সাযযাদ আনসারী
জামালপুরের ইতিহাস, দ্রোহের ইতিহাস। এই অঞ্চলের মানুষ যুগে যুগে বঞ্চনা, বৈষম্য, অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। পাগলপন্থী আন্দোলন, সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ফরায়েজী আন্দোলন, সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব লড়াইয়ে এই অঞ্চলের মানুষ রেখেছে গৌরবের স্বাক্ষর। শুধু বিদ্রোহে নয়, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে সৃষ্টির ইতিহাসেও রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের প্রতিনিধিত্ব।
জেলার ইসলামপুরের কাঁসাশিল্প একসময় ছিল জগদ্বিখ্যাত। সোনালি আঁশ পাটের উৎপাদনেও ছিল জামালপুর জেলার ব্যাপক সমৃদ্ধি। এসব কিছু ছাপিয়ে গত অর্ধশতাব্দীতে জামালপুরের নকশিকাঁথা সারা দেশের মানুষের নজর কেড়েছে। দেশের সীমানা ডিঙিয়ে এটি এখন বাংলাদেশের একটি ব্র্যান্ডিং পণ্য।
আমাদের সৌন্দর্যশাস্ত্রে চৌষট্টি কলার উল্লেখ আছে। কারুকলা হলো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি। এই কারুকলারই একটি মাধ্যম হচ্ছে নকশিকাঁথা। নকশিকাঁথা বাংলাদেশের আবহমানকালের ঐতিহ্যগত বিষয় হলেও প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জামালপুর এক্ষেত্রে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ শিল্পকে ঘিরেই বিকশিত হয়েছে এখানকার অর্থনীতি।
নকশিকাঁথার যে নকশাগুলো গ্রামীণ নারীর নিপুণ হাতে অঙ্কিত হয়, তার ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসাবশেষে প্রাপ্ত মৃৎপাত্র, তথা কারুপণ্যে যেসব নকশার মোটিফ আবিষ্কৃত হয়েছে, তা-ই উপমহাদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলের জাতিগোষ্ঠীর কারুকার্যখচিত কারুপণ্যে প্রতিফলিত হয়ে আসছে। এসব মোটিফের মধ্যে তদানীন্তন সভ্যতায় মানুষের যাপিত জীবনের সংকট-সংঘাত, দুর্যোগ-দুর্বিপাক এবং পাওয়া–না পাওয়ার আনন্দ-বেদনার প্রতিফলন ঘটেছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সময়ের সঙ্গে এই মোটিফগুলোই সমকালীন সমাজের গতি-প্রকৃতি আরোপিত হয়ে আজকের আধুনিক কারুপণ্যে বিকশিত হয়ে চলেছে।
প্রাচীনকালে উপমহাদেশের বিভিন্ন কারুপণ্যে আঁকা হতো শিকারের দৃশ্য, যুদ্ধ ও মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ের দৃশ্য। নকশিকাঁথার ঐতিহ্যও প্রাচীন। সেখানেও নারীর শৈল্পিক স্পর্শে ফুটে উঠত এসব দৃশ্যই। প্রাচীনকালে পৌরাণিক নানা উপাখ্যানের দৃশ্য ফুটে উঠত নকশিকাঁথায়। কালের ধারাবাহিকতায় বিবর্তিত সমাজজীবনের প্রতিফলন ঘটে চলেছে নকশিকাঁথার নকশা ও মোটিফে। শতবর্ষ আগে যেমন নকশিকাঁথায় দেখা যেত পালকি, বিয়ের অনুষ্ঠান, পালাপার্বণ, মেলা ইত্যাদির নকশা ও মোটিফ। আজকের নকশিকাঁথার মোটিফ ও নকশায় পাওয়া যাবে অনুরূপ উপাদান। জামালপুর অঞ্চলে আগে নকশিকাঁথা তৈরি হতো একান্তই গ্রামীণ নারীর শৈল্পিক বোধের তাড়নায়। তখন নকশিকাঁথার উপাদান ছিল পুরোনো শাড়ি, যা কিছুদিনের ব্যবহারে নরম হয়েছে। আর সুতা সংগ্রহ করা হতো শাড়ির পাড় থেকে। কিন্তু এখন আর এটি আগের সেই অবস্থায় আটকে নেই। এখানে এখন নকশিকাঁথা তৈরি হয় বাণিজ্যিকভাবে, তাও প্রায় পাঁচ দশক হতে চলল। এই অঞ্চলের নারীর কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নে এই শিল্পের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
জেলার বিশেষত দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামীণ নিরক্ষর নারীরা নিপুণ হাতে নকশিকাঁথায় ফুটিয়ে তোলে প্রাকৃতিক দৃশ্য, পশু-পাখি, মাছ, নৌকা, কুলা, হাতি, ঘোড়া, বর-কনে, পালকি, ঢাকঢোল, পুতুল আর গ্রাম ও নগরজীবনের সুখ-দুঃখের বর্ণিল চিত্র। জামালপুরের দুই লক্ষাধিক মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। উদ্যোক্তার সংখ্যা দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার। কর্মী পর্যায়ে রয়েছেন লক্ষাধিক নারী সূচিশিল্পী।
একসময় বাঙালির মসলিন ছিল সারা বিশ্বের বিস্ময়। বাঙালি তার আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সেই মসলিনকে ডেকেছিল বিচিত্র সব মোহন নামে। যেমন—বুনট করা বাতাসের জাল, চলন্ত নদীর স্রোত, পরীর স্বপ্ন, সাঁঝের নীহার, অপ্সরা লীলা প্রভৃতি। তেমনি ব্যবহারভেদে এই অঞ্চলের নকশিকাঁথারও রয়েছে বিচিত্র সব নাম—দস্তরখানা, জায়নামাজকাঁথা, গিলাপকাঁথা (কোরআন শরিফের কভার), পান প্যাঁচানো কাঁথা, সুজনিকাঁথা, আসনকাঁথা, আরশিলতা, বোঁচকাকাঁথা, বটুয়া, সর্পোশকাঁথা, বালিশকাঁথা ইত্যাদি। প্রাচীন মোটিফগুলোর ভিত্তি অক্ষুণ্ন রেখে এসব নকশা অঙ্কনে যেসব স্টিচ বা ফোঁড় ব্যবহার করা হয়, তাকে বলা হয় তাগা। নানা রঙের এই তাগারও রয়েছে বিচিত্র সুন্দর নাম। যেমন—মা তাগা, বিছা তাগা, ঘুঁটি তাগা, চিক তাগা, নোলক তাগা, পান তাগা, আনাছ তাগা, শামুক তাগা ইত্যাদি। এসব তাগার ফোঁড়গুলো জ্যামিতিক নকশায় বরফি, কৌণিক, রৈখিক, বৃত্তাকার হয়ে নানা নামে পরিচিত। যেমন—আটচালা, দোচালা, লিকলহরি, লিকটালি, কলকা, মুছরি ইত্যাদি।
নকশিকাঁথার এসব তাগা বা ফোঁড় দিয়ে শুধু নকশিকাঁথাই নয়, জামালপুরের গ্রামীণ নারীরা তৈরি করছেন মনভোলানো, চোখজুড়ানো নানা পণ্য। থ্রিপিস, শাড়ি, ওড়না, নকশিচাদর, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট, গেঞ্জি, ওয়ালম্যাট, কুশনকভার, পার্স ব্যাগ, মাথার ব্যান্ড, শাড়ির পাড়, মোড়া কভার, কলমদানি, টেবিল কভার, ফুলদানি ইত্যাদি নিপুণ কারুকার্যখচিত নকশিপণ্য সারা দেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছে। একটি নকশিকাঁথা তৈরিতে ব্যয় হয় ২ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকায়। কিন্তু এই অর্থ শিল্পীর পকেটে যায় না সহজে।
নকশিকাঁথা শিল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। এ কারণে নকশিকাঁথা বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের একটি বড় অংশই উৎপাদকদের হাতছাড়া হয়ে যায়। রয়েছে পুঁজি ও বাজারের সংকট। বড় ধরনের পুঁজির সংকট, গ্রামে গ্রামে কিছু কিছু সেলাইকর্মীর অদক্ষতা, কিছু প্রতিষ্ঠানের সেলাইকর্মীদের মজুরি প্রদানে অনিয়ম, স্বল্প মজুরি, পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ইত্যাদি এই শিল্প বিকাশের পথে বড় বাধা।
এরই মধ্যে জামালপুরের নকশিকাঁথা, তথা সূচিশিল্পের বিভিন্ন বাহারি পণ্য ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন দেশে জামালপুরের এই পণ্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ৬৪ জেলার ব্র্যান্ডিংয়ের প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে জামালপুরের নকশিকাঁথা ব্র্যান্ডিংয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুই শতাধিক একর জমির ওপর জামালপুরে নকশিপল্লি নামে একটি বৃহৎ প্রকল্প। এর মধ্যে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারা রিসোর্টসহ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের বহুমাত্রিক সুবিধা। এটা বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ বাড়বে, অন্যদিকে এই অঞ্চলের পর্যটনশিল্পও বিকশিত হবে। সঠিক পরিকল্পনা নিলে জামালপুরে নকশিকাঁথা শিল্পে অভাবনীয় সাফল্য আসবে।
সাযযাদ আনসারী
কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী
জামালপুরের ইতিহাস, দ্রোহের ইতিহাস। এই অঞ্চলের মানুষ যুগে যুগে বঞ্চনা, বৈষম্য, অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। পাগলপন্থী আন্দোলন, সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ফরায়েজী আন্দোলন, সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব লড়াইয়ে এই অঞ্চলের মানুষ রেখেছে গৌরবের স্বাক্ষর। শুধু বিদ্রোহে নয়, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অঙ্গনে সৃষ্টির ইতিহাসেও রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের প্রতিনিধিত্ব।
জেলার ইসলামপুরের কাঁসাশিল্প একসময় ছিল জগদ্বিখ্যাত। সোনালি আঁশ পাটের উৎপাদনেও ছিল জামালপুর জেলার ব্যাপক সমৃদ্ধি। এসব কিছু ছাপিয়ে গত অর্ধশতাব্দীতে জামালপুরের নকশিকাঁথা সারা দেশের মানুষের নজর কেড়েছে। দেশের সীমানা ডিঙিয়ে এটি এখন বাংলাদেশের একটি ব্র্যান্ডিং পণ্য।
আমাদের সৌন্দর্যশাস্ত্রে চৌষট্টি কলার উল্লেখ আছে। কারুকলা হলো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি। এই কারুকলারই একটি মাধ্যম হচ্ছে নকশিকাঁথা। নকশিকাঁথা বাংলাদেশের আবহমানকালের ঐতিহ্যগত বিষয় হলেও প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জামালপুর এক্ষেত্রে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ শিল্পকে ঘিরেই বিকশিত হয়েছে এখানকার অর্থনীতি।
নকশিকাঁথার যে নকশাগুলো গ্রামীণ নারীর নিপুণ হাতে অঙ্কিত হয়, তার ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসাবশেষে প্রাপ্ত মৃৎপাত্র, তথা কারুপণ্যে যেসব নকশার মোটিফ আবিষ্কৃত হয়েছে, তা-ই উপমহাদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চলের জাতিগোষ্ঠীর কারুকার্যখচিত কারুপণ্যে প্রতিফলিত হয়ে আসছে। এসব মোটিফের মধ্যে তদানীন্তন সভ্যতায় মানুষের যাপিত জীবনের সংকট-সংঘাত, দুর্যোগ-দুর্বিপাক এবং পাওয়া–না পাওয়ার আনন্দ-বেদনার প্রতিফলন ঘটেছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সময়ের সঙ্গে এই মোটিফগুলোই সমকালীন সমাজের গতি-প্রকৃতি আরোপিত হয়ে আজকের আধুনিক কারুপণ্যে বিকশিত হয়ে চলেছে।
প্রাচীনকালে উপমহাদেশের বিভিন্ন কারুপণ্যে আঁকা হতো শিকারের দৃশ্য, যুদ্ধ ও মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ের দৃশ্য। নকশিকাঁথার ঐতিহ্যও প্রাচীন। সেখানেও নারীর শৈল্পিক স্পর্শে ফুটে উঠত এসব দৃশ্যই। প্রাচীনকালে পৌরাণিক নানা উপাখ্যানের দৃশ্য ফুটে উঠত নকশিকাঁথায়। কালের ধারাবাহিকতায় বিবর্তিত সমাজজীবনের প্রতিফলন ঘটে চলেছে নকশিকাঁথার নকশা ও মোটিফে। শতবর্ষ আগে যেমন নকশিকাঁথায় দেখা যেত পালকি, বিয়ের অনুষ্ঠান, পালাপার্বণ, মেলা ইত্যাদির নকশা ও মোটিফ। আজকের নকশিকাঁথার মোটিফ ও নকশায় পাওয়া যাবে অনুরূপ উপাদান। জামালপুর অঞ্চলে আগে নকশিকাঁথা তৈরি হতো একান্তই গ্রামীণ নারীর শৈল্পিক বোধের তাড়নায়। তখন নকশিকাঁথার উপাদান ছিল পুরোনো শাড়ি, যা কিছুদিনের ব্যবহারে নরম হয়েছে। আর সুতা সংগ্রহ করা হতো শাড়ির পাড় থেকে। কিন্তু এখন আর এটি আগের সেই অবস্থায় আটকে নেই। এখানে এখন নকশিকাঁথা তৈরি হয় বাণিজ্যিকভাবে, তাও প্রায় পাঁচ দশক হতে চলল। এই অঞ্চলের নারীর কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নে এই শিল্পের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
জেলার বিশেষত দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামীণ নিরক্ষর নারীরা নিপুণ হাতে নকশিকাঁথায় ফুটিয়ে তোলে প্রাকৃতিক দৃশ্য, পশু-পাখি, মাছ, নৌকা, কুলা, হাতি, ঘোড়া, বর-কনে, পালকি, ঢাকঢোল, পুতুল আর গ্রাম ও নগরজীবনের সুখ-দুঃখের বর্ণিল চিত্র। জামালপুরের দুই লক্ষাধিক মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। উদ্যোক্তার সংখ্যা দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার। কর্মী পর্যায়ে রয়েছেন লক্ষাধিক নারী সূচিশিল্পী।
একসময় বাঙালির মসলিন ছিল সারা বিশ্বের বিস্ময়। বাঙালি তার আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সেই মসলিনকে ডেকেছিল বিচিত্র সব মোহন নামে। যেমন—বুনট করা বাতাসের জাল, চলন্ত নদীর স্রোত, পরীর স্বপ্ন, সাঁঝের নীহার, অপ্সরা লীলা প্রভৃতি। তেমনি ব্যবহারভেদে এই অঞ্চলের নকশিকাঁথারও রয়েছে বিচিত্র সব নাম—দস্তরখানা, জায়নামাজকাঁথা, গিলাপকাঁথা (কোরআন শরিফের কভার), পান প্যাঁচানো কাঁথা, সুজনিকাঁথা, আসনকাঁথা, আরশিলতা, বোঁচকাকাঁথা, বটুয়া, সর্পোশকাঁথা, বালিশকাঁথা ইত্যাদি। প্রাচীন মোটিফগুলোর ভিত্তি অক্ষুণ্ন রেখে এসব নকশা অঙ্কনে যেসব স্টিচ বা ফোঁড় ব্যবহার করা হয়, তাকে বলা হয় তাগা। নানা রঙের এই তাগারও রয়েছে বিচিত্র সুন্দর নাম। যেমন—মা তাগা, বিছা তাগা, ঘুঁটি তাগা, চিক তাগা, নোলক তাগা, পান তাগা, আনাছ তাগা, শামুক তাগা ইত্যাদি। এসব তাগার ফোঁড়গুলো জ্যামিতিক নকশায় বরফি, কৌণিক, রৈখিক, বৃত্তাকার হয়ে নানা নামে পরিচিত। যেমন—আটচালা, দোচালা, লিকলহরি, লিকটালি, কলকা, মুছরি ইত্যাদি।
নকশিকাঁথার এসব তাগা বা ফোঁড় দিয়ে শুধু নকশিকাঁথাই নয়, জামালপুরের গ্রামীণ নারীরা তৈরি করছেন মনভোলানো, চোখজুড়ানো নানা পণ্য। থ্রিপিস, শাড়ি, ওড়না, নকশিচাদর, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট, গেঞ্জি, ওয়ালম্যাট, কুশনকভার, পার্স ব্যাগ, মাথার ব্যান্ড, শাড়ির পাড়, মোড়া কভার, কলমদানি, টেবিল কভার, ফুলদানি ইত্যাদি নিপুণ কারুকার্যখচিত নকশিপণ্য সারা দেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছে। একটি নকশিকাঁথা তৈরিতে ব্যয় হয় ২ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকায়। কিন্তু এই অর্থ শিল্পীর পকেটে যায় না সহজে।
নকশিকাঁথা শিল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। এ কারণে নকশিকাঁথা বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের একটি বড় অংশই উৎপাদকদের হাতছাড়া হয়ে যায়। রয়েছে পুঁজি ও বাজারের সংকট। বড় ধরনের পুঁজির সংকট, গ্রামে গ্রামে কিছু কিছু সেলাইকর্মীর অদক্ষতা, কিছু প্রতিষ্ঠানের সেলাইকর্মীদের মজুরি প্রদানে অনিয়ম, স্বল্প মজুরি, পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ইত্যাদি এই শিল্প বিকাশের পথে বড় বাধা।
এরই মধ্যে জামালপুরের নকশিকাঁথা, তথা সূচিশিল্পের বিভিন্ন বাহারি পণ্য ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে বিক্রি হচ্ছে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন দেশে জামালপুরের এই পণ্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ৬৪ জেলার ব্র্যান্ডিংয়ের প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে জামালপুরের নকশিকাঁথা ব্র্যান্ডিংয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুই শতাধিক একর জমির ওপর জামালপুরে নকশিপল্লি নামে একটি বৃহৎ প্রকল্প। এর মধ্যে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারা রিসোর্টসহ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের বহুমাত্রিক সুবিধা। এটা বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ বাড়বে, অন্যদিকে এই অঞ্চলের পর্যটনশিল্পও বিকশিত হবে। সঠিক পরিকল্পনা নিলে জামালপুরে নকশিকাঁথা শিল্পে অভাবনীয় সাফল্য আসবে।
সাযযাদ আনসারী
কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪