সৌগত বসু, ঢাকা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে কয়েক দফা মারধরের একপর্যায়ে তিনি পানি খেতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁকে মারধরকারীরা পানি খেতে দেয়নি। নিরাপত্তা কর্মকর্তা পানির বোতল দিতে গেলে তাঁর হাত থেকে বোতল ফেলে দেওয়া হয়।
গত বুধবার বিকেলে শামীম মোল্লাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেটে (প্রান্তিক গেট) পেটানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তার অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও কয়েক দফা মারধর করে শামীমকে রাত ৮টার কিছু পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাত ৯টায় শামীম সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে মারা যান। হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, হাসপাতালে তাঁকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল।
শামীম মোল্লাকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ৮ জন শিক্ষার্থী ও অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে; আটজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কেউ এখনও গ্রেপ্তার হননি।
আজকের পত্রিকার হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রান্তিক গেটে লাঠি হাতে শামীমকে মেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব। এসময় লাথি দিতে দেখা যায় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিককে। আহসান লাবিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক। গতকাল তাঁকে এ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যখন সবাইকে আটকাতে যাব, তখন আমাকে আহসান লাবিব আটকে রাখে। শামীম যখন পানি খেতে চায়, তখন আমি তাকে পানি দিতে গেলে আমার হাত থেকে পানির বোতল ফেলে দেওয়া হয়।’
এর আগে ফেসবুকে আহসান লাবিব গতকাল একটি পোস্ট করেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। তবে সেই পোস্ট পরে তিনি সরিয়ে নেন। সেখানেও সুদীপ্ত শাহীন মন্তব্যের ঘরে লেখেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, শামীমকে তার শেষ চাওয়া পানিটুকু দিতে দেয়নি এই ছেলে। সে যে ধমক আমাকে দিছে গতকাল, তা আমার চাকরি জীবনে কেউ দেয়নি। বেশি না, আমি তার ২৩ ব্যাচ সিনিয়র!’
সুদীপ্ত শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওখানে যখন আমি যাই, তখন ওকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওদিকে মার হচ্ছে আর বীভৎস চিৎকার। এদিকে সবাই প্রক্টর রুমে বসে চিৎকার শুনতেছে; তারা বের হচ্ছে না।’
সুদীপ্ত বলেন, তিনি প্রক্টরকে বলেছিলেন, ছেলেটা মরে যাবে। সে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখে। তখন প্রক্টর তাঁকে বলেন, ‘ছেলেপেলে তাকে এখানে থেকে নিয়ে গেছে’। তখন সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘শামীমকে প্রক্টর রুমে রাখতে হবে। নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুমেও না।’
নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরও জানান, শামীমকে নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষের সামনে বেশ প্রশস্ত একটা খালি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর সামনেই কলাপসিবল গেট।
তিনি বলেন, শামীম প্রক্টরের কক্ষে থাকলে মারধর হয়তো কিছুটা কম হত। কিন্তু প্রক্টরের কক্ষের বাইরে নেওয়ায় ব্যাপক পিটুনির সুযোগ মেলে। তাঁকে বড় ডাল, গজার গাছের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।
সুদীপ্ত শাহীন বলেন, শামীমকে সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রক্টর অফিস) সোহেলের কক্ষে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে ছাত্ররা তুলে নিয়ে এসেছে। তাঁকে প্রথম দফা মারধর করা হয় প্রান্তিকে। এরপর দ্বিতীয় দফা মারধর করা হয় ওই কক্ষ থেকে বের করে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষের সামনে । তখন আহসান লাবিব তাঁকে বের করে নিয়ে চলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সময় সুদীপ্ত শাহীন যখন প্রক্টরের কক্ষ থেকে উঠে বের হতে চান তখন লাবিব তাঁকে বলেন, ‘এই মিয়া আপনি কই যান, বেশি বাড়িয়েন না। আমরা আছি বলেই চাকরি করতে পারছেন। না হলে আপনিও মামলার আসামি হতেন।’
এরপর লাবিব সেখান থেকে চলে গেলে সুদীপ্ত শাহীন প্রক্টরকে কিছু করার তাগাদা দেন। তখন প্রক্টর বলেন, ‘যেহেতু মব (অনেক মানুষ) বা ছেলেপেলে যা চায় এখন আর কী করবা!’ এসময় শামীমকে তৃতীয় দফা মারধর করা হয়।
সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘এরপর শামীমকে ওই জায়গায় রেখে তালা মেরে রাখা হয়। এসময় লাবিব ভবনের নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ঘুষি মারতে থাকে। তখন প্রক্টর স্যার সামনেই ছিল। গার্ডের পকেট থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে আরেক দফা পিটায়।’
কেন এতবার শামীমকে মারা হলো এমন প্রশ্নে শাহীন বলেন, ‘যে শুনেছে, সে–ই শামীম মোল্লাকে মারার জন্য এসেছে।’
নিরাপত্তা শাখার কার্যালয়ের ভিডিও ফুটেজ থেকে আরও পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন— সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া, রাজু আহমেদ, রাজন হাসান, হামিদুল্লাহ সালমান এবং এম এন সোহাগ। সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া ৩৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া রাজু আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও রাজন হাসান একই বিভাগের ৪৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী, হামিদুল্লাহ সালমান ইংরেজি ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও এমএন সোহাগ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
বারবার কেন লাবিবের কথা বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নে শাহীন বলেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগরে চাকরিতে এসে ছাত্রদলকে (ক্ষমতায়) পাননি। তাই তাঁদের কাউকেই ওইভাবে চেনেন না। তবে লাবিবের সঙ্গে যেহেতু একবার কথাকাটাকাটি হয়েছে, সেহেতু লাবিবকে তাঁর মনে আছে।
শাহীন বলেন, ‘লাবিব প্রান্তিক গেট থেকে সাঈদ হোসেন ভূঁইয়াকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আসে।’
পানি খেতে চাওয়ার বিষয়ে শাহীন বলেন, ‘যখন শেষবার মারধরের সময় শামীম পানি খেতে চেয়েছিল তখন আমি বলেছিলাম তাকে একবারে অনেক পানি দিলে সমস্যা হবে। একটা হাফ লিটার ঠান্ডা পানির বোতল থেকে অল্প অল্প করে দিতে হবে। তখন শামীমকে পানির বোতল দিতে গেলে লাবিব সেটি আমার হাত থেকে নিয়ে ফেলে দেয়।’
প্রান্তিক গেটে মারধরের পর যখন শামীম মোল্লাকে নিরাপত্তা অফিসে আনা হয় তখন সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া সেখানে ছিলেন। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই সময় সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া উপাচার্যের সঙ্গেও দেখা করেন। ‘শামীমকে মেরে ক্লান্ত’, এ কথা উপাচার্যকে জানান সাঈদ হোসেন। উপাচার্যের কক্ষে থাকা গ্লাস থেকে পানিও খান। সে সময় সেখানে সাংবাদিকসহ অন্যরাও ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা সাঈদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই সময় প্রক্টর অফিসে উপাচার্য এসেছেন, এটি শুনে সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। ‘শামীমকে মেরে ক্লান্ত’ এমন কোনো কথা তিনি উপাচার্যকে বলেননি। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেই তিনি বেরিয়ে যান। আর শামীমকে মারধরের সময় ছাত্রদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন।
শামীমকে থানায় নেওয়া হয়নি
আজকের পত্রিকার কাছে শামীম মোল্লার ডেথ সার্টিফিকেটের কপি এসেছে, সেখানে দেখা গেছে, শামীম মোল্লা রাত ৯টায় মারা যান। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়নি। সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘শামীম মোল্লা শুধু একবার উঠে দাঁড়াতে পেরেছিল। তখন তাকে ধরে গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িতে উঠেই সে সিটের ওপর পড়ে যায়। গাড়িতে ওঠানোর সময়েও তাকে মারধর করা হচ্ছিল। রাত সাড়ে ৮টায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশের গাড়িতে ওঠানো হয়। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যেতে সময় লাগবে আর কত! ৯টার পরেই তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। এখানে থানা বা অন্য কোথাও তাকে নেওয়ায় সুযোগ ছিল না।’
আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, ওই দিন দুই পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে শামীম মোল্লা পুলিশ ভ্যানে ওঠেন। তখনও পেছন থেকে তাঁকে ধাক্কা ও কিল ঘুষি মারা হচ্ছিল; গাড়িতে উঠেই তিনি পড়ে যান। তখন পুলিশ ধারণা করে, গাড়িতেই শামীম হয়তো মারা যাবে। পুলিশের গাড়ি সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যায়। শামীম মোল্লা গাড়িতে থাকা পুলিশের কাঁধে এলিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর পালস পাওয়া যায়নি। এরপর ইসিজি করা হয়।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রান্তিক গেট থেকে শামীম মোল্লাকে নিয়ে আসার পরে আমরা তাঁকে নিরাপত্তা অফিসে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে আটকে রাখি ৷ এসময় কলাপসিবল গেট ভেঙে কিছু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে মারধর শুরু করে। এ ঘটনা দেখে আমি এবং আমার টিম দৌড়ে যাই এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াই। এতে কিছু শিক্ষার্থী নিবৃত্ত হয়।’
তখন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কী করছিলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, ‘তারা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এক পর্যায়ে তারাও ব্যর্থ হয়।’
প্রক্টরের উপস্থিতিতে এরকম পিটুনি ঠেকানো গেল না কেন, শামীমকে তৃতীয় দফা মারা হয় এবং সেক্ষেত্রে কোনো অবহেলা আছে কিনা— এমন প্রসঙ্গ তুললে প্রক্টর বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষার্থীদের বলেছি, আমার সামনে তোমরা এটা করতে পার না। এমনকি আমি তাদের সামনে ঢাল হয়েও দাঁড়িয়েছি। এতে কিছু শিক্ষার্থী আমার কথা শুনলেও অনেকে না শুনে মারধর করেছে। আমাদের কয়েকজনের পক্ষে এতজন শিক্ষার্থীকে আটকানো সম্ভব ছিল না।’
[এই প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জাবি সংবাদদাতা]
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে কয়েক দফা মারধরের একপর্যায়ে তিনি পানি খেতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁকে মারধরকারীরা পানি খেতে দেয়নি। নিরাপত্তা কর্মকর্তা পানির বোতল দিতে গেলে তাঁর হাত থেকে বোতল ফেলে দেওয়া হয়।
গত বুধবার বিকেলে শামীম মোল্লাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেটে (প্রান্তিক গেট) পেটানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তার অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও কয়েক দফা মারধর করে শামীমকে রাত ৮টার কিছু পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাত ৯টায় শামীম সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে মারা যান। হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, হাসপাতালে তাঁকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল।
শামীম মোল্লাকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ৮ জন শিক্ষার্থী ও অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে; আটজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কেউ এখনও গ্রেপ্তার হননি।
আজকের পত্রিকার হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রান্তিক গেটে লাঠি হাতে শামীমকে মেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব। এসময় লাথি দিতে দেখা যায় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিককে। আহসান লাবিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক। গতকাল তাঁকে এ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যখন সবাইকে আটকাতে যাব, তখন আমাকে আহসান লাবিব আটকে রাখে। শামীম যখন পানি খেতে চায়, তখন আমি তাকে পানি দিতে গেলে আমার হাত থেকে পানির বোতল ফেলে দেওয়া হয়।’
এর আগে ফেসবুকে আহসান লাবিব গতকাল একটি পোস্ট করেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। তবে সেই পোস্ট পরে তিনি সরিয়ে নেন। সেখানেও সুদীপ্ত শাহীন মন্তব্যের ঘরে লেখেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, শামীমকে তার শেষ চাওয়া পানিটুকু দিতে দেয়নি এই ছেলে। সে যে ধমক আমাকে দিছে গতকাল, তা আমার চাকরি জীবনে কেউ দেয়নি। বেশি না, আমি তার ২৩ ব্যাচ সিনিয়র!’
সুদীপ্ত শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওখানে যখন আমি যাই, তখন ওকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওদিকে মার হচ্ছে আর বীভৎস চিৎকার। এদিকে সবাই প্রক্টর রুমে বসে চিৎকার শুনতেছে; তারা বের হচ্ছে না।’
সুদীপ্ত বলেন, তিনি প্রক্টরকে বলেছিলেন, ছেলেটা মরে যাবে। সে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখে। তখন প্রক্টর তাঁকে বলেন, ‘ছেলেপেলে তাকে এখানে থেকে নিয়ে গেছে’। তখন সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘শামীমকে প্রক্টর রুমে রাখতে হবে। নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুমেও না।’
নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরও জানান, শামীমকে নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষের সামনে বেশ প্রশস্ত একটা খালি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর সামনেই কলাপসিবল গেট।
তিনি বলেন, শামীম প্রক্টরের কক্ষে থাকলে মারধর হয়তো কিছুটা কম হত। কিন্তু প্রক্টরের কক্ষের বাইরে নেওয়ায় ব্যাপক পিটুনির সুযোগ মেলে। তাঁকে বড় ডাল, গজার গাছের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।
সুদীপ্ত শাহীন বলেন, শামীমকে সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রক্টর অফিস) সোহেলের কক্ষে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে ছাত্ররা তুলে নিয়ে এসেছে। তাঁকে প্রথম দফা মারধর করা হয় প্রান্তিকে। এরপর দ্বিতীয় দফা মারধর করা হয় ওই কক্ষ থেকে বের করে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষের সামনে । তখন আহসান লাবিব তাঁকে বের করে নিয়ে চলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সময় সুদীপ্ত শাহীন যখন প্রক্টরের কক্ষ থেকে উঠে বের হতে চান তখন লাবিব তাঁকে বলেন, ‘এই মিয়া আপনি কই যান, বেশি বাড়িয়েন না। আমরা আছি বলেই চাকরি করতে পারছেন। না হলে আপনিও মামলার আসামি হতেন।’
এরপর লাবিব সেখান থেকে চলে গেলে সুদীপ্ত শাহীন প্রক্টরকে কিছু করার তাগাদা দেন। তখন প্রক্টর বলেন, ‘যেহেতু মব (অনেক মানুষ) বা ছেলেপেলে যা চায় এখন আর কী করবা!’ এসময় শামীমকে তৃতীয় দফা মারধর করা হয়।
সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘এরপর শামীমকে ওই জায়গায় রেখে তালা মেরে রাখা হয়। এসময় লাবিব ভবনের নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ঘুষি মারতে থাকে। তখন প্রক্টর স্যার সামনেই ছিল। গার্ডের পকেট থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে আরেক দফা পিটায়।’
কেন এতবার শামীমকে মারা হলো এমন প্রশ্নে শাহীন বলেন, ‘যে শুনেছে, সে–ই শামীম মোল্লাকে মারার জন্য এসেছে।’
নিরাপত্তা শাখার কার্যালয়ের ভিডিও ফুটেজ থেকে আরও পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন— সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া, রাজু আহমেদ, রাজন হাসান, হামিদুল্লাহ সালমান এবং এম এন সোহাগ। সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া ৩৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া রাজু আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও রাজন হাসান একই বিভাগের ৪৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী, হামিদুল্লাহ সালমান ইংরেজি ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও এমএন সোহাগ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
বারবার কেন লাবিবের কথা বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নে শাহীন বলেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগরে চাকরিতে এসে ছাত্রদলকে (ক্ষমতায়) পাননি। তাই তাঁদের কাউকেই ওইভাবে চেনেন না। তবে লাবিবের সঙ্গে যেহেতু একবার কথাকাটাকাটি হয়েছে, সেহেতু লাবিবকে তাঁর মনে আছে।
শাহীন বলেন, ‘লাবিব প্রান্তিক গেট থেকে সাঈদ হোসেন ভূঁইয়াকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আসে।’
পানি খেতে চাওয়ার বিষয়ে শাহীন বলেন, ‘যখন শেষবার মারধরের সময় শামীম পানি খেতে চেয়েছিল তখন আমি বলেছিলাম তাকে একবারে অনেক পানি দিলে সমস্যা হবে। একটা হাফ লিটার ঠান্ডা পানির বোতল থেকে অল্প অল্প করে দিতে হবে। তখন শামীমকে পানির বোতল দিতে গেলে লাবিব সেটি আমার হাত থেকে নিয়ে ফেলে দেয়।’
প্রান্তিক গেটে মারধরের পর যখন শামীম মোল্লাকে নিরাপত্তা অফিসে আনা হয় তখন সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া সেখানে ছিলেন। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই সময় সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া উপাচার্যের সঙ্গেও দেখা করেন। ‘শামীমকে মেরে ক্লান্ত’, এ কথা উপাচার্যকে জানান সাঈদ হোসেন। উপাচার্যের কক্ষে থাকা গ্লাস থেকে পানিও খান। সে সময় সেখানে সাংবাদিকসহ অন্যরাও ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা সাঈদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই সময় প্রক্টর অফিসে উপাচার্য এসেছেন, এটি শুনে সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। ‘শামীমকে মেরে ক্লান্ত’ এমন কোনো কথা তিনি উপাচার্যকে বলেননি। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেই তিনি বেরিয়ে যান। আর শামীমকে মারধরের সময় ছাত্রদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন।
শামীমকে থানায় নেওয়া হয়নি
আজকের পত্রিকার কাছে শামীম মোল্লার ডেথ সার্টিফিকেটের কপি এসেছে, সেখানে দেখা গেছে, শামীম মোল্লা রাত ৯টায় মারা যান। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়নি। সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘শামীম মোল্লা শুধু একবার উঠে দাঁড়াতে পেরেছিল। তখন তাকে ধরে গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িতে উঠেই সে সিটের ওপর পড়ে যায়। গাড়িতে ওঠানোর সময়েও তাকে মারধর করা হচ্ছিল। রাত সাড়ে ৮টায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশের গাড়িতে ওঠানো হয়। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যেতে সময় লাগবে আর কত! ৯টার পরেই তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। এখানে থানা বা অন্য কোথাও তাকে নেওয়ায় সুযোগ ছিল না।’
আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, ওই দিন দুই পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে শামীম মোল্লা পুলিশ ভ্যানে ওঠেন। তখনও পেছন থেকে তাঁকে ধাক্কা ও কিল ঘুষি মারা হচ্ছিল; গাড়িতে উঠেই তিনি পড়ে যান। তখন পুলিশ ধারণা করে, গাড়িতেই শামীম হয়তো মারা যাবে। পুলিশের গাড়ি সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যায়। শামীম মোল্লা গাড়িতে থাকা পুলিশের কাঁধে এলিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর পালস পাওয়া যায়নি। এরপর ইসিজি করা হয়।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রান্তিক গেট থেকে শামীম মোল্লাকে নিয়ে আসার পরে আমরা তাঁকে নিরাপত্তা অফিসে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে আটকে রাখি ৷ এসময় কলাপসিবল গেট ভেঙে কিছু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে মারধর শুরু করে। এ ঘটনা দেখে আমি এবং আমার টিম দৌড়ে যাই এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াই। এতে কিছু শিক্ষার্থী নিবৃত্ত হয়।’
তখন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কী করছিলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, ‘তারা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এক পর্যায়ে তারাও ব্যর্থ হয়।’
প্রক্টরের উপস্থিতিতে এরকম পিটুনি ঠেকানো গেল না কেন, শামীমকে তৃতীয় দফা মারা হয় এবং সেক্ষেত্রে কোনো অবহেলা আছে কিনা— এমন প্রসঙ্গ তুললে প্রক্টর বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষার্থীদের বলেছি, আমার সামনে তোমরা এটা করতে পার না। এমনকি আমি তাদের সামনে ঢাল হয়েও দাঁড়িয়েছি। এতে কিছু শিক্ষার্থী আমার কথা শুনলেও অনেকে না শুনে মারধর করেছে। আমাদের কয়েকজনের পক্ষে এতজন শিক্ষার্থীকে আটকানো সম্ভব ছিল না।’
[এই প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জাবি সংবাদদাতা]
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানার ভেতরে আপসের শর্তে বাদী ও আসামির টাকা লেনদেনের ভিডিও নিয়ে মহানগর পুলিশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্বে অবহেলার কারণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে শোকজ ও বদলি এবং ডিউটি অফিসারকে শোকজ করা হয়েছ
১২ মিনিট আগেরাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোকে সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরে স্থানান্তর করা হয়েছে প্রায় সাত বছর আগে। কিন্তু ট্যানারির দূষণ এখনো রয়ে গেছে হাজারীবাগে। ওই এলাকায় চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের উৎকট গন্ধ আর খালে প্রবাহিত ট্যানারি বর্জ্য জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।
১৩ মিনিট আগেপিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের শিয়ালকাঠী গ্রামে লোকালয়ে গড়ে ওঠা একটি খামারের কারণে হুমকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। গরু, ছাগল ও মুরগির সমন্বয়ে খামারটি করেছেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহীদুল হক খান পান্না।
১৩ মিনিট আগেবাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অভিবাসন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে যাত্রা করা নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট এবং দূতাবাস কার্যক্রম না থাকায় নাগরিকদের অন্য দেশ অভিমুখী হতে হচ্ছে।
১ ঘণ্টা আগে