গোলাম সারোয়ার সম্রাট
হিমালয়ের কোল ঘেঁষে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জনপদ। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, ইতিহাস ও লোকপরম্পরা ঋতুবৈচিত্র্যের কথা জানিয়ে দেয়। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এবং শান্ত-সুনিবিড় পরিবেশের কারণে এই জেলার মানুষ যেমন মননশীল, তেমনি পরিশ্রমী। তাই প্রাণিত আকাঙ্ক্ষায় জীবনের নানা উপাদান-উপকরণজুড়ে যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলের অধিবাসীদের স্বকীয় জাতিসত্তা উন্মোচিত হয়েছে।
একাত্তর সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বরেন্দ্রভূমির অন্যান্য অঞ্চলের মতোই ঠাকুরগাঁওয়ের আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও উন্নয়ন হয়েছে। হাজার বছর ধরে এখানকার জনগোষ্ঠী ভাষা-সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে স্থানীয় ঐতিহ্যের ধারায়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ঠাকুরগাঁওবাসীর বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ এই অঞ্চলের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও স্বাধিকার অর্জনের রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
ঠাকুরগাঁও মূলত কৃষিপ্রধান জেলা। এই জেলা ধান, গম ও ভুট্টা চাষের জন্য উর্বর ভূমি। বিশেষ করে গম ও ধান উৎপাদনে জেলার বিশেষ সুনাম রয়েছে।
এই জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। আর বাকি মানুষ কৃষি শ্রমিক, তাঁরা অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে সোনার ফসল তুলে দেন গৃহস্থের গোলায়। এই খেতমজুরদের উদয়াস্ত পরিশ্রমেই ঠাকুরগাঁওয়ে উৎপাদিত হয় প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য।
আগে আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাজের অভাবে যে মঙ্গা দেখা দিত, এখন আর তা নেই। এখন এই জেলাসহ আশপাশের জেলার সব পেশার মানুষ অন্তত দুবেলা ভাত খেতে পায়।
মানুষের মৌলিক কিছু চাহিদা পূরণ ছাড়াও ক্ষুদ্র শিল্প, যেমন তাঁতশিল্প, বাঁশ-বেতশিল্প, পনিরশিল্প (চিজ), মাদুর-শতরঞ্জি ও পোলট্রি ফিড শিল্পের উন্নতি ঘটেছে এ জেলায়। এ ছাড়া চাল উৎপাদনের প্রায় ১ হাজার ৭০০ অটো ও হাস্কিং মিল রয়েছে। ফলে এই জেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথা উঠছে বারবার। দীর্ঘ বছর ধরে চিনিকল চলছে। সেটি সংস্কারের জন্য বর্তমান সরকার ৪১১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
একমাত্র ভারী শিল্প ঠাকুরগাঁও চিনিকল
ঠাকুরগাঁও শহরের অদূরে গোবিন্দনগরে ১৯৫৬ সালে জেলার একমাত্র ভারী শিল্প চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত ৬৪ বছর ধরে এই কারখানা তার উৎপাদন চালু রেখেছে। ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রেখে দীর্ঘদিনের পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে এটি। তবে আশার কথা, গত বছরের ১ অক্টোবর শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ঠাকুরগাঁও চিনিকল পরিদর্শন করেন। তখন তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলকে আরও আধুনিকায়ন করা হবে। যেসব যন্ত্রপাতি পুরোনো আছে, সেগুলো পরিবর্তন করে কীভাবে মিলটিকে অত্যাধুনিক করা যায়, সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। এখানে যুগ যুগ ধরে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা তো থাকবেনই, উপরন্তু নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
ধান-গম ঠাকুরগাঁওয়ের আত্মিক পরিচয়
ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের অপার বিশ্বাস কৃষিকাজে। আর ধান, গম এখন জেলার ব্র্যান্ড পরিচয়। বর্তমান সরকার কয়েক দফা সারের দাম কমানোর ফলে জেলার কৃষকেরা অনেক এগিয়ে গেছেন। এ ছাড়া সরকারের ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের হিসাব নম্বরে পাঠানো এবং সেই সঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মধ্যে উপকরণ-সহায়তা কার্ড বিতরণ করা যুগান্তকারী মাইলফলক। স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে ধানের উৎপাদন তিন গুণ বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ বেড়েছে। বুড়ি বাঁধ ও টাঙ্গন নদের উজানের ব্যারাজ এই জেলায় কৃষি উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখছে। এর ফলে আমন মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
মৌলবাদী ও সেনাশাসনের পতনের পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার তাগিদে ধানের উৎপাদন বাড়ানোর সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়।
কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলায় আমন মৌসুমে দেশে উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালের ধান বিনা-৭, ব্রি ধান-৩৩ ও বিভিন্ন ধরনের উচ্চফলনশীল ধানের চাষ হয়েছে বছরের মোট আবাদের ১০ শতাংশে। গম ঠাকুরগাঁওয়ের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। গম উৎপাদনে ঠাকুরগাঁও জেলা দেশে দ্বিতীয় স্থানে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্য ধরা হয়। আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। গম উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন।
রেশমের বাতি টিমটিম
ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বা সিল্ক ফ্যাক্টরি বন্ধের ১৮ বছর পর আবার চালু হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রেশম বোর্ড সূত্র অনুসারে, ১৯৭৫-৭৬ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দনগর এলাকায় ৩ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর রেশম কারখানা স্থাপন করে। ২০০২ সালে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করতেন, তাঁদের অনেকেই পেশা বদল করেছেন। অন্যরা রেশমগুটি উৎপাদন কষ্ট করে ধরে রেখেছেন অন্য পেশার পাশাপাশি। আশার কথা, সম্প্রতি ব্যক্তি উদ্যোগে ফের কারখানাটি চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারখানার সব যন্ত্রপাতি ভালো রয়েছে। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন কাঁচামালও দুষ্প্রাপ্য নয়।
সবুজবিপ্লব চা–বাগান
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুল আহসানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী জমির মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে। ওই বিশেষজ্ঞ দলের মতে, এসব জমিতে যে পরিমাণ জৈব সার আছে, তা সিলেটের জমির তুলনায় বেশি এবং চা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
এর পরপরই ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়ায় দুটি চা–চারার নার্সারি গড়ে উঠেছে। সিরাজুল ইসলাম ও ময়নুল হক নামের দুই ব্যক্তি কুজিশহর ও মধুপুর গ্রামে চা-চারার নার্সারি গড়ে তুলেছেন।
২০০৭ সালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নিটলডোবা গ্রামে ৪০ একর জমিতে একজন উদ্যোক্তা প্রথম বাগান করে চায়ের চাষ শুরু করেন। ইতিমধ্যে এই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৩৫০ একর জমিতে চায়ের আবাদ হয়েছে; যা জেলার কৃষি অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করছে। এরপর ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রিনফিল্ড টি এস্টেট কোম্পানি নিজ উদ্যোগে কাজ চালাতে থাকে। তাদের দেখে আরও কয়েকটি কোম্পানি এখানে আসে। ২০১০-১১ অর্থবছরে চা উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে প্রবেশ করে গ্রিনফিল্ড টি এস্টেট কোম্পানি। পরে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কোম্পানিও উৎপাদনে যায়।
শেষ কথা
ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষিক্ষেত্রে অমিত সম্ভাবনা
রয়েছে। এখন এখানে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন প্রয়োজন। এ জন্য যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর নির্ভরশীল। ইতিমধ্যে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-ঢাকা রেলযোগাযোগ চালু করা হয়েছে। আমাদের শিবগঞ্জ এলাকায়
একটি পুরোনো বিমানবন্দর আশির দশকেও চালু ছিল। এটি চালু করা নিয়ে সরকার নতুন করে
ভাবতে পারে। আমরা আশাবাদী, ঠাকুরগাঁওয়ের
কৃষি বৈজ্ঞানিক চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হবে।
কৃষি ও শিল্পের যুগপৎ বিকাশে সমৃদ্ধ হবে এই
জেলা।
গোলাম সারোয়ার সম্রাট
প্রাবন্ধিক, কবি ও প্রভাষক (বাংলা), আবুল হোসেন সরকার ডিগ্রি কলেজ
হিমালয়ের কোল ঘেঁষে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জনপদ। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, ইতিহাস ও লোকপরম্পরা ঋতুবৈচিত্র্যের কথা জানিয়ে দেয়। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এবং শান্ত-সুনিবিড় পরিবেশের কারণে এই জেলার মানুষ যেমন মননশীল, তেমনি পরিশ্রমী। তাই প্রাণিত আকাঙ্ক্ষায় জীবনের নানা উপাদান-উপকরণজুড়ে যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলের অধিবাসীদের স্বকীয় জাতিসত্তা উন্মোচিত হয়েছে।
একাত্তর সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বরেন্দ্রভূমির অন্যান্য অঞ্চলের মতোই ঠাকুরগাঁওয়ের আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও উন্নয়ন হয়েছে। হাজার বছর ধরে এখানকার জনগোষ্ঠী ভাষা-সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে স্থানীয় ঐতিহ্যের ধারায়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ঠাকুরগাঁওবাসীর বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ এই অঞ্চলের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও স্বাধিকার অর্জনের রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
ঠাকুরগাঁও মূলত কৃষিপ্রধান জেলা। এই জেলা ধান, গম ও ভুট্টা চাষের জন্য উর্বর ভূমি। বিশেষ করে গম ও ধান উৎপাদনে জেলার বিশেষ সুনাম রয়েছে।
এই জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। আর বাকি মানুষ কৃষি শ্রমিক, তাঁরা অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে সোনার ফসল তুলে দেন গৃহস্থের গোলায়। এই খেতমজুরদের উদয়াস্ত পরিশ্রমেই ঠাকুরগাঁওয়ে উৎপাদিত হয় প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য।
আগে আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাজের অভাবে যে মঙ্গা দেখা দিত, এখন আর তা নেই। এখন এই জেলাসহ আশপাশের জেলার সব পেশার মানুষ অন্তত দুবেলা ভাত খেতে পায়।
মানুষের মৌলিক কিছু চাহিদা পূরণ ছাড়াও ক্ষুদ্র শিল্প, যেমন তাঁতশিল্প, বাঁশ-বেতশিল্প, পনিরশিল্প (চিজ), মাদুর-শতরঞ্জি ও পোলট্রি ফিড শিল্পের উন্নতি ঘটেছে এ জেলায়। এ ছাড়া চাল উৎপাদনের প্রায় ১ হাজার ৭০০ অটো ও হাস্কিং মিল রয়েছে। ফলে এই জেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথা উঠছে বারবার। দীর্ঘ বছর ধরে চিনিকল চলছে। সেটি সংস্কারের জন্য বর্তমান সরকার ৪১১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
একমাত্র ভারী শিল্প ঠাকুরগাঁও চিনিকল
ঠাকুরগাঁও শহরের অদূরে গোবিন্দনগরে ১৯৫৬ সালে জেলার একমাত্র ভারী শিল্প চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত ৬৪ বছর ধরে এই কারখানা তার উৎপাদন চালু রেখেছে। ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রেখে দীর্ঘদিনের পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে এটি। তবে আশার কথা, গত বছরের ১ অক্টোবর শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ঠাকুরগাঁও চিনিকল পরিদর্শন করেন। তখন তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলকে আরও আধুনিকায়ন করা হবে। যেসব যন্ত্রপাতি পুরোনো আছে, সেগুলো পরিবর্তন করে কীভাবে মিলটিকে অত্যাধুনিক করা যায়, সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। এখানে যুগ যুগ ধরে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা তো থাকবেনই, উপরন্তু নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
ধান-গম ঠাকুরগাঁওয়ের আত্মিক পরিচয়
ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের অপার বিশ্বাস কৃষিকাজে। আর ধান, গম এখন জেলার ব্র্যান্ড পরিচয়। বর্তমান সরকার কয়েক দফা সারের দাম কমানোর ফলে জেলার কৃষকেরা অনেক এগিয়ে গেছেন। এ ছাড়া সরকারের ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের হিসাব নম্বরে পাঠানো এবং সেই সঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মধ্যে উপকরণ-সহায়তা কার্ড বিতরণ করা যুগান্তকারী মাইলফলক। স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে ধানের উৎপাদন তিন গুণ বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ বেড়েছে। বুড়ি বাঁধ ও টাঙ্গন নদের উজানের ব্যারাজ এই জেলায় কৃষি উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখছে। এর ফলে আমন মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
মৌলবাদী ও সেনাশাসনের পতনের পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার তাগিদে ধানের উৎপাদন বাড়ানোর সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়।
কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলায় আমন মৌসুমে দেশে উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালের ধান বিনা-৭, ব্রি ধান-৩৩ ও বিভিন্ন ধরনের উচ্চফলনশীল ধানের চাষ হয়েছে বছরের মোট আবাদের ১০ শতাংশে। গম ঠাকুরগাঁওয়ের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। গম উৎপাদনে ঠাকুরগাঁও জেলা দেশে দ্বিতীয় স্থানে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্য ধরা হয়। আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। গম উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন।
রেশমের বাতি টিমটিম
ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বা সিল্ক ফ্যাক্টরি বন্ধের ১৮ বছর পর আবার চালু হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রেশম বোর্ড সূত্র অনুসারে, ১৯৭৫-৭৬ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দনগর এলাকায় ৩ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর রেশম কারখানা স্থাপন করে। ২০০২ সালে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করতেন, তাঁদের অনেকেই পেশা বদল করেছেন। অন্যরা রেশমগুটি উৎপাদন কষ্ট করে ধরে রেখেছেন অন্য পেশার পাশাপাশি। আশার কথা, সম্প্রতি ব্যক্তি উদ্যোগে ফের কারখানাটি চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারখানার সব যন্ত্রপাতি ভালো রয়েছে। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন কাঁচামালও দুষ্প্রাপ্য নয়।
সবুজবিপ্লব চা–বাগান
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুল আহসানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী জমির মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে। ওই বিশেষজ্ঞ দলের মতে, এসব জমিতে যে পরিমাণ জৈব সার আছে, তা সিলেটের জমির তুলনায় বেশি এবং চা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
এর পরপরই ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়ায় দুটি চা–চারার নার্সারি গড়ে উঠেছে। সিরাজুল ইসলাম ও ময়নুল হক নামের দুই ব্যক্তি কুজিশহর ও মধুপুর গ্রামে চা-চারার নার্সারি গড়ে তুলেছেন।
২০০৭ সালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নিটলডোবা গ্রামে ৪০ একর জমিতে একজন উদ্যোক্তা প্রথম বাগান করে চায়ের চাষ শুরু করেন। ইতিমধ্যে এই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৩৫০ একর জমিতে চায়ের আবাদ হয়েছে; যা জেলার কৃষি অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করছে। এরপর ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রিনফিল্ড টি এস্টেট কোম্পানি নিজ উদ্যোগে কাজ চালাতে থাকে। তাদের দেখে আরও কয়েকটি কোম্পানি এখানে আসে। ২০১০-১১ অর্থবছরে চা উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে প্রবেশ করে গ্রিনফিল্ড টি এস্টেট কোম্পানি। পরে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কোম্পানিও উৎপাদনে যায়।
শেষ কথা
ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষিক্ষেত্রে অমিত সম্ভাবনা
রয়েছে। এখন এখানে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন প্রয়োজন। এ জন্য যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর নির্ভরশীল। ইতিমধ্যে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-ঢাকা রেলযোগাযোগ চালু করা হয়েছে। আমাদের শিবগঞ্জ এলাকায়
একটি পুরোনো বিমানবন্দর আশির দশকেও চালু ছিল। এটি চালু করা নিয়ে সরকার নতুন করে
ভাবতে পারে। আমরা আশাবাদী, ঠাকুরগাঁওয়ের
কৃষি বৈজ্ঞানিক চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হবে।
কৃষি ও শিল্পের যুগপৎ বিকাশে সমৃদ্ধ হবে এই
জেলা।
গোলাম সারোয়ার সম্রাট
প্রাবন্ধিক, কবি ও প্রভাষক (বাংলা), আবুল হোসেন সরকার ডিগ্রি কলেজ
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪