চবি প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৮টি অনুষদের ডিন নির্বাচন হবে আগামীকাল বুধবার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আইন অনুষদে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের প্রার্থী অধ্যাপক জাকির হোসেন।
আজ মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
চিঠিতে তিনি লিখেন, ‘আগামী ৩০ মার্চ আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত আছে। উক্ত নির্বাচনে আমি মো. জাকির হোসেন ও অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক প্রার্থী রয়েছি। গত ২৩ মার্চ মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুককে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও তিনি উপাচার্য হিসেবে যোগদান না করে আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন। কাউকে উপাচার্য নিয়োগের আগে তাঁর কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। চাহিদা অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার মানে তিনি নিয়োগে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন। তাই নিয়োগের রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন জারির পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বরাবরে লিখিতভাবে না জানানোর আগ পর্যন্ত তিনি এই নিয়োগ গ্রহণ করেছেন বলে পরিগণিত হয়। যাইহোক, ২৭ মার্চের সিভয়েজ. কম পত্রিকা ও ২৮ মার্চের আজকের পত্রিকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। আপনি পত্রিকা দুটিকে জানিয়েছেন, অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক আপনাকে জানিয়েছেন যে, তিনি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করবেন না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, উপাচার্য হিসেবে যোগদানের চেয়ে ডিন পদ অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কাছে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।’
চিঠিতে আরও লিখেন, ‘আমি ও অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত শিক্ষকদের ফোরাম হলুদ দলের সদস্য। হলুদ দল আমাকে ডিন নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন। এতেও প্রমাণিত হয় ডিন পদের প্রতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন অনুষদের সহকর্মীদের মধ্যে ভয়ংকর বিভেদ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার এমন এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে সহকর্মীদের মধ্যে ওয়ার্কিং রিলেশনও হুমকির মুখে পড়েছে। অনুষদের সহকর্মীদের সম্পর্কের বুনন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েকজন সহকর্মী তাঁদের বিব্রতকর অবস্থা ও মনঃকষ্টের কথা আমাকে জানিয়েছেন। সহকর্মীদের মাঝে সালাম-শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়েও বিভেদ-বিদ্বেষের প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।’
অধ্যাপক জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তিও সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ায় সহকর্মী ভোটারদের মাঝে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আইন বিভাগের একজন শিক্ষক সহকর্মীদের কাউকে কাউকে ডেকে দফায় দফায় নির্বাচন বিষয়ে অনুচিত প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন যার ফলে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ বাংলাদেশের মধ্যে একটি অনন্য আইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সহকর্মীদের মাঝে বিদ্বেষে বিষাক্ত পরিবেশের কারণে অনুষদের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি নির্বাচনের কারণে শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেওয়া গর্হিত অপরাধ। যে নির্বাচন সহকর্মীদের একে অপরের শত্রুতে পরিণত করে, আইন শিক্ষার অনন্য উচ্চতার প্রতিষ্ঠানকে ‘কাশিম বাজার কুঠিতে রূপান্তরিত করে, কোনো বিবেকবান মানুষ সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের অংশীজন থাকতে পারেন না। কাজেই এমন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমি সমীচীন মনে করি না। আইন অনুষদের বৃহত্তর স্বার্থে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সকল বিভেদ-বিদ্বেষ-শত্রুতা ও বিব্রতকর অবস্থা অবসানের লক্ষ্যে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে ডিন নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সহকর্মীদের আমাকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে অধ্যাপক জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁদের হস্তক্ষেপে সহকর্মী ভোটারদের মাঝে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সহকর্মীরা আমাকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন। তাই আমি নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিন নির্বাচনে ৮টি অনুষদে ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামীকাল (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের একদিন আগে একজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চিঠি দিয়েছেন। তবে নিয়মানুযায়ী সেই চিঠি গ্রহণের সুযোগ নেই।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে ৮টি অনুষদে হলুদ দল থেকে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। তবে ৬টি অনুষদে হলুদ দলের বিপরীতে সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থীও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি-জামাতপন্থী শিক্ষক সমর্থিত সাদা দল ও সাদা দল থেকে বেরিয়ে আসা বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ নির্বাচনে অংশ নিলেও তাঁরা সব অনুষদে প্রার্থী দিতে পারেনি। এর মধ্যে সাদা দল তিনটি ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম চারটি অনুষদে প্রার্থী দিয়েছে।
হলুদ দলের প্রার্থীরা হলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য, পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তী, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে অ্যাকাউন্টিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, সমাজবিজ্ঞান অনুষদে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ, আইন অনুষদে অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে বর্তমান ডিন ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ মোস্তফা, জীব বিজ্ঞান প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ড. মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদে ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমান ডিন ড. মো. রাশেদ-উন-নবী।
হলুদ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ইতিহাস বিভাগের ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, বিজ্ঞান অনুষদে পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমান ডিন ড. মো. নাসিম হাসান ও অন্য বিদ্রোহী প্রার্থী ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান নাসির উদ্দীন, আইন অনুষদে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. কাজী তানভীর আহাম্মদ, জীব বিজ্ঞান অনুষদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর।
সাদা দলের প্রার্থীরা হলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ড. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন, বিজ্ঞান অনুষদে রসায়ন বিভাগের ড. মো. আবদুল মান্নান, জীববিজ্ঞান অনুষদে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের প্রার্থীরা হলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ড. আবু নছর মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব চৌধুরী, জীব বিজ্ঞান অনুষদে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদে ইনস্টিটিউট পরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।
হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিন নির্বাচনে আমরা হলুদ দল থেকে আটটি অনুষদেই প্রার্থী দিয়েছি। প্রতিটি অনুষদেই জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নসরুল কাদির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিন একাডেমিক পদ। তাই আমরা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছি।’
এদিকে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার কারণে ভোটার কম থাকায় সব অনুষদে সাদা দল প্রার্থী দিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন।
ড. শামীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভোটার অসমতার কারণে সব অনুষদে আমরা প্রার্থী দিইনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তো দীর্ঘদিন ধরে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়ে আসছে। সর্বশেষ তো জাতীয় পত্র-পত্রিকায় সবকিছুতে অসলো। এই নিয়োগগুলোর কারণে আমরা আগের অবস্থানে নেই।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৮টি অনুষদের ডিন নির্বাচন হবে আগামীকাল বুধবার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আইন অনুষদে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের প্রার্থী অধ্যাপক জাকির হোসেন।
আজ মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
চিঠিতে তিনি লিখেন, ‘আগামী ৩০ মার্চ আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত আছে। উক্ত নির্বাচনে আমি মো. জাকির হোসেন ও অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক প্রার্থী রয়েছি। গত ২৩ মার্চ মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুককে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও তিনি উপাচার্য হিসেবে যোগদান না করে আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনে তাঁর প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন। কাউকে উপাচার্য নিয়োগের আগে তাঁর কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। চাহিদা অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার মানে তিনি নিয়োগে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন। তাই নিয়োগের রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন জারির পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বরাবরে লিখিতভাবে না জানানোর আগ পর্যন্ত তিনি এই নিয়োগ গ্রহণ করেছেন বলে পরিগণিত হয়। যাইহোক, ২৭ মার্চের সিভয়েজ. কম পত্রিকা ও ২৮ মার্চের আজকের পত্রিকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। আপনি পত্রিকা দুটিকে জানিয়েছেন, অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক আপনাকে জানিয়েছেন যে, তিনি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করবেন না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, উপাচার্য হিসেবে যোগদানের চেয়ে ডিন পদ অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কাছে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।’
চিঠিতে আরও লিখেন, ‘আমি ও অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত শিক্ষকদের ফোরাম হলুদ দলের সদস্য। হলুদ দল আমাকে ডিন নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন। এতেও প্রমাণিত হয় ডিন পদের প্রতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুকের গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন অনুষদের সহকর্মীদের মধ্যে ভয়ংকর বিভেদ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার এমন এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে সহকর্মীদের মধ্যে ওয়ার্কিং রিলেশনও হুমকির মুখে পড়েছে। অনুষদের সহকর্মীদের সম্পর্কের বুনন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েকজন সহকর্মী তাঁদের বিব্রতকর অবস্থা ও মনঃকষ্টের কথা আমাকে জানিয়েছেন। সহকর্মীদের মাঝে সালাম-শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়েও বিভেদ-বিদ্বেষের প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।’
অধ্যাপক জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তিও সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ায় সহকর্মী ভোটারদের মাঝে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আইন বিভাগের একজন শিক্ষক সহকর্মীদের কাউকে কাউকে ডেকে দফায় দফায় নির্বাচন বিষয়ে অনুচিত প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন যার ফলে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ বাংলাদেশের মধ্যে একটি অনন্য আইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সহকর্মীদের মাঝে বিদ্বেষে বিষাক্ত পরিবেশের কারণে অনুষদের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি নির্বাচনের কারণে শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেওয়া গর্হিত অপরাধ। যে নির্বাচন সহকর্মীদের একে অপরের শত্রুতে পরিণত করে, আইন শিক্ষার অনন্য উচ্চতার প্রতিষ্ঠানকে ‘কাশিম বাজার কুঠিতে রূপান্তরিত করে, কোনো বিবেকবান মানুষ সেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের অংশীজন থাকতে পারেন না। কাজেই এমন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমি সমীচীন মনে করি না। আইন অনুষদের বৃহত্তর স্বার্থে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সকল বিভেদ-বিদ্বেষ-শত্রুতা ও বিব্রতকর অবস্থা অবসানের লক্ষ্যে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে ডিন নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সহকর্মীদের আমাকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে অধ্যাপক জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁদের হস্তক্ষেপে সহকর্মী ভোটারদের মাঝে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সহকর্মীরা আমাকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন। তাই আমি নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিন নির্বাচনে ৮টি অনুষদে ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামীকাল (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের একদিন আগে একজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চিঠি দিয়েছেন। তবে নিয়মানুযায়ী সেই চিঠি গ্রহণের সুযোগ নেই।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে ৮টি অনুষদে হলুদ দল থেকে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। তবে ৬টি অনুষদে হলুদ দলের বিপরীতে সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থীও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি-জামাতপন্থী শিক্ষক সমর্থিত সাদা দল ও সাদা দল থেকে বেরিয়ে আসা বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ নির্বাচনে অংশ নিলেও তাঁরা সব অনুষদে প্রার্থী দিতে পারেনি। এর মধ্যে সাদা দল তিনটি ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম চারটি অনুষদে প্রার্থী দিয়েছে।
হলুদ দলের প্রার্থীরা হলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য, পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তী, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে অ্যাকাউন্টিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, সমাজবিজ্ঞান অনুষদে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ, আইন অনুষদে অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে বর্তমান ডিন ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ মোস্তফা, জীব বিজ্ঞান প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ড. মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদে ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমান ডিন ড. মো. রাশেদ-উন-নবী।
হলুদ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ইতিহাস বিভাগের ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, বিজ্ঞান অনুষদে পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমান ডিন ড. মো. নাসিম হাসান ও অন্য বিদ্রোহী প্রার্থী ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান নাসির উদ্দীন, আইন অনুষদে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. কাজী তানভীর আহাম্মদ, জীব বিজ্ঞান অনুষদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর।
সাদা দলের প্রার্থীরা হলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ড. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন, বিজ্ঞান অনুষদে রসায়ন বিভাগের ড. মো. আবদুল মান্নান, জীববিজ্ঞান অনুষদে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের প্রার্থীরা হলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ড. আবু নছর মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব চৌধুরী, জীব বিজ্ঞান অনুষদে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদে ইনস্টিটিউট পরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।
হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিন নির্বাচনে আমরা হলুদ দল থেকে আটটি অনুষদেই প্রার্থী দিয়েছি। প্রতিটি অনুষদেই জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নসরুল কাদির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিন একাডেমিক পদ। তাই আমরা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছি।’
এদিকে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার কারণে ভোটার কম থাকায় সব অনুষদে সাদা দল প্রার্থী দিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন।
ড. শামীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভোটার অসমতার কারণে সব অনুষদে আমরা প্রার্থী দিইনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তো দীর্ঘদিন ধরে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়ে আসছে। সর্বশেষ তো জাতীয় পত্র-পত্রিকায় সবকিছুতে অসলো। এই নিয়োগগুলোর কারণে আমরা আগের অবস্থানে নেই।’
বিএনপিসমর্থিত কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বজলুর রশিদকে জেলা দায়রা ও জজ আদালতের নতুন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
৫ ঘণ্টা আগেবগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের নয়মাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মেসার্স মণ্ডল ট্রেডার্স নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন।
৫ ঘণ্টা আগেবিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে দুই দিন ধরে চলা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের দাবির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করবে, এমন আশ্বাসে চলমান কর্মসূচি স্থগিত করেন তাঁরা।
৬ ঘণ্টা আগেরাজধানীর উত্তরার শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এতে বাধা দিতে গেলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মহাব্যবস্থাপক (অপারেশনস), ছাত্রসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। হামলায় এক ছাত্র আহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন
৬ ঘণ্টা আগে