিত শংকর পাশা শাহি মসজিদ; যা তখনকার সময়ের অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বহন করছে।
যেতে পারেন, বাহুবল উপজেলার ফয়েজাবাদ পাহাড়ে। পুরাতন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জি এলাকায় রয়েছে ১২৫টি খাসিয়া পরিবারের বসবাস। নিকটবর্তী মুছাই ও বৈরাগী খাসিয়াপুঞ্জিতে রয়েছে কয়েকটি খাসিয়া পরিবার। এই উপজাতিদের পুঞ্জিপ্রধান ‘মন্ত্রীর’ অনুমতি নিয়ে খাসিয়া পুঞ্জিতে গেলে এদের জীবনযাত্রার বৈচিত্র্য দেখা যায়। আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জি বাজারে প্রায় সারা বছরই আনারস ও লেবু পাইকারিদরে বিক্রি হয়। এ এলাকায় প্রচুর কাঁঠালও উৎপাদন হয়। এখানে রয়েছে রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, রাবার ও চা–বাগান। আলিয়াছড়া থেকে চুনারুঘাটের দিকে এগিয়ে গেলে পথে পড়বে মুরারবন্দ মাজার শরিফ। এখানে হজরত শাহজালাল (র.) সফর সঙ্গীদের অন্যতম হজরত সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহশালার (র.) এবং হজরত কুতুবুল আউলিয়াসহ অনেক পীর–আউলিয়ার মাজার। মাজার এলাকায় শত শত জামগাছ দেখে মনে হবে কোনো অভিজ্ঞ উদ্যান বিশেষজ্ঞ পরিকল্পিতভাবে এই গাছগুলো রোপণ করেছেন। জানা যায়, প্রাকৃতিক নিয়মেই এই গাছগুলো জন্মেছে। হবিগঞ্জের বাজারে মুরারবন্দের সু-স্বাদু জামের কদর অনেক বেশি। মাজার দেখা শেষে আরও দক্ষিণে চলে যেতে পারেন সীমান্তবর্তী বাল্লা রোডে। চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ও আহমদাবাদ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি জনগোষ্ঠীর বসবাস। শিক্ষা ক্ষেত্রে মণিপুরিরা এগিয়ে যাওয়ায় দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তারা বিভিন্ন অফিস–আদালতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। এখানকার কালেঙ্গা পাহাড়ে রয়েছে কয়েকটি টিপরা পরিবার। রেমায় রয়েছে বন্য প্রাণী ও জীবজন্তু সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত অভয়ারণ্য। সীমান্তবর্তী এলাকা বাল্লায় খোয়াই নদীর এপারে দাঁড়িয়ে ওপারে ভারতের খোয়াই মহকুমা শহরের একাংশ দেখা যায়। ফেরার পথে বিকল্প সড়কে চাঁনপুর চা–বাগান ঘুরে আসা যায়। শহরের উত্তর দিকে ২২ কিলোমিটার দূরবর্তী উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ গ্রাম বানিয়াচং। বহিঃশক্রর আক্রমণ থেকে গ্রামকে রক্ষার জন্য খননকৃত গড়ের খালবেষ্টিত বানিয়াচং গ্রামের আয়তন ৪ বর্গকিলোমিটার। এখানে রয়েছে রাজা গৌড়গোবিন্দের বংশধরদের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, সুলতানি আমলে নির্মিত বিবির মোকাম ও পুরানবাগ মসজিদ। এ ছাড়া গ্রামের মাঝখানে রয়েছে ইতিহাস খ্যাত রানি কমলাবতীর দিঘি, যা সাগরদিঘি নামেও পরিচিত। বানিয়াচং উপজেলা সদরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রায় ১০ মাইল দূরে রয়েছে প্রাচীন বিথঙ্গল আখড়া। ত্রিপুরার মহারাজা প্রতিবছরই এ আখড়ায় আসতেন। এইআখড়ায় যাওয়ার জন্য বর্ষাকালই উপযুক্ত সময়। তখন শহরের পার্শ্ববর্তী কালারডোবা নৌকাঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে ১ ঘণ্টায় বিথঙ্গল যাওয়া যায়।
বর্ষাকালে হবিগঞ্জের ভাটি অঞ্চলের আরেকরূপ। চারদিকে শুধু অথৈ পানি। হাওর এলাকায় দূরের গ্রামগুলোকে দেখে মনে হয় যেন পানির ওপর হাঁস ভাসছে। বর্ষায় সারা দিনের জন্য ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা পরিদর্শনকালে মাছ ধরা, নৌকাবাইচসহ বর্ষার শাশ্বত রূপ দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন। নাগুড়ায় রয়েছে দেশের প্রাচীনতম ধান গবেষণা কেন্দ্র। পাশেই রয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত শচীন্দ্র কলেজ। নাগুড়া থেকে ১৫ মাইল উত্তরে নবীগঞ্জ উপজেলা সদর। এই উপজেলা ‘লন্ডনি উপজেলা’ হিসেবে খ্যাত। এখানকার জনসংখ্যার একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ইংল্যান্ডে বসবাস করছে। নবীগঞ্জ থেকে পূর্ব দিকে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড। বাহুবল উপজেলার রূপাইছড়া রাবার বাগান। ১৯৬২ একর এলাকাজুড়ে এই বাগানে রয়েছে ২ সহস্রাধিক রাবারগাছ। পাশেই রয়েছে বৃন্দাবন চা-বাগান। জেলায় চাবাগানের সংখ্যা ২৪টি। রূপাইছড়া থেকে বের হয়ে আরও কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে মধুপুর চা–বাগানের নিকটস্থ পাহাড়িয়া এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত দ্য প্যালেস রিসোর্ট ও স্পাদেখে যেতে পারেন। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন থাকা-খাওয়া ও বিনোদনের সুযোগসংবলিত এই রিসোর্টটি ইতিমধ্যেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রকৃতির লীলা ভূমি বৃহত্তর সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ জেলা হবিগঞ্জের পর্যটন স্পটগুলোকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা গেলে এ জেলা সারা দেশে পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
মনসুর উদ্দিন
আহমেদ ইকবাল সাংবাদিক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪