আহমাদ মোস্তফা কামাল
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কীভাবে তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের কাছে এক অনিবার্য প্রসঙ্গ হয়ে উঠলেন সেটি ভাবলে খানিকটা বিস্ময়ই জাগে। না, জনপ্রিয় লেখক তিনি নন, নন সব পাঠকের লেখকও, জনচিত্ত জয় করার মতো লেখা তিনি লেখেননি কোনো দিন। ফলে দেশের সব পাঠক তাঁর নাম জানবে, এ রকম আশা করার কোনো কারণ নেই। নেই বটে, তবু এক বিরাট অংশ তাঁর নাম জানে ভিন্ন একটি কারণে। কোনো এক সময় নাম-না-জানা কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসটিকে কলেজ-পাঠ্য হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। আবশ্যিকভাবে পড়তে হতো বলে লেখকের নামটিও সেই সময়কার কলেজ-শিক্ষার্থীদের জানা হয়ে যেত। পাঠ্য বইয়ের পাঠকেরা পরবর্তীকালে তাদের পাঠতৃষ্ণা ধরে রাখেন এমন কোনো নমুনা অন্তত বাংলাদেশে দেখা যায়নি। ফলে তারা সবাই যে সৈয়দের অন্য লেখাগুলোও খুঁজে পড়েছেন সেটি ভাবার কোনো অবকাশও নেই। আর এখন তো তিনি পাঠ্যতালিকায়ও নেই, সাহিত্যবিমুখ এই জাতি তাঁর নাম জানবেই-বা কীভাবে?
জনগণ না জানুক, যারা লেখালেখি করতে চান, বিশেষ করে কথাসাহিত্য নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের পাঠ-তালিকায় প্রথমদিকের নাম হিসেবে সৈয়দের নাম থাকেই। এটা গত কয়েক দশক ধরে অনিবার্য হয়ে উঠেছে। কীভাবে ঘটল এই ঘটনাটি? কীভাবে আবিষ্কৃত হলেন তিনি? কীভাবে চিহ্নিত হলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান লেখক হিসেবে? বিষয়টি রহস্যময় লাগে এই জন্য যে, সৈয়দ ছিলেন এমন এক লেখক—দেশের সাহিত্যসমাজের সঙ্গে যাঁর কোনো যোগাযোগই ছিল না। শক্তিমান লেখক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে এই যোগাযোগের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়, সাহিত্যের থাকে এমন এক স্বয়ম্ভূ শক্তি যে, যোগাযোগ-ধরাধরি-দলাদলি ছাড়াই তা নিজ গুণে ও যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়; কিন্তু সত্য হচ্ছে এই যে, তেমন গুণটুন না থাকলেও সাহিত্যসমাজে অনেকে প্রতিষ্ঠা পান স্রেফ যোগাযোগের ফলে। সৈয়দের সেটি মোটেই ছিল না। আর থাকবেই বা কীভাবে? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরির সুবাদে তাঁর লেখক-জীবনের প্রায় সবটুকুই কেটেছে বিদেশ-বিভুঁইয়ে। পূর্ব বাঙলায় যখন কেবলমাত্র সাহিত্য সমাজ গড়ে উঠতে শুরু করেছে তখন তিনি বিদেশে কর্মরত। মারাও গেলেন বিদেশেই, ১৯৭১ সালে, মাত্র ঊন পঞ্চাশ বছর বয়সে—তিনটে উপন্যাস, দুটো গল্পগ্রন্থ, দুটো নাটক আর বেশ কিছু অগ্রন্থিত রচনা রেখে। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের যে নতুন প্রজন্ম লেখালেখি করতে এলেন তাদের সঙ্গে সৈয়দের দেখা হওয়ার কোনো সুযোগ তো রইলই না, বরং, তাঁর ওই স্বল্পসংখ্যক রচনা স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো। নতুন দেশ, অপরিমেয় রক্ত, অশ্রু আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা, নানারকম অস্থিরতা, হতাশা, স্বপ্নভঙ্গ—এই সবকিছুর মধ্যে সাহিত্যের মতো সুকুমারবৃত্তির দিকে কতটুকুই-বা নজর থাকে মানুষের? তাও একজন দূরবর্তী লেখক, যাকে চাক্ষুষ দেখা যায়নি খুব একটা, ১৯৫৪ সালের পর দেশে এসেছিলেন মাত্র দু-বার, এমনকি এখন পর্যন্ত যাঁর ব্যক্তি-জীবন সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না প্রায়, তাঁর বইগুলো আর প্রকাশিত হলো কি না, সেই খবরই-বা কে রাখে? যুগে যুগে কত লেখকই তো এভাবে হারিয়ে গেছেন, এ তো নতুন কিছু নয়। কিন্তু সৈয়দ হারালেন না, বরং, রইলেন তরুণদের আগ্রহের কেন্দ্রে। রইলেন তাঁর রচিত সাহিত্য নিয়ে কৌতূহলের কারণে; ব্যক্তি নয়, সাহিত্য-বিচারই যেখানে প্রধান হয়ে উঠল। এদিক থেকে সৈয়দ খুবই ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক, যাঁর সাহিত্য-আলোচনার সময় ব্যক্তি সৈয়দের প্রসঙ্গ প্রায় আসেই না। তাঁর তিরোধানের পর থেকে, গত শতকের সাত-আট-ন’য়ের দশকে তো বটেই এমনকি নতুন শতকের প্রথম বা দ্বিতীয় শতকে এসেও তাঁর সম্পর্কে আগ্রহ কমল না কারও। কী কারণ এর? এসব বিষয় নিয়ে আমি একাধিক প্রবন্ধ লিখেছি বিভিন্ন সময়ে। আজ একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলি।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আমরা আসলে খুব কমই জানি। কতগুলো কেজো তথ্য তুলে ধরা মানে ব্যক্তিমানুষের মনোজগৎ বুঝে ওঠা নয়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর স্ত্রী আন মারি ‘আমার স্বামী ওয়ালীউল্লাহ’ শিরোনামে একটি ক্ষীণকায় স্মৃতিকথা লিখেছেন। সেখানে বরং অনেক প্রাণবন্তভাবে তাঁকে পাওয়া যায়। আমরা সেখান থেকে একটু ঘুরে আসব, তবে তার আগে সহায়ক সূত্র হয়েছে ওই কেজো তথ্যগুলোও দেখে নিতে পারি একবার। তাঁর জন্ম ১৫ আগস্ট, ১৯২২, নোয়াখালীতে, তবে আদি নিবাস চট্টগ্রামে। মাত্র আট বছর বয়সে মাকে হারিয়েছিলেন। বাবা ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় বদলি হতেন তিনি এবং সেই সূত্রে ওয়ালীউল্লাহকে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফেনী, চুঁচুড়া, হুগলি, সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্কুলে পড়তে হয়েছে। ১৯৩৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন করেন ফেনী হাইস্কুল থেকে। এরপর কলকাতার সেন্ট পল কলেজে কিছুদিন, ঢাকায় কিছুদিন এবং তারপর ময়মনসিংহ থেকে ডিস্টিংকশনসহ বিএ পাস করে। এই যে তাঁর ছুটে বেড়ানো শৈশব-কৈশোর, আন মারি একে দেখেছেন মমতাময়ীর ভিন্নমাত্রিক চোখে: ‘‘এভাবে ওকে নিরন্তর জায়গা বদল করতে হয়েছে, যার মানে সম্ভবত কোনো ঘনিষ্ঠ স্কুলবন্ধু বানানোর সুযোগ ও পায়নি। তার ওপর আট বছর বয়সেই ও মাকে হারিয়েছে। এই দুটি কারণে সম্ভবত ওর চরিত্রের মধ্যে একটা অন্তর্মুখিতা, এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা ও উন্মূলতা দেখা যায়।’’
তিনি যে বিচ্ছিন্ন, নিঃসঙ্গ, উন্মূল ও অন্তর্মুখী ছিলেন সেটি তিনি স্বীকারও করেছেন আন মারির কাছে লেখা এক মর্মস্পর্শী চিঠিতে। সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আবারও কিছু তথ্য। ১৯৪৩ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন তিনি। ১৯৪৮ পর্যন্ত কলকাতাতেই ছিলেন। এই সময় দি স্টেটসম্যান পত্রিকার সাব এডিটর পদে এবং কমরেড পাবলিশিং কোম্পানিতে প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করতেন, সম্পাদনা করতেন কনটেমপোরারি ও মিসেল্যানি নামের দুটো ম্যাগাজিনও। দেশভাগের পর যোগ দেন পাকিস্তান রেডিওতে, বার্তা সম্পাদক হিসেবে। ১৯৫২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তান দূতাবাসের প্রেস অ্যাটাশে হিসেবে নিযুক্ত হন, এবং সেখানেই পরিচয় হয় আন মারির সঙ্গে, পরে প্রেম ও বিয়ে। ১৯৫৪ সালের আগস্টে ঢাকায় তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয় তাঁকে, ১৯৫৫ সালের মার্চে করাচিতে, একই বছরের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায়, ১৯৫৯ সালে আবার করাচিতে, ওই বছরেরই অক্টোবরে ফার্স্ট সেক্রেটারির মর্যাদায় প্রেস ও কালচারাল অ্যাটাশে হিসেবে জার্মানিতে, ১৯৬১ সালে প্যারিসে। তার মানে হলো—চাকরি-জীবনের প্রথম ১২ বছরে তিনি স্থির হয়ে বসতে পারেননি কোথাও বেশি দিন। ক্রমাগত তাঁকে বদলি করা হয়েছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। অবশ্য ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্যারিসেই ছিলেন তিনি। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকারের চাকরি ত্যাগ করে যোগ দিলেন ইউনেসকো-তে, ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সে চুক্তি বাতিল হলো। তিনি তাই পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছিলেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি সে পরিকল্পনা বাতিল করেন, বেকার জীবনই অব্যাহত রাখেন। পাকিস্তান দূতাবাসের চাকরি ছেড়ে কেন তিনি ইউনেসকো-তে যোগ দিয়েছিলেন এ সম্পর্কে আন মারি লিখেছেন: ‘‘পাকিস্তানের কথা প্রচারের এ চাকরির প্রতি এক ধরনের বিরক্তি জন্ম নিতে শুরু করল ওর মধ্যে, বিশেষত যে কথা এখন আর সে বিশ্বাস করে না সেগুলোই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বারবার বলা, প্রতিবছর ইকবালের বার্ষিকী আয়োজন করা ইত্যাদি ওর ভালো লাগছিল না। পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের পর প্রথম কয়েকটি বছর যে বিরাট প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল, ওর মধ্যে যদি সেটা থেকেও থাকত, বহু আগেই সেটা হারিয়ে গেছে।’’
পাকিস্তানের প্রতি মোহ কাটিয়ে উঠেছিলেন তিনি আগেই, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বেকারত্ব মেনে নিয়েছেন তবু চাকরিতে ফেরত যাননি, বরং, দেশকে কীভাবে সহায়তা করা যায় সেই ভাবনাতেই অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্য ফরাসি বুদ্ধিজীবী আঁদ্রে মারলো ও কয়েকজন ফরাসি সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। (এই আঁদ্রে মারলো পরবর্তী মাসগুলোতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।) লন্ডনে গিয়ে বাঙালি মুক্তিকামী মানুষদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জনমত গঠন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন। কিন্তু যুদ্ধাক্রান্ত দেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তাঁর সংবেদনশীল হৃদয় বেশি দিন সইতে পারেনি, অক্টোবরের ১০ তারিখে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
যা হোক, ১৯৫৪ সালে ঢাকার বদলি হওয়ার পর আন মারিকে একটি মর্মস্পর্শী চিঠি লেখেন সৈয়দ, যে চিঠিতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের এক গভীর দুঃখবোধের পরিচয় মেলে: “কদিন আগেও ভাবছিলাম, আমি কত উন্মূল; এখন বলা চলে, আবার ঘরে ফিরে এসেছি, কিন্তু এখানে কাকে চিনি আমি? বস্তুত কাউকে না। বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি ছাড়া আমি কারও বাড়িতে যাই না, বন্ধুদের বাড়িতে গেলে সেখানে খাই। যে কয়েকজন মাত্র বন্ধু আছে আমার, তারা শুধুই বন্ধু, বলা চলে সাধারণ বন্ধু, তারাও দুজনের বেশি হবে না। লেখক হিসেবে অনেকে আমাকে চেনে, কিন্তু আমি তাদের চিনি না, হয়তো তাদের আমার ভালো লাগবে না। আত্মীয় সম্পর্কের কথা বলতে গেলে ভাই ছাড়া কারও সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আমার কাছে বাকিদের কারও অস্তিত্ব নেই। তাদের সঙ্গে আমি দেখা করি না, তারাও দেখা করে না আমার সঙ্গে। এমনকি আমার সঙ্গে আমার সৎ বোনদের কোনো সম্পর্ক নেই (তারা ঢাকায় থাকে না)। তারা কেউ আমাকে চিঠি লেখে না, আমিও তাদের কাউকে চিঠি লিখি না। নিজেকে আমার সম্পূর্ণ উন্মূল মনে হয়, যেন আমার নিজের বলে কোনো জায়গা নেই। আমি নিঃসঙ্গ, ভীষণ নিঃসঙ্গ। আমার মতো নিজেকে এমন নিঃসঙ্গ আর কেউ বোধ করে বলে মনে হয় না। এটা কি ভালো না খারাপ? হয়তো এক দিক দিয়ে এতে আমি উপকৃত হই, এর ফলে হয়তো যে কোনো প্রথা ভাঙা আমার জন্য সহজ হয়ে যায়...। কিন্তু মানসিকভাবে আমার এই একাকিত্ব এবং কারও ভালোবাসা না পাওয়াটা খারাপ। যেসব পরিবারে অনেক ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, তাদের দেখে আমার ঈর্ষা হয়। উচ্চতা ও খাঁটি মানবিক সম্পর্কের কারণে এ জাতীয় সঙ্গ অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে পূর্ণতার অনুভূতি এনে দেয়। এটি সম্ভবত স্বামী বা স্ত্রীর ভালোবাসার মতোই জরুরি। ”
শৈশবে মাকে হারিয়েছিলেন তিনি, একটিমাত্র ভাই ছিল তাঁর, সম্ভবত সৎ-মায়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি, ফলে সৎ বোনদের সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক ছিল না, হয়তো বাবার সঙ্গেও দূরত্ব ছিল অনতিক্রম্য। অনেকগুলো ভাইবোন নেই কেন, সে নিয়ে দুঃখ করছেন প্রেমিকার কাছে, এবং বলছেন ‘এ জাতীয় সঙ্গ অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে পূর্ণতার অনুভূতি এনে দেয়’। বোঝাই যায়, এক ধরনের মর্মান্তিক শূন্যতাবোধে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। আত্মীয়-স্বজনহীন, বন্ধু-বান্ধবহীন এক অদ্ভুত জীবন ছিল তাঁর। এই শূন্যতাবোধের, বিচ্ছিন্নতাবোধের, নিঃসঙ্গতাবোধের কোনো ছাপ কি পড়েছিল তাঁর লেখায়? পড়ারই কথা, এবং পড়েছিলও। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে, আরেকটি বিষয়। তাঁর প্রথম বইটি গল্পের, ‘নয়নচারা’, বেরোয় ১৯৪৪; আর প্রথম উপন্যাস ‘লালসালু’-এর প্রকাশকাল ১৯৪৬। দ্বিতীয় গল্পের বই ‘দুই তীর’ ১৯৬৫ সালে আর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘চাঁদের অমাবস্যা’ ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়। প্রায় বিশ বছরের বিরতি। এই সময়ে কী করছিলেন তিনি? লেখেননি? লিখেছেন। সব সময়ই লেখার মধ্যে থেকেছেন, তবে এই সময়ে তিনি ইংরেজিতে লেখার দিকে ঝুঁকেছিলেন। লালসালুর ইংরেজি ও ফরাসি অনুবাদ তো হয়েছিলই, তার সঙ্গে রচনা করছিলেন ‘আগলি এশিয়ান’ নামে আরেকটি উপন্যাস। ‘উ টু কুক বিনস’ নামে একটি ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাসও লিখেছিলেন। বাংলা ভাষাটি যাঁর হাতে নূপুরের ছন্দে বেজে ওঠে তিনি কেন ইংরেজিতে লিখতে গেলেন? সে কি কেবলই সাহিত্যিক কারণে? বাংলা ভাষায় নিজের চিন্তাকে যথার্থভাবে প্রকাশ করতে পারছিলেন না বলে? আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পাওয়ার লোভে? না, এর কোনোটিই নয়। কারণটি করুণ, আন মারিকে লেখা তাঁর আরেকটি চিঠিতে তিনি জানাচ্ছেন সে-কথা: “কারও জন্য কাজ করাটা আমি ঘৃণা করি। আমি স্বাধীন থাকতে চাই। কিন্তু তা কী করে সম্ভব?...নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব অনিশ্চয়তায় ভুগছি। ভবিষ্যতে কী করব জানি না; কেননা এখন যা করছি তা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য কোনো সুযোগ খোলা নেই। অদূর ভবিষ্যতেও সেগুলোর ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।...এ জন্যেই যে বইটি এখন লিখছি তার ওপর এত ভরসা। মনে হচ্ছে বাইরের কোনো প্রকাশক এটি গ্রহণ করলে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলব।”
কী সিদ্ধান্ত? বোঝাই যাচ্ছে, চাকরি করতে তাঁর ভালো লাগে না, বিকল্প আয়ের কোনো ব্যবস্থাও নেই, ভেবেছিলেন ইংরেজিতে বই লিখলে সেটি যদি বাইরের কোনো প্রকাশক গ্রহণ করেন তাহলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ‘কঠিন’ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এই নিঃসঙ্গ, উন্মূল মানুষটি সকল আশ্রয় খুঁজে নিতেন লেখালেখির কাছেই, সব ছেড়ে তিনি কেবল লেখালেখিই করতে চেয়েছিলেন, এই চিঠিটি যেন সেই কথাটিই বলে দেয়।
আমাদের মনে মাঝে মাঝে এই প্রশ্ন জাগে যে, দীর্ঘকাল বিদেশে বসবাস করেও তিনি কীভাবে পূর্ববাংলার জনজীবনের নিখুঁত ছবি আঁকতে পেরেছিলেন? প্রশ্নটি জেগেছিল আন মারির মনেও, উত্তরে ওয়ালীউল্লাহ লিখেছিলেন: “আমার বইপত্র আর লেখালেখির ব্যাপারে তুমি খুব প্রাসঙ্গিক একটি প্রশ্ন তুলেছ, তা হলো, আমি যে গ্রাম আর তার মানুষজন নিয়ে লিখি, গোর্কি ওদের যতটা কাছ থেকে জানতেন, অতটা জানাশোনা কি তাদের নিয়ে আমার আছে? জানি না, তুমি এটা মনে করো কি না যে ওদের নিয়ে লিখতে গেলে ওদের মধ্যে আমাকে বসবাস করতে হবে। আমার পক্ষে সেটা করা সম্ভব নয়।...আমি তাদের গোটা জীবন বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে পারি, আর সেটা পারি আমি গ্রামের মানুষ নই এবং গ্রামে বসবাস করি না বলে। ওদের মধ্যে বসবাস করলেও গুটিকয়েক গ্রামবাসীর জীবনের আক্ষরিক ও ফটোগ্রাফিক বিবরণ তুলে ধরা আমার লক্ষ্য হতো না। বরং আমি যাদের চিনতাম, তারা যে এক বৃহৎ সামাজিক-অর্থনৈতিক বুনোটের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ সেটা বোঝানোই আমার লক্ষ্য।...আমার লেখা বই, আমার নাটক, আমার গল্পগুলো ব্যক্তি অভিজ্ঞতার ফটোগ্রাফিক প্রতিফলন নয়, বরং এগুলো তার চেয়ে বেশি কিছু। অন্তত আমি সেটাই মনে করি। আমি যখন ধর্মীয় কুসংস্কার, মোল্লাদের হাতে গরিব মানুষের শোষণকে আক্রমণ করি, তখন আমি গোটা ব্যবস্থাটাকেই আক্রমণ করি।”
হ্যাঁ, তিনি যেমন আক্রমণ করেছেন গোটা সমাজ ব্যবস্থাটাকেই, তেমনই চেয়েছেন মানুষ সদাশয় হোক, শুভ ও কল্যাণের পক্ষে থাকুক, মানুষের সঙ্গে মানুষের কার্যকর ও মমতাময় যোগাযোগ গড়ে উঠুক, ভালোবাসায় পূর্ণ থাকুক তাদের হৃদয়। এই আকাঙ্ক্ষা দেখি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও, আন মারিকে লেখা আরেকটি চিঠিতে: “উপলব্ধি করতে পারছি কারও সঙ্গে পরিচয় থাকা কতটা জরুরি, বন্ধু নয়, পরিচিতজন নয়, এমন কেউ যে আমাকে বোঝে, যার ওপর নির্ভরতা জাগে, নিজেকে সম্পূর্ণ করে তোলার অনুভূতি তৈরি হয়। মানুষের সাহায্য দরকার, এমন ধরনের সাহায্য যা অগোচরে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে। মানুষের এও জানা থাকা দরকার, কেননা মানুষ আসলে নিঃসঙ্গ।...একেক জনের ভালোবাসার প্রয়োজন একেক রকম। একেক জনের ভালোবাসার তীব্রতাও একেক রকম। যখন আমি বলি যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি, তখন হয়তো কথাটি দিয়ে এই বোঝাতে চাই যে, তোমার কাছে আমি সহজ বোধ করি, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমি তোমার কথা ভাবি এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমি ভাবি যে, তোমার সঙ্গে সবকিছু নিয়ে কথা বলা যায়।”
প্রিয় কথা-জাদুকর, আপনি স্বতঃস্ফূর্ত ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জীবন পার করেছেন, জীবনের ওপার থেকে আপনি কি জানতে পারছেন আপনার দেশের পাঠকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আপনাকে ভালোবেসেছে? কেউ তাদের বলে দেয়নি ভালোবাসতে, কেউ চাপিয়ে দেয়নি ভালোবাসার ভার, আপনার লেখাগুলোই তাদের শিখিয়েছে কীভাবে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে একজন লেখককে অনিবার্য প্রসঙ্গ করে তুলতে হয়।
আজ ১৫ আগস্ট, সোমবার। ১৯২২ সালের আজকের এই দিনে জন্ম হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর। তাঁর জন্মের ১০০ বছর পূর্ণ হলো আজ। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কীভাবে তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের লেখকদের কাছে এক অনিবার্য প্রসঙ্গ হয়ে উঠলেন সেটি ভাবলে খানিকটা বিস্ময়ই জাগে। না, জনপ্রিয় লেখক তিনি নন, নন সব পাঠকের লেখকও, জনচিত্ত জয় করার মতো লেখা তিনি লেখেননি কোনো দিন। ফলে দেশের সব পাঠক তাঁর নাম জানবে, এ রকম আশা করার কোনো কারণ নেই। নেই বটে, তবু এক বিরাট অংশ তাঁর নাম জানে ভিন্ন একটি কারণে। কোনো এক সময় নাম-না-জানা কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসটিকে কলেজ-পাঠ্য হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। আবশ্যিকভাবে পড়তে হতো বলে লেখকের নামটিও সেই সময়কার কলেজ-শিক্ষার্থীদের জানা হয়ে যেত। পাঠ্য বইয়ের পাঠকেরা পরবর্তীকালে তাদের পাঠতৃষ্ণা ধরে রাখেন এমন কোনো নমুনা অন্তত বাংলাদেশে দেখা যায়নি। ফলে তারা সবাই যে সৈয়দের অন্য লেখাগুলোও খুঁজে পড়েছেন সেটি ভাবার কোনো অবকাশও নেই। আর এখন তো তিনি পাঠ্যতালিকায়ও নেই, সাহিত্যবিমুখ এই জাতি তাঁর নাম জানবেই-বা কীভাবে?
জনগণ না জানুক, যারা লেখালেখি করতে চান, বিশেষ করে কথাসাহিত্য নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের পাঠ-তালিকায় প্রথমদিকের নাম হিসেবে সৈয়দের নাম থাকেই। এটা গত কয়েক দশক ধরে অনিবার্য হয়ে উঠেছে। কীভাবে ঘটল এই ঘটনাটি? কীভাবে আবিষ্কৃত হলেন তিনি? কীভাবে চিহ্নিত হলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান লেখক হিসেবে? বিষয়টি রহস্যময় লাগে এই জন্য যে, সৈয়দ ছিলেন এমন এক লেখক—দেশের সাহিত্যসমাজের সঙ্গে যাঁর কোনো যোগাযোগই ছিল না। শক্তিমান লেখক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে এই যোগাযোগের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়, সাহিত্যের থাকে এমন এক স্বয়ম্ভূ শক্তি যে, যোগাযোগ-ধরাধরি-দলাদলি ছাড়াই তা নিজ গুণে ও যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়; কিন্তু সত্য হচ্ছে এই যে, তেমন গুণটুন না থাকলেও সাহিত্যসমাজে অনেকে প্রতিষ্ঠা পান স্রেফ যোগাযোগের ফলে। সৈয়দের সেটি মোটেই ছিল না। আর থাকবেই বা কীভাবে? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরির সুবাদে তাঁর লেখক-জীবনের প্রায় সবটুকুই কেটেছে বিদেশ-বিভুঁইয়ে। পূর্ব বাঙলায় যখন কেবলমাত্র সাহিত্য সমাজ গড়ে উঠতে শুরু করেছে তখন তিনি বিদেশে কর্মরত। মারাও গেলেন বিদেশেই, ১৯৭১ সালে, মাত্র ঊন পঞ্চাশ বছর বয়সে—তিনটে উপন্যাস, দুটো গল্পগ্রন্থ, দুটো নাটক আর বেশ কিছু অগ্রন্থিত রচনা রেখে। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের যে নতুন প্রজন্ম লেখালেখি করতে এলেন তাদের সঙ্গে সৈয়দের দেখা হওয়ার কোনো সুযোগ তো রইলই না, বরং, তাঁর ওই স্বল্পসংখ্যক রচনা স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো। নতুন দেশ, অপরিমেয় রক্ত, অশ্রু আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা, নানারকম অস্থিরতা, হতাশা, স্বপ্নভঙ্গ—এই সবকিছুর মধ্যে সাহিত্যের মতো সুকুমারবৃত্তির দিকে কতটুকুই-বা নজর থাকে মানুষের? তাও একজন দূরবর্তী লেখক, যাকে চাক্ষুষ দেখা যায়নি খুব একটা, ১৯৫৪ সালের পর দেশে এসেছিলেন মাত্র দু-বার, এমনকি এখন পর্যন্ত যাঁর ব্যক্তি-জীবন সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না প্রায়, তাঁর বইগুলো আর প্রকাশিত হলো কি না, সেই খবরই-বা কে রাখে? যুগে যুগে কত লেখকই তো এভাবে হারিয়ে গেছেন, এ তো নতুন কিছু নয়। কিন্তু সৈয়দ হারালেন না, বরং, রইলেন তরুণদের আগ্রহের কেন্দ্রে। রইলেন তাঁর রচিত সাহিত্য নিয়ে কৌতূহলের কারণে; ব্যক্তি নয়, সাহিত্য-বিচারই যেখানে প্রধান হয়ে উঠল। এদিক থেকে সৈয়দ খুবই ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক, যাঁর সাহিত্য-আলোচনার সময় ব্যক্তি সৈয়দের প্রসঙ্গ প্রায় আসেই না। তাঁর তিরোধানের পর থেকে, গত শতকের সাত-আট-ন’য়ের দশকে তো বটেই এমনকি নতুন শতকের প্রথম বা দ্বিতীয় শতকে এসেও তাঁর সম্পর্কে আগ্রহ কমল না কারও। কী কারণ এর? এসব বিষয় নিয়ে আমি একাধিক প্রবন্ধ লিখেছি বিভিন্ন সময়ে। আজ একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলি।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আমরা আসলে খুব কমই জানি। কতগুলো কেজো তথ্য তুলে ধরা মানে ব্যক্তিমানুষের মনোজগৎ বুঝে ওঠা নয়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর স্ত্রী আন মারি ‘আমার স্বামী ওয়ালীউল্লাহ’ শিরোনামে একটি ক্ষীণকায় স্মৃতিকথা লিখেছেন। সেখানে বরং অনেক প্রাণবন্তভাবে তাঁকে পাওয়া যায়। আমরা সেখান থেকে একটু ঘুরে আসব, তবে তার আগে সহায়ক সূত্র হয়েছে ওই কেজো তথ্যগুলোও দেখে নিতে পারি একবার। তাঁর জন্ম ১৫ আগস্ট, ১৯২২, নোয়াখালীতে, তবে আদি নিবাস চট্টগ্রামে। মাত্র আট বছর বয়সে মাকে হারিয়েছিলেন। বাবা ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় বদলি হতেন তিনি এবং সেই সূত্রে ওয়ালীউল্লাহকে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফেনী, চুঁচুড়া, হুগলি, সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্কুলে পড়তে হয়েছে। ১৯৩৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন করেন ফেনী হাইস্কুল থেকে। এরপর কলকাতার সেন্ট পল কলেজে কিছুদিন, ঢাকায় কিছুদিন এবং তারপর ময়মনসিংহ থেকে ডিস্টিংকশনসহ বিএ পাস করে। এই যে তাঁর ছুটে বেড়ানো শৈশব-কৈশোর, আন মারি একে দেখেছেন মমতাময়ীর ভিন্নমাত্রিক চোখে: ‘‘এভাবে ওকে নিরন্তর জায়গা বদল করতে হয়েছে, যার মানে সম্ভবত কোনো ঘনিষ্ঠ স্কুলবন্ধু বানানোর সুযোগ ও পায়নি। তার ওপর আট বছর বয়সেই ও মাকে হারিয়েছে। এই দুটি কারণে সম্ভবত ওর চরিত্রের মধ্যে একটা অন্তর্মুখিতা, এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা ও উন্মূলতা দেখা যায়।’’
তিনি যে বিচ্ছিন্ন, নিঃসঙ্গ, উন্মূল ও অন্তর্মুখী ছিলেন সেটি তিনি স্বীকারও করেছেন আন মারির কাছে লেখা এক মর্মস্পর্শী চিঠিতে। সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আবারও কিছু তথ্য। ১৯৪৩ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন তিনি। ১৯৪৮ পর্যন্ত কলকাতাতেই ছিলেন। এই সময় দি স্টেটসম্যান পত্রিকার সাব এডিটর পদে এবং কমরেড পাবলিশিং কোম্পানিতে প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করতেন, সম্পাদনা করতেন কনটেমপোরারি ও মিসেল্যানি নামের দুটো ম্যাগাজিনও। দেশভাগের পর যোগ দেন পাকিস্তান রেডিওতে, বার্তা সম্পাদক হিসেবে। ১৯৫২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তান দূতাবাসের প্রেস অ্যাটাশে হিসেবে নিযুক্ত হন, এবং সেখানেই পরিচয় হয় আন মারির সঙ্গে, পরে প্রেম ও বিয়ে। ১৯৫৪ সালের আগস্টে ঢাকায় তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয় তাঁকে, ১৯৫৫ সালের মার্চে করাচিতে, একই বছরের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায়, ১৯৫৯ সালে আবার করাচিতে, ওই বছরেরই অক্টোবরে ফার্স্ট সেক্রেটারির মর্যাদায় প্রেস ও কালচারাল অ্যাটাশে হিসেবে জার্মানিতে, ১৯৬১ সালে প্যারিসে। তার মানে হলো—চাকরি-জীবনের প্রথম ১২ বছরে তিনি স্থির হয়ে বসতে পারেননি কোথাও বেশি দিন। ক্রমাগত তাঁকে বদলি করা হয়েছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। অবশ্য ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্যারিসেই ছিলেন তিনি। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকারের চাকরি ত্যাগ করে যোগ দিলেন ইউনেসকো-তে, ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সে চুক্তি বাতিল হলো। তিনি তাই পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছিলেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি সে পরিকল্পনা বাতিল করেন, বেকার জীবনই অব্যাহত রাখেন। পাকিস্তান দূতাবাসের চাকরি ছেড়ে কেন তিনি ইউনেসকো-তে যোগ দিয়েছিলেন এ সম্পর্কে আন মারি লিখেছেন: ‘‘পাকিস্তানের কথা প্রচারের এ চাকরির প্রতি এক ধরনের বিরক্তি জন্ম নিতে শুরু করল ওর মধ্যে, বিশেষত যে কথা এখন আর সে বিশ্বাস করে না সেগুলোই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বারবার বলা, প্রতিবছর ইকবালের বার্ষিকী আয়োজন করা ইত্যাদি ওর ভালো লাগছিল না। পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের পর প্রথম কয়েকটি বছর যে বিরাট প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল, ওর মধ্যে যদি সেটা থেকেও থাকত, বহু আগেই সেটা হারিয়ে গেছে।’’
পাকিস্তানের প্রতি মোহ কাটিয়ে উঠেছিলেন তিনি আগেই, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বেকারত্ব মেনে নিয়েছেন তবু চাকরিতে ফেরত যাননি, বরং, দেশকে কীভাবে সহায়তা করা যায় সেই ভাবনাতেই অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্য ফরাসি বুদ্ধিজীবী আঁদ্রে মারলো ও কয়েকজন ফরাসি সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। (এই আঁদ্রে মারলো পরবর্তী মাসগুলোতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।) লন্ডনে গিয়ে বাঙালি মুক্তিকামী মানুষদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জনমত গঠন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন। কিন্তু যুদ্ধাক্রান্ত দেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তাঁর সংবেদনশীল হৃদয় বেশি দিন সইতে পারেনি, অক্টোবরের ১০ তারিখে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
যা হোক, ১৯৫৪ সালে ঢাকার বদলি হওয়ার পর আন মারিকে একটি মর্মস্পর্শী চিঠি লেখেন সৈয়দ, যে চিঠিতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের এক গভীর দুঃখবোধের পরিচয় মেলে: “কদিন আগেও ভাবছিলাম, আমি কত উন্মূল; এখন বলা চলে, আবার ঘরে ফিরে এসেছি, কিন্তু এখানে কাকে চিনি আমি? বস্তুত কাউকে না। বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি ছাড়া আমি কারও বাড়িতে যাই না, বন্ধুদের বাড়িতে গেলে সেখানে খাই। যে কয়েকজন মাত্র বন্ধু আছে আমার, তারা শুধুই বন্ধু, বলা চলে সাধারণ বন্ধু, তারাও দুজনের বেশি হবে না। লেখক হিসেবে অনেকে আমাকে চেনে, কিন্তু আমি তাদের চিনি না, হয়তো তাদের আমার ভালো লাগবে না। আত্মীয় সম্পর্কের কথা বলতে গেলে ভাই ছাড়া কারও সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আমার কাছে বাকিদের কারও অস্তিত্ব নেই। তাদের সঙ্গে আমি দেখা করি না, তারাও দেখা করে না আমার সঙ্গে। এমনকি আমার সঙ্গে আমার সৎ বোনদের কোনো সম্পর্ক নেই (তারা ঢাকায় থাকে না)। তারা কেউ আমাকে চিঠি লেখে না, আমিও তাদের কাউকে চিঠি লিখি না। নিজেকে আমার সম্পূর্ণ উন্মূল মনে হয়, যেন আমার নিজের বলে কোনো জায়গা নেই। আমি নিঃসঙ্গ, ভীষণ নিঃসঙ্গ। আমার মতো নিজেকে এমন নিঃসঙ্গ আর কেউ বোধ করে বলে মনে হয় না। এটা কি ভালো না খারাপ? হয়তো এক দিক দিয়ে এতে আমি উপকৃত হই, এর ফলে হয়তো যে কোনো প্রথা ভাঙা আমার জন্য সহজ হয়ে যায়...। কিন্তু মানসিকভাবে আমার এই একাকিত্ব এবং কারও ভালোবাসা না পাওয়াটা খারাপ। যেসব পরিবারে অনেক ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, তাদের দেখে আমার ঈর্ষা হয়। উচ্চতা ও খাঁটি মানবিক সম্পর্কের কারণে এ জাতীয় সঙ্গ অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে পূর্ণতার অনুভূতি এনে দেয়। এটি সম্ভবত স্বামী বা স্ত্রীর ভালোবাসার মতোই জরুরি। ”
শৈশবে মাকে হারিয়েছিলেন তিনি, একটিমাত্র ভাই ছিল তাঁর, সম্ভবত সৎ-মায়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি, ফলে সৎ বোনদের সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক ছিল না, হয়তো বাবার সঙ্গেও দূরত্ব ছিল অনতিক্রম্য। অনেকগুলো ভাইবোন নেই কেন, সে নিয়ে দুঃখ করছেন প্রেমিকার কাছে, এবং বলছেন ‘এ জাতীয় সঙ্গ অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে পূর্ণতার অনুভূতি এনে দেয়’। বোঝাই যায়, এক ধরনের মর্মান্তিক শূন্যতাবোধে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। আত্মীয়-স্বজনহীন, বন্ধু-বান্ধবহীন এক অদ্ভুত জীবন ছিল তাঁর। এই শূন্যতাবোধের, বিচ্ছিন্নতাবোধের, নিঃসঙ্গতাবোধের কোনো ছাপ কি পড়েছিল তাঁর লেখায়? পড়ারই কথা, এবং পড়েছিলও। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে, আরেকটি বিষয়। তাঁর প্রথম বইটি গল্পের, ‘নয়নচারা’, বেরোয় ১৯৪৪; আর প্রথম উপন্যাস ‘লালসালু’-এর প্রকাশকাল ১৯৪৬। দ্বিতীয় গল্পের বই ‘দুই তীর’ ১৯৬৫ সালে আর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘চাঁদের অমাবস্যা’ ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়। প্রায় বিশ বছরের বিরতি। এই সময়ে কী করছিলেন তিনি? লেখেননি? লিখেছেন। সব সময়ই লেখার মধ্যে থেকেছেন, তবে এই সময়ে তিনি ইংরেজিতে লেখার দিকে ঝুঁকেছিলেন। লালসালুর ইংরেজি ও ফরাসি অনুবাদ তো হয়েছিলই, তার সঙ্গে রচনা করছিলেন ‘আগলি এশিয়ান’ নামে আরেকটি উপন্যাস। ‘উ টু কুক বিনস’ নামে একটি ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাসও লিখেছিলেন। বাংলা ভাষাটি যাঁর হাতে নূপুরের ছন্দে বেজে ওঠে তিনি কেন ইংরেজিতে লিখতে গেলেন? সে কি কেবলই সাহিত্যিক কারণে? বাংলা ভাষায় নিজের চিন্তাকে যথার্থভাবে প্রকাশ করতে পারছিলেন না বলে? আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পাওয়ার লোভে? না, এর কোনোটিই নয়। কারণটি করুণ, আন মারিকে লেখা তাঁর আরেকটি চিঠিতে তিনি জানাচ্ছেন সে-কথা: “কারও জন্য কাজ করাটা আমি ঘৃণা করি। আমি স্বাধীন থাকতে চাই। কিন্তু তা কী করে সম্ভব?...নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব অনিশ্চয়তায় ভুগছি। ভবিষ্যতে কী করব জানি না; কেননা এখন যা করছি তা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য কোনো সুযোগ খোলা নেই। অদূর ভবিষ্যতেও সেগুলোর ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।...এ জন্যেই যে বইটি এখন লিখছি তার ওপর এত ভরসা। মনে হচ্ছে বাইরের কোনো প্রকাশক এটি গ্রহণ করলে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলব।”
কী সিদ্ধান্ত? বোঝাই যাচ্ছে, চাকরি করতে তাঁর ভালো লাগে না, বিকল্প আয়ের কোনো ব্যবস্থাও নেই, ভেবেছিলেন ইংরেজিতে বই লিখলে সেটি যদি বাইরের কোনো প্রকাশক গ্রহণ করেন তাহলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ‘কঠিন’ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এই নিঃসঙ্গ, উন্মূল মানুষটি সকল আশ্রয় খুঁজে নিতেন লেখালেখির কাছেই, সব ছেড়ে তিনি কেবল লেখালেখিই করতে চেয়েছিলেন, এই চিঠিটি যেন সেই কথাটিই বলে দেয়।
আমাদের মনে মাঝে মাঝে এই প্রশ্ন জাগে যে, দীর্ঘকাল বিদেশে বসবাস করেও তিনি কীভাবে পূর্ববাংলার জনজীবনের নিখুঁত ছবি আঁকতে পেরেছিলেন? প্রশ্নটি জেগেছিল আন মারির মনেও, উত্তরে ওয়ালীউল্লাহ লিখেছিলেন: “আমার বইপত্র আর লেখালেখির ব্যাপারে তুমি খুব প্রাসঙ্গিক একটি প্রশ্ন তুলেছ, তা হলো, আমি যে গ্রাম আর তার মানুষজন নিয়ে লিখি, গোর্কি ওদের যতটা কাছ থেকে জানতেন, অতটা জানাশোনা কি তাদের নিয়ে আমার আছে? জানি না, তুমি এটা মনে করো কি না যে ওদের নিয়ে লিখতে গেলে ওদের মধ্যে আমাকে বসবাস করতে হবে। আমার পক্ষে সেটা করা সম্ভব নয়।...আমি তাদের গোটা জীবন বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে পারি, আর সেটা পারি আমি গ্রামের মানুষ নই এবং গ্রামে বসবাস করি না বলে। ওদের মধ্যে বসবাস করলেও গুটিকয়েক গ্রামবাসীর জীবনের আক্ষরিক ও ফটোগ্রাফিক বিবরণ তুলে ধরা আমার লক্ষ্য হতো না। বরং আমি যাদের চিনতাম, তারা যে এক বৃহৎ সামাজিক-অর্থনৈতিক বুনোটের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ সেটা বোঝানোই আমার লক্ষ্য।...আমার লেখা বই, আমার নাটক, আমার গল্পগুলো ব্যক্তি অভিজ্ঞতার ফটোগ্রাফিক প্রতিফলন নয়, বরং এগুলো তার চেয়ে বেশি কিছু। অন্তত আমি সেটাই মনে করি। আমি যখন ধর্মীয় কুসংস্কার, মোল্লাদের হাতে গরিব মানুষের শোষণকে আক্রমণ করি, তখন আমি গোটা ব্যবস্থাটাকেই আক্রমণ করি।”
হ্যাঁ, তিনি যেমন আক্রমণ করেছেন গোটা সমাজ ব্যবস্থাটাকেই, তেমনই চেয়েছেন মানুষ সদাশয় হোক, শুভ ও কল্যাণের পক্ষে থাকুক, মানুষের সঙ্গে মানুষের কার্যকর ও মমতাময় যোগাযোগ গড়ে উঠুক, ভালোবাসায় পূর্ণ থাকুক তাদের হৃদয়। এই আকাঙ্ক্ষা দেখি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও, আন মারিকে লেখা আরেকটি চিঠিতে: “উপলব্ধি করতে পারছি কারও সঙ্গে পরিচয় থাকা কতটা জরুরি, বন্ধু নয়, পরিচিতজন নয়, এমন কেউ যে আমাকে বোঝে, যার ওপর নির্ভরতা জাগে, নিজেকে সম্পূর্ণ করে তোলার অনুভূতি তৈরি হয়। মানুষের সাহায্য দরকার, এমন ধরনের সাহায্য যা অগোচরে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে। মানুষের এও জানা থাকা দরকার, কেননা মানুষ আসলে নিঃসঙ্গ।...একেক জনের ভালোবাসার প্রয়োজন একেক রকম। একেক জনের ভালোবাসার তীব্রতাও একেক রকম। যখন আমি বলি যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি, তখন হয়তো কথাটি দিয়ে এই বোঝাতে চাই যে, তোমার কাছে আমি সহজ বোধ করি, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমি তোমার কথা ভাবি এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমি ভাবি যে, তোমার সঙ্গে সবকিছু নিয়ে কথা বলা যায়।”
প্রিয় কথা-জাদুকর, আপনি স্বতঃস্ফূর্ত ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জীবন পার করেছেন, জীবনের ওপার থেকে আপনি কি জানতে পারছেন আপনার দেশের পাঠকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আপনাকে ভালোবেসেছে? কেউ তাদের বলে দেয়নি ভালোবাসতে, কেউ চাপিয়ে দেয়নি ভালোবাসার ভার, আপনার লেখাগুলোই তাদের শিখিয়েছে কীভাবে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে একজন লেখককে অনিবার্য প্রসঙ্গ করে তুলতে হয়।
আজ ১৫ আগস্ট, সোমবার। ১৯২২ সালের আজকের এই দিনে জন্ম হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর। তাঁর জন্মের ১০০ বছর পূর্ণ হলো আজ। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৬ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৩ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৩ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪