ফজলুল কবির
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এখনো ভীষণভাবে বাস্তব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে—ট্রাম্প বিদায় নিয়েছেন ঠিক, কিন্তু ট্রাম্পিজম রয়ে গেছে বহালতবিয়তে।
সাধারণত, মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সাবেক হওয়ার পরপরই রাজনীতি থেকে একরকম মুখ ফিরিয়ে নেন। বিশেষত নিজের উত্তরসূরিদের নিয়ে সহজে কিছু বলেন না। ব্যস্ত থাকেন সামাজিক বিভিন্ন দায়িত্ব, বই পড়া ও পাঠাগার গড়ার মতো কাজে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রম। বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে গিয়ে হোক বা কোনো টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে বসে হোক, বাইডেনকে রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছেন উপলক্ষ পাওয়ামাত্র। আর বারবার করে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে তিনি ফিরে আসছেন।
অনিচ্ছায় বিদায় নেওয়ার সময়ই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ফের প্রার্থী হবেন। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে তিনি তা করবেন—এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর অনুসারীরাও এ বিষয়ে বেশ নিঃসংশয়। ফলে লিন্ডসে গ্রাহামের মতো ট্রাম্পভক্তরা এখনো তাঁর পথ চেয়ে আছেন। রিপাবলিকান দলে তিনি যে একচ্ছত্র ক্ষমতার বিস্তার করেছিলেন, তার অনেকখানিই এখনো অটুট। এই আধিপত্য দিয়েই তিনি রিপাবলিকান দলকে প্রভাবিত করতে চাইছেন। লক্ষ্য, ২০২২ সালের শেষে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচন।
ক্ষমতায় থাকার সময়ই রিপাবলিকান দলে ট্রাম্প ও তাঁর কট্টর অনুসারীরা মধ্য-ডানপন্থীদের একরকম কোণঠাসা করে ফেলেন। এ নিয়ে আগেও বিস্তর আলাপ হয়েছে। রক্ষণশীল মার্কিনদের বদলে উগ্র ডানপন্থী ও উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরাই হয়ে ওঠে রিপাবলিকানদের শক্তির উৎস। এর সবচেয়ে বড় নিদর্শন বলা যায় গত বছরের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হওয়া হামলা।
রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে শুরুতে এই হামলার নিন্দা জানানো হলেও তারা কিন্তু কখনোই এ জন্য ট্রাম্পকে সরাসরি দায়ী করেনি। এটা যদি শুধু রাজনীতির স্বার্থে হয়ে থাকত, তবে প্রকাশ্যে দায়ী হিসেবে ঘোষণা না করলেও বাস্তবে দলে ট্রাম্প ও ট্রাম্পপন্থিদের কোণঠাসা করা হতো। কিন্তু তেমনটি হয়নি। বরং ট্রাম্পপন্থিরাই রিপাবলিকান দলে বেশ পোক্ত জায়গা করে আছে এখন। উপরন্তু, ক্যাপিটলে হামলা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের বিষয়েও তারা কোনো আগ্রহ দেখায়নি।
বিষয়টি এখানেই থেমে নেই; ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এমন ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প এরই মধ্যে ১০ কোটি ডলারের তহবিল গুছিয়ে নিয়েছেন। এর পর রিপাবলিকান দল ও এর সমর্থকেরা তাঁকে প্রার্থী হিসেবে খারিজ করতে পারে, শুধু যদি পোক্ত কোনো বিকল্প পায়। কিন্তু ট্রাম্পের বিপরীতে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে এমন যে দুজনের দেখা পাওয়া যাচ্ছে এই মুহূর্তে, তাঁরা ট্রাম্পেরই দুর্বল সংস্করণ। তাঁদের একজন ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস, অন্যজন ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এর বাইরে ভিন্ন ধারার শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না পেলে রিপাবলিকানরা কট্টর ডানপন্থী ধারার মূল সংস্করণ ডোনাল্ড ট্রাম্পেই আস্থা রাখবেন বলে মনে হচ্ছে।
এর কারণও আছে। গেল নির্বাচনের ফল প্রকাশ শুরুর আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ তুলে আসছেন। ক্ষমতা হস্তান্তর, এমনকি বাইডেন প্রশাসনের প্রায় এক বছর কেটে গেলেও তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা এখনো সেই অবস্থান থেকে একচুলও সরেননি। রিপাবলিকান ভোটারদের ৮০ শতাংশই এই মিথ্যাকেই সত্য বলে মনে করেন। শুধু তাই নয়, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের নামে সাধারণ ভোটারদের, বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গ বা অভিবাসী মার্কিন, যাদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক দলের প্রতি অনুরাগ বেশি, তাদের ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলা হচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ অন্তত ১৮টি অঙ্গরাজ্য নিয়েছে। আগাম ভোট বা ডাকযোগে ভোট নিয়ে সংশয় বেশ ভালোভাবেই ছড়াতে পেরেছেন ট্রাম্প ও তাঁর অনুসারীরা। আর এর মাধ্যমে এই বিশ্বাসও তিনি ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন যে, ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে আইনসিদ্ধ পথে জয় পাওয়া অসম্ভব। এর বড় প্রভাব পড়বে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে।
গেল নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলেও ভোট কিন্তু পেয়েছেন সাড়ে ৭ কোটি। এই ভোটারদের একটা বড় অংশই ট্রাম্প শুধু নয়, ট্রাম্পের দেখানো পথের ওপর আস্থা রাখেন। ক্যাপিটল হিলে হামলার পর এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ট্রাম্পকে পরিত্যাগ করলেও এই সংখ্যা বেশি নয়। এর মাত্রাটি বোঝা যাবে চলতি বছরের প্রথমার্ধেই। আগামী জুনের মধ্যেই আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান দলের প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট হবে। এই প্রাথমিক বাছাই বা প্রাইমারিতেই বোঝা যাবে দলটি কতটা ডানে হেলেছে।
বলে রাখা ভালো, বর্তমান কংগ্রেসে থাকা ২১২ রিপাবলিকান সদস্যের মধ্যে মাত্র ১০ জন ক্যাপিটল হিল হামলার পর ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একজন হত্যার হুমকি পেয়ে রাজনীতি থেকেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। দলে ট্রাম্পের প্রভাববলয়টি এ দুই তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে। ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পবিরোধীদের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। আর তেমনটি হলে দলে ট্রাম্পের প্রভাব আরও বাড়বে। হেরে গেলে কী হবে, তা সবাই জানে—কারচুপির অভিযোগ। যেকোনোটিই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকে আরও ডানে নিয়ে যাবে, যা ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার রয়্যাল রোডস বিশ্ববিদ্যালয়ের কাসকেড ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হোমার ডিক্সনের সেই সতর্কবার্তাকেই সামনে আনে—সরাসরি একনায়কতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বিশ্লেষণে অবশ্য কিছুটা আশার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত বছর অভ্যন্তরীণ ডানপন্থী সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস ঘটনা অন্য বছরগুলোর চেয়ে কম ঘটেছে। নিউ আমেরিকান ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ডানপন্থী সন্ত্রাসী হামলায় একজনও মারা যায়নি যুক্তরাষ্ট্রে। অন্য সহিংসতার ঘটনা কিছু ঘটলেও ক্ষতির পরিমাণ ছিল কম।
কিন্তু এই বিশ্লেষণেও এ কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে সহিংস ঘটনা কম ঘটলেও যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র ডানপন্থার সংকট আগের মতোই আছে। এখনো ট্রাম্প সমর্থক গোষ্ঠীর কাছ থেকে প্রতিনিয়ত হুমকি পাচ্ছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। ফলে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে এটি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। রক্ষণশীল ঘরানার অন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ ডব্লিউ বুশ বা রোনাল্ড রিগ্যানের মতো কু ক্লাক্স ক্লান নেতা ডেভিড ডিউকের মতো নেতাদের মূলধারার রাজনীতিতে নিষেধ করছেন না ট্রাম্প ও তাঁর বৃত্ত। ফলে একটা ছাড়পত্র তারা পেয়ে যাচ্ছে। নেতৃত্বের জন্য তাদের মধ্যেও একধরনের কোন্দল আছে। এখন পর্যন্ত এটিই একটা সুরক্ষা বর্ম হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু ক্ষমতার সমীকরণের সামনে এই অন্তর্কোন্দল গৌণ হয়ে যেতে পারে, যা অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে মার্কিন রাজনীতিতে। বলে রাখা ভালো—ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশ বাঁচাতে সহিংসতা অনুমোদন করছেন ৩০ শতাংশ রিপাবলিকান।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে যে গণতন্ত্রের কথা বলে আসছে, তা আজ তাদের ঘরেই হুমকির মুখে আছে। হ্যাঁ, বাইডেন মার্কিন গণতন্ত্রের ধ্বজাটি তুলে ধরতে চাইছেন। সে জন্য নানা উদ্যোগও নিচ্ছে তাঁর প্রশাসন, যা আবার বিশ্বের একেক দেশে একেক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পেছনে থাকা মূল কারণ অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিভাজন ইত্যাদির মীমাংসা না করে ঐক্য, সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র ইত্যাদির কথা বলে কোনো লাভ নেই। বৈষম্য ও বিভাজন এমন দুই বিষাক্ত উপাদান, যা কোনো একটি রাষ্ট্রে বা সমাজে ঘাঁটি গাড়লে সেখানে বাকি সব মূল্যবোধ ঠুনকো হয়ে যায়, যার পরিণতি সে দেশের সরকার বা অভিজাত শ্রেণিকে নয়, সাধারণ মানুষকে ভোগ করতে হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের বহু দেশের দিকে তাকালেই এর প্রমাণ মিলবে। বাইডেন প্রশাসন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার যে মিশনে নেমেছে, তার আগে ঘরের শান্তি নিশ্চিত করাই এখন বেশি দরকার বলে মনে হচ্ছে। না হলে, যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে বিশ্বের বহু দেশের প্রশাসন নিজেদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, বাক্স্বাধীনতা হরণসহ নানা নাগরিক অধিকারের সীমা ছোট করে আনার উদ্যোগ ও ক্রিয়াকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করবে। তেমনটি হলে নাভিশ্বাস উঠবে সাধারণ মানুষেরই।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এখনো ভীষণভাবে বাস্তব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে—ট্রাম্প বিদায় নিয়েছেন ঠিক, কিন্তু ট্রাম্পিজম রয়ে গেছে বহালতবিয়তে।
সাধারণত, মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সাবেক হওয়ার পরপরই রাজনীতি থেকে একরকম মুখ ফিরিয়ে নেন। বিশেষত নিজের উত্তরসূরিদের নিয়ে সহজে কিছু বলেন না। ব্যস্ত থাকেন সামাজিক বিভিন্ন দায়িত্ব, বই পড়া ও পাঠাগার গড়ার মতো কাজে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রম। বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে গিয়ে হোক বা কোনো টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে বসে হোক, বাইডেনকে রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছেন উপলক্ষ পাওয়ামাত্র। আর বারবার করে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে তিনি ফিরে আসছেন।
অনিচ্ছায় বিদায় নেওয়ার সময়ই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ফের প্রার্থী হবেন। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে তিনি তা করবেন—এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর অনুসারীরাও এ বিষয়ে বেশ নিঃসংশয়। ফলে লিন্ডসে গ্রাহামের মতো ট্রাম্পভক্তরা এখনো তাঁর পথ চেয়ে আছেন। রিপাবলিকান দলে তিনি যে একচ্ছত্র ক্ষমতার বিস্তার করেছিলেন, তার অনেকখানিই এখনো অটুট। এই আধিপত্য দিয়েই তিনি রিপাবলিকান দলকে প্রভাবিত করতে চাইছেন। লক্ষ্য, ২০২২ সালের শেষে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচন।
ক্ষমতায় থাকার সময়ই রিপাবলিকান দলে ট্রাম্প ও তাঁর কট্টর অনুসারীরা মধ্য-ডানপন্থীদের একরকম কোণঠাসা করে ফেলেন। এ নিয়ে আগেও বিস্তর আলাপ হয়েছে। রক্ষণশীল মার্কিনদের বদলে উগ্র ডানপন্থী ও উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরাই হয়ে ওঠে রিপাবলিকানদের শক্তির উৎস। এর সবচেয়ে বড় নিদর্শন বলা যায় গত বছরের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হওয়া হামলা।
রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে শুরুতে এই হামলার নিন্দা জানানো হলেও তারা কিন্তু কখনোই এ জন্য ট্রাম্পকে সরাসরি দায়ী করেনি। এটা যদি শুধু রাজনীতির স্বার্থে হয়ে থাকত, তবে প্রকাশ্যে দায়ী হিসেবে ঘোষণা না করলেও বাস্তবে দলে ট্রাম্প ও ট্রাম্পপন্থিদের কোণঠাসা করা হতো। কিন্তু তেমনটি হয়নি। বরং ট্রাম্পপন্থিরাই রিপাবলিকান দলে বেশ পোক্ত জায়গা করে আছে এখন। উপরন্তু, ক্যাপিটলে হামলা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের বিষয়েও তারা কোনো আগ্রহ দেখায়নি।
বিষয়টি এখানেই থেমে নেই; ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এমন ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প এরই মধ্যে ১০ কোটি ডলারের তহবিল গুছিয়ে নিয়েছেন। এর পর রিপাবলিকান দল ও এর সমর্থকেরা তাঁকে প্রার্থী হিসেবে খারিজ করতে পারে, শুধু যদি পোক্ত কোনো বিকল্প পায়। কিন্তু ট্রাম্পের বিপরীতে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে এমন যে দুজনের দেখা পাওয়া যাচ্ছে এই মুহূর্তে, তাঁরা ট্রাম্পেরই দুর্বল সংস্করণ। তাঁদের একজন ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস, অন্যজন ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এর বাইরে ভিন্ন ধারার শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না পেলে রিপাবলিকানরা কট্টর ডানপন্থী ধারার মূল সংস্করণ ডোনাল্ড ট্রাম্পেই আস্থা রাখবেন বলে মনে হচ্ছে।
এর কারণও আছে। গেল নির্বাচনের ফল প্রকাশ শুরুর আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ তুলে আসছেন। ক্ষমতা হস্তান্তর, এমনকি বাইডেন প্রশাসনের প্রায় এক বছর কেটে গেলেও তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা এখনো সেই অবস্থান থেকে একচুলও সরেননি। রিপাবলিকান ভোটারদের ৮০ শতাংশই এই মিথ্যাকেই সত্য বলে মনে করেন। শুধু তাই নয়, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের নামে সাধারণ ভোটারদের, বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গ বা অভিবাসী মার্কিন, যাদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক দলের প্রতি অনুরাগ বেশি, তাদের ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলা হচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপ অন্তত ১৮টি অঙ্গরাজ্য নিয়েছে। আগাম ভোট বা ডাকযোগে ভোট নিয়ে সংশয় বেশ ভালোভাবেই ছড়াতে পেরেছেন ট্রাম্প ও তাঁর অনুসারীরা। আর এর মাধ্যমে এই বিশ্বাসও তিনি ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন যে, ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে আইনসিদ্ধ পথে জয় পাওয়া অসম্ভব। এর বড় প্রভাব পড়বে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে।
গেল নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হলেও ভোট কিন্তু পেয়েছেন সাড়ে ৭ কোটি। এই ভোটারদের একটা বড় অংশই ট্রাম্প শুধু নয়, ট্রাম্পের দেখানো পথের ওপর আস্থা রাখেন। ক্যাপিটল হিলে হামলার পর এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ট্রাম্পকে পরিত্যাগ করলেও এই সংখ্যা বেশি নয়। এর মাত্রাটি বোঝা যাবে চলতি বছরের প্রথমার্ধেই। আগামী জুনের মধ্যেই আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান দলের প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট হবে। এই প্রাথমিক বাছাই বা প্রাইমারিতেই বোঝা যাবে দলটি কতটা ডানে হেলেছে।
বলে রাখা ভালো, বর্তমান কংগ্রেসে থাকা ২১২ রিপাবলিকান সদস্যের মধ্যে মাত্র ১০ জন ক্যাপিটল হিল হামলার পর ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একজন হত্যার হুমকি পেয়ে রাজনীতি থেকেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। দলে ট্রাম্পের প্রভাববলয়টি এ দুই তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে। ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পবিরোধীদের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। আর তেমনটি হলে দলে ট্রাম্পের প্রভাব আরও বাড়বে। হেরে গেলে কী হবে, তা সবাই জানে—কারচুপির অভিযোগ। যেকোনোটিই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকে আরও ডানে নিয়ে যাবে, যা ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার রয়্যাল রোডস বিশ্ববিদ্যালয়ের কাসকেড ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হোমার ডিক্সনের সেই সতর্কবার্তাকেই সামনে আনে—সরাসরি একনায়কতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বিশ্লেষণে অবশ্য কিছুটা আশার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত বছর অভ্যন্তরীণ ডানপন্থী সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস ঘটনা অন্য বছরগুলোর চেয়ে কম ঘটেছে। নিউ আমেরিকান ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ডানপন্থী সন্ত্রাসী হামলায় একজনও মারা যায়নি যুক্তরাষ্ট্রে। অন্য সহিংসতার ঘটনা কিছু ঘটলেও ক্ষতির পরিমাণ ছিল কম।
কিন্তু এই বিশ্লেষণেও এ কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে সহিংস ঘটনা কম ঘটলেও যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র ডানপন্থার সংকট আগের মতোই আছে। এখনো ট্রাম্প সমর্থক গোষ্ঠীর কাছ থেকে প্রতিনিয়ত হুমকি পাচ্ছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। ফলে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে এটি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। রক্ষণশীল ঘরানার অন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ ডব্লিউ বুশ বা রোনাল্ড রিগ্যানের মতো কু ক্লাক্স ক্লান নেতা ডেভিড ডিউকের মতো নেতাদের মূলধারার রাজনীতিতে নিষেধ করছেন না ট্রাম্প ও তাঁর বৃত্ত। ফলে একটা ছাড়পত্র তারা পেয়ে যাচ্ছে। নেতৃত্বের জন্য তাদের মধ্যেও একধরনের কোন্দল আছে। এখন পর্যন্ত এটিই একটা সুরক্ষা বর্ম হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু ক্ষমতার সমীকরণের সামনে এই অন্তর্কোন্দল গৌণ হয়ে যেতে পারে, যা অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে মার্কিন রাজনীতিতে। বলে রাখা ভালো—ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশ বাঁচাতে সহিংসতা অনুমোদন করছেন ৩০ শতাংশ রিপাবলিকান।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে যে গণতন্ত্রের কথা বলে আসছে, তা আজ তাদের ঘরেই হুমকির মুখে আছে। হ্যাঁ, বাইডেন মার্কিন গণতন্ত্রের ধ্বজাটি তুলে ধরতে চাইছেন। সে জন্য নানা উদ্যোগও নিচ্ছে তাঁর প্রশাসন, যা আবার বিশ্বের একেক দেশে একেক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পেছনে থাকা মূল কারণ অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিভাজন ইত্যাদির মীমাংসা না করে ঐক্য, সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র ইত্যাদির কথা বলে কোনো লাভ নেই। বৈষম্য ও বিভাজন এমন দুই বিষাক্ত উপাদান, যা কোনো একটি রাষ্ট্রে বা সমাজে ঘাঁটি গাড়লে সেখানে বাকি সব মূল্যবোধ ঠুনকো হয়ে যায়, যার পরিণতি সে দেশের সরকার বা অভিজাত শ্রেণিকে নয়, সাধারণ মানুষকে ভোগ করতে হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের বহু দেশের দিকে তাকালেই এর প্রমাণ মিলবে। বাইডেন প্রশাসন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার যে মিশনে নেমেছে, তার আগে ঘরের শান্তি নিশ্চিত করাই এখন বেশি দরকার বলে মনে হচ্ছে। না হলে, যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে বিশ্বের বহু দেশের প্রশাসন নিজেদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, বাক্স্বাধীনতা হরণসহ নানা নাগরিক অধিকারের সীমা ছোট করে আনার উদ্যোগ ও ক্রিয়াকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করবে। তেমনটি হলে নাভিশ্বাস উঠবে সাধারণ মানুষেরই।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৩ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৮ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
১০ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
১০ দিন আগে