রংপুরের পীরগাছা ও কাউনিয়ায় ষষ্ঠ পর্যায়ের প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নির্বাচিত হয়েছেন। আর বিজয়ী ছয়জনের পাঁচজনই নতুন মুখ। একমাত্র কাউনিয়া উপজেলায় আনোয়ারুল ইসলাম মায়াকে ভোটাররা ভোট দিয়ে পুনরায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন।
পীরগাছায় ১১৩টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এসব কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ লাখ ৮১ হাজার ৬৯৮ জন। এঁদের মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭০৩ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এখানে মোটরসাইকেল প্রতীকে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন ৪২ হাজার ৭৬৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মিলন পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দোয়াত-কলম প্রতীকে ৪০ হাজার ৯৪৮ ভোটে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হন মনোয়ারুল ইসলাম।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) নির্বাচিত হয়েছেন শাহ মো. শারেখ খন্দকার। তিনি মাইক প্রতীকে ৬৬ হাজার ৪৩৬ ভোট পেয়েছেন। শারেখ খন্দকার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। চশমা প্রতীকে ৩২ হাজার ১২৩ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন ফরহাদ হোসেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন ইসরাত জাহান সুইটি। তিনি প্রজাপতি প্রতীকে ৯৬ হাজার ৭৪৯ ভোট পেয়েছেন। পদ্মফুল প্রতীকে ১৪ হাজার ২৯৫ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছে রেহেনা বেগম। সুইটির কোনো রাজনৈতিক দল নেই। এবারই প্রথম ভোটের মাঠে নেমে চমক দেখিয়েছেন তিনি।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত শাহ মো. শারেখ খন্দকার বলেন, ‘মানুষ আমার ওপর আস্থা রেখে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আমি যেন সেবার মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসের দাম দিতে পারি সেভাবেই কাজ করব। সবাই আমার জন্য দোয়া রাখবেন।’
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত ইশরাত জাহান সুইটি বলেন, ‘এবারই প্রথম ভোটের মাঠে নেমেছি। কল্পনাও করতে পারিনি এত ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব। আমার উচ্চতা কম হওয়ায় চাকরি পাইনি, কিন্তু ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ভোটারদের ভালোবাসায় আমি সিক্ত। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো নয়।’
এদিকে কাউনিয়ায় উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৫৪৩ জন। ৯৩টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ উপজেলায় পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মনোয়ারুল ইসলাম মায়া। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে ৬০ হাজার ৭৮৩ ভোট পেয়েছেন। মনোয়ারুল ইসলাম মায়া কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আনারস প্রতীকে ৪৮ হাজার ৬১৬ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন মনজুদার রহমান। তিনি টিউবওয়েল প্রতীকে ৫৪ হাজার ৯৪৫ ভোট পেয়েছেন। মনজুদার রহমান জেলা কৃষক লীগের সদস্য। চশমা প্রতীকে মাহমুদুল হাসান ১৭ হাজার ৩৭৮ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন।
এ উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন রওশনারা বেগম। তিনি হাঁস প্রতীকে ৩৯ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়েছেন। রওশনারা বেগম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আঙ্গুরা বেগম। তিনি ২৪ হাজার ৯৪৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত মনোয়ারুল ইসলাম মায়া বলেন, মানুষের জন্য কাজ করেছি। বিপদে-আপদে মানুষের পাশে ছিলাম। তাঁর প্রমাণ আজকের বিজয়। আমি কাউনিয়ার মানুষের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ, তাঁরা ভালোবেসে আমাকে নির্বাচিত করেছে আবারও তাদের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য।
রংপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মোতাহসিম বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ তিনটি পদে লড়ছেন ২৭ জন। এই ২৭ প্রার্থীর মধ্যে ২১ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ-পদবিতে রয়েছেন।