দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
বছর সাত-আটের একটা ছেলে।
ছেলেটা মানুষের সামনে যেতে লজ্জা পায়। কারণ, তার বয়সী আর দশটা বাচ্চার চেয়ে সে আকারে খুব ছোট। তার বয়সী আর দশটা বাচ্চার মতো টক টক করে কথা বলতে পারে না। লাজুক ছেলেটা প্রায় কিছুই পারে না। কেবল একটা জিনিসই পারে সে—ফুটবল নিয়ে কারিকুরি।
এমন লাজুক, রোগা ছেলে কি ফুটবল দিয়ে বাঁচতে পারে? কে আর পাত্তা দেবে তাকে?
শুধু বাঁচল না ছেলেটা; একদিন ওই ফুটবল দিয়ে সারা পৃথিবীকেই পায়ের নিচে নিয়ে এল। রোগে ভুগতে থাকা ছেলেটি পায়ের জাদুতে অবশ করে দিল বিশ্বকে। সেদিন প্রায় না খেতে পাওয়া পরিবারের ছেলেটি হয়ে উঠল পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ক্রীড়াবিদদের একজন।
কে? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ–ছেলেটির নাম লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। খুদে জাদুকর লিও মেসি।
রোজারিওর সেন্তা ফেতে অত্যন্ত দরিদ্র এক পরিবারে জন্ম নিয়েছিল লিওনেল মেসি। ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ছিলেন একটা স্টিল কারখানার সাধারণ কর্মী এবং মা সংসার চালাতে কাজ করতেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে। এমন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় পরিবারের চতুর্থ সন্তান হিসেবে ঘিঞ্জি এক বাসায় দুনিয়ার আলোয় চোখ মেলেছিল আজকের বিলিয়নিয়ার মেসি!
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বন্দরনগরীর আর সব শিশুর সঙ্গে মিলে ফুটবল খেলতে শুরু করেছিল। বাবা হোর্হে মেসি কাজের ফাঁকে ফাঁকে গ্রান্দোলি নামে একটা পাড়ার ক্লাব দলে কোচিং করাতেন। বাবার হাত ধরে ওই বছর পাঁচেক বয়সেই গ্রান্দোলির হয়ে খেলা শুরু করল। তখনই ছেলেটার বল নিয়ন্ত্রণ আর ড্রিবলিং ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় ফুটবলাররা।
আট বছর বয়সেই খুদে এ ফুটবল জাদুকরের কাণ্ডকীর্তি দেখে তাকে দলে ভিড়িয়ে ফেলল রোসারিওরই ক্লাব নিউয়েল ওল্ড বয়েজ। এখানেই রাতারাতি আর্জেন্টাইন ফুটবলের আলোচনায় চলে আসতে শুরু করল। ওই বয়সী মেসির খেলা দেখেই আর্জেন্টাইন পত্রপত্রিকা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল। তত দিনে মেসির ওপর বিভিন্ন ইউরোপিয়ান ক্লাবের চোখও পড়ে গেছে। এমন অবস্থায় দারুণ সুখের একটা ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন হোর্হে মেসি।
কিন্তু বজ্রপাতের মতোই খবরটা এল মেসি পরিবারে; দুরারোগ্য এক হরমোন রোগে আক্রান্ত মেসি। এই রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চারা আর খুব একটা বেড়ে উঠতে পারে না।
সাধারণ পরিবারের সাধ্যে এর চিকিৎসা নেই। ডাক্তাররা বললেন, এই রোগের চিকিৎসায় দীর্ঘকাল ধরে বহুমূল্য ওষুধ, ইনজেকশন চালিয়ে যেতে হবে। এ সামর্থ্য তো মেসির পরিবারের নেই। হোর্হে মেসির কাছে তখন ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো থেকে একটার পর একটা প্রস্তাব আসছে।
আর যে স্কাউটই আসছে, তাকে হোর্হে মেসি বলছেন, ‘ছেলের চিকিৎসার কী হবে?’
কেউ খুব একটা আশার কথা শোনাতে পারে না।
এ সময় মেসিদের বাসায় এলেন স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনার কয়েক জন স্কাউট; স্কাউটরা বিভিন্ন দেশ থেকে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় খুঁজে বের করে থাকেন। বার্সেলোনার স্কাউটরা বললেন, ক্লাব ডিরেক্টরের ছেলেটাকে দেখে পছন্দ হলে চিকিৎসার একটা ব্যবস্থা হতে পারে।
কিন্তু পছন্দ হবে কী করে? সে জন্য তো স্পেন যেতে হবে। ছেলেকে একা ছাড়তে রাজি নন হোর্হে মেসি। শেষ অবধি স্কাউটরা ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের সবার বিমানের টিকিট কেটে ফেললেন। ট্রায়াল দিতে মেসিকে নিয়ে আসা হলো স্পেনে।
তখন বার্সেলোনার বার্ষিক ট্রায়াল শেষ হয়ে গেছে। এ সময়ে নতুন করে ট্রায়াল দেওয়া সম্ভব নয়। তখন বার্সেলোনার ক্রীড়া পরিচালক ছিলেন কার্লেস রেক্সাস। তাঁকে অনেক অনুরোধ করে স্কাউটরা একটা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করলেন। অত্যন্ত বিরক্তিভরে আর্জেন্টিনা থেকে উড়িয়ে আনা বাচ্চাটির অনুশীলন দেখতে গিয়েছিলেন রেক্সাস। দেখেই চমকে উঠলেন। এ কী!
মেসির সামান্য কয়েক মিনিটের কারিকুরি দেখে রেক্সাস এতটাই মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে উঠে গিয়ে কাগজ আনার বিলম্ব সহ্য হয়নি। পকেটে ছিল টিস্যু পেপার। তাতেই মেসিকে দিয়ে তাঁর জীবনের প্রথম চুক্তিপত্রটা সই করিয়ে ফেললেন রেক্সাস।
ভাগ্যিস করিয়েছিলেন; তাই আমরা বার্সেলোনার হয়ে অতিমানবীয় ফুটবল খেলতে থাকা ভিনগ্রহের এক ফুটবলারকে উপহার পেলাম। একটা টিস্যু পেপারে সই করানো হয়েছিল বলেই আজ বিশ্বজয়ী মেসির ভুবন ভোলানো খেলা দেখতে পারছি আমরা।
রোগ, দারিদ্র্য, লজ্জা—কিছুই তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। কারণ, মেসি জানত, তার পায়ে বল থাকলে সে সবই জয় করতে পারে।
বছর সাত-আটের একটা ছেলে।
ছেলেটা মানুষের সামনে যেতে লজ্জা পায়। কারণ, তার বয়সী আর দশটা বাচ্চার চেয়ে সে আকারে খুব ছোট। তার বয়সী আর দশটা বাচ্চার মতো টক টক করে কথা বলতে পারে না। লাজুক ছেলেটা প্রায় কিছুই পারে না। কেবল একটা জিনিসই পারে সে—ফুটবল নিয়ে কারিকুরি।
এমন লাজুক, রোগা ছেলে কি ফুটবল দিয়ে বাঁচতে পারে? কে আর পাত্তা দেবে তাকে?
শুধু বাঁচল না ছেলেটা; একদিন ওই ফুটবল দিয়ে সারা পৃথিবীকেই পায়ের নিচে নিয়ে এল। রোগে ভুগতে থাকা ছেলেটি পায়ের জাদুতে অবশ করে দিল বিশ্বকে। সেদিন প্রায় না খেতে পাওয়া পরিবারের ছেলেটি হয়ে উঠল পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ক্রীড়াবিদদের একজন।
কে? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ–ছেলেটির নাম লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। খুদে জাদুকর লিও মেসি।
রোজারিওর সেন্তা ফেতে অত্যন্ত দরিদ্র এক পরিবারে জন্ম নিয়েছিল লিওনেল মেসি। ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ছিলেন একটা স্টিল কারখানার সাধারণ কর্মী এবং মা সংসার চালাতে কাজ করতেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে। এমন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় পরিবারের চতুর্থ সন্তান হিসেবে ঘিঞ্জি এক বাসায় দুনিয়ার আলোয় চোখ মেলেছিল আজকের বিলিয়নিয়ার মেসি!
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বন্দরনগরীর আর সব শিশুর সঙ্গে মিলে ফুটবল খেলতে শুরু করেছিল। বাবা হোর্হে মেসি কাজের ফাঁকে ফাঁকে গ্রান্দোলি নামে একটা পাড়ার ক্লাব দলে কোচিং করাতেন। বাবার হাত ধরে ওই বছর পাঁচেক বয়সেই গ্রান্দোলির হয়ে খেলা শুরু করল। তখনই ছেলেটার বল নিয়ন্ত্রণ আর ড্রিবলিং ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় ফুটবলাররা।
আট বছর বয়সেই খুদে এ ফুটবল জাদুকরের কাণ্ডকীর্তি দেখে তাকে দলে ভিড়িয়ে ফেলল রোসারিওরই ক্লাব নিউয়েল ওল্ড বয়েজ। এখানেই রাতারাতি আর্জেন্টাইন ফুটবলের আলোচনায় চলে আসতে শুরু করল। ওই বয়সী মেসির খেলা দেখেই আর্জেন্টাইন পত্রপত্রিকা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল। তত দিনে মেসির ওপর বিভিন্ন ইউরোপিয়ান ক্লাবের চোখও পড়ে গেছে। এমন অবস্থায় দারুণ সুখের একটা ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন হোর্হে মেসি।
কিন্তু বজ্রপাতের মতোই খবরটা এল মেসি পরিবারে; দুরারোগ্য এক হরমোন রোগে আক্রান্ত মেসি। এই রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চারা আর খুব একটা বেড়ে উঠতে পারে না।
সাধারণ পরিবারের সাধ্যে এর চিকিৎসা নেই। ডাক্তাররা বললেন, এই রোগের চিকিৎসায় দীর্ঘকাল ধরে বহুমূল্য ওষুধ, ইনজেকশন চালিয়ে যেতে হবে। এ সামর্থ্য তো মেসির পরিবারের নেই। হোর্হে মেসির কাছে তখন ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো থেকে একটার পর একটা প্রস্তাব আসছে।
আর যে স্কাউটই আসছে, তাকে হোর্হে মেসি বলছেন, ‘ছেলের চিকিৎসার কী হবে?’
কেউ খুব একটা আশার কথা শোনাতে পারে না।
এ সময় মেসিদের বাসায় এলেন স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনার কয়েক জন স্কাউট; স্কাউটরা বিভিন্ন দেশ থেকে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় খুঁজে বের করে থাকেন। বার্সেলোনার স্কাউটরা বললেন, ক্লাব ডিরেক্টরের ছেলেটাকে দেখে পছন্দ হলে চিকিৎসার একটা ব্যবস্থা হতে পারে।
কিন্তু পছন্দ হবে কী করে? সে জন্য তো স্পেন যেতে হবে। ছেলেকে একা ছাড়তে রাজি নন হোর্হে মেসি। শেষ অবধি স্কাউটরা ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের সবার বিমানের টিকিট কেটে ফেললেন। ট্রায়াল দিতে মেসিকে নিয়ে আসা হলো স্পেনে।
তখন বার্সেলোনার বার্ষিক ট্রায়াল শেষ হয়ে গেছে। এ সময়ে নতুন করে ট্রায়াল দেওয়া সম্ভব নয়। তখন বার্সেলোনার ক্রীড়া পরিচালক ছিলেন কার্লেস রেক্সাস। তাঁকে অনেক অনুরোধ করে স্কাউটরা একটা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করলেন। অত্যন্ত বিরক্তিভরে আর্জেন্টিনা থেকে উড়িয়ে আনা বাচ্চাটির অনুশীলন দেখতে গিয়েছিলেন রেক্সাস। দেখেই চমকে উঠলেন। এ কী!
মেসির সামান্য কয়েক মিনিটের কারিকুরি দেখে রেক্সাস এতটাই মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে উঠে গিয়ে কাগজ আনার বিলম্ব সহ্য হয়নি। পকেটে ছিল টিস্যু পেপার। তাতেই মেসিকে দিয়ে তাঁর জীবনের প্রথম চুক্তিপত্রটা সই করিয়ে ফেললেন রেক্সাস।
ভাগ্যিস করিয়েছিলেন; তাই আমরা বার্সেলোনার হয়ে অতিমানবীয় ফুটবল খেলতে থাকা ভিনগ্রহের এক ফুটবলারকে উপহার পেলাম। একটা টিস্যু পেপারে সই করানো হয়েছিল বলেই আজ বিশ্বজয়ী মেসির ভুবন ভোলানো খেলা দেখতে পারছি আমরা।
রোগ, দারিদ্র্য, লজ্জা—কিছুই তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। কারণ, মেসি জানত, তার পায়ে বল থাকলে সে সবই জয় করতে পারে।
চারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
৬ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
১৩ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
১৩ দিন আগেদ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
১০ অক্টোবর ২০২৪