‘মেয়ের বাপ হওয়াই তো পাপ’

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ১৯: ৫৪
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩, ২০: ১২

দলবল নিয়ে বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে রাজধানীর দক্ষিণখানে এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের মামলায় ছাত্রলীগ কর্মী মারুফ হোসেন সিফাতকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হামলা, ভাঙচুর ও ধর্ষণের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে দক্ষিণখান থানায় ভুক্তভোগীর পিতা বাদী হয়ে অপহরণ করে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলার পর গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ কাঁঠালতলা এলাকার সিফাতের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া সিফাত ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আকনপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও মাজেদা খাতুন দম্পতির ছেলে। বর্তমানে দক্ষিণখানের কাঁঠালতলা এলাকার কামালের বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি।

এর আগে দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ বেড়িবাঁধ রোডের ৪৫১ নম্বর বাড়িতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দুই দফা হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেই সঙ্গে ভুক্তভোগী কিশোরীকে তুলে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সিফাতের রুম থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ভালোবেসে ২০২১ সালে সিফাতকে বিয়ে করে ওই কিশোরী। বিয়ের পর থেকে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন ও ঝগড়া-বিবাদ করতেন সিফাত। অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে আদালতের মাধ্যমে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সিফাতকে তালাক দেয় কিশোরী। এর পর থেকেই কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যদের চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে আসছিলেন সিফাত। সেই সঙ্গে কিশোরীকে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। একপর্যায়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে সিফাতসহ ৪ থেকে ৫ জন ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে যান। পরে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়।

ভুক্তভোগীর মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিফাত নেশা করে আমার মেয়েকে মারধর করত। কোনো কাজ করত না। যার কারণে আমার মেয়ে ওরে ডিভোর্স দিয়েছে। পরে দক্ষিণখান থানা ছাত্রলীগ নেতা সাদ আবার আমার মেয়েকে নিয়ে সিফাতের কাছে দিয়েছে। এরপরও মেয়ে চলে আসার কারণে সিফাত পোলাপান নিয়ে এসে আমাকে, আমার বড় মেয়েকে মারধর করছে, হকিস্টিক দিয়ে দুই ঘরের সব কাচ ও দরজা-জানালার কাচ সব ভেঙে ফেলেছে। পরে আমার ছোট মেয়েকে টেনেহিঁচড়ে ওরা নিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে আলমারিতে থাকা ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। সিফাত ছাত্রলীগের সাদের লোক। তাঁর সঙ্গেই রাজনীতি করে। তাঁর জোরেই এসব করছে।’

কিশোরীর মা আরও বলেন, ‘গত সোমবারও সিফাত ও শামিম গিয়ে আমার বড় মেয়েকে পিটিয়ে আহত করেছে। খবর পেয়ে পুলিশও গিয়েছিল। তখন পুলিশ বলছে মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে আসেন। রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা আবার থানায় যাব।’

ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়ের বাপ হওয়াই তো পাপ। না হলে আমার মেয়ে ডিভোর্স দিয়েছে। ডিভোর্স দেওয়ার পর এলাকার বখাটে উচ্ছৃঙ্খল পোলাপান নিয়ে আমার বাসা, আলমারি, ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে ওরা। আমি দুই লাখ টাকা সমিতি থেকে তুলেছিলাম। সেই টাকার কিছু টাকা ছিল, যা ওরা নিয়ে গেছে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে দক্ষিণখান থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশফাকুল ইসলাম সাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিফাত আমার পরিচিত। থানায় যাওয়ার পর ওই কিশোরীর মায়ের সঙ্গে ক্যাজুয়াল কথাবার্তা হয়েছে। তাঁদের হুমকি দেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা।’

ডিভোর্সের পরও ভুক্তভোগীকে সিফাতের কাছে দিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এমন করছে। তাও সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে। এমন কোনো ঘটনাই নেই।’

দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজিয়া খাতুন বলেন, আসামির ফায়দাবাদ মোড়ঘাটের পাশের ভাড়া বাসা থেকে ভিকটিমকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে আসামি সিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

রেজিয়া খাতুন বলেন, মামলায় অপহরণ করে ধর্ষণ ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ভিকটিমকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত