সিলেটে নতুন ২ পিপির নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ০৫

আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ তুলে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নবনিযুক্ত দুই পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) নিয়োগকে প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা। আজ রোববার সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে এই বিক্ষোভ করেন ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। 

এদিকে আজ দুপুরে আদালত চত্বরে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের নেতৃবৃন্দ। সিলেটের জেলা ও মহানগর আদালতসমূহের পিপি-গভর্নমেন্ট প্লিডারসহ (জিপি) প্রকাশিত বিতর্কিত তালিকা বাতিল দাবিতে মানববন্ধন করেন তাঁরা। 

এর আগে ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নবনিযুক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মুজিবুর রহমান মুজিবের কক্ষে তালা দেন বলে জানা গেছে। 

বিক্ষোভের একপর্যায়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয় তলায় মুজিবুর রহমান মুজিবকে দেখে আইনজীবীরা খেপে যান এবং তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয় বলে জানা গেছে। আইনজীবীর সমিতির সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপে স্থান ত্যাগ করেন মুজিব। 

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বিক্ষোভএ সময় আইনজীবীরা বলেন, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এ টি এম ফয়েজ একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিএনপিতে এলেও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের দীর্ঘ আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। 

দলে তাঁর সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা, অনুপস্থিতি ও দলীয় নেতা–কর্মীদের আইনি সেবা দিতে তাঁর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে একসময় আইনজীবী ফোরামের সভাপতির পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রান্ট হয়ে সপরিবারে স্থায়ীভাবে আমেরিকায় পাড়ি জমান। গত ৫ আগস্টের পর দেশে তিনি পিপি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন এবং সংশ্লিষ্টদের ভুল বুঝিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটি বাগিয়ে নেন। যা সিলেটের আইন অঙ্গনের সর্বস্তরের আইনজীবীদের মর্মাহত করেছে। 

তাঁরা বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনেছেন। এই দুই পিপিকে দায়িত্ব থেকে বাদ না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ। 

নবনিযুক্ত দুই পাবলিক প্রসিকিউটরের কক্ষে তালা দেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাজাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি মুহিবুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক বদরুল আহমদ চৌধুরী পরিচালনা করেন। 

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সাবেক জিপি সিনিয়র অ্যাডভোকেট আক্তার হোসেন খান, মহানগর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আশরাফুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমদ পাটওয়ারী রিপন, মোমিনুল ইসলাম, সাঈদ আহমদ, আব্দুল ফাত্তাহ তুহেল, এজাজ উদ্দিন, আনছারুজ্জামান, মোস্তাক আহমদ, উবাদুর রহমান ফাহমি, শাহজাহান সিদ্দিকি, আয়েশা সিদ্দিকা, তানভীর আক্তার খান, জাফর ইকবাল তারেক ও নজরুল ইসলাম। 

নবনিযুক্ত দুই পাবলিক প্রসিকিউটরের কক্ষে তালা দেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরাআরও বক্তব্য দেন আব্দুল মুকিত অপি, আলী হায়দার ফারুক, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান, সাজেদুল ইসলাম সজিব, মোবারক হোসেন, লিয়াকত আলী, নুর আহমদ, আব্দুল হাই রাজন, আব্দুর রাজ্জাক খান রাজ, তাজ রিহান জামান, বদরুল আলম লিটন, শামিম আহমদ, হাবিব আহমদ, মঞ্জুর এলাহী সামি, আব্দুল হালিম রায়হান, নাজমুল হুদা সাহান, সাহেদ আহমদ, খুরশেদ আলম, গোলাম রসুল সুমেল, মুমিনুল হক, মোজাক্কির হোসেন, নাছির উদ্দিন সাদিক, রুহুল আমীন, কামরুল আমিন, কাজী সেবা আক্তার, সাহেদ আহমদ, জাবেদ আহমদ, খায়রুল আমিন, স্বপন আহমদ। 

সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এ টি এম ফয়েজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা না থাকলে কার্যালয় তো তালা দেওয়াই থাকে। আমরা আজ ডিসি সাহেবের কাছে যোগদান করলাম। জজ ও ডিসি সাহেবের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছি। তালা দেওয়ার বিষয়ে জানি না।’ 

সিলেটে বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিল নেতৃবৃন্দর মানববন্ধনসিলেটে বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের মানববন্ধন
সিলেটের জেলা ও মহানগর আদালতসমূহের পিপি-জিপিসহ প্রকাশিত বিতর্কিত তালিকা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের নেতৃবৃন্দ। 

আজ রোববার দুপুরে আদালত চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, সিলেটের আদালতে জিপি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এবং পিপি হিসেবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছি তিনিও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। 

এমনকি বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তিনি প্রবাসে ছিলেন। এ ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তাদের তালিকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিরোধী এবং ফ্যাসিবাদের দোসররাও স্থান পেয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। 

আদালতের পরিবেশ ও সুষ্ঠু বিচারকার্য পরিচালনার স্বার্থে ওই পিপি ও জিপি তালিকা বাতিল করে আইন পেশায় সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন তালিকা প্রকাশের জোর দাবি জানান তাঁরা। 

বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সভাপতি মো. আলীম উদ্দীন এতে সভাপতিত্ব করেন। সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল খালিক এতে পরিচালনা করেন।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুর রব, যুগ্ম সম্পাদক আজীম উদ্দীন, জামিল আহমদ রাজু, সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন শামীম, সিরাজুল ইসলাম, মাসুদ আহমদ মহসিন, জুনেদ আহমদ, ইয়াসিন খান, নাজমুল ইসলাম, নাজমুল হুদা, আবজল মিয়া তালুকদার, রহমত আলী, আসাদুল্লাহ, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী রেদওয়ান, মইনুল ইসলাম, আফজালুর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম, মুমিনুজ্জামান, মাহবুব আহমদ ও মোর্শেদ আহমদ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ-পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত