ছেলে নয়, গৃহবধূকে হত্যা করেন ক্ষুব্ধ ভাড়াটিয়া: পুলিশ

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ২২: ২১
দুপচাঁচিয়া থানা। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমাকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনাটি নতুন মোড় নিয়েছে। উম্মে সালমার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে দাবি করেছিল র‍্যাব। তবে পুলিশ বলছে, ওই বাড়ির ভাড়াটিয়ারা এ হত্যা ঘটিয়েছেন।

হত্যার ঘটনায় ভাড়াটিয়া এক নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং কিছু আলামত জব্দের পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশ ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া এক নারী ও দুই পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—আজিজিয়া মঞ্জিল নামের ওই বাড়ির চতুর্থ তলার ভাড়াটিয়া দুপচাঁচিয়া উপজেলার উত্তর সাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা মাবিয়া সুলতানা (৪২) ও তাঁর দুই সহযোগী একই উপজেলার গুনাহার গ্রামের সুমন চন্দ্র রবিদাস (৩৫) এবং তালুচ পশ্চিম পাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিন (৪৫)।

পুলিশ জানায়, উম্মে সালমার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়। র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর সাদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। যার কারণে তাঁকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। আজ রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন ছিল। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সাদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে।

পরে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় নিহত উম্মে সালমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি মোসলেম উদ্দিনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে মোসলেম উদ্দিনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভ্যানচালক সুমন চন্দ্র ও ভাড়াটিয়া মাবিয়া সুলতানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাবিয়া সুলতানার কাছে নিহতের বাসায় খোয়া যাওয়া রাউটার ও চাবি পাওয়া যায়।

গত রোববার দুপচাঁচিয়া পৌর শহরের জয়পুরপাড়া এলাকায় আজিজিয়া মঞ্জিল নামের নিজ বাড়ির তৃতীয় তলায় হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা উম্মে সালমার মরদেহ ডিপ ফ্রিজে রেখে যান। ঘটনার দুদিন পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উম্মে সালমার ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে আটক করে র‍্যাব। পরদিন

র‍্যাব প্রেস ব্রিফিং করে জানায়, উম্মে সালমার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান স্বীকার করেছেন তিনি নিজেই তার মাকে হত্যা করেছেন।

এদিকে দুপচাঁচিয়া থানা-পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের পর মাবিয়া পুলিশকে জানান, চার মাস আগে উম্মে সালমা আজিজিয়া মঞ্জিলের চতুর্থ তলা ভাড়া নিয়ে একাই বাস করতেন তিনি। বাসায় মাদক বিক্রি এবং অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে উম্মে সালমা ও তাঁর স্বামী আজিজুর রহমান তাঁকে এক মাসের মধ্যে বাসা ছেড়ে দিতে বলেন। তাঁর কাছে দুই মাসের ভাড়াও পাওনা ছিল।

বিষয়গুলো নিয়ে মাবিয়া বাড়ির গৃহকর্ত্রী উম্মে সালমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই তিনি তার সহযোগী ও মাদক কারবারি সুমন চন্দ্র রবিদাস এবং মোসলেমকে নিয়ে গত শনিবার উম্মে সালমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার সুমনের ভ্যানে মোসলেম ওই বাসায় আসেন। দুপুর ১২টার দিকে মাবিয়া প্রথমে তিন তলায় প্রবেশ করেন। তারপর পরই সুমন ও মোসলেম বাসায় ঢুকেই চেতনানাশক স্প্রে করে উম্মে সালমাকে অচেতন করেন। এরপর তাঁর নাক মুখ ও হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে বাসার ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে তারা তিনজন সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।

পুলিশ বলছে, আটকের পর মাবিয়া সুমন ও মোসলেম উম্মে সালমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়েছে। পরে তাদের দেখানো জায়গা থেকে পুলিশ আলামত হিসেবে প্রধান গেটের তালার চাবি, রাউটার, মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।

বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, উম্মে সালমা হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কিছু আলামত উদ্ধারের পর তাদেরকে শুক্রবার বিকেলে আদালতে নেওয়া হয়েছে। আদালতে মোসলেম উদ্দিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দ্রুত বেতন-ভাতা পাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

মালামালের সঙ্গে শিশুকেও তুলে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত