সংরক্ষিত বনে বালু লুট চক্রের ড্রেজার

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ১৫

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে সিলিকা বালু তোলা হচ্ছে। এতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সংরক্ষিত বনের বেশ কিছু টিলা। বনের পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে এলাকাবাসীর চলাচলের সড়কও। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে চা -শ্রমিকদের কয়েকটি পরিবার।

বালুখেকো চক্রে সরকারের এক যুগ্ম সচিবের আত্মীয়, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যের ছেলেসহ প্রভাবশালীরা রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তাঁরা অবৈধভাবে বালু তোলার কথা স্বীকারও করেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলায় অবস্থিত রঘুনন্দন সংরক্ষিত বন। এই বনের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে গাঁধাছড়া।

এলাকাবাসী জানান, এই ছড়ার পানছড়ি অংশে দীর্ঘদিন ধরে ডজনখানেক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার ঘনফুট সিলিকা বালু তোলা হচ্ছে। এসব বালু দেশের বিভিন্ন স্থানের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বালু তোলায় টিলা, পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের জীবন।

বালুচক্রে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় স্থানীয়দের কেউ নাম বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, পানছড়ি এলাকার আমজত উল্লাহর নেতৃত্বে চলে পাহাড় কাটার এই মহোৎসব। তাঁর ভাতিজা সরকারের যুগ্ম সচিব হওয়ায় কোনো কিছু তোয়াক্কা করেন না। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে হামলা-মামলার ভয় দেখানো হয়। আমজতের বালু উত্তোলনকাজে প্রত্যক্ষ সহযোগী একই এলাকার মাহফুজ মিয়া, বাবলু মিয়া, কাউসার মিয়া ও সাইদুর রহমান।

আর এসব বালু বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর কাজে নেতৃত্ব দেন মহিমাউড়া গ্রামের কালাম মিয়া, বশির মিয়া এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ মিয়ার ছেলে ফয়েজ মিয়াসহ কয়েকজন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পানছড়ি মৌজার ৮ নম্বর বস্তি এলাকার গাঁধাছড়ায় বিকট শব্দে চলছে ৬টি ড্রেজার মেশিন। প্রায় ২০ একর জায়গাজুড়ে চলছে এসব ড্রেজারের তাণ্ডব। এতে পুরো এলাকা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে পাশের একাধিক টিলায়। বসতভিটা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে চা-শ্রমিকের কয়েকটি পরিবার।

বালু তোলার কাজ করা শ্রমিকেরা জানান, আমজত উল্লাহ, মাহফুজ মিয়া ও বাবলু মিয়ার অধীনে তাঁরা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে বালু তোলার কাজ করছেন।

মেশিন দিয়ে বালু ট্রাক্টরে তুলতে দেখা যায় কয়েকজন শ্রমিককে। আমজত উল্লাহ, মাহফুজ মিয়া ও বাবলু মিয়া অবৈধভাবে বালু তোলার কথা স্বীকারও করেন। তবে কালাম মিয়া বলেন, ‘কিছু একটা করে তো চলতে হবে, তাই বালুর ব্যবসা করতেছি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটসহ কয়েকটি উপজেলায় পাহাড়-টিলা কেটে পরিবেশবিধ্বংসী কার্যক্রম চলছে বহু বছর ধরে। এতে সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ ও প্রকৃতির ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সেটা অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হচ্ছে

সোহেল বলেন, ‘উচ্চ আদালত থেকে পাহাড়-টিলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এগুলো রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না; যা খুবই দুঃখজনক। এর ফলে পাহাড় ও টিলা কাটা দিন দিন বাড়ছে আর ধ্বংস হচ্ছে আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি। দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাসহ পাহাড়-টিলাকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।’

এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমরা এসব এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত