ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে যুবককে জিম্মি, ২৭ লাখ টাকায়ও মিলছে না মুক্তি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ২০
রফিক মোল্লা। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের জাজিরায় রফিক মোল্লা (২৫) নামের এক যুবককে ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়া নিয়ে জিম্মি করে দালাল চক্র। সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু তাতেও মুক্তি মেলেনি রফিকের।

ভুক্তভোগী রফিক মোল্লা উপজেলার বি কে নগর ইউনিয়নের ছোবান্দি মাদবর কান্দি এলাকার আইয়ুব আলী মোল্লার ছেলে। মুক্তিপণের টাকা দিতে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করে পরিবারটি এখন নিঃস্ব। ছেলেকে ফিরে পেতে দিশেহারা আইয়ুব আলী নানাজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

ভু্ক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর কথা বলে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাচ্চু মাতুব্বর কান্দি এলাকার জসিম মাতুব্বর ৫ লাখ টাকা নেন। সে অনুযায়ী গত আগস্টে রফিককে লিবিয়া পাঠানো হয়। সেখানে তাঁকে রিসিভ করেন শফিক ও সালাম নামের দুজন। এ সময় নির্যাতন চালিয়ে দালাল চক্র জসিমের মাধ্যমে রফিকের পরিবারের কাছ থেকে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে দালাল জসিম মাতুব্বর ও তাঁর সঙ্গীরা রফিককে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেন। মাফিয়ারা রফিককে এক মাস ধরে জিম্মি করে নির্যাতন চালাচ্ছে। এখন তাঁর পরিবারের কাছে আরও ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে।

মুক্তিপণের জন্য মাফিয়া চক্র ভিডিও কলের মাধ্যমে নির্যাতনের দৃশ্য রফিকের পরিবারকে দেখায়। তাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে রফিকের পরিবার। নিরুপায় হয়ে রফিকের বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা ছেলেকে ফিরে পেতে ইতিমধ্যে জাজিরা থানাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আইয়ুব আলী বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘জসিম মাতুব্বর আমার ছেলেকে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রলোভন দেখায়। একসময় আমি রাজি হই। গত আগস্টে জসিমকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে লিবিয়া পাঠাই। কিছুদিন পর জসিম বলে, লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠাতে আরও ৮ লাখ টাকা দিতে হবে। আমি তাকে ৮ লাখ টাকা দেই। এরপর আমার ছেলেকে ইতালি না পাঠিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। মাফিয়ারা আমার ছেলেকে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে। নির্যাতনের ভিডিও আমাদের কাছে পাঠায়। এমন দৃশ্য সহ্য করার মতো না। মাফিয়াদের কাছ থেকে ছেলেকে মুক্ত করতে বসতভিটা বিক্রি করে, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জসিমের মাধ্যমে আরও ১৪ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন আবার মাফিয়ারা ৬ লাখ টাকা দাবি করছে। মোট ২৭ লাখ টাকা দিয়ে আমি এখন পথের ফকির হয়ে গেছি। এখন আবার ৬ লাখ টাকা আমি কোথায় পাব? আমি আমার ছেলেকে চাই। ছেলেকে না পেলে আমি মরে যাব।’

এ সময় এ প্রতিবেদককে দালাল জসিমকে বিভিন্ন সময় টাকা দেওয়ার প্রমাণ হিসেবে ছবি ও ভিডিও দেখান আইয়ুব আলী মোল্লা। ছবিতে দেখা যায়, আইয়ুব আলী মোল্লার কাছ থেকে টাকার বান্ডিল গ্রহণ করছেন জসিম মাতুব্বর।

কান্নারত রফিকের বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কান্নারত রফিকের বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা। ছবি: আজকের পত্রিকা

তবে জসিম মাতুব্বর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি রফিককে বিদেশ পাঠাইনি। তবে আমার কাছে রফিক মিয়ার বাবা আইয়ুব আলী মোল্লা টাকা জমা রেখেছিলেন। কারণ তিনি আমার দোকান থেকে মালামাল নিতেন। তারা এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি কোনো দালাল না এবং কোনো দালালের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কও নেই।’

জসিমকে টাকা দিচ্ছেন আইয়ুব আলী। ছবি: সংগৃহীত
জসিমকে টাকা দিচ্ছেন আইয়ুব আলী। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জসিম মৃধা বলেন, আইয়ুব আলী মোল্লা শিশুদের বিভিন্ন খেলনাপাতি গ্রামে হকারি করে বিক্রি করে সংসার চালান। ছেলেকে ইতালি পাঠাতে গিয়ে জমি, বসতভিটা সব বিক্রি করে তিনি এখন নিঃস্ব, ঋণে জর্জরিত। তার ওপর আবার ছেলের বিপদ। সব মিলিয়ে পরিবারটির করুণ অবস্থা। রফিককে দালালদের খপ্পর থেকে ফিরিয়ে আনতে আমরা সরকারের প্রতি দাবি জানাই এবং দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যাতে আর কারও সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করতে সাহস না পায়।

দালাল জসিম। ছবি: সংগৃহীত
দালাল জসিম। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গুজব

ববির ট্রেজারার সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে যোগদানে বাধা

বিগত সরকারে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ দিতেই যাবে শতকোটি টাকা

দুই দিনে ৭ ব্যাংককে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি রয়টার্সের প্রতিবেদক: সিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত