পাবনার চাটমোহর উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফারুক হোসেনকে (৩৫) রড দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বিএনপি সমর্থক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার মথুরাপুর তেলের পাম্প-সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ফারুক উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের কুবিরদিয়ার গ্রামের জামাল সরদারের ছেলে এবং উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব।

আর অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন একই ইউনিয়নের খতবাড়ী গ্রামের গোলাপ হোসেনের ছেলে এবং মুলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য। তিনি বিএনপির সমর্থক বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার রেলবাজারে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে পাবনা-চাটমোহর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। ঘণ্টাব্যাপী অবরোধে সড়কের দুপাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

ফারুকের সঙ্গে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে দলীয় কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে মথুরাপুর তেলের পাম্পের সামনের চা স্টলে বসে কথা বলছিলেন যুবদল নেতা ফারুক। এ সময় ৮–১০টি মোটরসাইকেলে মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৫–২০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী সেখানে উপস্থিত হয়ে ফারুকের ওপর অতর্কিত হামলা করে রড দিয়ে পেটাতে থাকেন।

এ সময় নেতাকর্মীরা উদ্ধার করতে গেলে তাঁদের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে ফেলেন। পেটানোর একপর্যায়ে ফারুক সংজ্ঞাহীন হয়ে পরলে তাঁকে ফেলে ফাঁকা কয়েক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যান হামলাকারীরা।

এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাত ১১টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মাজিদ মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ফারুক হোসেনের দুই পা ভেঙে গেছে। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, ঘটনাটি জানার পরেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে আজ শনিবার বেলা ২টা পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি করে আসছি। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘এদিন আমি পেট্রলপাম্পে আমার বাইকে তেল ওঠাতে গেলে সেখানে উপস্থিত থাকা ফারুক ও তাঁর লোকজন আমাকে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে আমার আত্মীয়স্বজন আমাকে উদ্ধার করতে এলে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মারপিট শুরু হয় ও ফারুক আহত হয়।’ গুলিবর্ষণের ঘটনা তিনি অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব এইচ ইসলাম হীরা বলেন, ‘ঘটনাটি দলীয় নাকি ব্যক্তিগত, তা আমার জানা নেই। তবে আনোয়ার মেম্বার গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি বিএনপির সদস্য কি না, সেটা যাচাই-বাছাই করে জানানো যাবে। যদি সে দলের কেউ হয়, তবে অবশ্যই দল তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর হামলার নিন্দা জানাই এবং জড়িতদের বিচার চাই।’