ডি এম আব্দুল বারী
‘জলে-ডোবা চিকন শ্যামল কচি ধানের পাশে পাশে/ ভরা নদীর ধারে ধারে হাঁসগুলি আজ সারে সারে/ দুলে দুলে ওই-যে ভাসে।’ আজকের নওগাঁ জেলাকে যে নদী এখনো সজল আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, সেই আত্রাইয়ের বুকে বসেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গান লিখেছিলেন। আত্রাই নওগাঁ জেলার প্রধান নদীগুলোর একটি। সাবেক পুণ্ড্রসভ্যতার স্মৃতিবাহী এই ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে গেছে ছোট যমুনা, পুনর্ভবা, তুলসীগঙ্গা, নাগর ও শিব নদনদী। বরেন্দ্র অঞ্চলের এই অংশের ইতিহাস-ঐতিহ্যও বেশ সুপ্রাচীন।
একসময় পুণ্ড্রদের আবাসভূমি ছিল এই অঞ্চল। আজকের নওগাঁ জেলা সেই পুণ্ড্রভূমিরই একাংশ, যেখানে হয়তো সে সময় মাত্র জনপদ গড়ে উঠছিল। জেলার নামটির দিকে তাকালে এর কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে। নওগাঁ শব্দের প্রথমাংশ ‘নও’ অর্থ নতুন, আর ‘গাঁ’ শব্দের অর্থ গ্রাম। নতুন জনপদ বা গ্রামকে চিহ্নিত করতেই প্রথম এই শব্দের ব্যবহার শুরু হয় বলে মনে হয়, যা থেকে আজকের জেলা নওগাঁর নামটি এসেছে। ১৮৭৭ সালে নওগাঁ, মান্দা ও পাঁচুপুর থানাকে নিয়ে গঠিত হয় নওগাঁ মহকুমা, যা ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ জেলায় রূপান্তরিত হয়।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি—সব বিবেচনাতেই নওগাঁর রয়েছে সমৃদ্ধ অতীত। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার প্রত্নস্থাপনা সোমপুর মহাবিহার তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল দেব অষ্টম শতকের শেষ বা নবম শতকের শুরুর দিকে এই মহাবিহার নির্মাণ করেন, ইউনেসকোর মতে যা দক্ষিণ হিমালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধবিহার। আয়তনে এর সঙ্গে তুলনা চলে শুধু ভারতের নালন্দা মহাবিহারের। শুধু এই অঞ্চল নয়, ভারত উপমহাদেশ ছাড়িয়ে চীন, তিব্বত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশ থেকে ধর্মশাস্ত্র শিখতে আসতেন জ্ঞানপিপাসুরা। আচার্য ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর।
সেই সোমপুর মহাবিহারের কাল থেকে শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে নওগাঁর যে প্রসিদ্ধি, তা টলেনি কখনো। বাংলা সাহিত্যের মহিরুহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আগেই। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পতিসর এক ঐতিহাসিক স্থান দখল করে আছে। আত্রাই উপজেলার পতিসর নামক স্থানে ঠাকুর পরিবারের জমিদারি কাছারি ছিল। বাংলাদেশের শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও কালিগ্রামে ছিল তাদের তিনটি পরগনা। এই সূত্রে বাংলার জোলো হাওয়ায় কবির দীর্ঘ সময় কেটেছে। পতিসরও তার ব্যতিক্রম নয়। এই পতিসরে থাকাকালেই রচিত হয়েছে কবির অনেক জনপ্রিয় গান, কবিতা। পতিসর কাছারিবাড়িটি ছিল নাগর নদের তীরে। এই নদ হয়ে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন আত্রাই, পুনর্ভবা। পরগনার উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথ রাস্তাঘাট নির্মাণ, কূপ-দিঘি খনন, গ্রামসালিশি ব্যবস্থা ও অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করেন। এই অঞ্চল তাঁর হৃদয়ে এতটাই জায়গা করে নিয়েছিল যে নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে তিনটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
এ ছাড়া নওগাঁ জেলার বিখ্যাত জমিদার ছিলেন বলিহারের জমিদারেরা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে নওগাঁর বলিহার এলাকার এক জমিদার জায়গির লাভ করেছিলেন। ১৮২৩ সালে জমিদার রাজেন্দ্রনাথ এখানে একটি রাজ-রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। সেখানে স্থাপিত রাজেশ্বরী দেবীর পিতলের মূর্তি বলিহারসহ এই অঞ্চলের প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। শুধু এটিই নয়, এ অঞ্চলে রয়েছে আরও অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে দিবর স্তম্ভের কথা। নওগাঁ জেলার পত্নীতলা থানার দিবর দিঘির মাঝখানে থাকা গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভই দিবর স্তম্ভ, যার জুড়ি গোটা বাংলাদেশেই বিরল। ঐতিহাসিক এই নিদর্শন দিব্যক জয়স্তম্ভ নামেও পরিচিত। স্থানীয়দের মধ্যে কর্মকারের জলাশয় নামে পরিচিত এই দিঘি ৪০–৫০ বিঘাজুড়ে বিস্তৃত।
রয়েছে আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান। জেলার ধামইরহাট উপজেলার একটি দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিস্তৃত বনভূমি নিয়ে এই উদ্যান। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ ২৬৪ দশমিক ১২ হেক্টর এলাকাজুড়ে থাকা এই বনভূমির ঠিক মাঝখানে রয়েছে প্রায় ৪৩ একর আয়তনের বিশাল দিঘি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে এটিকে ‘আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করে।
বিস্তৃতিতে সোমপুর বিহারের সমতুল্য না হলেও ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল বিহারের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অনেক। ইতিহাস বলছে, পাল রাজা রামপাল গৌড় রাজ্য পুনরুদ্ধার করে রামাবতি নগরে রাজধানী স্থাপন করে এই জগদ্দল মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। নওগাঁর ঐতিহাসিক নিদর্শনের কথা এলে কুসুম্বা মসজিদকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মান্দা উপজেলার রং কুসুম্বা গ্রামের কুসুম্বা দিঘিপাড়ের এই মসজিদ সবাই চেনেন। বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটে থাকা ছবিটি এই মসজিদের। গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহের আমলে নির্মিত এই মসজিদ শুধু নওগাঁর নয়, বাংলাদেশেরই গুরুত্বপূর্ণ এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। রয়েছে সাঁওতাল, মুণ্ডাসহ নানা জাতিগোষ্ঠীর বাস, যা নওগাঁকে দিয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার।
ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নানা নিদর্শনে ভরা এই জনপদের অর্থনীতি এখনো কৃষিনির্ভর। নওগাঁ জেলায় লাখ লাখ টন ধান উৎপন্ন হয়, যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ধান উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে নওগাঁর গুরুত্ব অত্যধিক। আম উৎপাদনেও এই জেলা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে।
অন্য এলাকার সঙ্গে নওগাঁ জেলার যোগাযোগ, বিশেষত সড়কপথে যোগাযোগব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেকটাই উন্নত। সান্তাহার হয়ে ঢাকার সঙ্গে রেলযোগাযোগও খুবই ভালো। কৃষিনির্ভর শিল্প স্থাপনের জন্য নওগাঁ একটি উৎকৃষ্ট অঞ্চল। এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে এখনো বড় কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে প্রশাসনের নজর দেরিতে হলেও পড়েছে। এর প্রমাণ বহন করছে অতি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজ, যার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তেমনটি হলে স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার সমাধান যেমন, তেমনি স্থানীয় সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপায়গুলো আরও সহজভাবে মানুষের সামনে আসবে। জাতিবৈচিত্র্যের শক্তি কাজে লাগানো গেলে এই বিচিত্র ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে। সব মিলিয়ে শত সমস্যার পরও সামনের দিনগুলো অনেক বেশি উজ্জ্বল হওয়ার আশা দেখা যেতেই পারে।
ডি এম আব্দুল বারী
আইনজীবী
‘জলে-ডোবা চিকন শ্যামল কচি ধানের পাশে পাশে/ ভরা নদীর ধারে ধারে হাঁসগুলি আজ সারে সারে/ দুলে দুলে ওই-যে ভাসে।’ আজকের নওগাঁ জেলাকে যে নদী এখনো সজল আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, সেই আত্রাইয়ের বুকে বসেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গান লিখেছিলেন। আত্রাই নওগাঁ জেলার প্রধান নদীগুলোর একটি। সাবেক পুণ্ড্রসভ্যতার স্মৃতিবাহী এই ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে গেছে ছোট যমুনা, পুনর্ভবা, তুলসীগঙ্গা, নাগর ও শিব নদনদী। বরেন্দ্র অঞ্চলের এই অংশের ইতিহাস-ঐতিহ্যও বেশ সুপ্রাচীন।
একসময় পুণ্ড্রদের আবাসভূমি ছিল এই অঞ্চল। আজকের নওগাঁ জেলা সেই পুণ্ড্রভূমিরই একাংশ, যেখানে হয়তো সে সময় মাত্র জনপদ গড়ে উঠছিল। জেলার নামটির দিকে তাকালে এর কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে। নওগাঁ শব্দের প্রথমাংশ ‘নও’ অর্থ নতুন, আর ‘গাঁ’ শব্দের অর্থ গ্রাম। নতুন জনপদ বা গ্রামকে চিহ্নিত করতেই প্রথম এই শব্দের ব্যবহার শুরু হয় বলে মনে হয়, যা থেকে আজকের জেলা নওগাঁর নামটি এসেছে। ১৮৭৭ সালে নওগাঁ, মান্দা ও পাঁচুপুর থানাকে নিয়ে গঠিত হয় নওগাঁ মহকুমা, যা ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ জেলায় রূপান্তরিত হয়।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি—সব বিবেচনাতেই নওগাঁর রয়েছে সমৃদ্ধ অতীত। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার প্রত্নস্থাপনা সোমপুর মহাবিহার তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল দেব অষ্টম শতকের শেষ বা নবম শতকের শুরুর দিকে এই মহাবিহার নির্মাণ করেন, ইউনেসকোর মতে যা দক্ষিণ হিমালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধবিহার। আয়তনে এর সঙ্গে তুলনা চলে শুধু ভারতের নালন্দা মহাবিহারের। শুধু এই অঞ্চল নয়, ভারত উপমহাদেশ ছাড়িয়ে চীন, তিব্বত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশ থেকে ধর্মশাস্ত্র শিখতে আসতেন জ্ঞানপিপাসুরা। আচার্য ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর।
সেই সোমপুর মহাবিহারের কাল থেকে শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে নওগাঁর যে প্রসিদ্ধি, তা টলেনি কখনো। বাংলা সাহিত্যের মহিরুহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আগেই। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পতিসর এক ঐতিহাসিক স্থান দখল করে আছে। আত্রাই উপজেলার পতিসর নামক স্থানে ঠাকুর পরিবারের জমিদারি কাছারি ছিল। বাংলাদেশের শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও কালিগ্রামে ছিল তাদের তিনটি পরগনা। এই সূত্রে বাংলার জোলো হাওয়ায় কবির দীর্ঘ সময় কেটেছে। পতিসরও তার ব্যতিক্রম নয়। এই পতিসরে থাকাকালেই রচিত হয়েছে কবির অনেক জনপ্রিয় গান, কবিতা। পতিসর কাছারিবাড়িটি ছিল নাগর নদের তীরে। এই নদ হয়ে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন আত্রাই, পুনর্ভবা। পরগনার উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথ রাস্তাঘাট নির্মাণ, কূপ-দিঘি খনন, গ্রামসালিশি ব্যবস্থা ও অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করেন। এই অঞ্চল তাঁর হৃদয়ে এতটাই জায়গা করে নিয়েছিল যে নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে তিনটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
এ ছাড়া নওগাঁ জেলার বিখ্যাত জমিদার ছিলেন বলিহারের জমিদারেরা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে নওগাঁর বলিহার এলাকার এক জমিদার জায়গির লাভ করেছিলেন। ১৮২৩ সালে জমিদার রাজেন্দ্রনাথ এখানে একটি রাজ-রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। সেখানে স্থাপিত রাজেশ্বরী দেবীর পিতলের মূর্তি বলিহারসহ এই অঞ্চলের প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। শুধু এটিই নয়, এ অঞ্চলে রয়েছে আরও অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে দিবর স্তম্ভের কথা। নওগাঁ জেলার পত্নীতলা থানার দিবর দিঘির মাঝখানে থাকা গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভই দিবর স্তম্ভ, যার জুড়ি গোটা বাংলাদেশেই বিরল। ঐতিহাসিক এই নিদর্শন দিব্যক জয়স্তম্ভ নামেও পরিচিত। স্থানীয়দের মধ্যে কর্মকারের জলাশয় নামে পরিচিত এই দিঘি ৪০–৫০ বিঘাজুড়ে বিস্তৃত।
রয়েছে আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান। জেলার ধামইরহাট উপজেলার একটি দিঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিস্তৃত বনভূমি নিয়ে এই উদ্যান। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে পরিপূর্ণ ২৬৪ দশমিক ১২ হেক্টর এলাকাজুড়ে থাকা এই বনভূমির ঠিক মাঝখানে রয়েছে প্রায় ৪৩ একর আয়তনের বিশাল দিঘি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে এটিকে ‘আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করে।
বিস্তৃতিতে সোমপুর বিহারের সমতুল্য না হলেও ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল বিহারের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অনেক। ইতিহাস বলছে, পাল রাজা রামপাল গৌড় রাজ্য পুনরুদ্ধার করে রামাবতি নগরে রাজধানী স্থাপন করে এই জগদ্দল মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। নওগাঁর ঐতিহাসিক নিদর্শনের কথা এলে কুসুম্বা মসজিদকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মান্দা উপজেলার রং কুসুম্বা গ্রামের কুসুম্বা দিঘিপাড়ের এই মসজিদ সবাই চেনেন। বাংলাদেশের পাঁচ টাকার নোটে থাকা ছবিটি এই মসজিদের। গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহের আমলে নির্মিত এই মসজিদ শুধু নওগাঁর নয়, বাংলাদেশেরই গুরুত্বপূর্ণ এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। রয়েছে সাঁওতাল, মুণ্ডাসহ নানা জাতিগোষ্ঠীর বাস, যা নওগাঁকে দিয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার।
ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নানা নিদর্শনে ভরা এই জনপদের অর্থনীতি এখনো কৃষিনির্ভর। নওগাঁ জেলায় লাখ লাখ টন ধান উৎপন্ন হয়, যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ধান উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে নওগাঁর গুরুত্ব অত্যধিক। আম উৎপাদনেও এই জেলা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে।
অন্য এলাকার সঙ্গে নওগাঁ জেলার যোগাযোগ, বিশেষত সড়কপথে যোগাযোগব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেকটাই উন্নত। সান্তাহার হয়ে ঢাকার সঙ্গে রেলযোগাযোগও খুবই ভালো। কৃষিনির্ভর শিল্প স্থাপনের জন্য নওগাঁ একটি উৎকৃষ্ট অঞ্চল। এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে এখনো বড় কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে প্রশাসনের নজর দেরিতে হলেও পড়েছে। এর প্রমাণ বহন করছে অতি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজ, যার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তেমনটি হলে স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার সমাধান যেমন, তেমনি স্থানীয় সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপায়গুলো আরও সহজভাবে মানুষের সামনে আসবে। জাতিবৈচিত্র্যের শক্তি কাজে লাগানো গেলে এই বিচিত্র ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে। সব মিলিয়ে শত সমস্যার পরও সামনের দিনগুলো অনেক বেশি উজ্জ্বল হওয়ার আশা দেখা যেতেই পারে।
ডি এম আব্দুল বারী
আইনজীবী
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪