হামিদ মীর
নিজের চেনা-পরিচিত বিশ্ব বদলে দিতে প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই একটি দিন আসে। পাকিস্তানে সেই দিন কি এল? সম্ভবত এবং সেদিনটি বোধ হয় ৯ মে। ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তানের পুরোনো ভবন, রাওয়ালপিন্ডির চারটি মেট্রো বাসস্টেশন ও কর্পস কমান্ডার হাউস ভাঙচুর চালায় ওই দিন। লাহোরের বেশ কয়েকটি শহরে জাতীয় বীরদের স্মৃতিস্তম্ভ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়েও হামলা হয়।
কারণ, ওই দিনই আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসান (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দেশজুড়ে সহিংসতা চালান তাঁরা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে হামলাকারী চার নারীসহ আরও কয়েকজনের ছবিও প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেনের হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিবাসন নীতির পরিবর্তন করেছে। ফলে জাতিগত বিদ্বেষ, ঘৃণা ও অপরাধ বেড়েছে। বলা বাহুল্য, নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসবাদী হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে বদলে দিয়েছে। আর নাইন-ফাইভ (৯ মে) বদলে দিয়েছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ওই দিনের সহিংসতাকে ‘ইমরান খানের নাইন-ইলেভেন’ বলে অভিহিত করেছেন। সেদিনই ইমরান নিজেই নিজের কবর খুঁড়েছেন।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, ৯ মের ভাঙচুর ও হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেনের হামলার মতো। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘ইমরান খান ও তাঁর সমর্থকেরা সন্ত্রাসীদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ৯ মেকে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
যাঁরা পাকিস্তানের বাইরে আছেন, তাঁরা হয়তো নাইন-ফাইভের সঙ্গে নাইন-ইলেভেনের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের ঘটনা ঘটিয়েছিল বহিরাগত সন্ত্রাসীরা, আর পাকিস্তানে নাইন-ফাইভের ঘটনা ঘটিয়েছে ভেতরের মানুষেরাই। তাঁরা কেউ ভারত বা অন্য কোনো দেশ থেকে আসেননি। তারা সবাই পাকিস্তানি এবং অনেকের অতীত সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
লাহোরের ধনী ও সুশিক্ষিত নারী খাদিজা শাহকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। তিনি ৯ মে লাহোরে কর্প কমান্ডার হাউসের সামনে সহিংস বিক্ষোভে যোগ দেন। বিক্ষোভকারীরা সেদিন কর্প কমান্ডার হাউসে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই ঘটনায় ২৩ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ নওয়াজের নাতনি, তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. সালমান শাহের মেয়েও। তিন সন্তানের জননী এই নারী পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার।
লাহোরের কর্প কমান্ডার হাউসকে ‘জিন্নাহ হাউস’ও বলা হয়। কারণ, এটি একসময় পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বাসভবন ছিল। পাকিস্তানের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান কখনোই এই বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেননি। তিনি এটিকে ১৯৫৯ সালে কর্প কমান্ডারের বাসভবন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গ্রেপ্তারের দুই দিন পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইমরান খানকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে সরকার ৯ মের হামলার ঘটনায় সারা দেশ থেকে পিটিআইয়ের সাড়ে চার হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে। ইমরান সরকারের মানবাধিকারমন্ত্রী ছিলেন ড. শিরিন মাজারি। ওই দিন তিনি কোনো বিক্ষোভে যোগ দেননি; সহিংসতায় প্ররোচনা দিয়েছেন এমন প্রমাণও নেই। উপরন্তু তিনি থাকেন ইসলামাবাদে। তবু তাঁকে পুরোনো কালাকানুনে (মেইনটেন্যান্স অব পাবলিক অর্ডার) গ্রেপ্তার করা হয়।
ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ৯ মের পর শিরিনকে তিনবার জামিন দিয়েছেন এবং প্রতিবারই জামিনে মুক্তির পরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশেষে গতকাল বুধবার তিনি পিটিআই থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
সরকারের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা এমন অনেক নারীকে আমি চিনি, যারা পিটিআইয়ের সক্রিয় কর্মী নন। তাঁরা মূলত ক্রিকেটার ইমরান খানের ভক্ত। তারপরও গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁদের এখন এদিক-ওদিক পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ফাইয়াজ উল হাসান চৌহানও পিটিআই ছেড়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ইমরান খান পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ চান।
অন্যদিকে ইমরান খান দাবি করেছেন, তাঁর দল কখনোই সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেনি। তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নাইন-ফাইভের সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত করেন।
প্রথম দিকে ইমরান খান বলেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকে কিছু গোপন সমর্থন এবং বিচার বিভাগের কাছ থেকে প্রকাশ্য সমর্থন আশা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন পরই দেখা গেল, ইমরান কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছেন।
সেনাবাহিনী তাঁর ওপর আগের চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে। কারণ, ৯ মে একটি টার্নিং পয়েন্ট। ওই দিন ইমরান খান দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের (সামরিক বাহিনী) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শহুরে অভিজাতদের উসকে দিয়েছিলেন।
খাদিজা শাহ তেমনই একজন নারী। তিনি পাঞ্জাবের সুশিক্ষিত শহুরে অভিজাতদের প্রতিনিধিত্ব করেন। খাদিজারা দীর্ঘদিন ধরে সামরিক স্বৈরশাসকদের স্বাভাবিক মিত্র ছিল। কিন্তু এখন সেই অভিজাতরা আর্মি জেনারেলদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবার ‘ভারত কার্ড’ খেলা শুরু হয়েছে। ইমরান খানের রাজনৈতিক বিরোধীরা বলছেন, ভারতীয় মিডিয়া ইমরান খানের প্রশংসা করছে। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমের আনুকূল্য পাচ্ছেন।
ভারতীয় সাংবাদিক সুশান্ত সারিনের একটি ভিডিও ক্লিপ পাকিস্তানের প্রায় সব টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। ভিডিওতে সারিন বলছেন, ‘ইমরান খান তাঁর স্বপ্ন। কারণ তিনি পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছেন।’ এসব কারণে অনেকেই ইমরানকে ভারতীয় এজেন্ট বলছেন।
এর আগে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহকে এফ এম আইয়ুব খান ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, বেনজির ভুট্টোকে জেনারেল জিয়া ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন এবং জেনারেল মোশাররফের সমর্থকেরা নওয়াজ শরিফকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন।
এমন পরিস্থিতিতে পিটিআই নেতাদের মনোবল ভেঙে গেছে। তাঁরা অনেকেই পিটিআই ছেড়ে যাচ্ছেন। গভীর এক সুড়ঙ্গের দিকে ইমরান খান এগিয়ে যাচ্ছেন কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন।
শাহবাজ শরিফের সরকার ইতিমধ্যে সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের অধীনে পাঞ্জাব এবং খাইবার-পাখতুনখাওয়া পাশাপাশি রাজধানী ইসলামাবাদেও সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। সরকার বলছে, ১৯৫২ সালের পাকিস্তান সামরিক আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত সামরিক আদালতে সামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার হবে।
সামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে জড়িতদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শাস্তি দেওয়া উচিত এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে সেনা আইনে বেসামরিক নাগরিকদের বিচার করলে, তা বিতর্কিত হয়ে উঠবে। সামরিক আদালত পাকিস্তানে নতুন কিছু নয়, কিন্তু এই আদালত পাকিস্তানের গণতন্ত্রের চেহারাকে কলঙ্কিত করবে নিঃসন্দেহে।
চলতি বছর পাকিস্তানে নির্বাচনের বছর। এ বছরের আগস্টে বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। আগামী অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা। দেওয়ানি আদালতে আগস্টের আগে ৯ মের আসামিদের বিচার শেষ করা কঠিন হবে। তবে সামরিক আদালত আগস্টের আগে বিচার শেষ করার চেষ্টা করবে এবং যদি ইমরান খান আগস্টের আগে দোষী সাব্যস্ত না হন, তাহলে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে।
পাকিস্তান ২২ কোটি মানুষের একটি দেশ। তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম সেনাবাহিনী রয়েছে। সেনাবাহিনী ১৯৪৭ সাল থেকে ৩৩ বছর ধরে সরাসরি পাকিস্তান শাসন করেছে এবং এটি এখনো দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান সামরিক শাসনের দিকে যাচ্ছে নাকি ইমরান খান বিচার বিভাগের সাহায্যে যুদ্ধে জয়ী হতে যাচ্ছেন, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সম্প্রতি আমার দেখা হয়েছে। আলভি সব সময় ইমরানকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তবে এবার তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার, তিনি সতর্ক। ইমরান খানের অন্য সমর্থকদের মতোই আলভিকে বিষণ্ন দেখা গেছে। তিনি নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নন এবং মার্শাল ল জারির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। তাঁকে ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, ‘৯ মের সহিংসতার জন্য প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনা নয়।’ আমি তখন হেসে বললাম, ‘জনসম্মুখে স্বীকারোক্তি দিলে তাঁকে সামরিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক ভাষা এবং মুখের অভিব্যক্তি দেখে যতটুকু বুঝলাম, তিনি ইমরান খানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। কারণ, বিরোধীদলীয় নেতা থাকার সময় ইমরান তাঁকে দুবার কারাগারে পাঠিয়েছিলেন।
আমি নির্বাচন সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা এই বছরের অক্টোবরে নির্বাচন করতে যাচ্ছি।’
এটি ইমরান খানের জন্য সুসংবাদ। তবে শাহবাজ তাঁকে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেবেন বলে মনে হয় না।
কোনো সন্দেহ নেই যে ইমরান খান গভীর সংকটে পড়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। ইমরান খানের দল ভেঙে গেছে। বিচার বিভাগের একটি অংশ তাঁর পক্ষে অবস্থান নিলেও এখন অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাইছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র জানে, জেনারেলেরা ইমরানকে ‘জিন’ বানিয়েছিল এবং সেই জেনারেলরাই জিনটিকে বোতলে ভরার চেষ্টা করছেন।
ইমরান খানই পাকিস্তানের প্রথম নেতা, যিনি এমন গভীর সমস্যায় পড়েছেন। এর আগে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জেনারেল আইয়ুব খান লালন-পালন করেছিলেন এবং জেনারেল জিয়া তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দলকে নির্মূল করা হয়নি। তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টো দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তাঁর নাতি বিলাওয়াল এখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নওয়াজকে জেনারেল জিয়া রাজনীতিতে উঠিয়ে এনেছিলেন এবং জেনারেল মোশাররফ তাঁকে উৎখাত করেন। কিন্তু তাঁর ভাই এখন পাকিস্তান শাসন করছেন। শাহবাজ শরিফ ইমরান খানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা বা গ্রেপ্তার করতে পারেন। কিন্তু তাঁকে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে পারবেন কি? কারণ, শরিফ সরকারের খারাপ শাসন ও অর্থনৈতিক ভুলই ইমরান খানের সবচেয়ে বড় শক্তি।
পছন্দ করুন বা না করুন, ইমরান খান এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি তাঁর রাজনৈতিক ভুলের জন্য এখন মাশুল দিচ্ছেন। কারণ, তিনি কখনোই দলকে গণতান্ত্রিক নীতিতে দলকে সংগঠিত করেননি। প্রধানমন্ত্রী নয়, রাজার মতো দেশ চালাচ্ছিলেন। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল। উল্টো তিনি সেনাবাহিনীর বদলি ও পদায়নে হস্তক্ষেপ শুরু করে ‘আসল প্রভুদের’ বিরক্ত করেন।
নিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বানচালের চেষ্টায় ইমরান খান জাতীয় পরিষদও ভেঙে দেন। কিন্ত তাঁর সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। গত বছরের ২৫ মে এবং ২৬ নভেম্বর বিপুল সমর্থক নিয়ে ইসলামাবাদ দখল করার চেষ্টা করেছিলেন ইমরান। তাঁর সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেন। তিনি ভেবেছিলেন, তিনি সরকারকে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারেন। কিন্তু তিনি আবারও ব্যর্থ হন।
ইমরান কখনোই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপে বসার চেষ্টা করেননি। তিনি কখনোই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে একমত হওয়ার চেষ্টা করেননি যে সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বুঝতে শুরু করেছে, আইনের শাসনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান। সেনাবাহিনীকে অবশ্যই রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। ইমরান খানের মতো সেনাবাহিনীর পিঠে চড়ে ক্ষমতায় যাওয়া যে ঠিক নয়, তা রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত।
নওয়াজ শরিফের মতোই রাজনীতিতে ব্রাত্যজন হতে পারেন ইমরান খান। মনে রাখা দরকার, নওয়াজের বিরুদ্ধে ‘ভারত কার্ড’ ভয়ংকরভাবে ব্যবহার করা হয়। তাঁকে ‘মোদি কা ইয়ার’ বলেছিলেন ইমরান খান। এখন একই কার্ড খেলছে শাহবাজ শরিফরা।
শাহবাজ শরিফেরা ৯ মেকে ইমরান খানের জন্য ‘নাইন-ইলেভেনে’ পরিণত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি মনে করি, নওয়াজ শরিফ দেশে ফিরতে পারলে ইমরান খানও ফিরতে পারবেন, হয়তো কয়েক বছর পর। তিনি এখন খাদের কিনারে, কিন্তু একেবারে ফুরিয়ে যাননি।
জিও নিউজে প্রকাশিত পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মিরের লেখা অনুবাদ করেছেন মারুফ ইসলাম
নিজের চেনা-পরিচিত বিশ্ব বদলে দিতে প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই একটি দিন আসে। পাকিস্তানে সেই দিন কি এল? সম্ভবত এবং সেদিনটি বোধ হয় ৯ মে। ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তানের পুরোনো ভবন, রাওয়ালপিন্ডির চারটি মেট্রো বাসস্টেশন ও কর্পস কমান্ডার হাউস ভাঙচুর চালায় ওই দিন। লাহোরের বেশ কয়েকটি শহরে জাতীয় বীরদের স্মৃতিস্তম্ভ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়েও হামলা হয়।
কারণ, ওই দিনই আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসান (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দেশজুড়ে সহিংসতা চালান তাঁরা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে হামলাকারী চার নারীসহ আরও কয়েকজনের ছবিও প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেনের হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিবাসন নীতির পরিবর্তন করেছে। ফলে জাতিগত বিদ্বেষ, ঘৃণা ও অপরাধ বেড়েছে। বলা বাহুল্য, নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসবাদী হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে বদলে দিয়েছে। আর নাইন-ফাইভ (৯ মে) বদলে দিয়েছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ওই দিনের সহিংসতাকে ‘ইমরান খানের নাইন-ইলেভেন’ বলে অভিহিত করেছেন। সেদিনই ইমরান নিজেই নিজের কবর খুঁড়েছেন।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, ৯ মের ভাঙচুর ও হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেনের হামলার মতো। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘ইমরান খান ও তাঁর সমর্থকেরা সন্ত্রাসীদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ৯ মেকে ‘জাতীয় ট্র্যাজেডি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
যাঁরা পাকিস্তানের বাইরে আছেন, তাঁরা হয়তো নাইন-ফাইভের সঙ্গে নাইন-ইলেভেনের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের ঘটনা ঘটিয়েছিল বহিরাগত সন্ত্রাসীরা, আর পাকিস্তানে নাইন-ফাইভের ঘটনা ঘটিয়েছে ভেতরের মানুষেরাই। তাঁরা কেউ ভারত বা অন্য কোনো দেশ থেকে আসেননি। তারা সবাই পাকিস্তানি এবং অনেকের অতীত সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
লাহোরের ধনী ও সুশিক্ষিত নারী খাদিজা শাহকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। তিনি ৯ মে লাহোরে কর্প কমান্ডার হাউসের সামনে সহিংস বিক্ষোভে যোগ দেন। বিক্ষোভকারীরা সেদিন কর্প কমান্ডার হাউসে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই ঘটনায় ২৩ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ নওয়াজের নাতনি, তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. সালমান শাহের মেয়েও। তিন সন্তানের জননী এই নারী পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার।
লাহোরের কর্প কমান্ডার হাউসকে ‘জিন্নাহ হাউস’ও বলা হয়। কারণ, এটি একসময় পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বাসভবন ছিল। পাকিস্তানের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান কখনোই এই বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেননি। তিনি এটিকে ১৯৫৯ সালে কর্প কমান্ডারের বাসভবন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গ্রেপ্তারের দুই দিন পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইমরান খানকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে সরকার ৯ মের হামলার ঘটনায় সারা দেশ থেকে পিটিআইয়ের সাড়ে চার হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে। ইমরান সরকারের মানবাধিকারমন্ত্রী ছিলেন ড. শিরিন মাজারি। ওই দিন তিনি কোনো বিক্ষোভে যোগ দেননি; সহিংসতায় প্ররোচনা দিয়েছেন এমন প্রমাণও নেই। উপরন্তু তিনি থাকেন ইসলামাবাদে। তবু তাঁকে পুরোনো কালাকানুনে (মেইনটেন্যান্স অব পাবলিক অর্ডার) গ্রেপ্তার করা হয়।
ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ৯ মের পর শিরিনকে তিনবার জামিন দিয়েছেন এবং প্রতিবারই জামিনে মুক্তির পরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশেষে গতকাল বুধবার তিনি পিটিআই থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
সরকারের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা এমন অনেক নারীকে আমি চিনি, যারা পিটিআইয়ের সক্রিয় কর্মী নন। তাঁরা মূলত ক্রিকেটার ইমরান খানের ভক্ত। তারপরও গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁদের এখন এদিক-ওদিক পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ফাইয়াজ উল হাসান চৌহানও পিটিআই ছেড়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ইমরান খান পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ চান।
অন্যদিকে ইমরান খান দাবি করেছেন, তাঁর দল কখনোই সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেনি। তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নাইন-ফাইভের সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত করেন।
প্রথম দিকে ইমরান খান বলেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকে কিছু গোপন সমর্থন এবং বিচার বিভাগের কাছ থেকে প্রকাশ্য সমর্থন আশা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন পরই দেখা গেল, ইমরান কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছেন।
সেনাবাহিনী তাঁর ওপর আগের চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছে। কারণ, ৯ মে একটি টার্নিং পয়েন্ট। ওই দিন ইমরান খান দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের (সামরিক বাহিনী) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শহুরে অভিজাতদের উসকে দিয়েছিলেন।
খাদিজা শাহ তেমনই একজন নারী। তিনি পাঞ্জাবের সুশিক্ষিত শহুরে অভিজাতদের প্রতিনিধিত্ব করেন। খাদিজারা দীর্ঘদিন ধরে সামরিক স্বৈরশাসকদের স্বাভাবিক মিত্র ছিল। কিন্তু এখন সেই অভিজাতরা আর্মি জেনারেলদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবার ‘ভারত কার্ড’ খেলা শুরু হয়েছে। ইমরান খানের রাজনৈতিক বিরোধীরা বলছেন, ভারতীয় মিডিয়া ইমরান খানের প্রশংসা করছে। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমের আনুকূল্য পাচ্ছেন।
ভারতীয় সাংবাদিক সুশান্ত সারিনের একটি ভিডিও ক্লিপ পাকিস্তানের প্রায় সব টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। ভিডিওতে সারিন বলছেন, ‘ইমরান খান তাঁর স্বপ্ন। কারণ তিনি পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছেন।’ এসব কারণে অনেকেই ইমরানকে ভারতীয় এজেন্ট বলছেন।
এর আগে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহকে এফ এম আইয়ুব খান ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন, বেনজির ভুট্টোকে জেনারেল জিয়া ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন এবং জেনারেল মোশাররফের সমর্থকেরা নওয়াজ শরিফকে ভারতীয় এজেন্ট বলেছিলেন।
এমন পরিস্থিতিতে পিটিআই নেতাদের মনোবল ভেঙে গেছে। তাঁরা অনেকেই পিটিআই ছেড়ে যাচ্ছেন। গভীর এক সুড়ঙ্গের দিকে ইমরান খান এগিয়ে যাচ্ছেন কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন।
শাহবাজ শরিফের সরকার ইতিমধ্যে সংবিধানের ২৪৫ অনুচ্ছেদের অধীনে পাঞ্জাব এবং খাইবার-পাখতুনখাওয়া পাশাপাশি রাজধানী ইসলামাবাদেও সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। সরকার বলছে, ১৯৫২ সালের পাকিস্তান সামরিক আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত সামরিক আদালতে সামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার হবে।
সামরিক স্থাপনায় হামলার সঙ্গে জড়িতদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শাস্তি দেওয়া উচিত এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে সেনা আইনে বেসামরিক নাগরিকদের বিচার করলে, তা বিতর্কিত হয়ে উঠবে। সামরিক আদালত পাকিস্তানে নতুন কিছু নয়, কিন্তু এই আদালত পাকিস্তানের গণতন্ত্রের চেহারাকে কলঙ্কিত করবে নিঃসন্দেহে।
চলতি বছর পাকিস্তানে নির্বাচনের বছর। এ বছরের আগস্টে বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। আগামী অক্টোবরে নির্বাচন হওয়ার কথা। দেওয়ানি আদালতে আগস্টের আগে ৯ মের আসামিদের বিচার শেষ করা কঠিন হবে। তবে সামরিক আদালত আগস্টের আগে বিচার শেষ করার চেষ্টা করবে এবং যদি ইমরান খান আগস্টের আগে দোষী সাব্যস্ত না হন, তাহলে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে।
পাকিস্তান ২২ কোটি মানুষের একটি দেশ। তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম সেনাবাহিনী রয়েছে। সেনাবাহিনী ১৯৪৭ সাল থেকে ৩৩ বছর ধরে সরাসরি পাকিস্তান শাসন করেছে এবং এটি এখনো দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান সামরিক শাসনের দিকে যাচ্ছে নাকি ইমরান খান বিচার বিভাগের সাহায্যে যুদ্ধে জয়ী হতে যাচ্ছেন, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সম্প্রতি আমার দেখা হয়েছে। আলভি সব সময় ইমরানকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তবে এবার তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার, তিনি সতর্ক। ইমরান খানের অন্য সমর্থকদের মতোই আলভিকে বিষণ্ন দেখা গেছে। তিনি নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নন এবং মার্শাল ল জারির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। তাঁকে ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, ‘৯ মের সহিংসতার জন্য প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো আলোচনা নয়।’ আমি তখন হেসে বললাম, ‘জনসম্মুখে স্বীকারোক্তি দিলে তাঁকে সামরিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক ভাষা এবং মুখের অভিব্যক্তি দেখে যতটুকু বুঝলাম, তিনি ইমরান খানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। কারণ, বিরোধীদলীয় নেতা থাকার সময় ইমরান তাঁকে দুবার কারাগারে পাঠিয়েছিলেন।
আমি নির্বাচন সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা এই বছরের অক্টোবরে নির্বাচন করতে যাচ্ছি।’
এটি ইমরান খানের জন্য সুসংবাদ। তবে শাহবাজ তাঁকে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেবেন বলে মনে হয় না।
কোনো সন্দেহ নেই যে ইমরান খান গভীর সংকটে পড়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। ইমরান খানের দল ভেঙে গেছে। বিচার বিভাগের একটি অংশ তাঁর পক্ষে অবস্থান নিলেও এখন অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাইছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র জানে, জেনারেলেরা ইমরানকে ‘জিন’ বানিয়েছিল এবং সেই জেনারেলরাই জিনটিকে বোতলে ভরার চেষ্টা করছেন।
ইমরান খানই পাকিস্তানের প্রথম নেতা, যিনি এমন গভীর সমস্যায় পড়েছেন। এর আগে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জেনারেল আইয়ুব খান লালন-পালন করেছিলেন এবং জেনারেল জিয়া তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দলকে নির্মূল করা হয়নি। তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টো দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং তাঁর নাতি বিলাওয়াল এখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নওয়াজকে জেনারেল জিয়া রাজনীতিতে উঠিয়ে এনেছিলেন এবং জেনারেল মোশাররফ তাঁকে উৎখাত করেন। কিন্তু তাঁর ভাই এখন পাকিস্তান শাসন করছেন। শাহবাজ শরিফ ইমরান খানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা বা গ্রেপ্তার করতে পারেন। কিন্তু তাঁকে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে পারবেন কি? কারণ, শরিফ সরকারের খারাপ শাসন ও অর্থনৈতিক ভুলই ইমরান খানের সবচেয়ে বড় শক্তি।
পছন্দ করুন বা না করুন, ইমরান খান এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি তাঁর রাজনৈতিক ভুলের জন্য এখন মাশুল দিচ্ছেন। কারণ, তিনি কখনোই দলকে গণতান্ত্রিক নীতিতে দলকে সংগঠিত করেননি। প্রধানমন্ত্রী নয়, রাজার মতো দেশ চালাচ্ছিলেন। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল। উল্টো তিনি সেনাবাহিনীর বদলি ও পদায়নে হস্তক্ষেপ শুরু করে ‘আসল প্রভুদের’ বিরক্ত করেন।
নিজের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বানচালের চেষ্টায় ইমরান খান জাতীয় পরিষদও ভেঙে দেন। কিন্ত তাঁর সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। গত বছরের ২৫ মে এবং ২৬ নভেম্বর বিপুল সমর্থক নিয়ে ইসলামাবাদ দখল করার চেষ্টা করেছিলেন ইমরান। তাঁর সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেন। তিনি ভেবেছিলেন, তিনি সরকারকে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারেন। কিন্তু তিনি আবারও ব্যর্থ হন।
ইমরান কখনোই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপে বসার চেষ্টা করেননি। তিনি কখনোই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে একমত হওয়ার চেষ্টা করেননি যে সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বুঝতে শুরু করেছে, আইনের শাসনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান। সেনাবাহিনীকে অবশ্যই রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। ইমরান খানের মতো সেনাবাহিনীর পিঠে চড়ে ক্ষমতায় যাওয়া যে ঠিক নয়, তা রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত।
নওয়াজ শরিফের মতোই রাজনীতিতে ব্রাত্যজন হতে পারেন ইমরান খান। মনে রাখা দরকার, নওয়াজের বিরুদ্ধে ‘ভারত কার্ড’ ভয়ংকরভাবে ব্যবহার করা হয়। তাঁকে ‘মোদি কা ইয়ার’ বলেছিলেন ইমরান খান। এখন একই কার্ড খেলছে শাহবাজ শরিফরা।
শাহবাজ শরিফেরা ৯ মেকে ইমরান খানের জন্য ‘নাইন-ইলেভেনে’ পরিণত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি মনে করি, নওয়াজ শরিফ দেশে ফিরতে পারলে ইমরান খানও ফিরতে পারবেন, হয়তো কয়েক বছর পর। তিনি এখন খাদের কিনারে, কিন্তু একেবারে ফুরিয়ে যাননি।
জিও নিউজে প্রকাশিত পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মিরের লেখা অনুবাদ করেছেন মারুফ ইসলাম
কোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
২ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৫ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
১০ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
১২ দিন আগে