উদ্যানতত্ত্ব কেন্দ্রে গাছের বদলে দুর্নীতির চাষ

  • বিক্রির তালিকায় থাকা সব গাছ সেন্টারে নেই
  • বাইরে থেকে মানহীন চারা এনে বিক্রি
  • ভার্মি কম্পোস্ট প্ল্যান্ট থাকলেও সার বিক্রি হয় বাইরের
­যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ৪৮
যশোর হর্টিকালচার সেন্টার। ছবি: সংগৃহীত

যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে বিক্রির তালিকায় থাকা সব গাছ সেন্টারে নেই। উদ্যানে নিজস্বভাবে চারা উৎপাদনের জন্য ‘রিভলভিং’ ফান্ডের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া থাকলেও সেটি করা হচ্ছে না। চারা উৎপাদন না করে বাইরে থেকে কম দামে মানহীন চারা এনে উদ্যানে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। সেন্টারে একটি ভার্মি কম্পোস্ট প্ল্যান্ট থাকলেও ঠিকমতো উৎপাদন না করে তা-ও বিক্রি করা হচ্ছে বাইরে থেকে এনে।

সেন্টারের কর্মচারীদের আবাসন বরাদ্দ থেকে শুরু করে চারা বিক্রি, উৎপাদন, বিতরণ ও প্রশিক্ষণ এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে অনিয়ম- দুর্নীতি হচ্ছে না। টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যান ও মাঠের উন্নয়নে মাটি ফেলার ক্ষেত্রেও হয়েছে নয়ছয়, যেন দুর্নীতির চাষ হচ্ছে সেন্টারটিতে।

অভিযোগ উঠেছে, উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা আলী রেজা বাইরে থেকে কম দামে ভার্মি কম্পোস্ট সার কিনে এনে বেশি দামে বেচছেন। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘অনেক বেশি পরিমাণে দরকার হলে বাইরে থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সংগ্রহ করে ১০ টাকা কেজি দরে নার্সারি মালিকদের সরবরাহ করা হয়।’

সেন্টারের দেয়াল মেরামতেও অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠাটির অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, এই সেন্টারটিতে সবচেয়ে বেশি টাকা লোপাট হয় প্রশিক্ষণ খাত থেকে। প্রশিক্ষণার্থীদের কম দামের খাবার সরবরাহ ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি দেখিয়ে টাকা লোপাট করা হয়।

ফার্ম লেবারদের আবাসন বরাদ্দে অনিয়ম

হর্টিকালচার সেন্টারটিতে ফার্ম লেবারদের বসবাসের জন্য একটি একতলা ভবন ও তিনটি টিনশেড রয়েছে। এসব আবাসনের বন্দোবস্ত শুধু রাজস্ব খাতের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য। কিন্তু ফার্ম লেবারদের একটি ভবনে উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা শাহিদুর রহমান শাহিদ থাকছেন। মোখলেসুর রহমান নামে এক ফার্ম লেবারের নামে বরাদ্দ নিয়ে ওই ভবনে তিনি রয়েছেন। মোখলেছুর সেন্টারের কাছে নূরপুরে নিজ বাড়িতে থাকেন।

এ ছাড়া সেন্টারটির অনিয়মিত শ্রমিক এনায়েত আলী রাজস্ব খাতের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বাসস্থানে থাকছেন। স্বজনপ্রীতি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক আমিনুর রহমান তাঁর ওই আত্মীয়কে বরাদ্দ পাইয়ে দেন। এতে অফিসের অভ্যন্তরে আবাসন পেতে আগ্রহী রাজস্ব খাতের কর্মচারীরা বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

উদ্যান ও মাঠের উন্নয়নে মাটি ফেলায় নয়ছয়

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তিন-চার মাস আগে উদ্যান ও মাঠের উন্নয়নে মাটি ফেলা হয়। দরপত্র অনুযায়ী ৯০০ ট্রাক মাটি ফেলার কথা ছিল। কিন্তু অনেক কম মাটি ফেলে বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। সূত্রমতে, দরপত্রে ট্রাকপ্রতি মাটির দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। মাটি ফেলার কাজ পান পালবাড়ি এলাকার নান্নুজামান নান্নু নামে এক ব্যক্তি। নান্নুর মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রশিক্ষণের টাকা লোপাট

২০১৫-২১ সময়ে হর্টিকালচার সেন্টারটিতে ৮ হাজার ৬৫৭ কৃষক ও নার্সারি মালিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই সাত বছরে প্রশিক্ষণ খাতে সরকারি কোটি কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের সংখ্যা, তাঁদের সম্মানী ও আপ্যায়ন খরচ বেশি দেখিয়ে অর্থ লোপাট হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য

হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দীপঙ্কর দাশ জানান, একজন ফার্ম লেবারের নামে বরাদ্দ নিয়ে উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা শাহিদ থাকতেন। পরে দাপ্তরিকভাবে বরাদ্দ দিয়ে তাঁকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে।

অনিয়মিত শ্রমিক এনায়েতকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বাসস্থান বরাদ্দের ব্যাপারে দীপঙ্কর দাশ বলেন, সেন্টারের কাজের স্বার্থ বিবেচনায় অনেক সময় এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উদ্যানের মাঠে মাটি ফেলায় অনিয়মের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। এ ছাড়া রিভলভিং ফান্ডের মাধ্যমে চারা উৎপাদন ও বিক্রির তথ্য চাইলে তা দিতে পারেননি।

অভিযোগের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আজগর আলী বলেন, এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত