বগুড়ায় কৃষকের থেকে ৪৫ টাকায় কেনা সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ২০: ৫৮

বগুড়ার মহাস্থান হাটে পাইকারি বাজারে কৃষক পটল বিক্রি করছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। সেই পটল ওই হাটের খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। আর ১০ কিলোমিটার দুরে বগুড়া শহরের রাজাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। শহরের অন্যান্য বাজারে পটল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। এভাবে হাত বদল হলেই প্রতিটি সবজির দাম বাড়ছে কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা। ফলে কৃষকের কাছ থেকে কয়েক হাত বদল হয়ে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। 

আজ শনিবার বগুড়ার বৃহৎ পাইকারি সবজির বাজার মহাস্থান হাটসহ বগুড়া শহরের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

মহাস্থান হাটে মুলা বিক্রি করতে আসা শিবগঞ্জের কিচক গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, এক সপ্তাহ আগে তিনি মুলা বিক্রি করেছেন ১২০০ টাকা মণ দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে দাম কমেছে ২০০ টাকা। আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই সবজির দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এখনো আগুন। 

শনিবার মহাস্থান হাটে ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজি, লাউ ২০ টাকা পিস, করলা ৫০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ২৭০ টাকা কেজি, গাজর ১৪০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, শিম ১৭০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, মিষ্টি লাউ ৫৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আবার মহাস্থান হাটেই খুচরা বিক্রেতারা প্রতিটি সবজি কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন। মহাস্থান হাটে খুচরা সবজি বিক্রেতা আহাদ আলী বলেন, ‘সবজি কেনার খাজনা ছাড়াও হাটের জায়গা ভাড়া দিতে হয়। শুরুতে পটল ৭০ টাকা কেজি বিক্রি করলে শেষ দিকে ৫০-৬০ টাকাতেও বিক্রি করতে হয়। এ ছাড়া এক মণ পটল খুচরা বিক্রি করতে ২ কেজি ঘাটতি হয়।’ 

এদিকে মহাস্থান থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে বগুড়া শহরের রাজাবাজারে সব ধরনের সবজি পাইকারিতে বিক্রির সময় দাম বাড়ানো হচ্ছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা। রাজাবাজার থেকে পাইকারি কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি আরও ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে। 

বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজার, কালিতলা, বকশি বাজার, কলোনি বাজার, খান্দার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পটল, ৮০ টাকা, করলা, ৮০ টাকা, ফুল কপি ১২০ টাকা, বাঁধা কপি ১০০ টাকা কেজি লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিচ, মিষ্টি লাউ ৭০ টাকা কেজি, মুলা ৪০ টাকা কেজি, শিম ২০০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৩২০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মহাস্থান পাইকারি হাটে কৃষক সবজি বিক্রি করার পর তিন-চাদর হাত বদল হয়ে সেই সবজি শহরে ভোক্তার কাছে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। 

বগুড়ার মহাস্থান হাটে উঠেছে লাউ। ছবি: আজকের পত্রিকা সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কৃষক, ফড়িয়া, ব্যাপারী আর খুচরা বিক্রেতা এক অপরকে দুষছেন। বগুড়া শহরের রাজাবাজারে খুচরা সবজি বিক্রেতা সেলিম উদ্দিন বলেন, মহাস্থান হাটে গিয়ে সব সবজি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কেনা যায় না। ফড়িয়ারা রাস্তা থেকেই কৃষকের সবজি কিনে নেয়। সেখান থেকে সবজি কিনতে খাজনা দিতে হয়। এরপর শহরে আনতে পরিবহন খরচ, রাজাবাজারে দোকান ভাড়া এবং খাজনা দিতে হয়। যার কারণে মহাস্থান হাটে কেনা দামের চেয়ে ২০ টাকা কেজি প্রতি বেশি বিক্রি না করলে লোকসান গুনতে হবে। তবে শহরের খুচরা এবং পাইকারি সবজি বিক্রেতারা বলছেন শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ধরনের সবজির দাম কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা কমবে। 

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবুর রহমান বলেন, এবার ভাদ্র মাসে তাপমাত্রা বেশি এবং কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে। যার কারণে শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে আসতে দেরি হয়েছে। এ কারণে সবজির দাম বাজারে বেশি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ধরনের সবজির দাম কমতে শুরু করবে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত