সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে প্রাণীর উৎপাদন বিষয়ক কয়েকটি নন-ক্যাডার পদে পশুপালন স্নাতকদের পাশাপাশি ভেটেরিনারি সায়েন্স ও অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি তথা কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেটি নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের মধ্যে ‘কাঁদা ছোড়াছুড়ি’ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে এই প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে দুই অনুষদই পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির পশুপালন অনুষদের সম্মেলন কক্ষে প্রজ্ঞাপনটির নন-ক্যাডার পদসমূহে শুধুমাত্র পশুপালন ডিগ্রিধারীদের অন্তর্ভুক্তির দাবি এবং কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাকৃবির পশুপালন অনুষদ ছাত্র সমিতি। 

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু রয়েছে, সেগুলো তুলে দিয়ে ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের পৃথক ডিগ্রি চালুর দাবি জানান পশুপালন অনুষদের শিক্ষকেরা। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পশুপালন অনুষদ ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত সরকার। সংবাদ সম্মেলনে পশুপালন অনুষদের ডিনসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ও ছাত্র সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

এ দিকে গত মঙ্গলবার একই প্রজ্ঞাপনের পদগুলোতে পশুপালন ডিগ্রিধারী ও কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের পাশাপাশি ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রিধারীদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে ভেটেরিনারি অনুষদ ছাত্র সমিতি। সেই সঙ্গে সারা দেশে ভেটেরিনারি ও পশুপালন এই দুই অনুষদ মিলে একটি কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর জোর দাবি জানান ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষকেরা। 

দুই অনুষদের শিক্ষকদের এই কাঁদা ছোড়াছুড়ি বক্তব্যে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করে জানান, ভেটেরিনারি ও পশুপালন এই দুই অনুষদের শিক্ষকদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল বহুদিন আগে থেকে। তাদের এই অন্তঃকোন্দলের কারণে বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করা যাচ্ছে না। দুই অনুষদের কতিপয় শিক্ষকেরা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা ও স্বার্থ হাসিলের জন্য বারবার কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুতে বাধা প্রদান করে আসছে। যার বলি হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির সম্মুখে ফেলছে ওই দুই অনুষদের শিক্ষকেরা। 

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাতিলের কারণ জানতে চাইলে ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রায়হান হাবিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভেটেরিনারি বা কম্বাইন্ড ডিগ্রির সঙ্গে পশুপালন ডিগ্রির কোনো মিল নাই। বাকৃবির ভেটেরিনারি ডিগ্রি বিশ্বমানের। সেখানে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চাওয়ার মাধ্যমে তাঁরা ভেটেরিনারি ডিগ্রির উচ্চমানকে নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। বর্তমান যুগে যে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। সেখানে দুটো ভিন্ন ভিন্ন ডিগ্রিকে এক করার প্রস্তাবনা একেবারেই যুক্তিসংগত নয়।’ 
 
কম্বাইন্ড ডিগ্রিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ও না হওয়া নিয়ে দুই অনুষদের অন্তঃকোন্দলের শেষ কোথায় জানতে চাইলে বাকৃবির পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুবাস চন্দ্র দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অন্তঃকোন্দল দুই অনুষদেরই শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে। তবে পশুপালন অনুষদ স্বতন্ত্র থাকলেই দেশের প্রাণিজ সম্পদ উন্নয়ন সম্ভব। ভেটেরিনারি অনুষদের সঙ্গে এর আগেও আমরা আলোচনায় বসে ব্যর্থ হয়েছি। দুই অনুষদ একত্রিত করলে ক্ষতি হবে প্রাণিজ সম্পদ উৎপাদন। দুই অনুষদের অন্তঃকোন্দল শেষ হবে, যদি ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদ স্বতন্ত্রভাবে ডিগ্রি প্রদান করে।’ 

এ দিকে গত মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা জুয়েনা বলেন, ‘ভেটেরিনারি ও পশুপালন দুটি অনুষদের নামে আলাদা আলাদা ডিগ্রি রেখে জনগণের চোখে ধুলো ছিটানো হচ্ছে। মূলত প্রায় একই সিলেবাসে দুই অনুষদের কোর্স কারিকুলাম পড়ানো হয়। সময়ের প্রয়োজনে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির ক্ষেত্রগুলোতে এগিয়ে রাখতে হলে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর বিকল্প নেই।’