আবুল মোমেন
এই বঙ্গের মানুষ বরাবর উদ্যোগী, প্রকৃতির খামখেয়ালির বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা টিকে থাকে এবং সামান্য সুযোগকেও কাজে লাগিয়ে ভাগ্য ফেরাতে সক্ষম। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এই বৈশিষ্ট্যের কথা প্রথম স্পষ্ট করে বলেছিলেন মনীষী হুমায়ুন কবির। এ দেশের প্রান্তিক মানুষ কৈবর্ত বা জেলে সম্প্রদায় সফল বিদ্রোহ করেছিল সেই দশম শতাব্দীতে। বিদ্রোহীরা শক্তিধর পাল রাজাকে যুদ্ধে হারিয়ে সিংহাসন দখল করেছিল, রাজ্যের বড় অংশই তাদের অধিকারে এসেছিল। দুই প্রজন্ম অন্তত রাজ্য দখলেও রেখেছিল। বাংলার বিখ্যাত বারভূঁইয়ারা ছিলেন আফগান ও রাজপুত অভিজাতদের বংশধর, কিন্তু তাদের বাহিনীতে দেশীয় মানুষের সমাগম ছিল যথেষ্ট। বিদ্রোহের ধারা মোগল আমলে বেড়েছিল। তখনকার অনেক কৃষক বিদ্রোহের খবর জানা যায়। আর ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতাসংগ্রামে বাঙালিরাই তো নেতৃত্ব দিয়েছে।
বাঙালি জীবনের বরাবরের সঙ্গী ছিল দারিদ্র্য, তার ওপর সেকালে মড়ক ও দুর্ভিক্ষের প্রকোপ ছিল বেশ। উর্বর ভূমির কৃষিকাজে ও নদীমাতৃক দেশের জেলেজীবনে কখনো দারিদ্র্য কাটেনি। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির পালাবদল শুরু হয় ইউরোপে নৌ-বাণিজ্যের প্রসার থেকে, উন্নত নৌযান ও উন্নত অস্ত্রসমৃদ্ধ নৌবহর নিয়ে এতে এগিয়ে ছিল ইউরোপীয় বিভিন্ন জাতি। এর সঙ্গে যোগ হয় কয়লা-লোহাসহ মূল্যবান খনিজ আবিষ্কারের সুফল। এভাবে শক্তিধর ইউরোপ অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে সাম্রাজ্য বিস্তার করেও বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পালাবদলের সুযোগ ক্রমে অন্যদের জন্য খুলেছে প্রথম শিল্পবিপ্লবের পরে, তত দিনে তারা উপনিবেশের খাঁচায় বন্দী। তাই ঔপনিবেশিক নিগড় থেকে রাজনৈতিক মুক্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে বিংশ শতাব্দীর ষাট-সত্তর দশক পর্যন্ত। এই তিন ক্ষেত্রে–রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-মুক্তি ছাড়া কোনো জাতির প্রকৃত মুক্তি ও উন্নতি সম্ভব নয়।
বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণে যুগপৎ স্বাধীনতা ও মুক্তির কথা বলেছেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’–এ কথা বলে তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির ইশারাই দিয়েছিলেন। সেই সময়ে পাকিস্তাানি অপশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় শৃঙ্খল থেকে মুক্তির লড়াই করছিল। রাজনৈতিক সংগ্রামকে শাণিত করার জন্য দুই প্রদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য, বাংলা ও বাঙালির বঞ্চনা-উপেক্ষা এবং অর্থনৈতিক শোষণের কথা দৃষ্টান্তসহ তুলে ধরা হয়েছিল ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফায়। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, সেভাবে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছিলেন। তবে তাঁর সময় গেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও অগ্রযাত্রার ভিত রচনায়। দুর্ভাগ্য দ্বিতীয় বিপ্লবের কাজ প্রবর্তনের আগেই তিনি সপরিবারে নিহত হলেন।
তারপরে টানা কুড়ি বছর চলেছে বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত বহু মানুষের ত্যাগে অর্জিত রাজনৈতিক মুক্তির পথকে ভুল প্রমাণিত করে বিস্মৃতির গর্ভে ঠেলে দেওয়ার এবং দেশকে পাকিস্তানি রাজনৈতিক ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে। মাঝে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সংক্ষিপ্ত শাসনকালে রাজনীতিকে সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা শুরু হতে হতে সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তা ছাড়া, ক্ষমতার জন্য তখন থেকে যেসব আপস শুরু হয়েছিল, তার ফলে পূর্ণোদ্যমে রাজনীতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঢেলে সাজানো সহজ ছিল না। তার পরের বিএনপি-জামায়াত সরকার রাজনৈতিক অঙ্গনে পাকিস্তানি পন্থার গতি জোরদার এবং অর্থনীতিতে দেশকে পুঁজিবাদী ধারায় মুক্তবাজারের পথে চালিত করেছিল। সমাজতান্ত্রিক পথ ছেড়ে পুঁজিবাদের পথে যাত্রা বস্তুত জিয়ার আমল থেকেই শুরু হয়েছিল। বিশ্বায়নের বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ সরকারও সেই পথেই অর্থনীতির চাকা চালিয়ে নিচ্ছে।
পরবর্তী প্রযুক্তি ও শিল্পবিপ্লবের ফল আমাদের দেশের শিল্পায়নে খুব ব্যবহৃত না হলেও কৃষিতে তা দারুণ প্রভাব ফেলেছে এবং কৃষিপ্রধান দেশটি কৃষি উৎপাদনে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছে। প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলো, কৃষির বৈচিত্র্য বেড়ে সবজি, ফল এবং অন্যান্য শস্য উৎপাদনে বৈশ্বিক মানদণ্ডে দেশ উচ্চ অবস্থানে উঠেছে। প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনেও আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। মুক্তবাজারে অন্তত পোশাক খাতে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান রয়েছে। অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে কর্মরত অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানো টাকা। মূলত কৃষিসহ এই তিনের ওপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। বলা বাহুল্য অন্যান্য খাতও ক্রমে বেড়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র ধরা পড়ে দেশীয় উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সমন্বয় থেকে। এই উন্নয়নের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন সামাজিক খাতেও–গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, টিকা কার্যক্রম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবস্থাপনার বিস্তার ইত্যাদিতে।
জনসংখ্যাবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালো করেছে। এসব উন্নয়ন ও সক্ষমতা থেকে বোঝা যায়, এ দেশের মানুষ তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য উদ্যমশীলতা কখনো হারায়নি। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া বা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি অর্জনে নতুন প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সুযোগ গ্রহণে এই উদ্যমী মনোভাবের প্রকাশ বারবার দেখা গেছে। বাংলাদেশ এগিয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে–এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
তারপরও অনেক পথচলা বাকি। যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত আমরা দিয়েছি, তাকে যথেষ্ট টেকসই কি বলা যাবে? কারণ, যে তিনটি মূল খাতের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে দুটি সম্পূর্ণই অন্যের চাহিদা ও বাস্তবতার ওপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাক খাতে প্রথমত প্রতিযোগিতা প্রবল, দ্বিতীয়ত, এর চাহিদা ও মূল্য ক্রেতার নানান শর্তের ওপর নির্ভরশীল। মুনাফা নিশ্চিত নয়, সরকারের নানা বদান্যতা-সহায়তা এখনো প্রয়োজন হচ্ছে। নিজস্ব পুঁজির বদলে থাকতে হচ্ছে ব্যাংকের অর্থায়নের নির্ভরতায়। এ সূত্রে ঋণখেলাপি সংস্কৃতির কথাও মনে রাখতে হবে, যা শিল্পায়নের দুর্বলতাই প্রকাশ করে। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিকেরা মূলত নানা নির্মাণকাজের সস্তা শ্রমিক। এ জীবন মানবেতর, ব্যক্তি ও দেশের জন্য অমর্যাদার। তদুপরি যেকোনো সময় নির্মাণের গতি স্তিমিত হবে। এ সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার জন্য আমরা শ্রমজীবী মানুষের বহুমুখী কর্মে দক্ষতা অর্জনের উপযোগী কোনো প্রকল্প হাতে নিইনি। বিশ্বায়নের যুগে কাজের বিশ্ববাজার নিশ্চয় থাকবে, হয়তো তার বিস্তারও ঘটবে, কিন্তু কর্মীর চাহিদায় অদক্ষতার কোনো স্থান আর তখন থাকবে না, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। আমাদের শিক্ষার সংখ্যাগত বিস্তার ঘটলেও বিশ্ববাজারের মান বিবেচনায় তা অনেক পিছিয়ে, ক্ষেত্রবিশেষে তামাদি হয়ে রয়েছে। কৃষি উৎপাদনে সমৃদ্ধি ঘটলেও এখানে সংকট হলো বাজারজাতকরণ-বিপণন ব্যবস্থা ভঙ্গুর, ফড়িয়াদের দাপটে পুঁজি পুনরুদ্ধার অনিশ্চিত এবং রাজনৈতিক বখাটেদের উৎপাতে পুরো ব্যবস্থাই দুর্নীতিগ্রস্ত। ফলে মূল উৎপাদক সচ্ছলতা অর্জন করে সত্যিকারের খামারি-উৎপাদক হতে পারছে না। অর্থনৈতিক বিবেচনায় দেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। আর এই অতিমারির সময় দ্রুত দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধিতে স্পষ্ট হলো অর্থনীতির ভিত কত নাজুক। এই দুর্বলতাগুলো সহজে কাটবে বলে মনে হয় না, কারণ সামাজিক বেশ কিছু সূচকে চমকপ্রদ অগ্রগতি ঘটলেও শিক্ষার দুর্গতি, রাজনৈতিক অবক্ষয় এবং শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও দুর্নীতিগ্রস্ততা সমাজকে পিছু টানছে। আইনের শাসনের ভিত্তিই হলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু বিকাশ, পরিণত নিরপেক্ষ আচরণে সমাজের দৃঢ় ভিত অর্জন। একমাত্র পদ্ধতির দক্ষতা-কার্যকারিতাই ধীরে ধীরে দুর্নীতির ফাঁকগুলো ভরাট হতে পারে। কিন্তু দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানই এমন লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে না, তাই সেভাবে বিকশিতও হচ্ছে না।
শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্তি সব শুভ প্রয়াস বানচাল করে দেয়। তদুপরি গত শতকের আশির দশক থেকে ইসলামি মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান এবং বিপরীতে প্রগতিশীল চেতনার অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে সামগ্রিকভাবে সমাজচেতনা রক্ষণশীল অচলায়তনে বাধা পড়েছে। এতেও শিক্ষাঙ্গনে মুক্ত, সৃজনশীল বাতাবরণ সৃষ্টি কঠিন হয়ে পড়েছে। এর জন্য বাড়তি চাপ, বিশেষত রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সে অনুযায়ী সরকারের উদ্যোগী ভূমিকা প্রয়োজন। তার ঘাটতি চোখে পড়ার মতো।
সব মিলিয়ে যুগোপযোগী মানবসম্পদ সৃষ্টিতে দেশ পিছিয়ে পড়ছে। সামাজিক নৈতিকতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অধরাই থেকে যাচ্ছে, কারণ উভয় ক্ষেত্রে শাসকের চেয়েও শাসিত নাগরিকের অগ্রণী ভূমিকাই জরুরি। এদিকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডটি ভূমি ও জলবায়ুগত অনিশ্চয়তার মধ্যে তার বিপুল জনগণকে কোনো কালেই লালন-ধারণ করতে পারেনি। এখান থেকে মানুষ পার্শ্ববর্তী নানা অঞ্চলে সব সময় ছড়িয়ে পড়েছিল, আজও পড়ছে। কিন্তু যুগের দাবি হলো নতুন বাস্তবতায় যে কর্মজগৎ সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য উপযুক্ত জনশক্তি যাদের ভাষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ব্যবহারিক ও আচরণগত সংস্কৃতির নতুন উন্নত ধরন চাই। অদক্ষ শ্রমজীবীর চাহিদা ক্রমেই কমতে থাকবে।
মানবসভ্যতা স্থাণুও নয়, নিখিল বিশ্ব একরকমও নয়, মানুষের মতোই তা পরিবর্তনশীল। তাই এখানে কালের গতি-প্রকৃতি বোঝা, গুরুত্ব ও ভরকেন্দ্র চেনা আর সমকালের দাবির অগ্রাধিকার নির্ণয়ে সক্ষমতা জরুরি। এই জটিল বাস্তবতায় জাতীয় বিবেচনায় কোন অগ্রগতিটি আপাত, মেকি–তা প্রায়ই বোঝা যায় না। চূড়ান্ত বিচারে আদত অগ্রগতি চেনা ও তার পথ নিশ্চিত করাই যথার্থ নেতৃত্বের আসল কাজ। আর অগ্রগতি মানে কেবল এগিয়ে চলা নয়, মাঝে মাঝে থামাও এর অঙ্গ, থেমে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন জরুরি। তারপর আবার পথচলা। থেমে যে কাজ তার গুরুত্ব চলার চেয়ে কম নয়, কারণ এতেই বেপথে যাওয়ার ভুল এড়ানো যায়।
আবুল মোমেন, সাংবাদিক, কবি, প্রাবন্ধিক
এই বঙ্গের মানুষ বরাবর উদ্যোগী, প্রকৃতির খামখেয়ালির বিরুদ্ধে লড়াই করে তারা টিকে থাকে এবং সামান্য সুযোগকেও কাজে লাগিয়ে ভাগ্য ফেরাতে সক্ষম। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এই বৈশিষ্ট্যের কথা প্রথম স্পষ্ট করে বলেছিলেন মনীষী হুমায়ুন কবির। এ দেশের প্রান্তিক মানুষ কৈবর্ত বা জেলে সম্প্রদায় সফল বিদ্রোহ করেছিল সেই দশম শতাব্দীতে। বিদ্রোহীরা শক্তিধর পাল রাজাকে যুদ্ধে হারিয়ে সিংহাসন দখল করেছিল, রাজ্যের বড় অংশই তাদের অধিকারে এসেছিল। দুই প্রজন্ম অন্তত রাজ্য দখলেও রেখেছিল। বাংলার বিখ্যাত বারভূঁইয়ারা ছিলেন আফগান ও রাজপুত অভিজাতদের বংশধর, কিন্তু তাদের বাহিনীতে দেশীয় মানুষের সমাগম ছিল যথেষ্ট। বিদ্রোহের ধারা মোগল আমলে বেড়েছিল। তখনকার অনেক কৃষক বিদ্রোহের খবর জানা যায়। আর ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতাসংগ্রামে বাঙালিরাই তো নেতৃত্ব দিয়েছে।
বাঙালি জীবনের বরাবরের সঙ্গী ছিল দারিদ্র্য, তার ওপর সেকালে মড়ক ও দুর্ভিক্ষের প্রকোপ ছিল বেশ। উর্বর ভূমির কৃষিকাজে ও নদীমাতৃক দেশের জেলেজীবনে কখনো দারিদ্র্য কাটেনি। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির পালাবদল শুরু হয় ইউরোপে নৌ-বাণিজ্যের প্রসার থেকে, উন্নত নৌযান ও উন্নত অস্ত্রসমৃদ্ধ নৌবহর নিয়ে এতে এগিয়ে ছিল ইউরোপীয় বিভিন্ন জাতি। এর সঙ্গে যোগ হয় কয়লা-লোহাসহ মূল্যবান খনিজ আবিষ্কারের সুফল। এভাবে শক্তিধর ইউরোপ অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে সাম্রাজ্য বিস্তার করেও বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পালাবদলের সুযোগ ক্রমে অন্যদের জন্য খুলেছে প্রথম শিল্পবিপ্লবের পরে, তত দিনে তারা উপনিবেশের খাঁচায় বন্দী। তাই ঔপনিবেশিক নিগড় থেকে রাজনৈতিক মুক্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে বিংশ শতাব্দীর ষাট-সত্তর দশক পর্যন্ত। এই তিন ক্ষেত্রে–রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-মুক্তি ছাড়া কোনো জাতির প্রকৃত মুক্তি ও উন্নতি সম্ভব নয়।
বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণে যুগপৎ স্বাধীনতা ও মুক্তির কথা বলেছেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’–এ কথা বলে তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির ইশারাই দিয়েছিলেন। সেই সময়ে পাকিস্তাানি অপশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় শৃঙ্খল থেকে মুক্তির লড়াই করছিল। রাজনৈতিক সংগ্রামকে শাণিত করার জন্য দুই প্রদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য, বাংলা ও বাঙালির বঞ্চনা-উপেক্ষা এবং অর্থনৈতিক শোষণের কথা দৃষ্টান্তসহ তুলে ধরা হয়েছিল ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফায়। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, সেভাবে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছিলেন। তবে তাঁর সময় গেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও অগ্রযাত্রার ভিত রচনায়। দুর্ভাগ্য দ্বিতীয় বিপ্লবের কাজ প্রবর্তনের আগেই তিনি সপরিবারে নিহত হলেন।
তারপরে টানা কুড়ি বছর চলেছে বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত বহু মানুষের ত্যাগে অর্জিত রাজনৈতিক মুক্তির পথকে ভুল প্রমাণিত করে বিস্মৃতির গর্ভে ঠেলে দেওয়ার এবং দেশকে পাকিস্তানি রাজনৈতিক ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে। মাঝে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সংক্ষিপ্ত শাসনকালে রাজনীতিকে সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা শুরু হতে হতে সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তা ছাড়া, ক্ষমতার জন্য তখন থেকে যেসব আপস শুরু হয়েছিল, তার ফলে পূর্ণোদ্যমে রাজনীতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঢেলে সাজানো সহজ ছিল না। তার পরের বিএনপি-জামায়াত সরকার রাজনৈতিক অঙ্গনে পাকিস্তানি পন্থার গতি জোরদার এবং অর্থনীতিতে দেশকে পুঁজিবাদী ধারায় মুক্তবাজারের পথে চালিত করেছিল। সমাজতান্ত্রিক পথ ছেড়ে পুঁজিবাদের পথে যাত্রা বস্তুত জিয়ার আমল থেকেই শুরু হয়েছিল। বিশ্বায়নের বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ সরকারও সেই পথেই অর্থনীতির চাকা চালিয়ে নিচ্ছে।
পরবর্তী প্রযুক্তি ও শিল্পবিপ্লবের ফল আমাদের দেশের শিল্পায়নে খুব ব্যবহৃত না হলেও কৃষিতে তা দারুণ প্রভাব ফেলেছে এবং কৃষিপ্রধান দেশটি কৃষি উৎপাদনে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছে। প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলো, কৃষির বৈচিত্র্য বেড়ে সবজি, ফল এবং অন্যান্য শস্য উৎপাদনে বৈশ্বিক মানদণ্ডে দেশ উচ্চ অবস্থানে উঠেছে। প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনেও আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। মুক্তবাজারে অন্তত পোশাক খাতে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান রয়েছে। অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে কর্মরত অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানো টাকা। মূলত কৃষিসহ এই তিনের ওপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। বলা বাহুল্য অন্যান্য খাতও ক্রমে বেড়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র ধরা পড়ে দেশীয় উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সমন্বয় থেকে। এই উন্নয়নের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন সামাজিক খাতেও–গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, টিকা কার্যক্রম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবস্থাপনার বিস্তার ইত্যাদিতে।
জনসংখ্যাবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালো করেছে। এসব উন্নয়ন ও সক্ষমতা থেকে বোঝা যায়, এ দেশের মানুষ তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য উদ্যমশীলতা কখনো হারায়নি। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া বা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি অর্জনে নতুন প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সুযোগ গ্রহণে এই উদ্যমী মনোভাবের প্রকাশ বারবার দেখা গেছে। বাংলাদেশ এগিয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে–এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
তারপরও অনেক পথচলা বাকি। যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত আমরা দিয়েছি, তাকে যথেষ্ট টেকসই কি বলা যাবে? কারণ, যে তিনটি মূল খাতের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে দুটি সম্পূর্ণই অন্যের চাহিদা ও বাস্তবতার ওপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাক খাতে প্রথমত প্রতিযোগিতা প্রবল, দ্বিতীয়ত, এর চাহিদা ও মূল্য ক্রেতার নানান শর্তের ওপর নির্ভরশীল। মুনাফা নিশ্চিত নয়, সরকারের নানা বদান্যতা-সহায়তা এখনো প্রয়োজন হচ্ছে। নিজস্ব পুঁজির বদলে থাকতে হচ্ছে ব্যাংকের অর্থায়নের নির্ভরতায়। এ সূত্রে ঋণখেলাপি সংস্কৃতির কথাও মনে রাখতে হবে, যা শিল্পায়নের দুর্বলতাই প্রকাশ করে। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিকেরা মূলত নানা নির্মাণকাজের সস্তা শ্রমিক। এ জীবন মানবেতর, ব্যক্তি ও দেশের জন্য অমর্যাদার। তদুপরি যেকোনো সময় নির্মাণের গতি স্তিমিত হবে। এ সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার জন্য আমরা শ্রমজীবী মানুষের বহুমুখী কর্মে দক্ষতা অর্জনের উপযোগী কোনো প্রকল্প হাতে নিইনি। বিশ্বায়নের যুগে কাজের বিশ্ববাজার নিশ্চয় থাকবে, হয়তো তার বিস্তারও ঘটবে, কিন্তু কর্মীর চাহিদায় অদক্ষতার কোনো স্থান আর তখন থাকবে না, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। আমাদের শিক্ষার সংখ্যাগত বিস্তার ঘটলেও বিশ্ববাজারের মান বিবেচনায় তা অনেক পিছিয়ে, ক্ষেত্রবিশেষে তামাদি হয়ে রয়েছে। কৃষি উৎপাদনে সমৃদ্ধি ঘটলেও এখানে সংকট হলো বাজারজাতকরণ-বিপণন ব্যবস্থা ভঙ্গুর, ফড়িয়াদের দাপটে পুঁজি পুনরুদ্ধার অনিশ্চিত এবং রাজনৈতিক বখাটেদের উৎপাতে পুরো ব্যবস্থাই দুর্নীতিগ্রস্ত। ফলে মূল উৎপাদক সচ্ছলতা অর্জন করে সত্যিকারের খামারি-উৎপাদক হতে পারছে না। অর্থনৈতিক বিবেচনায় দেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। আর এই অতিমারির সময় দ্রুত দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধিতে স্পষ্ট হলো অর্থনীতির ভিত কত নাজুক। এই দুর্বলতাগুলো সহজে কাটবে বলে মনে হয় না, কারণ সামাজিক বেশ কিছু সূচকে চমকপ্রদ অগ্রগতি ঘটলেও শিক্ষার দুর্গতি, রাজনৈতিক অবক্ষয় এবং শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও দুর্নীতিগ্রস্ততা সমাজকে পিছু টানছে। আইনের শাসনের ভিত্তিই হলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু বিকাশ, পরিণত নিরপেক্ষ আচরণে সমাজের দৃঢ় ভিত অর্জন। একমাত্র পদ্ধতির দক্ষতা-কার্যকারিতাই ধীরে ধীরে দুর্নীতির ফাঁকগুলো ভরাট হতে পারে। কিন্তু দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানই এমন লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে না, তাই সেভাবে বিকশিতও হচ্ছে না।
শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্তি সব শুভ প্রয়াস বানচাল করে দেয়। তদুপরি গত শতকের আশির দশক থেকে ইসলামি মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান এবং বিপরীতে প্রগতিশীল চেতনার অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে সামগ্রিকভাবে সমাজচেতনা রক্ষণশীল অচলায়তনে বাধা পড়েছে। এতেও শিক্ষাঙ্গনে মুক্ত, সৃজনশীল বাতাবরণ সৃষ্টি কঠিন হয়ে পড়েছে। এর জন্য বাড়তি চাপ, বিশেষত রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সে অনুযায়ী সরকারের উদ্যোগী ভূমিকা প্রয়োজন। তার ঘাটতি চোখে পড়ার মতো।
সব মিলিয়ে যুগোপযোগী মানবসম্পদ সৃষ্টিতে দেশ পিছিয়ে পড়ছে। সামাজিক নৈতিকতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অধরাই থেকে যাচ্ছে, কারণ উভয় ক্ষেত্রে শাসকের চেয়েও শাসিত নাগরিকের অগ্রণী ভূমিকাই জরুরি। এদিকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডটি ভূমি ও জলবায়ুগত অনিশ্চয়তার মধ্যে তার বিপুল জনগণকে কোনো কালেই লালন-ধারণ করতে পারেনি। এখান থেকে মানুষ পার্শ্ববর্তী নানা অঞ্চলে সব সময় ছড়িয়ে পড়েছিল, আজও পড়ছে। কিন্তু যুগের দাবি হলো নতুন বাস্তবতায় যে কর্মজগৎ সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য উপযুক্ত জনশক্তি যাদের ভাষা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ব্যবহারিক ও আচরণগত সংস্কৃতির নতুন উন্নত ধরন চাই। অদক্ষ শ্রমজীবীর চাহিদা ক্রমেই কমতে থাকবে।
মানবসভ্যতা স্থাণুও নয়, নিখিল বিশ্ব একরকমও নয়, মানুষের মতোই তা পরিবর্তনশীল। তাই এখানে কালের গতি-প্রকৃতি বোঝা, গুরুত্ব ও ভরকেন্দ্র চেনা আর সমকালের দাবির অগ্রাধিকার নির্ণয়ে সক্ষমতা জরুরি। এই জটিল বাস্তবতায় জাতীয় বিবেচনায় কোন অগ্রগতিটি আপাত, মেকি–তা প্রায়ই বোঝা যায় না। চূড়ান্ত বিচারে আদত অগ্রগতি চেনা ও তার পথ নিশ্চিত করাই যথার্থ নেতৃত্বের আসল কাজ। আর অগ্রগতি মানে কেবল এগিয়ে চলা নয়, মাঝে মাঝে থামাও এর অঙ্গ, থেমে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন জরুরি। তারপর আবার পথচলা। থেমে যে কাজ তার গুরুত্ব চলার চেয়ে কম নয়, কারণ এতেই বেপথে যাওয়ার ভুল এড়ানো যায়।
আবুল মোমেন, সাংবাদিক, কবি, প্রাবন্ধিক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪