রাশেদা রওনক খান
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ কেন, সারা বিশ্বেই নানা দেশ নানা ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। কেউ দেশ দখল তো কেউ ধর্ম নিয়ে, কেউবা গোয়েন্দা সংস্থার চরবৃত্তি নিয়ে শঙ্কিত, কেউবা পরমাণুকেন্দ্র সামাল দেওয়া নিয়ে চিন্তিত। তবে করোনাকালে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ তৈরি হওয়ায় বেশির ভাগ দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মুখে আছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে কারও কারও ক্ষেত্রে এই সংকট চরমে উঠতে পারে, এমনটি ধারণা করা যেতেই পারে। সেখান থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম জানাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। বিষয়টি আশাব্যঞ্জক তো বটেই, গর্বেরও আমাদের জন্য। চারদিকে সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জবাবদিহির অভাব, রাজনৈতিক সংকট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতিসহ নানা কারণে অনেকের মনেই প্রশ্নটি আসে যে বাংলাদেশ কি আসলেই এগিয়ে যাচ্ছে?
প্রশ্নটার উত্তর সহজ আর সরল থাকে না, অনেকটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় নানা কারণেই! অনেক বিচার–বিশ্লেষণের দাবিও রাখে সেই সব কারণ এবং এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রগুলো। এত সব বিচার-বিশ্লেষণ এই মুহূর্তে আমার পক্ষে করা কিছুটা কঠিন, যেহেতু দেশের বাইরে আছি। সবকিছু নিজের চোখে দেখার ও শোনার অবকাশ কম। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যা জানাচ্ছে, তা–ই কেবল জানছি। এই জানানোর প্রক্রিয়ায় যেমন শুদ্ধতা আছে, তেমনি অনেক রাজনীতি আছে। তাই নির্মোহ বিচার-বিশ্লেষণ করা কঠিন কেবল এই দুইয়ের ওপর ভরসা করে। তাই লেখাটির আমন্ত্রণ পাওয়ার পরও বারবার ভাবছিলাম লিখব কি না! যখন বুঝলাম লিখতেই হবে, ছাড় পাওয়া যাবে না! তখন ভাবলাম, কী নিয়ে লেখা যায়! এমন কী বিষয় আছে যে কারণে দেশকে নিয়ে এই মুহূর্তে আমি ব্যক্তিমানুষ গর্ব করতে পারি? যদি আমার ভাবনাটাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে এক ভাগে ওপরে বর্ণিত নানা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক সংকটগুলোকে রাখি, অন্য ভাগে কেবল প্রাপ্তি আর সম্ভাবনার কথা চিন্তা করি, তাহলে আমাদের প্রাপ্তি ও সম্ভাবনাগুলো কী?
একদিকে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুৎ, খাদ্য উৎপাদন, রিজার্ভ বাড়ছে, মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি ইত্যাদি যখন একসঙ্গে ঘটছে, তখন তো বলা যেতেই পারে, হ্যাঁ, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। দেশ এগিয়ে চলার পেছনে প্রধান ভূমিকা এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের। তারা দুর্দান্ত গতিতে ইনফরমাল ইকোনমিতে কাজ করে চলেছে, অন্যদিকে ফরমাল ইকোনমি তো আছেই। আমরা একসময় মঙ্গার কথা শুনতাম, মানুষ না খেয়ে মারা যেত উত্তরবঙ্গে, আজ সেই মঙ্গার প্রকোপ নেই। আমার গবেষণা এলাকা কড়াইল বস্তিতে যখন হেঁটে বেড়াই, তখন মনে হয় এই গরিব মানুষদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই ভোরবেলায় হাজারো মেয়ের একসঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া গার্মেন্টসে যাওয়ার দৃশ্য, কী যে এক অভাবনীয় অভূতপূর্ব দৃশ্য, তা নিজের চোখে দেখাটাও অনেক গর্বের! তাদের প্রতি একধরনের কৃতজ্ঞতা বোধ যেমন জন্মায়, অন্যদিকে তাঁদের কর্মক্ষমতা আমাকে উৎসাহ দেয়। কিন্তু তাঁদের এই যাতায়াতের পথ কি আমরা মসৃণ করতে পেরেছি? ইভ টিজিং থেকে শুরু করে নানা রকমের যৌন হয়রানি, ধর্ষণ—এসবই বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই কর্মচাঞ্চল্যময় কর্মশক্তির সামনে। এই তো সেদিন সাভারে এক গার্মেন্টস কর্মী কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এইটুকু নিরাপত্তা যদি আমরা তাঁদের নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে তাঁদের নিয়ে যে আমরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে গল্প বলি, তাঁদের এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে গ্রাফে এঁকে দেখাই, তখন তো নিজের ভেতরে অনুশোচনাবোধ হয় যে যাঁদের নিয়ে বিভিন্ন দেশে গল্প বলি, সেসব মানুষের অনেককেই আমরা নিরাপত্তা দিতে পারছি না। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি ভেবে দেখবে, কীভাবে তাঁদের এই পথচলাকে আরও নিরাপদ করা যায়? কারণ, দেশের অর্থনীতির চাকা আরও বেগবান করার জন্য হলেও তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে। তা ছাড়া, এভাবে লাগামছাড়া ধর্ষণ বাড়তে থাকলে দেশও ইমেজ সংকটের মধ্যে পড়ে যায়। কেবল অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি এলেই কি একটি দেশকে সফল বলা যাবে? না, বিষয়টা কিন্তু এত সহজ নয়। সফলতা তখনই আসবে, যখন অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তাসহ নানা মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে সক্ষম হবে একটি দেশ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আমাদের রিজার্ভ বাড়িয়ে দিচ্ছে, এমনকি এই করোনার সময়েও। এটা কি আমাদের এগিয়ে চলার একটা নিয়ামক শক্তি নয়? কী প্রচণ্ড পরিশ্রম করে প্রবাসীরা অর্থ পাঠান, তাঁদের পাঠানো অর্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। তবে মাঝে মাঝে ভাবি, প্রবাসী শ্রমিকদের মাঝে অনেকেই এত অমানবিক কষ্ট করে মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করেন, এই পরিশ্রম দিলে কি বাংলাদেশে নিজের গ্রামে বসে আরামে পরিবার নিয়ে টাকাটা উপার্জন করা যেত না? বিদেশের মোহ আমাদের অঙ্কের হিসাবকে এড়িয়ে যায়। কিন্তু এই যে এই অমানবিক পরিশ্রম, কষ্ট, অপমান—এতসবের হয়তো মুখোমুখি হতে হতো না, যদি না দেশে নিজেদের উদ্যোগে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দেশেই ব্যবসা করার মনমানসিকতা তৈরি করা যেত। কথাটি আমরা বলি ঠিকই, কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার যে কঠিন ও সংগ্রামময় পথ, তা কি কিছুটা সহজ করার কথা ভাবছেন পলিসিমেকাররা? যাঁরা এর মাঝে উদ্যোক্তা হয়ে গেছেন, তাঁদের কতজনই সঠিকভাবে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন?
চাকরির বাজারে সংকট, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে অনেকেই এখন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। ভাবা যায়, আমাদের দেশের শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশ এবং মোট শ্রমবাজারের ২৫ শতাংশের কর্মসংস্থান হচ্ছে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানাগুলোয়? এই পরিসংখ্যান আমাদের জানান দিচ্ছে, অবহেলা ও বৈষম্য পেরিয়ে গত কয়েক বছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে বিকশিত হচ্ছে। বড় কারণ, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তরুণদের উদ্যোক্তা হতে সরকার বেশ উৎসাহ দিচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও প্রতিনিয়ত তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তারপরও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোয় বড় বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সব সময়ই বৈষম্যের শিকার, একইভাবে সমাজের কাঠামোতেও এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। তবে আশার কথা হলো, তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও এসেছে একধরনের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। ফলে উচ্চশিক্ষিত বেকার তরুণেরা, এমনকি বিদেশ থেকেও দেশে ফিরে দেশের শিল্পোন্নয়নে নিয়োজিত করেছেন অনেকে। এ ধরনের স্বল্প পুঁজির মানুষ তাঁদের ব্যবসায়ী উদ্যোগ শুরু করে নিজের ঘর থেকে, ক্ষুদ্র অথবা মাঝারি শিল্প দিয়েই। আমি ফেসবুকে এলেই দেখছি মেয়েরা আজকাল বাড়িতে বসেই ব্যবসা করছেন নানা রকমের সামগ্রী নিয়ে।
খাদ্য উৎপাদনে আমরা দিনকে দিন নিজেদের আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছি। এটা সম্ভব হচ্ছে আমাদের গ্রামের কিষান-কিষানিদের অবিরত পরিশ্রমের কারণে। আগের তুলনায় মানুষ এখন জানে কখন কীভাবে কোনটার চাষ করতে হবে, কীভাবে উৎপাদন বাড়াতে হবে। দিনকে দিন সুকৌশলী হচ্ছেন আমাদের কৃষকেরা, অন্যদিকে নিজের ঘর্মাক্ত শ্রম দিয়ে আমাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করছেন। রপ্তানিকারকেরা বিদেশে রপ্তানি করার জন্য সুযোগ পাচ্ছেন কৃষকদের এই কঠোর–কঠিন পরিশ্রমের জন্যই। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনোবলও বেড়ে যায়, আগের মতো খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতায় আমাদের ভুগতে হয় না। একবার এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসনের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম। সেখানে তিনি বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে আমার এক প্রশ্নের জবাবে প্রশংসা করে যাচ্ছিলেন, সেদিন একজন বাংলাদেশি হিসেবে খুব গর্ব হচ্ছিল সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের কিষান-কিষানিদের জন্য। তিনি এটাও বলছিলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব, তাই খাদ্যে ভবিষ্যতে তোমাদের আরও সমৃদ্ধি আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি আসলে এটাই যে একটি দেশের যেকোনো ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য, বিকাশের পথে যেসব বাধা থাকে, তা যদি সরকার উপড়ে ফেলে দিয়ে সহজ করে দেয়, তবেই সম্ভব সেই দেশের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলা। ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে আমাদের গ্রামগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, মানুষ কৃষিবিমুখ হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। এর মাঝেও খাদ্য উৎপাদনে যত দূর আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তাই–বা কম কিসের? তবে সরকারের প্রণোদনার হার আরও বাড়ানো হলে মানুষ আবার হয়তো ফিরে আসবে বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে। সেই সুযোগ তৈরি করে দিক কৃষিবান্ধব সরকার, সেই প্রত্যাশা রইল।
গণমাধ্যম মারফত জেনেছি, আগামী ডিসেম্বরে ঢাকার গণপরিবহনে যুক্ত হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। এরই মধ্যে ঢাকায় বাসরুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালুর কথাও শোনা যাচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের পরিবহনব্যবস্থা একেবারে বদলে যাবে—এমন মত বিশেষজ্ঞদের। ভাবতেই শান্তি লাগছে, ঢাকাবাসীর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থেকে কর্মশক্তি নষ্ট করার দিন বোধ হয় প্রায় শেষ হয়ে এল। আশা করছি মানুষ এখন অনেকটা সময় রাস্তা থেকে বাঁচিয়ে হয় কর্মক্ষেত্রে, নয় পরিবারে দিতে পারবে। আবার এই ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে, আমরা কি পারব বাইরের দেশের মতো মেট্রোরেলকে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখতে? নারীরা কি স্বচ্ছন্দে নিরাপদে মেট্রোরেল ব্যবহার করতে পারবে রাতের বেলায়? নাকি বছর ঘুরতে না–ঘুরতেই আমাদের মেট্রোরেলের সব রং বিবর্ণ হয়ে যাবে? এই বিবর্ণ করা থেকে নাগরিকদের কীভাবে বিরত রাখা যায়? মেট্রোরেল চালুর আগে এসব বিষয় কি আমরা একটু গবেষণা করে দেখছি? ভাবছি, কীভাবে নাগরিকদের কিছুটা সচেতন করা যায় দেশের সম্পদ রক্ষায়? এই সচেতনতা আসলে তৈরি হবে তখনই, যখন মানুষ দেখবে তাদের প্রতি যত্নশীল রাষ্ট্রযন্ত্র ও নীতিনির্ধারকেরা।
আরও অনেক খাত রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের মানুষ দিনকে দিন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজেদের। সেই সব এগিয়ে যাওয়া খাতের দিকে নীতিনির্ধারকেরা আরও বেশি যুক্ত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথকে কণ্টকমুক্ত করে দেবেন—এটাই সবার প্রত্যাশা। এখন দেশ যেভাবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে, তাতে প্রতিনিয়ত কিছু ভালো খবর পাব আমরা, সেটাই সবার চাওয়া। আমরা দুর্নীতিমুক্ত হতে চাই, ধর্ষণমুক্ত সমাজ চাই, মানবিক রাষ্ট্র চাই। কেবল এ রকম দিকগুলোর দিকে বাড়তি খেয়াল দিলেই আমরা এই সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারব। কেননা, যে সমস্যাগুলো আমাদের জন্য সংকট তৈরি করে, যে সমস্যাগুলোর কারণে আমরা এগিয়ে যাওয়ার পথে খেই হারিয়ে ফেলি, যে ঘাটতির কারণে এতসব ভালো খবর তলিয়ে যায়, সেগুলো থেকে উত্তরণের জন্য কী উপায় আছে, সেদিকেই এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া দরকার। দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথকে অনেকটাই অমসৃণ করে ফেলে আমাদের সেই সংকটগুলো। প্রত্যাশায় রইলাম, দেশ কেবলই এগিয়ে যাবে এসব সংকট কাটিয়ে সামনের দিকে। কারণ এখন আমাদেরই সময়, এগিয়ে যাওয়ার!
রাশেদা রওনক খান,
শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ কেন, সারা বিশ্বেই নানা দেশ নানা ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। কেউ দেশ দখল তো কেউ ধর্ম নিয়ে, কেউবা গোয়েন্দা সংস্থার চরবৃত্তি নিয়ে শঙ্কিত, কেউবা পরমাণুকেন্দ্র সামাল দেওয়া নিয়ে চিন্তিত। তবে করোনাকালে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ তৈরি হওয়ায় বেশির ভাগ দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মুখে আছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে কারও কারও ক্ষেত্রে এই সংকট চরমে উঠতে পারে, এমনটি ধারণা করা যেতেই পারে। সেখান থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম জানাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। বিষয়টি আশাব্যঞ্জক তো বটেই, গর্বেরও আমাদের জন্য। চারদিকে সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জবাবদিহির অভাব, রাজনৈতিক সংকট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতিসহ নানা কারণে অনেকের মনেই প্রশ্নটি আসে যে বাংলাদেশ কি আসলেই এগিয়ে যাচ্ছে?
প্রশ্নটার উত্তর সহজ আর সরল থাকে না, অনেকটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় নানা কারণেই! অনেক বিচার–বিশ্লেষণের দাবিও রাখে সেই সব কারণ এবং এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রগুলো। এত সব বিচার-বিশ্লেষণ এই মুহূর্তে আমার পক্ষে করা কিছুটা কঠিন, যেহেতু দেশের বাইরে আছি। সবকিছু নিজের চোখে দেখার ও শোনার অবকাশ কম। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যা জানাচ্ছে, তা–ই কেবল জানছি। এই জানানোর প্রক্রিয়ায় যেমন শুদ্ধতা আছে, তেমনি অনেক রাজনীতি আছে। তাই নির্মোহ বিচার-বিশ্লেষণ করা কঠিন কেবল এই দুইয়ের ওপর ভরসা করে। তাই লেখাটির আমন্ত্রণ পাওয়ার পরও বারবার ভাবছিলাম লিখব কি না! যখন বুঝলাম লিখতেই হবে, ছাড় পাওয়া যাবে না! তখন ভাবলাম, কী নিয়ে লেখা যায়! এমন কী বিষয় আছে যে কারণে দেশকে নিয়ে এই মুহূর্তে আমি ব্যক্তিমানুষ গর্ব করতে পারি? যদি আমার ভাবনাটাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে এক ভাগে ওপরে বর্ণিত নানা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক সংকটগুলোকে রাখি, অন্য ভাগে কেবল প্রাপ্তি আর সম্ভাবনার কথা চিন্তা করি, তাহলে আমাদের প্রাপ্তি ও সম্ভাবনাগুলো কী?
একদিকে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুৎ, খাদ্য উৎপাদন, রিজার্ভ বাড়ছে, মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি ইত্যাদি যখন একসঙ্গে ঘটছে, তখন তো বলা যেতেই পারে, হ্যাঁ, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। দেশ এগিয়ে চলার পেছনে প্রধান ভূমিকা এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের। তারা দুর্দান্ত গতিতে ইনফরমাল ইকোনমিতে কাজ করে চলেছে, অন্যদিকে ফরমাল ইকোনমি তো আছেই। আমরা একসময় মঙ্গার কথা শুনতাম, মানুষ না খেয়ে মারা যেত উত্তরবঙ্গে, আজ সেই মঙ্গার প্রকোপ নেই। আমার গবেষণা এলাকা কড়াইল বস্তিতে যখন হেঁটে বেড়াই, তখন মনে হয় এই গরিব মানুষদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই ভোরবেলায় হাজারো মেয়ের একসঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া গার্মেন্টসে যাওয়ার দৃশ্য, কী যে এক অভাবনীয় অভূতপূর্ব দৃশ্য, তা নিজের চোখে দেখাটাও অনেক গর্বের! তাদের প্রতি একধরনের কৃতজ্ঞতা বোধ যেমন জন্মায়, অন্যদিকে তাঁদের কর্মক্ষমতা আমাকে উৎসাহ দেয়। কিন্তু তাঁদের এই যাতায়াতের পথ কি আমরা মসৃণ করতে পেরেছি? ইভ টিজিং থেকে শুরু করে নানা রকমের যৌন হয়রানি, ধর্ষণ—এসবই বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই কর্মচাঞ্চল্যময় কর্মশক্তির সামনে। এই তো সেদিন সাভারে এক গার্মেন্টস কর্মী কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এইটুকু নিরাপত্তা যদি আমরা তাঁদের নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে তাঁদের নিয়ে যে আমরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে গল্প বলি, তাঁদের এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে গ্রাফে এঁকে দেখাই, তখন তো নিজের ভেতরে অনুশোচনাবোধ হয় যে যাঁদের নিয়ে বিভিন্ন দেশে গল্প বলি, সেসব মানুষের অনেককেই আমরা নিরাপত্তা দিতে পারছি না। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি ভেবে দেখবে, কীভাবে তাঁদের এই পথচলাকে আরও নিরাপদ করা যায়? কারণ, দেশের অর্থনীতির চাকা আরও বেগবান করার জন্য হলেও তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে। তা ছাড়া, এভাবে লাগামছাড়া ধর্ষণ বাড়তে থাকলে দেশও ইমেজ সংকটের মধ্যে পড়ে যায়। কেবল অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি এলেই কি একটি দেশকে সফল বলা যাবে? না, বিষয়টা কিন্তু এত সহজ নয়। সফলতা তখনই আসবে, যখন অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তাসহ নানা মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে সক্ষম হবে একটি দেশ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আমাদের রিজার্ভ বাড়িয়ে দিচ্ছে, এমনকি এই করোনার সময়েও। এটা কি আমাদের এগিয়ে চলার একটা নিয়ামক শক্তি নয়? কী প্রচণ্ড পরিশ্রম করে প্রবাসীরা অর্থ পাঠান, তাঁদের পাঠানো অর্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। তবে মাঝে মাঝে ভাবি, প্রবাসী শ্রমিকদের মাঝে অনেকেই এত অমানবিক কষ্ট করে মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করেন, এই পরিশ্রম দিলে কি বাংলাদেশে নিজের গ্রামে বসে আরামে পরিবার নিয়ে টাকাটা উপার্জন করা যেত না? বিদেশের মোহ আমাদের অঙ্কের হিসাবকে এড়িয়ে যায়। কিন্তু এই যে এই অমানবিক পরিশ্রম, কষ্ট, অপমান—এতসবের হয়তো মুখোমুখি হতে হতো না, যদি না দেশে নিজেদের উদ্যোগে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দেশেই ব্যবসা করার মনমানসিকতা তৈরি করা যেত। কথাটি আমরা বলি ঠিকই, কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার যে কঠিন ও সংগ্রামময় পথ, তা কি কিছুটা সহজ করার কথা ভাবছেন পলিসিমেকাররা? যাঁরা এর মাঝে উদ্যোক্তা হয়ে গেছেন, তাঁদের কতজনই সঠিকভাবে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন?
চাকরির বাজারে সংকট, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে অনেকেই এখন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। ভাবা যায়, আমাদের দেশের শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশ এবং মোট শ্রমবাজারের ২৫ শতাংশের কর্মসংস্থান হচ্ছে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানাগুলোয়? এই পরিসংখ্যান আমাদের জানান দিচ্ছে, অবহেলা ও বৈষম্য পেরিয়ে গত কয়েক বছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে বিকশিত হচ্ছে। বড় কারণ, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তরুণদের উদ্যোক্তা হতে সরকার বেশ উৎসাহ দিচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও প্রতিনিয়ত তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তারপরও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোয় বড় বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সব সময়ই বৈষম্যের শিকার, একইভাবে সমাজের কাঠামোতেও এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। তবে আশার কথা হলো, তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও এসেছে একধরনের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। ফলে উচ্চশিক্ষিত বেকার তরুণেরা, এমনকি বিদেশ থেকেও দেশে ফিরে দেশের শিল্পোন্নয়নে নিয়োজিত করেছেন অনেকে। এ ধরনের স্বল্প পুঁজির মানুষ তাঁদের ব্যবসায়ী উদ্যোগ শুরু করে নিজের ঘর থেকে, ক্ষুদ্র অথবা মাঝারি শিল্প দিয়েই। আমি ফেসবুকে এলেই দেখছি মেয়েরা আজকাল বাড়িতে বসেই ব্যবসা করছেন নানা রকমের সামগ্রী নিয়ে।
খাদ্য উৎপাদনে আমরা দিনকে দিন নিজেদের আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছি। এটা সম্ভব হচ্ছে আমাদের গ্রামের কিষান-কিষানিদের অবিরত পরিশ্রমের কারণে। আগের তুলনায় মানুষ এখন জানে কখন কীভাবে কোনটার চাষ করতে হবে, কীভাবে উৎপাদন বাড়াতে হবে। দিনকে দিন সুকৌশলী হচ্ছেন আমাদের কৃষকেরা, অন্যদিকে নিজের ঘর্মাক্ত শ্রম দিয়ে আমাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করছেন। রপ্তানিকারকেরা বিদেশে রপ্তানি করার জন্য সুযোগ পাচ্ছেন কৃষকদের এই কঠোর–কঠিন পরিশ্রমের জন্যই। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনোবলও বেড়ে যায়, আগের মতো খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতায় আমাদের ভুগতে হয় না। একবার এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসনের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম। সেখানে তিনি বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে আমার এক প্রশ্নের জবাবে প্রশংসা করে যাচ্ছিলেন, সেদিন একজন বাংলাদেশি হিসেবে খুব গর্ব হচ্ছিল সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের কিষান-কিষানিদের জন্য। তিনি এটাও বলছিলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব, তাই খাদ্যে ভবিষ্যতে তোমাদের আরও সমৃদ্ধি আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি আসলে এটাই যে একটি দেশের যেকোনো ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য, বিকাশের পথে যেসব বাধা থাকে, তা যদি সরকার উপড়ে ফেলে দিয়ে সহজ করে দেয়, তবেই সম্ভব সেই দেশের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলা। ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে আমাদের গ্রামগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, মানুষ কৃষিবিমুখ হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। এর মাঝেও খাদ্য উৎপাদনে যত দূর আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তাই–বা কম কিসের? তবে সরকারের প্রণোদনার হার আরও বাড়ানো হলে মানুষ আবার হয়তো ফিরে আসবে বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে কৃষিকাজের উদ্দেশ্যে। সেই সুযোগ তৈরি করে দিক কৃষিবান্ধব সরকার, সেই প্রত্যাশা রইল।
গণমাধ্যম মারফত জেনেছি, আগামী ডিসেম্বরে ঢাকার গণপরিবহনে যুক্ত হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল। এরই মধ্যে ঢাকায় বাসরুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালুর কথাও শোনা যাচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের পরিবহনব্যবস্থা একেবারে বদলে যাবে—এমন মত বিশেষজ্ঞদের। ভাবতেই শান্তি লাগছে, ঢাকাবাসীর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থেকে কর্মশক্তি নষ্ট করার দিন বোধ হয় প্রায় শেষ হয়ে এল। আশা করছি মানুষ এখন অনেকটা সময় রাস্তা থেকে বাঁচিয়ে হয় কর্মক্ষেত্রে, নয় পরিবারে দিতে পারবে। আবার এই ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে, আমরা কি পারব বাইরের দেশের মতো মেট্রোরেলকে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখতে? নারীরা কি স্বচ্ছন্দে নিরাপদে মেট্রোরেল ব্যবহার করতে পারবে রাতের বেলায়? নাকি বছর ঘুরতে না–ঘুরতেই আমাদের মেট্রোরেলের সব রং বিবর্ণ হয়ে যাবে? এই বিবর্ণ করা থেকে নাগরিকদের কীভাবে বিরত রাখা যায়? মেট্রোরেল চালুর আগে এসব বিষয় কি আমরা একটু গবেষণা করে দেখছি? ভাবছি, কীভাবে নাগরিকদের কিছুটা সচেতন করা যায় দেশের সম্পদ রক্ষায়? এই সচেতনতা আসলে তৈরি হবে তখনই, যখন মানুষ দেখবে তাদের প্রতি যত্নশীল রাষ্ট্রযন্ত্র ও নীতিনির্ধারকেরা।
আরও অনেক খাত রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের মানুষ দিনকে দিন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজেদের। সেই সব এগিয়ে যাওয়া খাতের দিকে নীতিনির্ধারকেরা আরও বেশি যুক্ত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথকে কণ্টকমুক্ত করে দেবেন—এটাই সবার প্রত্যাশা। এখন দেশ যেভাবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে, তাতে প্রতিনিয়ত কিছু ভালো খবর পাব আমরা, সেটাই সবার চাওয়া। আমরা দুর্নীতিমুক্ত হতে চাই, ধর্ষণমুক্ত সমাজ চাই, মানবিক রাষ্ট্র চাই। কেবল এ রকম দিকগুলোর দিকে বাড়তি খেয়াল দিলেই আমরা এই সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারব। কেননা, যে সমস্যাগুলো আমাদের জন্য সংকট তৈরি করে, যে সমস্যাগুলোর কারণে আমরা এগিয়ে যাওয়ার পথে খেই হারিয়ে ফেলি, যে ঘাটতির কারণে এতসব ভালো খবর তলিয়ে যায়, সেগুলো থেকে উত্তরণের জন্য কী উপায় আছে, সেদিকেই এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া দরকার। দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথকে অনেকটাই অমসৃণ করে ফেলে আমাদের সেই সংকটগুলো। প্রত্যাশায় রইলাম, দেশ কেবলই এগিয়ে যাবে এসব সংকট কাটিয়ে সামনের দিকে। কারণ এখন আমাদেরই সময়, এগিয়ে যাওয়ার!
রাশেদা রওনক খান,
শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪