ফয়জুল লতিফ চৌধুরী
ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত
হতে পারে।
উপন্যাসটি ফরাসি পাঠকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি ইংরেজিভাষী বিশ্বে, তেমন কোনো কদর লাভ করেনি। আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছিল: তাঁর অপরাপর দুটি উপন্যাস যথা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘একজন পুরুষের জগৎ’ এবং ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘এক নারীর কাহিনি’ ফ্রান্সে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কোনো সাড়া জাগায়নি।
তবে ক্রমশ পরিস্থিতি অনুকূল হয়েছে। তাঁর ‘দ্য ইয়ারস’ ইন্টারন্যাশনাল ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ভাগ্যক্রমে এতটাই প্রসন্ন হয়ে ওঠে যে সুইডিশ একাডেমি আনি এরনোকে ২০২২ সালের জন্য সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্স, অন্যান্য ফরাসি ভাষী দেশে এবং ইউরোপে পরিচিত নাম হলেও পৃথিবীর অন্যান্য এলাকায় আনি এরনো এখন পর্যন্ত পরিচিত হয়ে ওঠেননি। আশা করা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় এখন তাঁর গ্রন্থাবলির অনুবাদ হবে এবং সারা পৃথিবীতে দ্রুত পরিচিতি লাভ করবেন।
নোবেল বিজয়ী আনি এরনোর জন্ম ১৯৪০ সালে। কৈশোরে তিনি নিয়মিত দিনলিপি লিখতে শুরু করেছিলেন। ১৯৭২ সালে একদিন তিনি উপন্যাস লিখতে বসে যান। উপন্যাস লিখবেন শুনে তাঁর স্বামী ব্যঙ্গের হাসি হেসেছিলেন। তাই স্বামীকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে লুকিয়ে প্রথম উপন্যাসটি লিখেছিলেন আনি এরনো। যখন একটি নামকরা প্রকাশক উপন্যাসটি প্রকাশে সম্মত হলেন, তখন তাঁর স্বামী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের পক্ষে কিছু লেখা সম্ভব নয় বলে ক্রুদ্ধও হয়েছিলেন।
১৯৭৪ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ‘ক্লিনড্আউট’ নামে। তাঁর জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিবার্য গর্ভপাতের কাহিনি, অপমান ও লোকলজ্জার ঘটনাকে অবলম্বন করেছেন তিনি উপন্যাসে। পরবর্তী ৪৮ বছরে একে একে তিনি ২৪টি গ্রন্থ করেছেন। কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছেন নতুন উপন্যাস ‘একজন যুবকের কাহিনি’। আজ তাঁর অন্যতম পরিচয় এই যে তিনি একজন আত্মজৈবনিক ঔপন্যাসিক। প্রতিটি উপন্যাসের উপজীব্য স্বীয় জীবনের কড়কড়ে অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ।
তিনি নিজের জীবনের গোপন এবং প্রকাশ্য খুঁটিনাটি নানা বিষয়কে একেকটি উপন্যাসের জন্য উপজীব্য করেছেন নিঃসংকোচ সাহসিকতায়।
ষাটের দশকে, যখন আনা এরনোর বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশ, তখন ভার্জিনিয়া উলফ পড়ে পড়ে তাঁর মধ্যে লেখালেখির তীব্র ইচ্ছা জেগে উঠেছিল। কাছাকাছি সময়ে আঁদ্রে ব্রেটনের ‘ফার্স্ট মেনিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম’ পড়ে জীবন এবং লেখালেখির ও জীবনযাপনের একটি পথরেখার সন্ধান পেয়েছিলেন। জারমেইন গ্রিয়ারের ‘দ্য ফিমেইল ইউনাক’ বইটি তাঁর দার্শনিক চিন্তায় নারীর সামাজিক অবস্থানকে প্রবিষ্ট করে দিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত জর্জ পেরেকের ‘ষাটের গল্প: বিষয়-আশয়’। জর্জ পেরেকের রচনাকৌশল তাঁকে ভাবিয়েছিল। এই সবকিছু তাঁকে চেনা-পরিচিত জগৎকে নতুন করে উপলব্ধির দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ভার্জিনিয়া উলফের মতো তাঁরও মনে হয়েছিল, লিখতে হলে প্রথমে বর্ণনাতীত বাস্তবকে তীব্রভাবে অনুভব করে নিতে হবে। লেখালেখির লক্ষ্য হবে হৃদয়ের গভীরে অনুভূত বাস্তবকে সাহিত্যের নতুন কোনো ভাষায় উত্থাপন করা। বিশেষ কোনো কাহিনি কল্পনা ফাঁদার প্রয়োজন নেই; উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশেষ কতগুলো চরিত্রচিত্রণের প্রয়োজন নেই; বরং নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা ও অনুভবের মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে যা কিছু দরকার। এভাবেই তিনি আত্মজৈবনিক কাহিনি রচনার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর রচনা আত্মজৈবনিকতা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উপন্যাস।
কৈশোর থেকে নিয়মিত দিনপঞ্জি লিখেছেন আনি এরনো। দিনপঞ্জিতে অবধৃত ঘটনাবলির অনুপুঙ্খ বর্ণনা তাঁকে নিজ অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছে। ফ্রান্সের পাঠকমহল উপন্যাসের অবয়বে একজন নারীর অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণের অপরিশোধিত পরিবেশনা সাদরে গ্রহণ করেছে। তিনি অক্লেশ জীবনের গোপনতম ঘটনাকে উপন্যাসের কাঠামোতে উপজীব্য করেছেন। তাঁর কাছে উপন্যাস যাপিত জীবনের ইন্টারপ্রিটেশন।
১৯৮৮ সালে আনি এরনো সোভিয়েত রাশিয়ায় গেলে লেনিনগ্রাদে একজন তরুণ রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তখন ওই তরুণ রুশ কূটনীতিকের কর্মস্থল প্যারিস। এরনোর বয়স ৪৮, নতুন প্রেমিকের বয়স ৩৫। তাঁদের ১৮ মাস স্থায়ী প্রেমের কাহিনি নিয়ে ২০০১ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘হারিয়ে যাওয়া’, যা গত মাসে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মিলনের বর্ণনায় তিনি অকপট: ‘তিন ঘণ্টায় চারবার করেছি আমরা’; ‘বাৎসায়নের কামসূত্রে আছে, এমন কিছু করতে আমরা বাকি রাখিনি’, ‘ওর বীর্যমাখা একটি জি-স্ট্রিং আমি আমার বালিশের নিচে রেখে দেব।’ একস্থানে আমরা পড়ি: ‘হঠাৎ খেয়াল করে দেখি আমি আমার একটি কনট্যাক্ট লেন্স হারিয়ে ফেলেছি। ওর পুরুষাঙ্গের মাথায় খুঁজে পেলাম অবশেষে।’ অকপটভাবে এরনো লিখেছেন: ‘ও আসে, সঙ্গম করে, ভদকা খায় আর স্তালিনকে নিয়ে বকবক করে।’ —দিনলিপিতে লিখে রাখা এই কাহিনিই তিনি উপজীব্য করেছিলেন উপরোল্লিখিত ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল) উপন্যাসে।
প্রথম উপন্যাস ‘ক্লিনড্আউট’-এ যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তার একটি অংশ ছিল অনালোকিত। কে ছিল এই অকালে উৎপাটিত ভ্রূণের জনক, তা কাহিনির কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অনেক পরে প্রকাশিত ‘এক তরুণীর গল্প’ শিরোনামীয় উপন্যাসে তিনি তাঁর কুমারীত্ব বিসর্জন ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভসঞ্চারের কাহিনি অবারিত করেছেন আনি এরনো। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটি কোনো ধর্ষণের ঘটনা ছিল না। ধর্ষণের ঘটনা হলে হয়তো অনেক আগেই এ নিয়ে লিখে ফেলতাম।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি বাধা দিইনি, এ কথা স্পষ্ট মনে পড়ে।’
আত্মজৈবনিকতা আনি এরনোর লেখালেখির ভিত্তিমূল। আত্মজৈবনিক উপন্যাস ও আত্মজীবনী এক কথা নয়। আত্মজীবনী একজন মানুষের সমগ্র জীবনের নির্বাচিত স্মৃতি-সংকলন। অন্যদিকে আত্মজৈবনিক উপন্যাসে একজন লেখক স্বীয় জীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতি বা ঘটনাকে অবলম্বন করে কাহিনি ভাগ রচনা করেন। আনি এরনো সর্বদাই এ বিষয়ে সচেতন। অন্য দিকে আমরা দেখি, তিনি কেবল তাঁর নিজের কথা লেখেননি, যে জনপরিসরে তিনি থেকেছেন, সেই সব মানুষের কথাও তিনি তুলে এনেছেন। ফলে তাঁর কোনো কোনো উপন্যাস আত্মজৈবনিকতার পরিসীমা অতিক্রম করে সামাজিক দর্পণ হয়ে উঠেছে।
আদ্যোপান্ত আত্মজৈবনিকতা থাকলেও আনি এরনো তাঁর উপন্যাসগুলোকে সর্বজনীন করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আর এখানেই তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব।
ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত
হতে পারে।
উপন্যাসটি ফরাসি পাঠকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি ইংরেজিভাষী বিশ্বে, তেমন কোনো কদর লাভ করেনি। আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছিল: তাঁর অপরাপর দুটি উপন্যাস যথা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘একজন পুরুষের জগৎ’ এবং ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘এক নারীর কাহিনি’ ফ্রান্সে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কোনো সাড়া জাগায়নি।
তবে ক্রমশ পরিস্থিতি অনুকূল হয়েছে। তাঁর ‘দ্য ইয়ারস’ ইন্টারন্যাশনাল ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ভাগ্যক্রমে এতটাই প্রসন্ন হয়ে ওঠে যে সুইডিশ একাডেমি আনি এরনোকে ২০২২ সালের জন্য সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্স, অন্যান্য ফরাসি ভাষী দেশে এবং ইউরোপে পরিচিত নাম হলেও পৃথিবীর অন্যান্য এলাকায় আনি এরনো এখন পর্যন্ত পরিচিত হয়ে ওঠেননি। আশা করা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় এখন তাঁর গ্রন্থাবলির অনুবাদ হবে এবং সারা পৃথিবীতে দ্রুত পরিচিতি লাভ করবেন।
নোবেল বিজয়ী আনি এরনোর জন্ম ১৯৪০ সালে। কৈশোরে তিনি নিয়মিত দিনলিপি লিখতে শুরু করেছিলেন। ১৯৭২ সালে একদিন তিনি উপন্যাস লিখতে বসে যান। উপন্যাস লিখবেন শুনে তাঁর স্বামী ব্যঙ্গের হাসি হেসেছিলেন। তাই স্বামীকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে লুকিয়ে প্রথম উপন্যাসটি লিখেছিলেন আনি এরনো। যখন একটি নামকরা প্রকাশক উপন্যাসটি প্রকাশে সম্মত হলেন, তখন তাঁর স্বামী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের পক্ষে কিছু লেখা সম্ভব নয় বলে ক্রুদ্ধও হয়েছিলেন।
১৯৭৪ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ‘ক্লিনড্আউট’ নামে। তাঁর জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিবার্য গর্ভপাতের কাহিনি, অপমান ও লোকলজ্জার ঘটনাকে অবলম্বন করেছেন তিনি উপন্যাসে। পরবর্তী ৪৮ বছরে একে একে তিনি ২৪টি গ্রন্থ করেছেন। কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছেন নতুন উপন্যাস ‘একজন যুবকের কাহিনি’। আজ তাঁর অন্যতম পরিচয় এই যে তিনি একজন আত্মজৈবনিক ঔপন্যাসিক। প্রতিটি উপন্যাসের উপজীব্য স্বীয় জীবনের কড়কড়ে অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ।
তিনি নিজের জীবনের গোপন এবং প্রকাশ্য খুঁটিনাটি নানা বিষয়কে একেকটি উপন্যাসের জন্য উপজীব্য করেছেন নিঃসংকোচ সাহসিকতায়।
ষাটের দশকে, যখন আনা এরনোর বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশ, তখন ভার্জিনিয়া উলফ পড়ে পড়ে তাঁর মধ্যে লেখালেখির তীব্র ইচ্ছা জেগে উঠেছিল। কাছাকাছি সময়ে আঁদ্রে ব্রেটনের ‘ফার্স্ট মেনিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম’ পড়ে জীবন এবং লেখালেখির ও জীবনযাপনের একটি পথরেখার সন্ধান পেয়েছিলেন। জারমেইন গ্রিয়ারের ‘দ্য ফিমেইল ইউনাক’ বইটি তাঁর দার্শনিক চিন্তায় নারীর সামাজিক অবস্থানকে প্রবিষ্ট করে দিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত জর্জ পেরেকের ‘ষাটের গল্প: বিষয়-আশয়’। জর্জ পেরেকের রচনাকৌশল তাঁকে ভাবিয়েছিল। এই সবকিছু তাঁকে চেনা-পরিচিত জগৎকে নতুন করে উপলব্ধির দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ভার্জিনিয়া উলফের মতো তাঁরও মনে হয়েছিল, লিখতে হলে প্রথমে বর্ণনাতীত বাস্তবকে তীব্রভাবে অনুভব করে নিতে হবে। লেখালেখির লক্ষ্য হবে হৃদয়ের গভীরে অনুভূত বাস্তবকে সাহিত্যের নতুন কোনো ভাষায় উত্থাপন করা। বিশেষ কোনো কাহিনি কল্পনা ফাঁদার প্রয়োজন নেই; উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশেষ কতগুলো চরিত্রচিত্রণের প্রয়োজন নেই; বরং নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা ও অনুভবের মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে যা কিছু দরকার। এভাবেই তিনি আত্মজৈবনিক কাহিনি রচনার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর রচনা আত্মজৈবনিকতা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উপন্যাস।
কৈশোর থেকে নিয়মিত দিনপঞ্জি লিখেছেন আনি এরনো। দিনপঞ্জিতে অবধৃত ঘটনাবলির অনুপুঙ্খ বর্ণনা তাঁকে নিজ অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছে। ফ্রান্সের পাঠকমহল উপন্যাসের অবয়বে একজন নারীর অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণের অপরিশোধিত পরিবেশনা সাদরে গ্রহণ করেছে। তিনি অক্লেশ জীবনের গোপনতম ঘটনাকে উপন্যাসের কাঠামোতে উপজীব্য করেছেন। তাঁর কাছে উপন্যাস যাপিত জীবনের ইন্টারপ্রিটেশন।
১৯৮৮ সালে আনি এরনো সোভিয়েত রাশিয়ায় গেলে লেনিনগ্রাদে একজন তরুণ রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তখন ওই তরুণ রুশ কূটনীতিকের কর্মস্থল প্যারিস। এরনোর বয়স ৪৮, নতুন প্রেমিকের বয়স ৩৫। তাঁদের ১৮ মাস স্থায়ী প্রেমের কাহিনি নিয়ে ২০০১ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘হারিয়ে যাওয়া’, যা গত মাসে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মিলনের বর্ণনায় তিনি অকপট: ‘তিন ঘণ্টায় চারবার করেছি আমরা’; ‘বাৎসায়নের কামসূত্রে আছে, এমন কিছু করতে আমরা বাকি রাখিনি’, ‘ওর বীর্যমাখা একটি জি-স্ট্রিং আমি আমার বালিশের নিচে রেখে দেব।’ একস্থানে আমরা পড়ি: ‘হঠাৎ খেয়াল করে দেখি আমি আমার একটি কনট্যাক্ট লেন্স হারিয়ে ফেলেছি। ওর পুরুষাঙ্গের মাথায় খুঁজে পেলাম অবশেষে।’ অকপটভাবে এরনো লিখেছেন: ‘ও আসে, সঙ্গম করে, ভদকা খায় আর স্তালিনকে নিয়ে বকবক করে।’ —দিনলিপিতে লিখে রাখা এই কাহিনিই তিনি উপজীব্য করেছিলেন উপরোল্লিখিত ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল) উপন্যাসে।
প্রথম উপন্যাস ‘ক্লিনড্আউট’-এ যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তার একটি অংশ ছিল অনালোকিত। কে ছিল এই অকালে উৎপাটিত ভ্রূণের জনক, তা কাহিনির কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অনেক পরে প্রকাশিত ‘এক তরুণীর গল্প’ শিরোনামীয় উপন্যাসে তিনি তাঁর কুমারীত্ব বিসর্জন ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভসঞ্চারের কাহিনি অবারিত করেছেন আনি এরনো। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটি কোনো ধর্ষণের ঘটনা ছিল না। ধর্ষণের ঘটনা হলে হয়তো অনেক আগেই এ নিয়ে লিখে ফেলতাম।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি বাধা দিইনি, এ কথা স্পষ্ট মনে পড়ে।’
আত্মজৈবনিকতা আনি এরনোর লেখালেখির ভিত্তিমূল। আত্মজৈবনিক উপন্যাস ও আত্মজীবনী এক কথা নয়। আত্মজীবনী একজন মানুষের সমগ্র জীবনের নির্বাচিত স্মৃতি-সংকলন। অন্যদিকে আত্মজৈবনিক উপন্যাসে একজন লেখক স্বীয় জীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতি বা ঘটনাকে অবলম্বন করে কাহিনি ভাগ রচনা করেন। আনি এরনো সর্বদাই এ বিষয়ে সচেতন। অন্য দিকে আমরা দেখি, তিনি কেবল তাঁর নিজের কথা লেখেননি, যে জনপরিসরে তিনি থেকেছেন, সেই সব মানুষের কথাও তিনি তুলে এনেছেন। ফলে তাঁর কোনো কোনো উপন্যাস আত্মজৈবনিকতার পরিসীমা অতিক্রম করে সামাজিক দর্পণ হয়ে উঠেছে।
আদ্যোপান্ত আত্মজৈবনিকতা থাকলেও আনি এরনো তাঁর উপন্যাসগুলোকে সর্বজনীন করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আর এখানেই তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব।
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৬ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৩ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৩ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪