চরমপন্থী নেতা গাজী কামরুলই সাবেক কাউন্সিলর টিপুকে হত্যা করেছে, দাবি স্ত্রীর

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২০: ৩৭
Thumbnail image
খুলনার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু (৫৫)। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুর (৫৪) খুন হওয়ার পেছনে সাবেক চরমপন্থী নেতাকে দায়ী করেছেন তাঁর স্ত্রী। টিপুর স্ত্রী অভিযোগ, চরমপন্থী নেতা গাজী কামরুল ফোনে টিপুকে নিয়মিত হুমকি দিতেন এবং তাঁর জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারতেন না।

গত মঙ্গলবার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক আরেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখারের সঙ্গে কক্সবাজারে যান। গত বুধবার সকালে তাঁরা কক্সবাজারে পৌঁছে একটি হোটেলে ছিলেন। সেদিনই স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত–সংলগ্ন হোটেল সি গালের সামনের ফুটপাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন গোলাম রব্বানী টিপু।

অভিযুক্ত গাজী কামরুল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিষিদ্ধঘোষিত চরমপন্থী দল বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির কামরুল বাহিনীর প্রধান।

টিপুর পরিবার সূত্র জানায়, কক্সবাজারে অনেক আগে থেকেই টিপুর মাছের ব্যবসা ছিল। এর আগে লবণের ব্যবসাও ছিল টিপুর। এ ব্যবসার কারণে টিপুর কক্সবাজারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তবে বর্তমানে তিনি জমিজমার ব্যবসা করতেন।

স্থানীয়রা জানান, টিপু সব সময় অস্ত্রসহ দলবল নিয়ে চলাফেরা করতেন। আধিপত্য বিস্তার ও জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধসহ বিভিন্ন কারণে তাঁর অনেক শত্রু ছিল। এ ছাড়া তিনি জমির ব্যবসার আড়ালে এলাকায় ইয়াবার কারবার করতেন। এ ছাড়া একসময় তিনি গাজী কামরুল দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সেখান থেকে বের হয়ে আলাদা বাহিনী গড়ে তোলেন।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর দেয়ানার হোসেন শাহ রোডের ২১২ নম্বর রোডের সাবেক কাউন্সিলরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বহু মানুষের জটলা। সেই জটলার মধ্যে টিপুর ছেলে তাসিন রব্বানি রাহাতকে (১৩) পাশে নিয়ে বসে আছেন টিপুর বৃদ্ধ বাবা গোলাম আকবর। ছেলের শোকে তিনি তখন কাতর। যেন কান্নাও ভুলে গেছেন। খুলনা সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাহাতও বাকরুদ্ধ। তারা যেন কথা হারিয়ে ফেলেছেন।

এ সময় আর্তনাদ করতে করতে স্ত্রী সাবিহা আক্তার বলেন, গুলিতে হত্যাকাণ্ডের শিকারের আগের দিন স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে সময় দুই সন্তানের খোঁজ নিয়েছিলেন।

সাবিহা আক্তার বলেন, ‘গত বুধবার মাগরিবের নামাজের পর আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘‘নামাজ পড়েছ, বাচ্চারা কোথায়?” তখন আমি বললাম, বাচ্চারা আছে, চা খেয়ে আমি বাচ্চাদের পড়তে বসাব।’ এই ছিল টিপুর সঙ্গে তাঁর শেষ কথা।

টিপুর স্ত্রী সাবিহা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর এলাকায় অনেক জনপ্রিয়তা ছিল। মানুষের সালিস-দরবার করতেন। এটা ভালো চোখে দেখতেন না একসময়ের শীর্ষ চরমপন্থী দল নেতা গাজী কামরুল। সে বিভিন্ন সময়ে আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিত। গাজী কামরুলই মেইন। সেই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। সে কারও ভালো চায় না।’

টিপুর বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশা বলেন, ‘খুলনার দৌলতপুর, পাবলাকেন্দ্রিক শত্রুরাই আমার ভাই টিপুকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করেছে। আর এর পেছনে সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখারের হাত রয়েছে। তারা বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে সফল হয়েছে।’

নিহত টিপুর বৃদ্ধ বাবা গোলাম আকবর কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ছেলে খুব ভালো ছিল। সে মানুষের উপকার করত। কারও কোনো ক্ষতি করেনি। আমার সেই ছেলেকে বাড়ি থেকে দূরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করব। আমার সামনে আমার ছেলের গুলিবিদ্ধ লাশ আনবে, তা সহ্য করতে পারব না।’

নগরীর দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, ‘গোলাম রব্বানী টিপুর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় হুজি শহীদ হত্যা মামলাসহ দুটি মামলা ছিল। বর্তমানে তাঁর নামে কোনো মামলা নেই। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর খালিশপুর থানায় তাঁর নামে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে তার লাশ, এখনো কক্সবাজারে রয়েছে (সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত)।’

উল্লেখ্য, গোলাম রব্বানী খুলনা সিটির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাঁকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত