নজরুল হক অনু
আমরা জানি, একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে শতকরা ২৫ ভাগ এলাকায় বনায়ন দরকার। সে হিসাবে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ১৭ ভাগ এলাকায় বনায়ন রয়েছে। আরও ৮ ভাগ এলাকায় বনায়ন দরকার। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাতে পারি, আমাদের দ্বীপজেলা ভোলায় শতকরা ৩৩ ভাগ এলাকা বন দ্বারা আচ্ছাদিত, যা প্রয়োজনের তুলনায় ৯ ভাগ বেশি এবং আমাদের দেশের অর্জনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বন বিভাগের হিসাব মতে, ভোলায় ১ লাখ ৩০ হাজার একর জমিতে বনায়ন রয়েছে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে। এই বনায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় সত্তরের ১২ নভেম্বরের ভয়াল জলোচ্ছ্বাসে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, পরবর্তীকালে আর তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ভোলার দক্ষিণ প্রান্তের বনগুলো উইন্ডব্রেক হিসেবে কাজ করে। সাগর থেকে যদি ২০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে আসে, তাহলে তা ভোলার মূল ভূখণ্ড বা জেলা শহরে আসতে গিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেতে খেতে দুর্বল হয়ে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার গতিবেগে পৌঁছায়। যে কারণে কয়েক দশক ভোলায় ঝড়–জলোচ্ছ্বাসে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বন বিভাগের মতে, ভোলার এই বনপ্রাচীর সুপার সাইক্লোন অর্থাৎ সিডরের মতো ঝড় মোকাবিলায় সক্ষম।
ভোলার বনায়নে উপকূলীয় বন বিভাগ কাজ করলেও তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বনকর্মীদের বনের বাঘ হিসেবে বলা হতো। এখন তারা নখদন্তহীন ভেজাবিড়ালে পরিণত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার বিশেষ করে চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরিমুকরি ও চরনিজাম এলাকার বনদস্যুরা ব্যাপক হারে বন উজাড় করছে। অথচ বন বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এমনকি বনদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করতে পারছে না বন বিভাগ। অনেক সময় মামলা হলেও বন মামলার আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষ বন মামলার আসামিরা বনকর্মীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের সামনে ঘোরাফেরা করছে। কোনো কোনো সময় বনকর্মীদের ওপর চড়াও হচ্ছে বনদস্যুরা। স্থানীয় রাজনীতিকদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ভোলার বনে বনকর্মী নয়, বনদস্যুরাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যা উপকূলীয় বনের জন্য বিরাট হুমকি বা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোলার বন পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি পর্যটন ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কুকরিমুকরির বন সুন্দরবনের মতোই সুন্দর। এ বনায়নের নির্মল পরিবেশ ইতিমধ্যেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ ছাড়া ঢালচরের তারুয়া সমুদ্রসৈকত ঘেরা বনায়ন, চরনিজাম, চরশাহজালাল, ভাসানচর, তিন চর, শিবচর, চরপচাকোড়ালিয়াসহ ভোলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপচর, চরাঞ্চলের বনায়ন ভোলাকে আলাদা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। কক্সবাজার, কুয়াকাটার পর তারুয়া এবং চরনিজামের সমুদ্রসৈকত ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বনায়নের কারণে ভোলা জেলার আয়তনও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেঘনা মোহনায় জেগে ওঠা নতুন নতুন চরগুলোতে বনায়ন হওয়ায় চাষযোগ্য ও বাসযোগ্য ভূমি বাড়ছে। গবাদি পশুর চারণভূমি থাকায় গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে।
ভোলা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি জেলা। প্রতিবছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে কয়েক লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমরা অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করে থাকি। ইলিশের শতকরা ৩০ ভাগ জোগান হয় এই জেলা থেকে। অন্তত ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা প্রতিদিন অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করি। গ্যাস সরবরাহের প্রক্রিয়াও চলছে। ভোলার চাল, ডাল, মাছ, মাংস, গ্যাস–বিদ্যুৎ দিয়ে গোটা দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে; এটা সবাই জানে।
সরকার জেলা ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করছে। ভোলা জেলার ব্র্যান্ডিংয়ে ভোলার বনজ সম্পদ অগ্রাধিকার পাওয়ার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। খুলনা মানেই যেমন সুন্দরবন আর সুন্দরবন মানেই খুলনা। ভোলাও তা-ই হতে পারে। ভোলার বন আর বনবনানীর ভোলা, একে অপরের পরিপূরক হয়ে জেলার জন্য শুধু সম্মানই নয়; অর্থও বয়ে আনতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে তার অন্যতম কারণ অধিক হারে কার্বন নিঃসরণ। উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়ন, অসতর্কতা এবং খামখেয়ালিপনার কারণে আজ আমাদের পৃথিবী হুমকির মুখে। এখন একই সময়ে পৃথিবীর কোনো অংশ বানের জলে ভেসে যাচ্ছে আবার কোনো অঞ্চলে চরম খরা বিরাজ করছে। কোথাও প্রচণ্ড গরম। কোথাও বা মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা। কোথাও আগ্নেয়গিরির উত্তাপ। কোথাও ভূমিধসসহ নানা দুর্যোগ। গ্রিনল্যান্ডের আইসপ্যাক পর্যন্ত দিন দিন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আগে এমনটি ছিল না। আমরা এখন যে প্রকৃতি দেখছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেই প্রকৃতি কিছুতেই দেখতে পারবে না। স্বয়ং আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি আলাস্কায় যে হিমবাহ দেখেছেন তার সন্তানদের তিনি তা দেখাতে পারেননি। তাই তিনি প্রকৃতির স্বাভাবিক রূপ ধরে রাখার জন্য বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
কার্বনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করা একেবারেই অসম্ভব একটি কাজ। পৃথিবী সচল থাকলে পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ অব্যাহত থাকবেই। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই বলে বিশ্ব চুপ করে বসে থাকছে না। এর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর জলবায়ু সম্মেলনে বসে ভবিষ্যতে করণীয় কী, তা নির্ধারণ করছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের দেশও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিও এ ব্যাপারে কাজ করছে। সরকারকে সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছে। কিন্তু জেলা পর্যায়ে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার বিষয়ে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। বিশেষ করে আমাদের দ্বীপজেলা ভোলা, যেখানে শতকরা ৩৩ ভাগ এলাকাকে বনরাজি আচ্ছাদন করে রেখেছে, ভোলায় সে অনুপাতে পরিবেশবিষয়ক কাজ হচ্ছে না। আমাদের সম্পদকে কীভাবে কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী দিনে এগিয়ে যেতে পারি, সে ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থা কার্যত উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে তা শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও রোলমডেল হতে পারে। এমনটি হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আমাদের ভোলায় রয়েছে।
ভোলা তেমন শিল্পকারখানা যানবাহন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা না হওয়ায় এখানে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনেক কম। উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমাদের দেশ কার্বন নিঃসরণ কম করেও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটেও আমাদের জেলা ভোলা অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করে অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। সারা দেশ এবং বিশ্ব যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে তার অনেকটা আমাদের ভোলার বনাঞ্চল গ্রহণ করে একটি পরিবেশবান্ধব দেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। এখন সময় এসেছে আমাদের এই ভূমিকার বিপরীতে যোগ্য পাওনা আদায়ের। উপকূলীয় বন বিভাগ ভোলা কিংবা জেলা প্রশাসন অথবা পরিবেশ অধিদপ্তর বা সরকারের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা সমন্বিতভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিলে বসে অঙ্ক কষে বের করতে পারে আমাদের ভোলা প্রতিদিন কতটুকু কার্বন নিঃসরণ করে আর কতটুকু গ্রহণ করে। যেহেতু নিঃসন্দেহেই কার্বন নিঃসরণের চেয়ে গ্রহণের পরিমাণ বেশি, তাই যারা কার্বন নিঃসরণ করছে আর আমরা যাদের কার্বন গ্রহণ করে পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছি, তাদের কাছ থেকে কার্বন ট্রেডের অংশ হিসেবে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি।
উন্নত বিশ্বের কোনো কোনো দেশে কার্বন বাজেট, কার্বন ট্যাক্স এবং কার্বন ট্রেডের প্রচলন আছে। আমাদের ভোলায় যদি তা অনুসরণ করা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা বিশ্বের দরবারে একটি রোলমডেল হতে পারব। এ ক্ষেত্রে ভোলা পাইওনিয়ার জেলা হতে পারে।
শাহাবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাস বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহারের পর থেকে ভোলায় ব্যাপক হারে শিল্পায়ন শুরু হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ভ্যাট, আয়করসহ বিরাট একটা অর্থ লাভ করে থাকে। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা নতুন নতুন শিল্পকারখানাকে যদি কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া না হয়, তাহলে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে কার্বন বাজেট এবং কার্বন ট্যাক্স বসানো জরুরি। পাশাপাশি ভোলার বনজ সম্পদ যে হারে কার্বন গ্রহণ করছে, তাতে করে ভোলায় কার্বন ট্রেড চালুর বিষয়টিও ভাববার সময় এসে গেছে।
নজরুল হক অনু
আমরা জানি, একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে শতকরা ২৫ ভাগ এলাকায় বনায়ন দরকার। সে হিসাবে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ১৭ ভাগ এলাকায় বনায়ন রয়েছে। আরও ৮ ভাগ এলাকায় বনায়ন দরকার। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাতে পারি, আমাদের দ্বীপজেলা ভোলায় শতকরা ৩৩ ভাগ এলাকা বন দ্বারা আচ্ছাদিত, যা প্রয়োজনের তুলনায় ৯ ভাগ বেশি এবং আমাদের দেশের অর্জনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বন বিভাগের হিসাব মতে, ভোলায় ১ লাখ ৩০ হাজার একর জমিতে বনায়ন রয়েছে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে। এই বনায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় সত্তরের ১২ নভেম্বরের ভয়াল জলোচ্ছ্বাসে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, পরবর্তীকালে আর তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ভোলার দক্ষিণ প্রান্তের বনগুলো উইন্ডব্রেক হিসেবে কাজ করে। সাগর থেকে যদি ২০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে আসে, তাহলে তা ভোলার মূল ভূখণ্ড বা জেলা শহরে আসতে গিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেতে খেতে দুর্বল হয়ে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার গতিবেগে পৌঁছায়। যে কারণে কয়েক দশক ভোলায় ঝড়–জলোচ্ছ্বাসে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বন বিভাগের মতে, ভোলার এই বনপ্রাচীর সুপার সাইক্লোন অর্থাৎ সিডরের মতো ঝড় মোকাবিলায় সক্ষম।
ভোলার বনায়নে উপকূলীয় বন বিভাগ কাজ করলেও তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বনকর্মীদের বনের বাঘ হিসেবে বলা হতো। এখন তারা নখদন্তহীন ভেজাবিড়ালে পরিণত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার বিশেষ করে চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরিমুকরি ও চরনিজাম এলাকার বনদস্যুরা ব্যাপক হারে বন উজাড় করছে। অথচ বন বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এমনকি বনদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করতে পারছে না বন বিভাগ। অনেক সময় মামলা হলেও বন মামলার আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষ বন মামলার আসামিরা বনকর্মীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের সামনে ঘোরাফেরা করছে। কোনো কোনো সময় বনকর্মীদের ওপর চড়াও হচ্ছে বনদস্যুরা। স্থানীয় রাজনীতিকদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ভোলার বনে বনকর্মী নয়, বনদস্যুরাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যা উপকূলীয় বনের জন্য বিরাট হুমকি বা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোলার বন পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি পর্যটন ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কুকরিমুকরির বন সুন্দরবনের মতোই সুন্দর। এ বনায়নের নির্মল পরিবেশ ইতিমধ্যেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ ছাড়া ঢালচরের তারুয়া সমুদ্রসৈকত ঘেরা বনায়ন, চরনিজাম, চরশাহজালাল, ভাসানচর, তিন চর, শিবচর, চরপচাকোড়ালিয়াসহ ভোলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপচর, চরাঞ্চলের বনায়ন ভোলাকে আলাদা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। কক্সবাজার, কুয়াকাটার পর তারুয়া এবং চরনিজামের সমুদ্রসৈকত ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বনায়নের কারণে ভোলা জেলার আয়তনও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেঘনা মোহনায় জেগে ওঠা নতুন নতুন চরগুলোতে বনায়ন হওয়ায় চাষযোগ্য ও বাসযোগ্য ভূমি বাড়ছে। গবাদি পশুর চারণভূমি থাকায় গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে।
ভোলা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি জেলা। প্রতিবছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে কয়েক লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমরা অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করে থাকি। ইলিশের শতকরা ৩০ ভাগ জোগান হয় এই জেলা থেকে। অন্তত ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা প্রতিদিন অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করি। গ্যাস সরবরাহের প্রক্রিয়াও চলছে। ভোলার চাল, ডাল, মাছ, মাংস, গ্যাস–বিদ্যুৎ দিয়ে গোটা দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে; এটা সবাই জানে।
সরকার জেলা ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করছে। ভোলা জেলার ব্র্যান্ডিংয়ে ভোলার বনজ সম্পদ অগ্রাধিকার পাওয়ার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। খুলনা মানেই যেমন সুন্দরবন আর সুন্দরবন মানেই খুলনা। ভোলাও তা-ই হতে পারে। ভোলার বন আর বনবনানীর ভোলা, একে অপরের পরিপূরক হয়ে জেলার জন্য শুধু সম্মানই নয়; অর্থও বয়ে আনতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে তার অন্যতম কারণ অধিক হারে কার্বন নিঃসরণ। উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়ন, অসতর্কতা এবং খামখেয়ালিপনার কারণে আজ আমাদের পৃথিবী হুমকির মুখে। এখন একই সময়ে পৃথিবীর কোনো অংশ বানের জলে ভেসে যাচ্ছে আবার কোনো অঞ্চলে চরম খরা বিরাজ করছে। কোথাও প্রচণ্ড গরম। কোথাও বা মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা। কোথাও আগ্নেয়গিরির উত্তাপ। কোথাও ভূমিধসসহ নানা দুর্যোগ। গ্রিনল্যান্ডের আইসপ্যাক পর্যন্ত দিন দিন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আগে এমনটি ছিল না। আমরা এখন যে প্রকৃতি দেখছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেই প্রকৃতি কিছুতেই দেখতে পারবে না। স্বয়ং আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি আলাস্কায় যে হিমবাহ দেখেছেন তার সন্তানদের তিনি তা দেখাতে পারেননি। তাই তিনি প্রকৃতির স্বাভাবিক রূপ ধরে রাখার জন্য বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
কার্বনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করা একেবারেই অসম্ভব একটি কাজ। পৃথিবী সচল থাকলে পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ অব্যাহত থাকবেই। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই বলে বিশ্ব চুপ করে বসে থাকছে না। এর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর জলবায়ু সম্মেলনে বসে ভবিষ্যতে করণীয় কী, তা নির্ধারণ করছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের দেশও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিও এ ব্যাপারে কাজ করছে। সরকারকে সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছে। কিন্তু জেলা পর্যায়ে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার বিষয়ে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। বিশেষ করে আমাদের দ্বীপজেলা ভোলা, যেখানে শতকরা ৩৩ ভাগ এলাকাকে বনরাজি আচ্ছাদন করে রেখেছে, ভোলায় সে অনুপাতে পরিবেশবিষয়ক কাজ হচ্ছে না। আমাদের সম্পদকে কীভাবে কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী দিনে এগিয়ে যেতে পারি, সে ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থা কার্যত উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে তা শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও রোলমডেল হতে পারে। এমনটি হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আমাদের ভোলায় রয়েছে।
ভোলা তেমন শিল্পকারখানা যানবাহন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা না হওয়ায় এখানে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনেক কম। উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমাদের দেশ কার্বন নিঃসরণ কম করেও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটেও আমাদের জেলা ভোলা অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করে অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। সারা দেশ এবং বিশ্ব যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে তার অনেকটা আমাদের ভোলার বনাঞ্চল গ্রহণ করে একটি পরিবেশবান্ধব দেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। এখন সময় এসেছে আমাদের এই ভূমিকার বিপরীতে যোগ্য পাওনা আদায়ের। উপকূলীয় বন বিভাগ ভোলা কিংবা জেলা প্রশাসন অথবা পরিবেশ অধিদপ্তর বা সরকারের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা সমন্বিতভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিলে বসে অঙ্ক কষে বের করতে পারে আমাদের ভোলা প্রতিদিন কতটুকু কার্বন নিঃসরণ করে আর কতটুকু গ্রহণ করে। যেহেতু নিঃসন্দেহেই কার্বন নিঃসরণের চেয়ে গ্রহণের পরিমাণ বেশি, তাই যারা কার্বন নিঃসরণ করছে আর আমরা যাদের কার্বন গ্রহণ করে পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছি, তাদের কাছ থেকে কার্বন ট্রেডের অংশ হিসেবে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি।
উন্নত বিশ্বের কোনো কোনো দেশে কার্বন বাজেট, কার্বন ট্যাক্স এবং কার্বন ট্রেডের প্রচলন আছে। আমাদের ভোলায় যদি তা অনুসরণ করা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা বিশ্বের দরবারে একটি রোলমডেল হতে পারব। এ ক্ষেত্রে ভোলা পাইওনিয়ার জেলা হতে পারে।
শাহাবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাস বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহারের পর থেকে ভোলায় ব্যাপক হারে শিল্পায়ন শুরু হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ভ্যাট, আয়করসহ বিরাট একটা অর্থ লাভ করে থাকে। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা নতুন নতুন শিল্পকারখানাকে যদি কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া না হয়, তাহলে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে কার্বন বাজেট এবং কার্বন ট্যাক্স বসানো জরুরি। পাশাপাশি ভোলার বনজ সম্পদ যে হারে কার্বন গ্রহণ করছে, তাতে করে ভোলায় কার্বন ট্রেড চালুর বিষয়টিও ভাববার সময় এসে গেছে।
নজরুল হক অনু
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪