ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
‘পানি তো গেছেগি, আমরা ওখন যাইতাম কোয়াই? ১০ দিন পানির তলে তাইক্কা বাসার সবতা নষ্ট ওই গিছে। মঙ্গলবারে চাউলের বস্তা কিনিয়া আনছি আর বৃহস্পতিবারে বাসায় কোমরপানি। সব শেষ। ইকানো তো দু-একবেলা খাবার পাচ্ছি। বাসায় ফিরে তো তারও নিশ্চয়তা নাই।’
আজ শনিবার দুপুরে এভাবেই আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার কথা বলছিলেন হারাধন নম। ১৬ জুন সিলেট নগরীর মাছুদিঘীরপাড় এলাকায় নিজের বাড়িটি বানের পানিতে তলিয়ে গেলে পরিবার নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন মির্জাজাঙ্গাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায়।
হারাধনের মতো এই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল ২২০টি পরিবার। পানি নেমে যাওয়ায় ১৮০টি পরিবার নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছে। যে ৪০টি পরিবার রয়েছে। তাদের সবার মধ্যে সব হারানোর শোক আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। একই রকম আতঙ্কে রয়েছেন সিলেট-সুনামগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বানভাসিরাও।
অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে ও বাড়িতে ফেরাদের খাবার জোটে দু-এক বেলা। বিশুদ্ধ পানি, খাবার, পয়োনিষ্কাশনের সংকট তীব্র। বড়রা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রান্না করা খাবারের পাশাপাশি শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে থাকলেও শিশুসন্তানদের নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তাদের দুধ জোগাড় করতে পারছেন না।
আজ বিকেলে নগরীর জল্লারপাড়ের দিসাই মিয়ার কলোনির বাসিন্দা মারজেহা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ সকালে ১২ দিন পর বাসায় আসছি। পারটেক্সের খাটসহ সব নষ্ট হয়ে গেছে। চাল, ডাল কিছুই নাই। আমরা যেমন তেমন আট মাসের ছেলে তাওসিফের জন্য বেশি চিন্তা। বুকের দুধ পায় না। বাজার থেকে কিনে খাওয়াই। এখন তো টাকাপয়সাও নাই।’
নগরীর উপশহর আই ব্লকের বাসিন্দা কাউসার হোসেন বলেন, ‘চারদিকে ময়লা-আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাসা পরিষ্কার করছি। এখন হাত-পা চুলকায়। চামড়ায় ফুসকুড়ি পড়ে গেছে।’ যতরপুরের বাসিন্দা কামিরুন নেছা বলেন, ‘১০ দিন পর বাসায় ফিরেছি। পুরো বাসায় পচা দুর্গন্ধ। টেকা যাচ্ছে না। খাবারেরও কিচ্ছু নাই।’
খাবার সংকটের কথা জানিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষও।
সিলেট নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় বন্যার পানি অনেকটাই কমেছে। তবে এখন রাস্তাঘাটে জমে থাকা ময়লা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। এদিকে পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে।
দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোর যেসব স্থানে পানি জমে ছিল, সেগুলো প্রায় নেমে গেছে। তবে কিছু সড়কে এখনো পানি রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, তালতলা সড়কসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতেও পানি রয়ে গেছে। তবে সব কটি সড়কেই যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
নগরীর যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, কুয়ারপাড়, লালাদিঘীর পাড় এলাকার পাড়া-মহল্লার পানি ময়লা ও কালো রং ধারণ করেছে। এসব স্থানে জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশা-মাছিও বাড়ছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানোর নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের মেডিকেল টিমও কাজ করতেছে। সবাইকে ধৈর্য ধরে সচেতনভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। যেন সিটি করপোরেশনের গাড়ি এগুলো নিতে পারে।’
এদিকে সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমার খবর পাওয়া গেছে। তবে কুশিয়ারা তীরবর্তী ছয় উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। উপজেলাগুলো হলো—দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথ। এসব উপজেলার পানিবন্দী পরিবারগুলো অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও কিছু ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হলেও প্রত্যন্ত গ্রামে ত্রাণ নিয়ে কেউ যাচ্ছে না।
বন্যার পানির তোড়ে বালাগঞ্জ-তাজপুর সড়কের কাশিপুর ব্রিজের সংযোগস্থলে সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু অংশ দেবে গেছে। যেকোনো সময় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হতে পারে। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুরসহ সাতটি উপজেলায়। এসব উপজেলার মানুষ ঘরে ফিরলেও দুর্দশা কাটছে না।
আজ ঘরে ফিরেছেন গোয়াইনঘাটের নলজুড়ি এলাকার দিনমজুর রহমত আলী। তাঁর ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘পানিতে ঘর তছনছ হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে হাঁটুসম কাদা। এই ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকব কী করে! পানির কারণে আয়-রোজগার বন্ধ। ভাত খাওয়ারই পয়সা নাই। ঘর মেরামত করব কী করে?’
সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাট এলাকার কবিরুন বেগম। গতকাল শুক্রবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ দিন বাদাঘাট উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি পানিতে বাথরুম ভেঙে গেছে। সব আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। এইগুলা এখন মেরামত করাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।’
বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল হাসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপাতত শুকনো খাবার বিতরণের চাইতে বন্যার্তদের পুনর্বাসনের জন্য ফান্ড গঠন করা দরকার। মানুষ আপৎকালীন সঞ্চয় আর ত্রাণ দিয়ে বন্যা চলাকালীন সংকট পার করে দিতে পারবে। কিন্তু মূল বিপদ পানি নামার পরেই দেখা দেবে। কারণ, টিনের চাল, ঘরের বেড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। পানি নামার পর এগুলো মেরামতে বিপদে পড়বেন তাঁরা।’
আবুল হাসানের আশঙ্কা, ‘এই মানুষগুলো ঘর ও আসবাব মেরামতে মহাজন বা বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান থেকে হয়তো ঋণ নেবেন। তখন তাঁরা আরও বিপদে পড়বেন।’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৮ জন মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। আমরা আপাতত মানুষের নিরাপদ খাদ্য ও নিরাপদ বাসস্থানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সব জায়গার পানি নেমে গেলে ঘরবাড়ি নিয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে জেলা-উপজেলা প্রশাসনকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানি নেমে গেলে রিপোর্ট অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জে পানি কমতেছে। তবে এখনো অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে রয়েছে। এ জন্য সেখানকার সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তবে সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে আর সুনামগঞ্জ পয়েন্টেও কমছে। কুশিয়ারার অমলসীদ পয়েন্টে ১৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্ট, শেরপুর পয়েন্টেও পানি কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টের পানি গতকাল শুক্রবার থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে।
পাউবোর সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহিদুল ইসলাম জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আর বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে পানি আরও কমে যাবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে আগামী মাসের শেষ দিকে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান শহিদুল ইসলাম।
‘পানি তো গেছেগি, আমরা ওখন যাইতাম কোয়াই? ১০ দিন পানির তলে তাইক্কা বাসার সবতা নষ্ট ওই গিছে। মঙ্গলবারে চাউলের বস্তা কিনিয়া আনছি আর বৃহস্পতিবারে বাসায় কোমরপানি। সব শেষ। ইকানো তো দু-একবেলা খাবার পাচ্ছি। বাসায় ফিরে তো তারও নিশ্চয়তা নাই।’
আজ শনিবার দুপুরে এভাবেই আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার কথা বলছিলেন হারাধন নম। ১৬ জুন সিলেট নগরীর মাছুদিঘীরপাড় এলাকায় নিজের বাড়িটি বানের পানিতে তলিয়ে গেলে পরিবার নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন মির্জাজাঙ্গাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায়।
হারাধনের মতো এই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল ২২০টি পরিবার। পানি নেমে যাওয়ায় ১৮০টি পরিবার নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছে। যে ৪০টি পরিবার রয়েছে। তাদের সবার মধ্যে সব হারানোর শোক আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। একই রকম আতঙ্কে রয়েছেন সিলেট-সুনামগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বানভাসিরাও।
অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে ও বাড়িতে ফেরাদের খাবার জোটে দু-এক বেলা। বিশুদ্ধ পানি, খাবার, পয়োনিষ্কাশনের সংকট তীব্র। বড়রা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রান্না করা খাবারের পাশাপাশি শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে থাকলেও শিশুসন্তানদের নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তাদের দুধ জোগাড় করতে পারছেন না।
আজ বিকেলে নগরীর জল্লারপাড়ের দিসাই মিয়ার কলোনির বাসিন্দা মারজেহা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ সকালে ১২ দিন পর বাসায় আসছি। পারটেক্সের খাটসহ সব নষ্ট হয়ে গেছে। চাল, ডাল কিছুই নাই। আমরা যেমন তেমন আট মাসের ছেলে তাওসিফের জন্য বেশি চিন্তা। বুকের দুধ পায় না। বাজার থেকে কিনে খাওয়াই। এখন তো টাকাপয়সাও নাই।’
নগরীর উপশহর আই ব্লকের বাসিন্দা কাউসার হোসেন বলেন, ‘চারদিকে ময়লা-আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাসা পরিষ্কার করছি। এখন হাত-পা চুলকায়। চামড়ায় ফুসকুড়ি পড়ে গেছে।’ যতরপুরের বাসিন্দা কামিরুন নেছা বলেন, ‘১০ দিন পর বাসায় ফিরেছি। পুরো বাসায় পচা দুর্গন্ধ। টেকা যাচ্ছে না। খাবারেরও কিচ্ছু নাই।’
খাবার সংকটের কথা জানিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষও।
সিলেট নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় বন্যার পানি অনেকটাই কমেছে। তবে এখন রাস্তাঘাটে জমে থাকা ময়লা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। এদিকে পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে।
দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোর যেসব স্থানে পানি জমে ছিল, সেগুলো প্রায় নেমে গেছে। তবে কিছু সড়কে এখনো পানি রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, তালতলা সড়কসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতেও পানি রয়ে গেছে। তবে সব কটি সড়কেই যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
নগরীর যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, কুয়ারপাড়, লালাদিঘীর পাড় এলাকার পাড়া-মহল্লার পানি ময়লা ও কালো রং ধারণ করেছে। এসব স্থানে জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশা-মাছিও বাড়ছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানোর নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের মেডিকেল টিমও কাজ করতেছে। সবাইকে ধৈর্য ধরে সচেতনভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। যেন সিটি করপোরেশনের গাড়ি এগুলো নিতে পারে।’
এদিকে সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমার খবর পাওয়া গেছে। তবে কুশিয়ারা তীরবর্তী ছয় উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। উপজেলাগুলো হলো—দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথ। এসব উপজেলার পানিবন্দী পরিবারগুলো অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও কিছু ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হলেও প্রত্যন্ত গ্রামে ত্রাণ নিয়ে কেউ যাচ্ছে না।
বন্যার পানির তোড়ে বালাগঞ্জ-তাজপুর সড়কের কাশিপুর ব্রিজের সংযোগস্থলে সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু অংশ দেবে গেছে। যেকোনো সময় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হতে পারে। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুরসহ সাতটি উপজেলায়। এসব উপজেলার মানুষ ঘরে ফিরলেও দুর্দশা কাটছে না।
আজ ঘরে ফিরেছেন গোয়াইনঘাটের নলজুড়ি এলাকার দিনমজুর রহমত আলী। তাঁর ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘পানিতে ঘর তছনছ হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে হাঁটুসম কাদা। এই ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকব কী করে! পানির কারণে আয়-রোজগার বন্ধ। ভাত খাওয়ারই পয়সা নাই। ঘর মেরামত করব কী করে?’
সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাট এলাকার কবিরুন বেগম। গতকাল শুক্রবার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ দিন বাদাঘাট উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি পানিতে বাথরুম ভেঙে গেছে। সব আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। এইগুলা এখন মেরামত করাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।’
বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল হাসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আপাতত শুকনো খাবার বিতরণের চাইতে বন্যার্তদের পুনর্বাসনের জন্য ফান্ড গঠন করা দরকার। মানুষ আপৎকালীন সঞ্চয় আর ত্রাণ দিয়ে বন্যা চলাকালীন সংকট পার করে দিতে পারবে। কিন্তু মূল বিপদ পানি নামার পরেই দেখা দেবে। কারণ, টিনের চাল, ঘরের বেড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। পানি নামার পর এগুলো মেরামতে বিপদে পড়বেন তাঁরা।’
আবুল হাসানের আশঙ্কা, ‘এই মানুষগুলো ঘর ও আসবাব মেরামতে মহাজন বা বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান থেকে হয়তো ঋণ নেবেন। তখন তাঁরা আরও বিপদে পড়বেন।’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৮ জন মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। আমরা আপাতত মানুষের নিরাপদ খাদ্য ও নিরাপদ বাসস্থানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সব জায়গার পানি নেমে গেলে ঘরবাড়ি নিয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে জেলা-উপজেলা প্রশাসনকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানি নেমে গেলে রিপোর্ট অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জে পানি কমতেছে। তবে এখনো অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে রয়েছে। এ জন্য সেখানকার সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তবে সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে আর সুনামগঞ্জ পয়েন্টেও কমছে। কুশিয়ারার অমলসীদ পয়েন্টে ১৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্ট, শেরপুর পয়েন্টেও পানি কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টের পানি গতকাল শুক্রবার থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে।
পাউবোর সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহিদুল ইসলাম জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আর বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে পানি আরও কমে যাবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে আগামী মাসের শেষ দিকে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান শহিদুল ইসলাম।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমাকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনাটি নতুন মোড় নিয়েছে। উম্মে সালমার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে দাবি করেছিল র্যাব। তবে পুলিশ বলছে, ওই বাড়ির ভাড়াটিয়ারা এ হত্যা ঘটিয়েছেন।
১ মিনিট আগেনিহত ফয়সাল খান শুভ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। তিনি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করে নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডে বোন জামাইয়ের বাসায় থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।
১১ মিনিট আগেরাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ বাসায় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় ছুরিকাঘাতে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এ কে এম আব্দুর রশিদকে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় হাজারীবাগ মডেল থানায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।
২ ঘণ্টা আগেসিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রিপন মিয়াকে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সিরাজগঞ্জ শহরের রহমতগঞ্জে ছয়টি পিকআপ ভ্যানে চাঁদা চাইলে তাঁকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
২ ঘণ্টা আগে