বরগুনা সদরের ঘটবাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফ ফরায়েজীর স্ত্রী জাহানারা বেগমকে (৬০) প্রায় ২৫ বছর পর খুঁজে পেয়েছে তাঁর স্বজনেরা। আজ শুক্রবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজার এলাকা থেকে তাঁকে নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৯ সালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি।

জাহানারার মেয়ে হাসি আক্তার তাঁর মাকে নিতে আসেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর খালু মোস্তফা মির্জা।

জাহানারা বেগমের বোনের জামাই মোস্তফা মির্জা বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে জাহানারা বেগম তাঁর তিন বছরের ছোট ছেলে (বর্তমান বয়স ২৮) ছায়দুলকে নিয়ে বরগুনা থেকে ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় রওনা হন। ভোরে ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নামার পর থেকে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১০ বছর আগে ছায়দুলের সন্ধান পেলেও জাহানারা নিখোঁজই ছিলেন।

এদিকে ১৫-২০ দিন ধরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজারে জাহানারা বেগমকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। জাঙ্গালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপনের বাড়িতে নিয়ে তাঁর পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিলেন। শুধু ‘বরগুনা ও ঘটবাড়িয়া’ শব্দ দুটি বোঝা যাচ্ছিল। সেসব লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়। এরপরই বরগুনা থেকে তাঁর স্বজনেরা যোগাযোগ করে। পরে আজ শুক্রবার দুপুরে জাহানারা বেগমকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জাঙ্গালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপন বলেন, ‘১৫-২০ দিন ধরে এই মহিলা আমার দোকানের সামনে অবস্থান করছিল। পাঁচ-ছয় দিন ধরে আমার বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া করেছে। এত বছর পর জাহানারা বেগম তাঁর পরিবার খুঁজে পাওয়ায় আমরা আনন্দিত।’

জাহানারার পাঁচ সন্তান। দীর্ঘদিন পর মাকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর ছোট মেয়ে হাসি বেগম। তিনি বলেন, ‘মাকে খুঁজে পেয়ে যেন পৃথিবী হাতে পেয়েছি। আমাদের ছোট রেখেই হারিয়ে যান মা। এখন আমরা সংসার করছি। ধরেই নিয়েছিলাম মায়ের মুখ আর কখনো দেখতে পারব না। এত বছর পর খুঁজে পাওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

আজ বেলা ১১টার দিকে জাহানারা বেগমকে তাঁর পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুল ইসলাম, শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবুল কালামসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।