জাহিদ হাসান, যশোর প্রতিনিধি
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য সন্দেহে মৌলভীবাজারে কুলাউড়ায় পাহাড় থেকে গ্রেপ্তারদের একজন ঢাকায় নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী (১৭)। কয়েক মাস ধরেই তার মধ্যে বিষণ্নতা ও একা থাকার প্রবণতা ছিল বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
চরমপন্থী মতাদর্শে দীক্ষিত হওয়ার কোনো আলামত ধরা না পড়লেও ওই তরুণের আচরণে হঠাৎ বেশ পরিবর্তন দেখেছেন স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরা। ধর্মচর্চার পাশাপাশি তার বেশভূষায়ও পরিবর্তন আসে। আগে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডায় উৎফুল্ল থাকলেও সর্বশেষ বাড়ি গিয়ে কারও সঙ্গে তেমন দেখা করত না সে। বাড়িতেই পুরো সময়জুড়ে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকত।
পরিবার বলছে, পড়াশোনার সুবাদে ঢাকায় কলেজের হোস্টেলেই থাকত। গত কোরবানি ঈদের দুই দিন আগে ছুটিতে যশোরে বাড়ি যায়। এক মাস সে বাড়িতে ছিল। গত ২৮ জুলাই বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি সে।
যশোর ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিখোঁজ ওই শিক্ষার্থীর বাবা থানায় জিডি করে আমাদের সঙ্গে শরণাপন্ন হন। এরপর তার মোবাইল ট্র্যাকিং করে জানতে পারি, পাবনার একটি যাত্রীবাহী বাসে করে সে যশোর ছেড়েছে। এরপর পরিবার ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, গত পাঁচ-ছয় মাস তার গতিবিধি পরিবর্তন হয়েছে। ধর্মীয়ভাবে মুখে দাড়ি রেখেছে, বাসায় একা একা থাকে। মোবাইলে ভাই ভাই বলে কথা বলত। এসব বিশেষ লক্ষণ দেখে আমরা বুঝতে পারি ধর্মীয় কোনো সংগঠনে জড়িত হয়ে আত্মগোপনে রয়েছে সে। এরপর আমরা বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। পরবর্তী সময় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট তদন্ত করে ফাহিমের সূত্র ধরেই পাবনা এবং পরবর্তীকালে কুলাউড়াতে অভিযান পরিচালনা করে। এতে দুই দফায় ২৬ জনকে আটক করে তারা।’
সে অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থী কাউকে না জানিয়ে সোজা পাবনা চলে যায়। এরপর সিরাজগঞ্জে জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র অন্যতম সদস্য চিকিৎসক সোহেল তানজিমের কাছে। এরপর সোহেল তানজিমের সঙ্গে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানায় চলে যায় বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
গত শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ৬ নারীসহ ১০ জনকে আটক করে। তাঁদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। তাঁরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। ওই বাড়ি থেকে জিহাদি বই ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয় বলেও জানা গেছে। এ ঘটনার পর গত সোমবার একই এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে আরও ১৭ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয় জনতা।
বর্তমানে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় শিশু শোধনাগার টঙ্গীতে রয়েছে ওই তরুণ। তার বাড়ি যশোর জেলা সদরে। তার বাবা পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি (পিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুই স্ত্রীর পরিবারে চার সন্তানের মধ্যে ওই তরুণ সবার বড়। ছোটবেলায় তার মা মারা যান।
জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে আটকের ঘটনায় হতবাক তাদের পরিবারসহ স্থানীয়রা। সহজ-সরল ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকায় পরিচিত ওই শিক্ষার্থীর জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি মেলাতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী।
এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থীর বাবা এলাকায় পরিচিত আইনজীবী ও গণ্যমান্য ব্যক্তি। বাবার মতো এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসেবেই সুনাম রয়েছে তার। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতাও কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে। বেশির ভাগ সময় বাড়িতে ও অদূরেই তার নানাবাড়িতে সময় কাটাত। রাতে মাঝেমধ্যে শহরে বিভিন্ন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিত। তবে আগে ধর্মীয় লাইনে না থাকলেও সম্প্রতি দাড়ি রেখেছে এবং নামাজ পড়া শুরু করেছে সে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বাড়ি থেকে তেমন বের হচ্ছেন না কেউই। নিকট স্বজনেরা ছাড়া কেউ তাদের বাড়িতেও আসছেন না।
বাড়িতে ওই কলেজছাত্রের ছোট মায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সে যখন নার্সারিতে পড়ত তখন ওর মা মারা যায়। আমি যে ওর সৎমা, কখনো তাকে বুঝতে দিইনি। ছোটবেলা থেকেই সে ভালো ছাত্র। তাই এই শহরের ভালো স্কুল-কোচিংয়ে পড়িয়েছি। গত ২৮ জুলাই সকালে সে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ি থেকে বের হয়। দুপুরে খাবার সময় হলে বাড়িতে না আসায় ফোন দিই। তখন ওর ফোন বন্ধ পাওয়া গেলে বিভিন্ন স্বজন ও বন্ধুদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায়নি। পরে ২৯ তারিখ থানায় জিডি করে ওর বাবা। এরপর গত মঙ্গলবার টিভির সংবাদে দেখতে পাই মৌলভীবাজার থেকে ১৬ জন কিশোর-যুবক আটক হয়েছে। পরে নিউজে ছবি ও নাম-পরিচয় দেখে জানতে পারি, সেখানে সেও আছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসফাকুন্নাহার আরও বলেন, ‘২০২১ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। জিপিএ-৫ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যশোর বোর্ডে মেধাতালিকায় স্থান করে নেয়। ছোটবেলা থেকে সে লেখাপাড়ায় খুব ভালো। পরে ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অসুস্থায় সে বেশি দিন ক্লাস করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী শিক্ষাবর্ষের ৮০ ভাগ উপস্থিতি না থাকলে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেওয়া হয় না। ফলে সে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারায় চরম হতাশায় ভুগছিল। ঘরে একা একা বসে থাকত। কিন্তু তার মধ্যে জঙ্গি ধরনের কিছু পায়নি।’
ওই শিক্ষার্থীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছোটবেলায় ওর মা মারা যাওয়ায় মনের ভেতরে যন্ত্রণা ছিল। আবার নানা রোগেও ভুগছিল সে। এর মধ্যে বাসায় থাকার সময় মোবাইল নিয়ে থাকত। কিন্তু কোনো আড্ডাবাজি, দলাদলিতে ছিল না। জঙ্গিবাদে জড়ানোর মতো কোনো বিষয় পরিবারের চোখে পড়েনি। সন্দেহজনক কোনো লোকজনকেও আসা-যাওয়া করতে দেখিনি। ছেলের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টা কিছুতেই মেলাতে পারছি না। আমার ছেলে অল্প বয়সী, খুব সহজ-সরল। কেউ হয়তো ফাঁসিয়ে দিয়ে থাকতে পারে।’
ওই বাড়ির কয়েক অদূরেই তার নানাবাড়ি। মা হারা নাতিকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এই খবরে কাতর ষাটোর্ধ্ব নানি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার নাতি অনেক সহজ-সরল। ও কোনো অপরাধ করতে পারে না।’
দুজন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ওই তরুণেরা দুই ভাই। ওরা যখন অনেক ছোট, তখন ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করে। সেই বিয়েটা মেনে নিতে পারে না ওর মা। তাই ওদের মা আত্মহত্যা করেন। দ্বিতীয় পক্ষের ঘরে তার দুই বোন আছে। সৎমাকে নিয়ে তেমন কোনো ঝামেলা ছিল না বলেই জানেন তাঁরা।
তাঁরা আরও জানান, সে ভদ্র-নম্র ও মেধাবী ছেলে। তার এ ঘটনায় জড়িত বিষয়টি তাঁরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার সম্পর্কে এলাকায় ওই ধরনের কোনো অভিযোগ কোনো দিন শোনেননি তাঁরা।
ওই তরুণের এক বন্ধু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল ওর। কিন্তু অসুস্থতার কারণে নিয়মিত কলেজে যেতে পারেনি। এ কারণে নিয়ম অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে অনেক হতাশায় ভুগছিল সে। তবে জঙ্গি বা ধার্মিক বিষয়ের কোনো কথাবার্তা তার মুখে শুনিনি।’
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য সন্দেহে মৌলভীবাজারে কুলাউড়ায় পাহাড় থেকে গ্রেপ্তারদের একজন ঢাকায় নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী (১৭)। কয়েক মাস ধরেই তার মধ্যে বিষণ্নতা ও একা থাকার প্রবণতা ছিল বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
চরমপন্থী মতাদর্শে দীক্ষিত হওয়ার কোনো আলামত ধরা না পড়লেও ওই তরুণের আচরণে হঠাৎ বেশ পরিবর্তন দেখেছেন স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরা। ধর্মচর্চার পাশাপাশি তার বেশভূষায়ও পরিবর্তন আসে। আগে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডায় উৎফুল্ল থাকলেও সর্বশেষ বাড়ি গিয়ে কারও সঙ্গে তেমন দেখা করত না সে। বাড়িতেই পুরো সময়জুড়ে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকত।
পরিবার বলছে, পড়াশোনার সুবাদে ঢাকায় কলেজের হোস্টেলেই থাকত। গত কোরবানি ঈদের দুই দিন আগে ছুটিতে যশোরে বাড়ি যায়। এক মাস সে বাড়িতে ছিল। গত ২৮ জুলাই বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি সে।
যশোর ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিখোঁজ ওই শিক্ষার্থীর বাবা থানায় জিডি করে আমাদের সঙ্গে শরণাপন্ন হন। এরপর তার মোবাইল ট্র্যাকিং করে জানতে পারি, পাবনার একটি যাত্রীবাহী বাসে করে সে যশোর ছেড়েছে। এরপর পরিবার ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, গত পাঁচ-ছয় মাস তার গতিবিধি পরিবর্তন হয়েছে। ধর্মীয়ভাবে মুখে দাড়ি রেখেছে, বাসায় একা একা থাকে। মোবাইলে ভাই ভাই বলে কথা বলত। এসব বিশেষ লক্ষণ দেখে আমরা বুঝতে পারি ধর্মীয় কোনো সংগঠনে জড়িত হয়ে আত্মগোপনে রয়েছে সে। এরপর আমরা বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। পরবর্তী সময় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট তদন্ত করে ফাহিমের সূত্র ধরেই পাবনা এবং পরবর্তীকালে কুলাউড়াতে অভিযান পরিচালনা করে। এতে দুই দফায় ২৬ জনকে আটক করে তারা।’
সে অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থী কাউকে না জানিয়ে সোজা পাবনা চলে যায়। এরপর সিরাজগঞ্জে জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র অন্যতম সদস্য চিকিৎসক সোহেল তানজিমের কাছে। এরপর সোহেল তানজিমের সঙ্গে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানায় চলে যায় বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
গত শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট ৬ নারীসহ ১০ জনকে আটক করে। তাঁদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। তাঁরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। ওই বাড়ি থেকে জিহাদি বই ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয় বলেও জানা গেছে। এ ঘটনার পর গত সোমবার একই এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে আরও ১৭ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয় জনতা।
বর্তমানে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় শিশু শোধনাগার টঙ্গীতে রয়েছে ওই তরুণ। তার বাড়ি যশোর জেলা সদরে। তার বাবা পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি (পিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুই স্ত্রীর পরিবারে চার সন্তানের মধ্যে ওই তরুণ সবার বড়। ছোটবেলায় তার মা মারা যান।
জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে আটকের ঘটনায় হতবাক তাদের পরিবারসহ স্থানীয়রা। সহজ-সরল ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকায় পরিচিত ওই শিক্ষার্থীর জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি মেলাতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী।
এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থীর বাবা এলাকায় পরিচিত আইনজীবী ও গণ্যমান্য ব্যক্তি। বাবার মতো এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসেবেই সুনাম রয়েছে তার। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতাও কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে। বেশির ভাগ সময় বাড়িতে ও অদূরেই তার নানাবাড়িতে সময় কাটাত। রাতে মাঝেমধ্যে শহরে বিভিন্ন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিত। তবে আগে ধর্মীয় লাইনে না থাকলেও সম্প্রতি দাড়ি রেখেছে এবং নামাজ পড়া শুরু করেছে সে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বাড়ি থেকে তেমন বের হচ্ছেন না কেউই। নিকট স্বজনেরা ছাড়া কেউ তাদের বাড়িতেও আসছেন না।
বাড়িতে ওই কলেজছাত্রের ছোট মায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সে যখন নার্সারিতে পড়ত তখন ওর মা মারা যায়। আমি যে ওর সৎমা, কখনো তাকে বুঝতে দিইনি। ছোটবেলা থেকেই সে ভালো ছাত্র। তাই এই শহরের ভালো স্কুল-কোচিংয়ে পড়িয়েছি। গত ২৮ জুলাই সকালে সে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ি থেকে বের হয়। দুপুরে খাবার সময় হলে বাড়িতে না আসায় ফোন দিই। তখন ওর ফোন বন্ধ পাওয়া গেলে বিভিন্ন স্বজন ও বন্ধুদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায়নি। পরে ২৯ তারিখ থানায় জিডি করে ওর বাবা। এরপর গত মঙ্গলবার টিভির সংবাদে দেখতে পাই মৌলভীবাজার থেকে ১৬ জন কিশোর-যুবক আটক হয়েছে। পরে নিউজে ছবি ও নাম-পরিচয় দেখে জানতে পারি, সেখানে সেও আছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসফাকুন্নাহার আরও বলেন, ‘২০২১ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। জিপিএ-৫ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যশোর বোর্ডে মেধাতালিকায় স্থান করে নেয়। ছোটবেলা থেকে সে লেখাপাড়ায় খুব ভালো। পরে ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অসুস্থায় সে বেশি দিন ক্লাস করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী শিক্ষাবর্ষের ৮০ ভাগ উপস্থিতি না থাকলে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেওয়া হয় না। ফলে সে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারায় চরম হতাশায় ভুগছিল। ঘরে একা একা বসে থাকত। কিন্তু তার মধ্যে জঙ্গি ধরনের কিছু পায়নি।’
ওই শিক্ষার্থীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছোটবেলায় ওর মা মারা যাওয়ায় মনের ভেতরে যন্ত্রণা ছিল। আবার নানা রোগেও ভুগছিল সে। এর মধ্যে বাসায় থাকার সময় মোবাইল নিয়ে থাকত। কিন্তু কোনো আড্ডাবাজি, দলাদলিতে ছিল না। জঙ্গিবাদে জড়ানোর মতো কোনো বিষয় পরিবারের চোখে পড়েনি। সন্দেহজনক কোনো লোকজনকেও আসা-যাওয়া করতে দেখিনি। ছেলের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টা কিছুতেই মেলাতে পারছি না। আমার ছেলে অল্প বয়সী, খুব সহজ-সরল। কেউ হয়তো ফাঁসিয়ে দিয়ে থাকতে পারে।’
ওই বাড়ির কয়েক অদূরেই তার নানাবাড়ি। মা হারা নাতিকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এই খবরে কাতর ষাটোর্ধ্ব নানি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার নাতি অনেক সহজ-সরল। ও কোনো অপরাধ করতে পারে না।’
দুজন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ওই তরুণেরা দুই ভাই। ওরা যখন অনেক ছোট, তখন ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করে। সেই বিয়েটা মেনে নিতে পারে না ওর মা। তাই ওদের মা আত্মহত্যা করেন। দ্বিতীয় পক্ষের ঘরে তার দুই বোন আছে। সৎমাকে নিয়ে তেমন কোনো ঝামেলা ছিল না বলেই জানেন তাঁরা।
তাঁরা আরও জানান, সে ভদ্র-নম্র ও মেধাবী ছেলে। তার এ ঘটনায় জড়িত বিষয়টি তাঁরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার সম্পর্কে এলাকায় ওই ধরনের কোনো অভিযোগ কোনো দিন শোনেননি তাঁরা।
ওই তরুণের এক বন্ধু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল ওর। কিন্তু অসুস্থতার কারণে নিয়মিত কলেজে যেতে পারেনি। এ কারণে নিয়ম অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে অনেক হতাশায় ভুগছিল সে। তবে জঙ্গি বা ধার্মিক বিষয়ের কোনো কথাবার্তা তার মুখে শুনিনি।’
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমাকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনাটি নতুন মোড় নিয়েছে। উম্মে সালমার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে দাবি করেছিল র্যাব। তবে পুলিশ বলছে, ওই বাড়ির ভাড়াটিয়ারা এ হত্যা ঘটিয়েছেন।
৬ মিনিট আগেনিহত ফয়সাল খান শুভ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। তিনি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করে নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডে বোন জামাইয়ের বাসায় থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।
১৬ মিনিট আগেরাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ বাসায় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় ছুরিকাঘাতে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এ কে এম আব্দুর রশিদকে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় হাজারীবাগ মডেল থানায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।
২ ঘণ্টা আগেসিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রিপন মিয়াকে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সিরাজগঞ্জ শহরের রহমতগঞ্জে ছয়টি পিকআপ ভ্যানে চাঁদা চাইলে তাঁকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
২ ঘণ্টা আগে