রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিংগিমারি এলাকায় অচেনা প্রাণীর আক্রমণের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে এলাকাবাসীর। এলাকার কয়েকজন প্রাণীটির আক্রমণের শিকার হওয়ার পর থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দিনের বেলাও ঘর থেকে বের হয় না। আতঙ্কে শিশুরা যাচ্ছে না বিদ্যালয়ে। এক সপ্তাহ ধরে হিংস্র প্রাণীর আতঙ্কে এলাকাবাসী দিন পার করলেও স্থানীয়রা, প্রাণিসম্পদ ও বন বিভাগ—কেউই প্রাণীটিকে শনাক্ত করতে পারেনি।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯ অক্টোবর রাতে ওই এলাকার বাসিন্দা ট্রাক্টরচালক রাহেদুল মিয়া রাস্তার পাশে বসেন। সেখানে অচেনা ওই প্রাণীটি তাঁকে আক্রমণ করে। এ সময় তাঁর মুখে ও পেটে আঁচড় দিয়ে আহত করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন রাহেদুল। এর পর থেকে হিংস্রা প্রাণীটি গ্রামের আরও কয়েকজন নারী-পুরুষকে আক্রমণের চেষ্টা করে। ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক বাড়তে থাকে।
হিংস্র প্রাণীটির আক্রমণের শিকার রাহেদুল মিয়া বলেন, ‘চারদিকে দেখে তারপর রাস্তার পাশে বসি। হঠাৎ ধানখেত থেকে কুকুরের মতো দেখতে প্রাণীটি আমাকে কামড় দেয়। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে সেটি উঠে এসে আবার থাবা মারে। ধানখেতে অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে আসি। আমার হাত ও মুখে জখম হয়েছে। জীবনে প্রথম এমন প্রাণী দেখেছি। অল্পের জন্য সেদিন জীবন নিয়ে ফিরেছি।’ প্রাণীটির গায়ে সাদা রঙের লোম ও ওজন ৩০ থেকে ৪০ কেজি হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমদেল হোসেন সরকার বলেন, ‘রাহেদুল প্রথম প্রাণীটির হামলার শিকার হয়েছেন। এরপর আরও কয়েকজন নারী-পুরুষকে হামলা করেছে। লোকজনকে সাবধানে চলাচলের জন্য পরামর্শ দিয়েছি। বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাণীটি কী তা শনাক্ত করা যায়নি। এলাকার পুরুষেরা লাঠি হাতে দলবদ্ধ হয়ে প্রাণীটিকে খুঁজছে। পুরো এলাকায় আতঙ্কে বিরাজ করছে।’
হানিফাকে আক্রমণের সময় এগিয়ে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী লিয়ন বাবু বলেন, ‘প্রাণীটি দেখতে অনেক ভয়ংকর। আমার দাদিকে আক্রমণ করেছিল। এ সময় আমি লাঠি নিয়ে এগিয়ে না আসলে মেরেই ফেলত। এমন অদ্ভুত হিংস্র প্রাণী আগে কখনো দেখিনি।’
রাহেদুল মিয়া ও হানিফা বেগম ছাড়াও প্রাণীটির আক্রমণের শিকার ওই এলাকার আসাদুল মিয়া ও আতাউর রহমান। তাঁরা জানান, এই অচেনা প্রাণীর আক্রমণের আতঙ্কে এখন পুরো গ্রাম। প্রাণীটি দেখতে হিংস্র। শিশু বাচ্চাদের আক্রমণ করলে খেয়ে ফেলবে।
ওই এলাকার স্কুলশিক্ষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘শুধু সিংগিমারি নয়, আশপাশের এলাকার মানুষজনও এখন এই প্রাণীর আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অভিভাবকেরা দিনের বেলাও ভয়ে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। লোকজন মাঠে কাজেও যেতে পারছেন না। লাঠিসোঁটা হাতে এখন দিন-রাত প্রাণীটি মারতে খুঁজছেন। এটার সমাধান করতে প্রশাসন ও বন বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি হিংস্র প্রাণী সিংগিমারি এলাকার কয়েকজনকে আক্রমণ করার ঘটনাটি শুনেছি। প্রাণীটি শুধু রাতের বেলা বের হচ্ছে, এ জন্য শনাক্ত করা যায়নি। হিংস্র প্রাণীটিকে আটক করতে বন বিভাগকে কাজ করতে হবে।’