তুষার কান্তি রায়
কফির আদি জন্মস্থান ইথিওপিয়ার কাফা অঞ্চলে। কিন্তু পঞ্চাদশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে প্রথম কফি পানের প্রমাণ পাওয়া যায় ইয়েমেনে। এরপর এটি সৌদি আরব, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ ভারত হয়ে বাংলাদেশে চাষাবাদ শুরু হয়। পৃথিবীর প্রায় ৭০টি দেশে কফির চাষ হয়। বাজারের পরিসর বিবেচনায় কফির বাজার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। জনপ্রিয় পানীয়ের তালিকায় চায়ের পরই এর স্থান। সারা বিশ্বে বছরে গড়ে ১ কোটি ৪ লাখ মিলিয়ন টন কফি উৎপাদন হয়। এর ৩৫ শতাংশই হয় ব্রাজিলে। শতাংশের হিসাবে এর ধারেকাছে না হলেও বাংলাদেশও কফি উৎপাদক দেশের তালিকায় ঢুকে পড়েছে; তাও প্রায় এক যুগ হয়ে গেল।
বর্তমানে সারা বিশ্বে দৈনিক ২২৫ কোটি কাপ কফি পান করা হয়। কফির আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিবছর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক কফি সংস্থার মতে, ফিনল্যান্ডের অধিবাসীরা গড়ে সবচেয়ে বেশি কফি পান করে। তুলনায় অনেক কম হলেও বিশেষত বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে কফির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
কফি একটি চিরহরিৎ, গুল্মজাতীয় ও বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। কফির অনেক জাত থাকলেও এখন পর্যন্ত দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। একটি অ্যারাবিকা, অন্যটি রোবাস্টা। অ্যারাবিকা জাতের কফি সাধারণত মিহি, হালকা ও সুগন্ধযুক্ত। বিশ্বের অধিকাংশ কফিই এই জাতের। অন্যদিকে কিছুটা তিতকুটে স্বাদ ও অতিরিক্ত ক্যাফেইনসমৃদ্ধ কফি হলো রোবাস্টা। এই কফির ফলন তুলনামূলক বেশি। এটাই ইনস্ট্যান্ট কফি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ও ব্রাজিলে এই কফি জন্মায়।
উত্তরাঞ্চলে কফি চাষ সম্প্রসারণের পথপ্রদর্শক নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস। তিনি প্রথম ২০০৯ সালে কক্সবাজার থেকে ২০ টাকা দরে ১৫০টি অ্যারাবিকা জাতের কফির চারা কিনে ৪ শতাংশ জমিতে লাগিয়েছিলেন। তিন বছরের মাথায় ফলন আসে। এরপর তিনি নিজেই চারা প্রস্তুত ও বিক্রিতে মন দেন। প্রতিবছর শুধু কফির চারা বিক্রি করেই তিনি ৫-৬ লাখ টাকা আয় করেন। পাশের জলঢাকা, তারাগঞ্জ উপজেলা, রংপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চারা বিক্রি করেন। একই উপজেলার পুঁটিমারী ইউনিয়নের কাছারীপাড়া গ্রামের সুলতান আলী মাস্টারও নিজের ৮ শতাংশ জমিতে একই বছর কফি চাষ শুরু করেন। বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় তিনি এক বিঘা জমির ওপর কফির বাগান করেছেন। অন্যদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের সুনগর গ্রামের খাদিজা আক্তার ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ জমিতে অ্যারাবিকা জাতের কফির চারা লাগান। এ বছর তাঁর বাগানে প্রথম ফলন এসেছে।
নীলফামারী জেলার আবহাওয়া রোবাস্টা জাতের কফির জন্য উপযোগী হওয়ায় ২০২১ সালে বছরব্যাপী কফি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কয়েকটি উপজেলার মোট ৬০ বিঘা জমিতে চাষের জন্য নতুন করে রোবাস্টা জাতের কফির চারা বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়।
কফি চাষের জন্য প্রয়োজন উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং মাঝারি বৃষ্টিপাত। নীলফামারীর আবহাওয়া এবং এ অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের মাত্রা কফি চাষের অনুকূল। এখানকার কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া কফিগাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে ফল পাকার জন্য শুষ্ক আবহাওয়া দরকার। মৃদু অম্লধর্মী মাটি (পিএইচ: ৫.৫-৬.৫) ও লৌহ, পটাশ, নাইট্রোজেন ও জৈবিক উপাদানসমৃদ্ধ লালচে দোঁ-আশ মাটি কফি চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, যা এখানে রয়েছে। মাটির শ্রেণি উঁচু ও সুনিষ্কাশিত হওয়ার কারণে কফি চাষের জন্য আদর্শ।
কফিগাছ থেকে শুধু পরিচিত পানীয়টিই নয়, কফিগাছের অন্য উপকরণ ব্যবহার করে মধু ও শ্যাম্পু তৈরি করা যায়। একটি কফিগাছের ফুল থেকে প্রতিবার ১০০ গ্রাম মধু সংগ্রহ করা সম্ভব। এ ছাড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া কফি চেরি দিয়ে ময়দা তৈরি করা যায়। এই ময়দা দিয়ে রুটি, চকলেট, সস ও কেক তৈরি করা যায়।
কফিতে ক্যাফেইন নামের একধরনের উত্তেজক পদার্থ রয়েছে। ৮ আউন্স কফিতে প্রায় ১৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। এই ক্যাফেইন মানুষের সতেজতা ও কর্মতৎপরতা বাড়াতে সাহায্য করে। কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে, যা আমাদের দেহের কোষগুলোকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ ও রাসায়নিকের মিশ্রণ ঠেকাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৫, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম ও প্রোটিন রয়েছে।
কম সময়ে, কম পরিশ্রমে, কম খরচে কফি চাষ করা সম্ভব। চারা রোপণের দুই বছরের মাথায় ফল আসা শুরু হয়। ফুল আসা শুরু হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। আর ফল সংগ্রহ করা হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। একটি গাছ থেকে ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। গাছ লম্বায় প্রায় ২৫-৩০ ফুট পর্যন্ত হয়। প্রতি গাছে ২ কেজির মতো ফল ধরলেও পরে শুকিয়ে ৩০০ গ্রামের মতো পাওয়া যায়। ফল সংগ্রহের পর খুব কম সময়ে কফির বিনগুলো চুর্ণ করে রোদে শুকিয়ে চুলায় গরম করে নিয়ে গুঁড়ো করে তাৎক্ষণিকভাবে কফি প্রস্তুত করা যায়। ফল সংগ্রহের সুবিধার্থে কফিগাছের ডালপালা কেটে ঝোপালো করা হয়। এ গাছের বংশবিস্তার মূলত বীজ দিয়েই হয়। গুটিকলম করেও চারা প্রস্তুত করা যায়। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের ঢালে কফি চাষ করা ভালো। কফি চাষে হালকা ছায়ার প্রয়োজন হয়। এ জন্য ছায়াদানকারী গাছ হিসেবে ইপিল-ইপিল, মেহগনি, কড়ই ইত্যাদি গাছ নির্দিষ্ট দূরত্বে লাগানো হয়। কফির সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে আদা, হলুদ প্রভূতি মসলাজাতীয় ফসল চাষ করা যায়। এতে রোগবালাই খুব কম হয় ও খুব অল্প সেচে চাষ করা যায়। কফির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি পচনশীল নয়। পোস্ট হার্ভেস্ট প্রক্রিয়ার পর চাইলে এক বছর রেখেও বিক্রি করা যায়।
হর্টিকালচার উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে কফির উৎপাদন এলাকা ছিল প্রায় ১১৮ দশমিক ৩০ হেক্টর। আর মোট উৎপাদন ছিল প্রায় ৫৫ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন। ফলে দেশের চাহিদার ৯৫ শতাংশই এখনো মেটানো হয় আমদানি করা কফি দিয়ে।
কফি পাহাড়ি অঞ্চলে ভালো হলেও নীলফামারীর কৃষকেরা সমতল ভূমিতে এর চাষ করে সাফল্য দেখিয়েছেন। ভবিষ্যতে কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে কফি চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের কফি বিষয়ে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া গেলে এ অঞ্চলে কফি চাষের এক বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। ফলে দেশের কফির আমদানিনির্ভরতা কমবে এবং অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
তুষার কান্তি রায়
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিস, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী
কফির আদি জন্মস্থান ইথিওপিয়ার কাফা অঞ্চলে। কিন্তু পঞ্চাদশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে প্রথম কফি পানের প্রমাণ পাওয়া যায় ইয়েমেনে। এরপর এটি সৌদি আরব, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ ভারত হয়ে বাংলাদেশে চাষাবাদ শুরু হয়। পৃথিবীর প্রায় ৭০টি দেশে কফির চাষ হয়। বাজারের পরিসর বিবেচনায় কফির বাজার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। জনপ্রিয় পানীয়ের তালিকায় চায়ের পরই এর স্থান। সারা বিশ্বে বছরে গড়ে ১ কোটি ৪ লাখ মিলিয়ন টন কফি উৎপাদন হয়। এর ৩৫ শতাংশই হয় ব্রাজিলে। শতাংশের হিসাবে এর ধারেকাছে না হলেও বাংলাদেশও কফি উৎপাদক দেশের তালিকায় ঢুকে পড়েছে; তাও প্রায় এক যুগ হয়ে গেল।
বর্তমানে সারা বিশ্বে দৈনিক ২২৫ কোটি কাপ কফি পান করা হয়। কফির আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিবছর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক কফি সংস্থার মতে, ফিনল্যান্ডের অধিবাসীরা গড়ে সবচেয়ে বেশি কফি পান করে। তুলনায় অনেক কম হলেও বিশেষত বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে কফির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
কফি একটি চিরহরিৎ, গুল্মজাতীয় ও বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। কফির অনেক জাত থাকলেও এখন পর্যন্ত দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। একটি অ্যারাবিকা, অন্যটি রোবাস্টা। অ্যারাবিকা জাতের কফি সাধারণত মিহি, হালকা ও সুগন্ধযুক্ত। বিশ্বের অধিকাংশ কফিই এই জাতের। অন্যদিকে কিছুটা তিতকুটে স্বাদ ও অতিরিক্ত ক্যাফেইনসমৃদ্ধ কফি হলো রোবাস্টা। এই কফির ফলন তুলনামূলক বেশি। এটাই ইনস্ট্যান্ট কফি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ও ব্রাজিলে এই কফি জন্মায়।
উত্তরাঞ্চলে কফি চাষ সম্প্রসারণের পথপ্রদর্শক নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস। তিনি প্রথম ২০০৯ সালে কক্সবাজার থেকে ২০ টাকা দরে ১৫০টি অ্যারাবিকা জাতের কফির চারা কিনে ৪ শতাংশ জমিতে লাগিয়েছিলেন। তিন বছরের মাথায় ফলন আসে। এরপর তিনি নিজেই চারা প্রস্তুত ও বিক্রিতে মন দেন। প্রতিবছর শুধু কফির চারা বিক্রি করেই তিনি ৫-৬ লাখ টাকা আয় করেন। পাশের জলঢাকা, তারাগঞ্জ উপজেলা, রংপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চারা বিক্রি করেন। একই উপজেলার পুঁটিমারী ইউনিয়নের কাছারীপাড়া গ্রামের সুলতান আলী মাস্টারও নিজের ৮ শতাংশ জমিতে একই বছর কফি চাষ শুরু করেন। বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় তিনি এক বিঘা জমির ওপর কফির বাগান করেছেন। অন্যদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের সুনগর গ্রামের খাদিজা আক্তার ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ জমিতে অ্যারাবিকা জাতের কফির চারা লাগান। এ বছর তাঁর বাগানে প্রথম ফলন এসেছে।
নীলফামারী জেলার আবহাওয়া রোবাস্টা জাতের কফির জন্য উপযোগী হওয়ায় ২০২১ সালে বছরব্যাপী কফি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কয়েকটি উপজেলার মোট ৬০ বিঘা জমিতে চাষের জন্য নতুন করে রোবাস্টা জাতের কফির চারা বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়।
কফি চাষের জন্য প্রয়োজন উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং মাঝারি বৃষ্টিপাত। নীলফামারীর আবহাওয়া এবং এ অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের মাত্রা কফি চাষের অনুকূল। এখানকার কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া কফিগাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে ফল পাকার জন্য শুষ্ক আবহাওয়া দরকার। মৃদু অম্লধর্মী মাটি (পিএইচ: ৫.৫-৬.৫) ও লৌহ, পটাশ, নাইট্রোজেন ও জৈবিক উপাদানসমৃদ্ধ লালচে দোঁ-আশ মাটি কফি চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, যা এখানে রয়েছে। মাটির শ্রেণি উঁচু ও সুনিষ্কাশিত হওয়ার কারণে কফি চাষের জন্য আদর্শ।
কফিগাছ থেকে শুধু পরিচিত পানীয়টিই নয়, কফিগাছের অন্য উপকরণ ব্যবহার করে মধু ও শ্যাম্পু তৈরি করা যায়। একটি কফিগাছের ফুল থেকে প্রতিবার ১০০ গ্রাম মধু সংগ্রহ করা সম্ভব। এ ছাড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া কফি চেরি দিয়ে ময়দা তৈরি করা যায়। এই ময়দা দিয়ে রুটি, চকলেট, সস ও কেক তৈরি করা যায়।
কফিতে ক্যাফেইন নামের একধরনের উত্তেজক পদার্থ রয়েছে। ৮ আউন্স কফিতে প্রায় ১৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। এই ক্যাফেইন মানুষের সতেজতা ও কর্মতৎপরতা বাড়াতে সাহায্য করে। কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে, যা আমাদের দেহের কোষগুলোকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ ও রাসায়নিকের মিশ্রণ ঠেকাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৫, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম ও প্রোটিন রয়েছে।
কম সময়ে, কম পরিশ্রমে, কম খরচে কফি চাষ করা সম্ভব। চারা রোপণের দুই বছরের মাথায় ফল আসা শুরু হয়। ফুল আসা শুরু হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। আর ফল সংগ্রহ করা হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। একটি গাছ থেকে ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। গাছ লম্বায় প্রায় ২৫-৩০ ফুট পর্যন্ত হয়। প্রতি গাছে ২ কেজির মতো ফল ধরলেও পরে শুকিয়ে ৩০০ গ্রামের মতো পাওয়া যায়। ফল সংগ্রহের পর খুব কম সময়ে কফির বিনগুলো চুর্ণ করে রোদে শুকিয়ে চুলায় গরম করে নিয়ে গুঁড়ো করে তাৎক্ষণিকভাবে কফি প্রস্তুত করা যায়। ফল সংগ্রহের সুবিধার্থে কফিগাছের ডালপালা কেটে ঝোপালো করা হয়। এ গাছের বংশবিস্তার মূলত বীজ দিয়েই হয়। গুটিকলম করেও চারা প্রস্তুত করা যায়। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের ঢালে কফি চাষ করা ভালো। কফি চাষে হালকা ছায়ার প্রয়োজন হয়। এ জন্য ছায়াদানকারী গাছ হিসেবে ইপিল-ইপিল, মেহগনি, কড়ই ইত্যাদি গাছ নির্দিষ্ট দূরত্বে লাগানো হয়। কফির সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে আদা, হলুদ প্রভূতি মসলাজাতীয় ফসল চাষ করা যায়। এতে রোগবালাই খুব কম হয় ও খুব অল্প সেচে চাষ করা যায়। কফির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি পচনশীল নয়। পোস্ট হার্ভেস্ট প্রক্রিয়ার পর চাইলে এক বছর রেখেও বিক্রি করা যায়।
হর্টিকালচার উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে কফির উৎপাদন এলাকা ছিল প্রায় ১১৮ দশমিক ৩০ হেক্টর। আর মোট উৎপাদন ছিল প্রায় ৫৫ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন। ফলে দেশের চাহিদার ৯৫ শতাংশই এখনো মেটানো হয় আমদানি করা কফি দিয়ে।
কফি পাহাড়ি অঞ্চলে ভালো হলেও নীলফামারীর কৃষকেরা সমতল ভূমিতে এর চাষ করে সাফল্য দেখিয়েছেন। ভবিষ্যতে কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে কফি চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের কফি বিষয়ে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া গেলে এ অঞ্চলে কফি চাষের এক বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। ফলে দেশের কফির আমদানিনির্ভরতা কমবে এবং অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
তুষার কান্তি রায়
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিস, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪