বুধবার বেলা দেড়টা, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ইকরচালী বাসস্ট্যান্ডে রিকশার সিটে বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব বটু মিয়া। চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ। কথা হলে বটু মিয়া বলেন, ‘৯টায় থাকি কনকনা শীতোত বসি আছি। একটা টাকাও ভাড়া পাই নাই। কাল (বৃহস্পতিবার) এনজিওর কিস্তি আছে। অর্ধেক বেলা শেষ যাত্রী নাই। এক সপ্তাহ থাকি এরকম যাওছে। যাত্রী না থাকায় দুই বেলার ভাতের চাল-ডালের টাকা কামাই হওছে না। বাঁচা কঠিন হয়্যা গেইছে।’
ওই স্ট্যান্ডে বটু মিয়ার মতো খালি রিকশা-ভ্যান আর ইজিবাইক নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ১৫ জন চালক। বটু মিয়ার সঙ্গে কথা বলা দেখে তাদের একজন ভ্যানচালক জগদীশপুর গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম এগিয়ে আছেন। বলেন, ‘এইবার মরোণে জাড় (ঠান্ডা) শুরু হইছে। হামার কামাই বন্ধ হয়া গেইছে। সারা দিনে ৫০০ টাকা কামাই হছলো এ্যালা তাক ১০০ টাকাও হয় না।’
‘মানুষ ঘর থাকি বেড়ার না পাইলে কামাই হইবে বা কোনঠে থাকি, কন?’ সকাল থাকি দুপুর হইল ৫০ টাকা ভাড়া পাছুন। একে জার, তার ওপর কামাই বন্ধ। খুব কষ্টে আছি।’ বলেন, আনোয়ারুল ইসলাম।
শুধু বটু মিয়া ও আনোয়ারুল ইসলামই নয়; মাঘের শীতে তাদের মতো রংপুরের নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ বিপাকে পড়েছেন। কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় কাহিল ঘর থেকে বের হচ্ছে না। শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছে পশু-পাখিও।
আবহাওয়া অফিস বলছে, দুই একদিনে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা নেই, হতে পারে হালকা বৃষ্টি। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা।
দুপুর ১২টায় তারাগঞ্জের মাটিয়ালপাড়া মাঠে প্রামানিকপাড়া গ্রামের দিনমজুর মাহিদুল ইসলাম গৃহস্থের আলু খেতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করছিলেন। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডাতে চার দিন থাকি কামো যাবার পারো নাই। ঘরোত খাবার নাই জন্য আজ বাধ্য হয়া আলু খেতোত ওষুধ দিবার আলছু। কিন্তু হিম বাতাসোত ঠিকা যাওছে না। এমতোন ঠান্ডা থাকলে হামাক না খায়া মরির নাগবে।’
রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের শলেয়াশাহ বাজারে কোদাল, স্প্রে মেশিন হাতে মাঠ থেকে ঘরে ফিরছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। কথা হলে তাঁরা জানান, সকাল ৮টায় তামাক খেতের কাজে শুরু করেন। কিন্তু বাতাস আর ঠান্ডায় টিকতে পারছিলেন না। তাই কাজ না করে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন।
ওই দলের দিনমজুর লালচাদপুর গ্রামের লেলিন মিয়া বলেন, ‘ভাই, জীবন বাঁচলে অনেক কাম, কামাই করির পামো। যে ঠান্ডা হাত-পাও কোঁকড়া নাগি যাওছে। বাতাস গাওত ফোঁড়ে সোন্দাওছে, শরীর বরফ হয়া গেইছে। ওই জন্যে বাড়িত যাওছি। কাঁথার তলোত নুকি থাকমো।’
কথা হলে রংপুরের ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এবার শীত ও কুয়াশা বেশি। শুধু মানুষ নয়, এই শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে পশু-পাখিও। শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে ঠিকমতো পথ দেখতে না পাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটছে। রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে। পৌষের শেষ থেকে শীতের তীব্রতা এত বেশি যে রাতে ঘরে-বাইরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আজ বুধবার রংপুরে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আরও দুই একদিন তাপমাত্রা এমন থাকবে।