পদত্যাগের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয়ে তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ১৯
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ৩৪
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগ দাবিতে তাঁর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় তাঁর কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বেলা সোয়া ১টায় উপাচার্যর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা।

এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বিক্ষোভ চলাকালে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আলটিমেটাম ঘোষণা করা হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ না করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। বিগত তিন মাসে ভিসি শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কাজ করেননি। এ কারণে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি তোলেন।

এদিকে ক্যাম্পাসে শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের থাকার কথা থাকলেও তাঁর নাম বাদ দিয়ে সেখানে প্রো–ভিসিকে (উপ–উপাচার্য) প্রধান অতিথি করেছেন ছাত্ররা।

‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী দোসরদের কালো থাবা থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও’ ব্যানারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তাঁরা ভিসির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

আন্দোলনকারী রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁরা ভিসির পদত্যাগ চেয়ে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। কিন্তু ভিসি পদত্যাগ না করায় তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন। ভিসি ড. শুচিতা শরমিনের কার্যালয়ের স্টাফদের বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা আজকের চলমান শহীদ স্মরণে অনুষ্ঠিত সভায় ভিসিকে বয়কট করেছেন। তাঁর নামই ব্যানারে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি করা হয়েছে প্রো–ভিসি গোলাম রাব্বানীকে।

আনোয়ার আরও বলেন, ‘ভিসি আওয়ামী দোসর ড. কলিমুল্লাহ ও তাঁর অনুসারীদের ববিতে পুনর্বাসন করতে চাচ্ছেন। এটা ছাত্র আন্দোলনের জন্য লজ্জাজনক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজা শরীফ বলেন, ‘আমরা আলটিমেটাম শেষে ভিসির কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। পরে প্রো–ভিসি ড. গোলাম রাব্বানীর রুমে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শহিদুল ইসলাম শাহেদসহ শিক্ষার্থীরা ভিসি ড. সুচিতার পদত্যাগ দাবি জানাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভিসি কিংবা কোনো পক্ষের কোনো প্রস্তাবে নাই। তারা আওয়ামী লীগের দোসর।’

এদিকে নতুন নিয়োগ পাওয়া কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান গত মঙ্গলবার রাতে যোগদান করতে এলে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তিনি যোগদান না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, তাঁরা দুর্নীতিবাজ কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানের যোগদান ঠেকাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছেন। কেননা, নতুন কোষাধ্যক্ষ রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার থাকাকালীন ড. কলিমুল্লাহর সঙ্গে দুর্নীতির ভাগীদার ছিলেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয় বহির্ভূত সামরিক কর্মকর্তাকে ট্রেজারার চাই না। অনতিবিলম্বে তাঁর প্রত্যাহার চাই।’

ভিসি ড. সুচিতার পদত্যাগ ইস্যুতে ড. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে ছাত্ররা আমাদের সব। ছাত্ররা যা চায় তা যৌক্তিক হলে শিক্ষকেরা পাশে আছেন এবং থাকবেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পাসে নেই ববি ভিসি ড. শুচিতা শরমিন। গতকাল বুধবার এবং আজ বৃহস্পতিবার তিনি আর ক্যাম্পাসে আসেননি। কেন আসেনি তা জানতে ড. শুচিতাকে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসিকে ড. গোলাম রাব্বানী বলেন, তিনি শুনেছেন যে আন্দোলনকারী ছাত্ররা উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে স্টাফদের বের করে দিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের আহ্বানে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত শহীদদের স্মরণে সভায় অংশ নেওয়ায় ওই ঘটনার আর খোঁজ নিতে পারেননি।

ভিসি এবং নতুন ট্রেজারার বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন কি না, এ প্রসঙ্গে সন্ধ্যায় রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘না, তাঁরা আসেননি।’

উল্লেখ্য, ড. কলিমুল্লাহ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তিনি আওয়ামীপন্থী। বরির নতুন কোষাধ্যক্ষ আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার থাকাকালীন ড. কলিমুল্লাহর সঙ্গে দুর্নীতির ভাগীদার ছিলেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত