অধিক লাভের আশায় আগাম জাতের আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা। জমি প্রস্তুত, হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ ও সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কাজে দিনভর ব্যস্ত রাখছেন নিজেদের। ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে স্বল্পমেয়াদি আগাম আউশ ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে সেই জমিতে নানা জাতের শাক-সবজি উৎপাদন করে বিক্রি শেষে এবার আলু রোপণে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, এবার উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ১৮০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপর দিকে গত বছর এ উপজেলায় আগাম জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে আগাম আলু চাষ করা হবে।
বিশেষ করে উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়ন আগাম আলু চাষের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত। তাই আলু রোপণকে ঘিরে মাঠজুড়ে কৃষকের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দ্বিগুণ লাভের আশায় মাঠে কেউ বা জমি তৈরি, আগাছা পরিষ্কার, বীজ সংগ্রহ ও রোপণ করা নিয়ে নিজেদের মতো ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের আলুচাষি আব্দুর রউফ ভূঁইয়া বলেন, ‘গোমতী নদীর চরসহ এ অঞ্চলের জমিগুলো (মাটি) একদম উঁচু এবং বালুমাটি মিশ্রিত। ভারী বৃষ্টিপাত হলেও তেমন বড় ধরনের ক্ষতির ভয় থাকে না। কয়েক দিন আগে অতিবৃষ্টি হলেও মাটি শুষ্ক রয়েছে। তাই আগেভাগে দ্বিগুণ লাভের আশায় আগাম আলু রোপণ করছি। এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় গতবারের চেয়ে ফলন ভালোর আশায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছি।’
একই গ্রামের আলুচাষি নসু ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রত্যেক বছরের মতো এবারও আট বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণের প্রস্তুতি নিয়েছি। এর মধ্যে উফশী জাতের চার বিঘা জমিতে বাকি চার বিঘা দু-এক দিনের মধ্যে রোপণ শেষ করব। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৫৮ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আলু ঘরে তুলতে পারব। বাজারদর ভালো পেলে সার, বীজ, পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ খরচ বাদে আট বিঘায় লাভ হবে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত।’
একই গ্রামের আব্দুর রশিদ ছয় বিঘা, আলমগীর হেসেন পাঁচ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করছেন। তাঁরা জানান, এ এলাকার মাটি উঁচু এবং বালুমিশ্রিত হওয়ায় বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আগাম আলু চাষে তেমন কোনো ভয় থাকে না। ফলন কম হলেও নিজ জেলাসহ অন্যান্য জেলায় চড়া দামে আলু বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায়।
আলুচাষি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘যার আলু যত আগে উঠবে সেই কৃষক তত ভালো দাম পাবেন। তাই সবাই টাকাপয়সা ব্যয় করে দুই টাকা লাভের আশায় আগাম উফশী জাতের আলুসহ বিভিন্ন আলু রোপণ করছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উঁচু জমির আগাম ধান কেটে আলু চাষে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।’
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া আগাম আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতিবছর এ এলাকার কৃষক আগাম আলু চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করে থাকেন। গত বছরের চেয়ে এবার ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য আমাদের কৃষি অফিস থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আগাম আলু চাষে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও বাজারদর ভালো পেলে কৃষকেরা এবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে ও লাভবান হবে।’