রংপুরে ৫০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি। চড়া মাছ, মাংস, ডিমের বাজার। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। নিত্যপণ্যের দফায় দফায় দাম বাড়ায় ক্রেতারা বলছেন, আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলছে না।
বাজার দর নিয়ে আজ বুধবার সকালে রংপুর নগরীর কামাল কাছনা বাজারে কথা হয় শাহীপাড়ার বাসিন্দা রবিন মিয়ার সঙ্গে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি সহকারী। তাঁর একার আয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে।
রবিন মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একদিন কামোত গেলে পাঁচ’শ টাকা কামাই। কিন্তু সকাল সন্ধ্যার খাবার খরচ নাগে সাত’শ-আট’শ টাকা। চাল, ডাল সবজি সউগের দাম হুহু করি বাড়েছে। কিন্তু কামাই তো বাড়ে না। সংসার চালার যায়া দেনাত পড়া নাগেছে।’
কামাল কাছনা বাজারে ব্যাগ হাতে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরছিলেন গুপ্তপাড়ার নাহিদ হাসান। তিনি গবাদিপশুর ওষুধ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করেন।
আক্ষেপ করে নাহিদ হাসান বলেন, ‘দুই টাকা কমের আশায় দোকানে দোকানে ঘুরছি। কোথাও সবজির দাম কম নেই। এক কেজি সবজি সর্বনিম্ন ৫০ টাকা আর সর্বোচ্চ ১২০ টাকা দর যাচ্ছে। মাস শেষে বেতন পাই ১৮ হাজার। কিন্তু ছয় সদস্যের সংসারে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া আর বাজার খরচ করতেই মাসে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। মাস শেষে স্বজন-সহকর্মীদের কাছে ধার করে চলতে হচ্ছে। আমার মতো মানুষেরা খুব কষ্টে আছে।’
শুধু রবিন মিয়া ও নাহিদ হাসান নয়; তাঁদের মতো জেলার মধ্য ও নিম্ন আয়ের সব পরিবার ঊর্ধ্বমুখী বাজার দরে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
আজ বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর সিটি বাজার ও কামাল কাছনা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি আলু ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৬০, পটল ৫০, করলা ৮০, ঢ্যাঁড়স ৫০, কচুরবই ৬৫, মুলা ৫২, কাঁকরোল ৪৫, বাঁধা কপি ৬০, বরবটি ৬৫, লাউ প্রতি পিছ ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়াও প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা, সোনালী ৩১০, দেশী ৪৬০ ও লেয়ার মুরগি ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিম প্রতি হালি ৫২ টাকা প্রতি আঁটি শাক ১৫ থেকে ৩০ টাকা ও মাছ সর্বনিম্ন ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর সিটি বাজারে দুপুরে কথা হয় আসা সর্দারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফিরোজা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, হোটেলে থালা বাসন মেজে যে চার’শ টাকা পাই, সেই টাকায় চার সদস্যের সংসারে ঠিকমতো ডাল ভাত হয় না। মাছ, মাংস তো বছরে ছয় মাসে একদিন। এখন শখ করিও ডিম খাবার পাই না। সবজির যে দাম হামার মরা সহজ বাঁচাই কঠিন হইছে।’
দাম বৃদ্ধির কারণ চানতে চাইলে সিটি কাঁচামাল ব্যবসায়ী মহুবার হোসেন বলেন, ‘আমরা ইচ্ছে করে সবজি মসল্লার দাম বাড়াইনি। বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে তাই একটু বাড়তি দামে বিক্রি। এবার সরবরাহ কম ও আড়তে দাম বেশি সবজির।’ একই কথা বলেন কামাল কাছনা বাজারের সবজি বিক্রেতা এনামুল হক, মোজাফফর হোসেন।
কামাল কাছনা বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম বলেন, সবকিছুর মতো মুরগির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিডের দাম বাড়ায় খামারিদের ব্যয় বেড়েছে। তাই মুরগির বাজার চড়া।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রংপুরের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত বাজার মনিটরিং চলছে। কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিব।’