সেলিম জাহান
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কী করে এ জঘন্যতম কাজটি করতে পারলে?’ লজ্জায় আমি তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারিনি, উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা।
আমার সব সময় মনে হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তো শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করা হয়নি, তাঁর চিন্তা-চেতনা আর মূল্যবোধ, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্ম সেগুলোকেও হত্যা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাঙালি জাতিকে পথভ্রান্ত করার, পরবর্তী প্রজন্মকে বেপথু করার। ১৯৭৫–এর ১৫ আগস্টের ঘটনা ‘একদল পথভ্রষ্ট সৈনিকের’ হঠকারী কোনো কাজ ছিল না, এটা ছিল একটি শান্তমাথার দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের ফল। সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি, তাদের স্থানীয় দোসর এবং বিদেশি সহযোগীরা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার বছর আগে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম বিজয়ের লাল সূর্য। আমাদের স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ডের নয়, নয় একটি মানবগোষ্ঠীর; সে বিজয় একটি চেতনার, একটি সংগ্রামের, একটি মূল্যবোধের।
১৯৭১-এর ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করেছিলেন এই বলে যে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। আমাদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের সংগ্রামের মূলমন্ত্রটি ওই ডাকের মধ্যেই নিহিত। বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতা’ ও ‘মুক্তি’ শব্দ দুটোকে সুচিন্তিতভাবে আলাদা করে উচ্চারণ করেছিলেন। কারণ, বাঙালির সংগ্রামকে তিনি দুটো প্রেক্ষিত থেকে দেখেছিলেন। একটি দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতাই একটি সংগ্রামের শেষ কথা নয়, তার জনগণের সার্বিক মু্ক্তিই হচ্ছে সেই সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য। রাজনৈতিক স্বাধীনতা সার্বিক মুক্তির আবশ্যিক শর্ত, কিন্তু পর্যাপ্ত শর্ত নয়।
দ্বিতীয়ত, শোষণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন। সারাটি জীবন তিনি শোষণের বিরুদ্ধে বলেছেন, বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন শোষকদের বিরুদ্ধে। শোষণকে তিনি দেখেছেন বঞ্চনার একটি শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে, সাম্যের পরিপন্থী হিসেবে এবং মানবাধিকারের সঙ্গে সংগতিহীন হিসেবে। সেই প্রেক্ষিত থেকেই তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব আজ দুটো শিবিরে বিভক্ত– শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’
তৃতীয়ত, সামাজিক ন্যায্যতাকে তিনি একটি শোষণমুক্ত সমাজের অপরিহার্য প্রাকশর্ত হিসেবে দেখেছেন। তিনি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন, কিন্তু দুটোকেই দেখেছেন সামাজিক ন্যায্যতার এক একটি স্তম্ভ হিসেবে। তাই সত্তর দশকের প্রথম দিকে নানা মনে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ বিষয়ে নানা রকমের ধোঁয়াটে ভাব থাকলেও, এ বিষয় দুটিতে বঙ্গবন্ধুর ধারণা ছিল শার্সির মতো স্বচ্ছ। ‘গণতন্ত্রকে’ তিনি শুদ্ধ একটি বিষয় হিসেবে ভাবেননি, ভেবেছেন, ‘সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র’ হিসেবে; আবার ‘সমাজতন্ত্রকেও’ একটি যান্ত্রিক মাত্রায় দেখেননি, দেখেছেন ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ হিসেবে। এবং এ দুটোকেই সম্পৃক্ত করেছেন সামাজিক ন্যায্যতার সঙ্গে।
চতুর্থত, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায় ‘জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ একটা বিশেষ স্থান ছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তিনি ‘চরম জাতীয়তাবাদ’ হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বার নির্ণায়ক হিসেবে। তেমনিভাবে বারবার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ও সমাজজীবনে তিনি ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদকে এমন জায়গায় রেখেছেন, যেখানে বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বা-অস্তিত্বে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকে, আর ধর্ম বিষয়ে কোনো সংশয় না থাকে। পরবর্তী সময়ের সব দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের স্রষ্টা আমরাই, বহু মীমাংসিত বিষয়কে আবার ঘোলাটে করে দিয়ে।
পঞ্চমত, মনেপ্রাণে বাঙালি হয়েও বঙ্গবন্ধুর ছিল একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক মানসিকতা। এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অনেকটা রবীন্দ্রনাথের মতো। তাই তিনি শুধু বাঙালির নেতা ছিলেন না, ছিলেন বিশ্বনেতা। বৈশ্বিক অঙ্গনে তিনি যূথবদ্ধতার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু স্বার্থ জোটবদ্ধতার পক্ষে নয়। তাই তাঁকে দেখা গেছে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতা হিসেবে টিটো, কাস্ত্রোর সঙ্গে একই কাতারে। বিশ্ব শান্তির সপক্ষে তাঁর জোরালো বাণী, বিশ্ব শান্তি কাউন্সিলের প্রতি তাঁর সমর্থন ও মানবতাবাদী বিশ্ব ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তাঁর আলাপ-আলোচনা তাঁকে এক বিশ্ববরেণ্য নেতায় পরিণত করেছিল। তাই তিনি শুধু ‘বঙ্গবন্ধুই’ নন, ‘বিশ্ববন্ধুও’ বটে।
এ চালচিত্র মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু চারটি বিষয়কে জাতীয় নীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জাতীয়তাবাদ আমাদের বাঙালি আত্মসত্ত্বার জন্য আবশ্যিক শর্ত। আত্মসত্ত্বার বোধ একটি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য দরকার। গণতন্ত্র ভিন্ন স্বাধীনতা বা মুক্তিকে একটি বজায়ক্ষম ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা মানবিকতা, সামাজিক ন্যায্যতা, ও সর্বপ্রকার সমতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
এই আদর্শিক মূল্যবোধগুলোর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের জন্ম ও পথচলার শুরু। কিন্তু আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটজনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর রাষ্ট্রযন্ত্র এসব মূল্যবোধকে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, ইতিহাসের বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে অনাবশ্যক বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে বেপথু করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের মৌলিক চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার জন্য তখনকার রাষ্ট্রযন্ত্র বিবিধ প্রক্রিয়া শুরু করে, যার নানান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক মাত্রিকতা ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই রাষ্ট্রীয় অপশক্তি তাদের অপকর্মের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে।
বলা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরপরই তাঁর সহযোগী কিছু আওয়ামী লীগ নেতা এসব অপশক্তির সঙ্গে হাত মেলান এবং নতুন সরকারে যোগদান করেন। ফলে তাঁদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা তাঁরা একটি অবৈধ প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দান করেন এবং একে একটি বৈধতা দান করেন। এ ঘৃ্ণ্য কাজের ধিক্কার জানানোর ভাষা কোথায়?
১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের ধারা পালটে দেওয়ার পাঁচটি চিহ্নিত কাজ করা হয়। প্রথমত, সংবিধানকে ওলটপালট করে তা থেকে মৌলিক চার নীতির বিচ্যুতি ঘটানো যেমন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্দ্রকে বাদ দেওয়া। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বিরোধী মৌলবাদী শক্তিগুলোর পুনর্বাসন এবং ১৯৭১–এর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের যারা বিরোধিতা করে, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, তারাই বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা টাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নানান উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত করে বিদেশে নিরাপদে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
তৃতীয়ত, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসকে বিকৃত করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে বেপথু করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। পাঠ্যসূচিকে ইসলামীকরণের জন্য অন্য ধর্মের কবি-লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়। বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় যেমন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে ঘোষণা করেন, আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি।
চতুর্থত, দেশের মধ্যে উদারপন্থী চিন্তা-চেতনাকে নস্যাৎ করা এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব রকমের সংখ্যালঘু জোটের নিপীড়ন সংহত করা হলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের নাম করে আমাদের মূল্যবোধের ধর্মনিরপেক্ষকে নষ্ট করা হলো এবং সমাজের অসাম্প্রদায়িক কাঠামোকে আঘাত করা হলো।
পঞ্চমত, জোটনিরপেক্ষ চরিত্র ত্যাগ করে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী জেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। এর একটি উদ্দেশ্য ছিল সম্পদশালী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অর্থপ্রাপ্তি, অন্যদিকে এসব দেশের সঙ্গে একটি আদর্শগত সংযোগ স্থাপন।
এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তিনটি প্রবণতা লক্ষণীয়: এক, একসময়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান থেকে বলা হয়েছিল, ‘অর্থ কোনো সমস্যা নয়’। দৃশ্যমানতা। জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নষ্ট করার এর চেয়ে আর ভালো উপকরণ হয় না। দুই, ‘আমি রাজনীতিকে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন করে তুলব’। একটি সুস্থ রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করতে এর চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র নেই। তিন, দলবদলের রাজনীতিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। এসবেরই সমন্বিত ফলাফল হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতিতে সুস্থ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেওয়া।
এসব কিছুর কারণে পরবর্তী সময়ে তিনটে ধারার সৃষ্টি হয়েছে স্বদেশে। এক, যারা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আদর্শিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেনি এবং এর বিরোধিতা করেছে, তাদের অবস্থান আরও সংহত হয়েছে। দুই, আমরা যারা একাত্তরের প্রজন্ম, তাদের একটি অংশ যেমন বাংলাদেশ নামটি, তার মুক্তিযুদ্ধ, তার আদর্শিক মূল্যবোধ দ্বারা সর্বদা সার্বক্ষণিকভাবে উদ্বেলিত হয়েছি, তেমনি আমাদের প্রজন্মের আরেকটি অংশ তো সবকিছু শুধু বিস্মৃতই হই নি, বেপথুও তো হয়েছি। তিন, জাতির নতুন প্রজন্মের কাছে আমদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের আদর্শিক মূল্যবোধ হয় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রয়ে গেছে, নয় বিকৃত হয়ে উপস্হাপিত হয়েছে।
২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা একটি ক্রান্তিকালের মাঝখান দিয়ে চলেছি। ১৯৭১ সালের মতো আজও একটি সংগ্রাম আমাদের করতে হবে, সে লড়াই বাংলাদেশের মূল্যবোধকে সংহত করার, সে যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তা-চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার। চূড়ান্ত বিচারে, এ লড়াই আমাদের বাঁচার লড়াই¬– এ লড়াই জিততে হবে।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। এদিন ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। মনে আছে, এ ঘটনার তিন দশক পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কী করে এ জঘন্যতম কাজটি করতে পারলে?’ লজ্জায় আমি তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারিনি, উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা।
আমার সব সময় মনে হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তো শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করা হয়নি, তাঁর চিন্তা-চেতনা আর মূল্যবোধ, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্ম সেগুলোকেও হত্যা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাঙালি জাতিকে পথভ্রান্ত করার, পরবর্তী প্রজন্মকে বেপথু করার। ১৯৭৫–এর ১৫ আগস্টের ঘটনা ‘একদল পথভ্রষ্ট সৈনিকের’ হঠকারী কোনো কাজ ছিল না, এটা ছিল একটি শান্তমাথার দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের ফল। সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি, তাদের স্থানীয় দোসর এবং বিদেশি সহযোগীরা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার বছর আগে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম বিজয়ের লাল সূর্য। আমাদের স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ডের নয়, নয় একটি মানবগোষ্ঠীর; সে বিজয় একটি চেতনার, একটি সংগ্রামের, একটি মূল্যবোধের।
১৯৭১-এর ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করেছিলেন এই বলে যে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। আমাদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের সংগ্রামের মূলমন্ত্রটি ওই ডাকের মধ্যেই নিহিত। বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতা’ ও ‘মুক্তি’ শব্দ দুটোকে সুচিন্তিতভাবে আলাদা করে উচ্চারণ করেছিলেন। কারণ, বাঙালির সংগ্রামকে তিনি দুটো প্রেক্ষিত থেকে দেখেছিলেন। একটি দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতাই একটি সংগ্রামের শেষ কথা নয়, তার জনগণের সার্বিক মু্ক্তিই হচ্ছে সেই সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য। রাজনৈতিক স্বাধীনতা সার্বিক মুক্তির আবশ্যিক শর্ত, কিন্তু পর্যাপ্ত শর্ত নয়।
দ্বিতীয়ত, শোষণের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন। সারাটি জীবন তিনি শোষণের বিরুদ্ধে বলেছেন, বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন শোষকদের বিরুদ্ধে। শোষণকে তিনি দেখেছেন বঞ্চনার একটি শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে, সাম্যের পরিপন্থী হিসেবে এবং মানবাধিকারের সঙ্গে সংগতিহীন হিসেবে। সেই প্রেক্ষিত থেকেই তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব আজ দুটো শিবিরে বিভক্ত– শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’
তৃতীয়ত, সামাজিক ন্যায্যতাকে তিনি একটি শোষণমুক্ত সমাজের অপরিহার্য প্রাকশর্ত হিসেবে দেখেছেন। তিনি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন, কিন্তু দুটোকেই দেখেছেন সামাজিক ন্যায্যতার এক একটি স্তম্ভ হিসেবে। তাই সত্তর দশকের প্রথম দিকে নানা মনে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ বিষয়ে নানা রকমের ধোঁয়াটে ভাব থাকলেও, এ বিষয় দুটিতে বঙ্গবন্ধুর ধারণা ছিল শার্সির মতো স্বচ্ছ। ‘গণতন্ত্রকে’ তিনি শুদ্ধ একটি বিষয় হিসেবে ভাবেননি, ভেবেছেন, ‘সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র’ হিসেবে; আবার ‘সমাজতন্ত্রকেও’ একটি যান্ত্রিক মাত্রায় দেখেননি, দেখেছেন ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ হিসেবে। এবং এ দুটোকেই সম্পৃক্ত করেছেন সামাজিক ন্যায্যতার সঙ্গে।
চতুর্থত, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায় ‘জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ একটা বিশেষ স্থান ছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তিনি ‘চরম জাতীয়তাবাদ’ হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বার নির্ণায়ক হিসেবে। তেমনিভাবে বারবার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ও সমাজজীবনে তিনি ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদকে এমন জায়গায় রেখেছেন, যেখানে বাঙালি জাতির আত্মসত্ত্বা-অস্তিত্বে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকে, আর ধর্ম বিষয়ে কোনো সংশয় না থাকে। পরবর্তী সময়ের সব দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের স্রষ্টা আমরাই, বহু মীমাংসিত বিষয়কে আবার ঘোলাটে করে দিয়ে।
পঞ্চমত, মনেপ্রাণে বাঙালি হয়েও বঙ্গবন্ধুর ছিল একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক মানসিকতা। এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অনেকটা রবীন্দ্রনাথের মতো। তাই তিনি শুধু বাঙালির নেতা ছিলেন না, ছিলেন বিশ্বনেতা। বৈশ্বিক অঙ্গনে তিনি যূথবদ্ধতার পক্ষে ছিলেন, কিন্তু স্বার্থ জোটবদ্ধতার পক্ষে নয়। তাই তাঁকে দেখা গেছে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতা হিসেবে টিটো, কাস্ত্রোর সঙ্গে একই কাতারে। বিশ্ব শান্তির সপক্ষে তাঁর জোরালো বাণী, বিশ্ব শান্তি কাউন্সিলের প্রতি তাঁর সমর্থন ও মানবতাবাদী বিশ্ব ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তাঁর আলাপ-আলোচনা তাঁকে এক বিশ্ববরেণ্য নেতায় পরিণত করেছিল। তাই তিনি শুধু ‘বঙ্গবন্ধুই’ নন, ‘বিশ্ববন্ধুও’ বটে।
এ চালচিত্র মাথায় রেখে বঙ্গবন্ধু চারটি বিষয়কে জাতীয় নীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। জাতীয়তাবাদ আমাদের বাঙালি আত্মসত্ত্বার জন্য আবশ্যিক শর্ত। আত্মসত্ত্বার বোধ একটি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য দরকার। গণতন্ত্র ভিন্ন স্বাধীনতা বা মুক্তিকে একটি বজায়ক্ষম ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা মানবিকতা, সামাজিক ন্যায্যতা, ও সর্বপ্রকার সমতার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
এই আদর্শিক মূল্যবোধগুলোর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের জন্ম ও পথচলার শুরু। কিন্তু আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিকটজনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর রাষ্ট্রযন্ত্র এসব মূল্যবোধকে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, ইতিহাসের বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে অনাবশ্যক বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে বেপথু করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
১৯৭৫–এর পর বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের মৌলিক চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধকে নস্যাৎ করার জন্য তখনকার রাষ্ট্রযন্ত্র বিবিধ প্রক্রিয়া শুরু করে, যার নানান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক মাত্রিকতা ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই রাষ্ট্রীয় অপশক্তি তাদের অপকর্মের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে।
বলা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরপরই তাঁর সহযোগী কিছু আওয়ামী লীগ নেতা এসব অপশক্তির সঙ্গে হাত মেলান এবং নতুন সরকারে যোগদান করেন। ফলে তাঁদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা তাঁরা একটি অবৈধ প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দান করেন এবং একে একটি বৈধতা দান করেন। এ ঘৃ্ণ্য কাজের ধিক্কার জানানোর ভাষা কোথায়?
১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের ধারা পালটে দেওয়ার পাঁচটি চিহ্নিত কাজ করা হয়। প্রথমত, সংবিধানকে ওলটপালট করে তা থেকে মৌলিক চার নীতির বিচ্যুতি ঘটানো যেমন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্দ্রকে বাদ দেওয়া। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং বাংলাদেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের বিরোধী মৌলবাদী শক্তিগুলোর পুনর্বাসন এবং ১৯৭১–এর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের যারা বিরোধিতা করে, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, তারাই বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা টাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের নানান উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত করে বিদেশে নিরাপদে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
তৃতীয়ত, পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসকে বিকৃত করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে বেপথু করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। পাঠ্যসূচিকে ইসলামীকরণের জন্য অন্য ধর্মের কবি-লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়। বহু নিষ্পত্তিকৃত সত্যকে খুঁচিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় যেমন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে ঘোষণা করেন, আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি।
চতুর্থত, দেশের মধ্যে উদারপন্থী চিন্তা-চেতনাকে নস্যাৎ করা এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব রকমের সংখ্যালঘু জোটের নিপীড়ন সংহত করা হলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের নাম করে আমাদের মূল্যবোধের ধর্মনিরপেক্ষকে নষ্ট করা হলো এবং সমাজের অসাম্প্রদায়িক কাঠামোকে আঘাত করা হলো।
পঞ্চমত, জোটনিরপেক্ষ চরিত্র ত্যাগ করে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী জেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। এর একটি উদ্দেশ্য ছিল সম্পদশালী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অর্থপ্রাপ্তি, অন্যদিকে এসব দেশের সঙ্গে একটি আদর্শগত সংযোগ স্থাপন।
এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তিনটি প্রবণতা লক্ষণীয়: এক, একসময়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান থেকে বলা হয়েছিল, ‘অর্থ কোনো সমস্যা নয়’। দৃশ্যমানতা। জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নষ্ট করার এর চেয়ে আর ভালো উপকরণ হয় না। দুই, ‘আমি রাজনীতিকে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন করে তুলব’। একটি সুস্থ রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করতে এর চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র নেই। তিন, দলবদলের রাজনীতিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। এসবেরই সমন্বিত ফলাফল হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতিতে সুস্থ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেওয়া।
এসব কিছুর কারণে পরবর্তী সময়ে তিনটে ধারার সৃষ্টি হয়েছে স্বদেশে। এক, যারা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আদর্শিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেনি এবং এর বিরোধিতা করেছে, তাদের অবস্থান আরও সংহত হয়েছে। দুই, আমরা যারা একাত্তরের প্রজন্ম, তাদের একটি অংশ যেমন বাংলাদেশ নামটি, তার মুক্তিযুদ্ধ, তার আদর্শিক মূল্যবোধ দ্বারা সর্বদা সার্বক্ষণিকভাবে উদ্বেলিত হয়েছি, তেমনি আমাদের প্রজন্মের আরেকটি অংশ তো সবকিছু শুধু বিস্মৃতই হই নি, বেপথুও তো হয়েছি। তিন, জাতির নতুন প্রজন্মের কাছে আমদের মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের আদর্শিক মূল্যবোধ হয় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রয়ে গেছে, নয় বিকৃত হয়ে উপস্হাপিত হয়েছে।
২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা একটি ক্রান্তিকালের মাঝখান দিয়ে চলেছি। ১৯৭১ সালের মতো আজও একটি সংগ্রাম আমাদের করতে হবে, সে লড়াই বাংলাদেশের মূল্যবোধকে সংহত করার, সে যুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তা-চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার। চূড়ান্ত বিচারে, এ লড়াই আমাদের বাঁচার লড়াই¬– এ লড়াই জিততে হবে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪