অনলাইন ডেস্ক
খালিস্তান টাইগার ফোর্সের (কেটিএফ) প্রধান ও কানাডীয় নাগরিক হরদীপ সিং নিজার হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ তুলেছে কানাডা। এ অভিযোগ ওঠার পর আলোচনায় এসেছে ইংরেজি ভাষাভাষী বাঘা বাঘা গোয়েন্দা সংস্থার মিলিত জোট ‘ফাইভ আইজ’।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগের পর কানাডীয় কর্তৃপক্ষ নিজারের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে। এতে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্রও। বিষয়টি এখন কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।
ইতিমধ্যে ফাইভ আইজ গোয়েন্দা জোট ভারতের বিরুদ্ধে আনীত কানাডার দাবিকে সমর্থন করেছে এবং অভিযোগগুলোকে গুরুতর বলে মনে করছে। তবে হরদীপ হত্যার বিষয়ে যৌথ নিন্দা জানাতে কানাডার অনুরোধের ক্ষেত্রে জোটটির অনাগ্রহ দেখা গেছে।
ফাইভ আইজ কী?
ফাইভ আইজ অ্যালায়েন্স হলো গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের একটি নেটওয়ার্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও কানাডা এই জোটের সদস্য।
এই জোটটি ১৯৪৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের চুক্তিতে সূচনা হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে কানাডা এবং পরে ১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সদস্য হয়। পাঁচ দেশ মূল সদস্য হলেও তৃতীয় পক্ষের অনেক দেশই এই জোটের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিক অংশীদার নয়।
ফাইভ আইজ জোটের কাজ কী?
কঠোর গোপনীয়তা ও শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে ফাইভ আইজের কর্মপরিকল্পনা বা কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে ফাইভ আইজে কৌশলগত পরিবর্তন আসে।
জন্মলগ্ন থেকেই রাশিয়া ও চীনকে ঝুঁকি হিসেবেই দেখে আসছে এই সংস্থাটি। ফাইভ আইজের পাঁচটি দেশের মধ্যে সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন তারা প্রত্যেকেই একই জাতীয় স্বার্থ ও সংস্কৃতি লালন করে এবং উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। প্রকৃতপক্ষে এসব সাদৃশ্যই এই পাঁচ দেশকে একই সুতোয় গাঁথতে সক্ষম হয়েছে।
ফাইভ আইজের এই জোটে যুক্ত আছে এফবিআই, এনএসএ, এম ফিফটিন, এম সিক্সটিন, সিএইচকিউ, সিআইএয়ের মতো বড় বড় গোয়েন্দা ও গোপন সংস্থাগুলো।
ফাইভ আইজ রাশিয়া, চীন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো থেকে তাদের জোটভুক্ত ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোর নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব সময় বদ্ধপরিকর। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনসমষ্টির বিভিন্ন তথ্য পর্যবেক্ষণ ও যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে এই জোটভুক্ত দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণই ফাইভ আইজের উদ্দেশ্য। এই গোয়েন্দা জোটের প্রতিটি দেশই বিশ্বের আলাদা আলাদা এবং সুনির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোর ওপর পর্যালোচনা করে থাকে এবং সেসব সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের গোয়েন্দা তৎপরতা সম্পর্কেও জবাবদিহি করতে হয়।
যেমন—আমেরিকার দায়িত্বে আছে রাশিয়া, চীন, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলগুলো। আবার ব্রিটেন নিয়ন্ত্রণ করে মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম রাশিয়ার অঞ্চলগুলো, হংকং এবং ইউরোপ। এভাবে কানাডা নিয়ন্ত্রণ করে লাতিন আমেরিকার অংশ এবং চীন ও রাশিয়ার মধ্যভাগ। নিউজিল্যান্ড যেখানে দেখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্বে আছে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া।
তবে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ওপর নজর রাখার মানে এই নয় যে এই পাঁচটি দেশ নির্দিষ্ট করে রাখা অঞ্চলের বাইরে নজরদারি করতে পারবে না। বরং তারা সর্বদা একে অন্যকে সর্বাত্মক সাহায্য করতে সচেষ্ট থাকে। দায়িত্ব এ রকম ভাগ করা থাকলেও ফাইভ আইজ একসঙ্গেই কাজ করে এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত জোটভুক্ত সব দেশের সম্মতিতেই গ্রহণ করে থাকে।
ফাইভ আইজ গোয়েন্দা জোটের কার্যপ্রণালি বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত। এই জোটের মেরিটাইম ডোমেইনের কাজ হলো কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক অঞ্চলগুলোতে জাহাজ স্থানান্তর-সংক্রান্ত কার্যকলাপ অনুসরণ করা। আবার যুদ্ধবিমান-সংক্রান্ত কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে আছে তাদের অ্যারিয়েল ডোমেইন।
অ্যারিয়েল ডোমেইনে তাদের যুদ্ধবিমান দুই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন পরিচালনা করে, যার মধ্যে আছে বিভিন্ন গুপ্তচর স্যাটেলাইটের প্রতিস্থাপন করা; আরেকটি হলো ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করা। অস্ত্র ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে এই সংস্থাটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে, তাই এসব বিষয়ে কোনো তথ্য পেলে তারা তাদের দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের অবহিত করে।
আবার ফাইভ আইজ সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার ডেটা সরবরাহকরণ ও পর্যালোচনার মতো কাজও করে থাকে। এই গোয়েন্দা জোটের আরেকটি প্রধান কাজ হলো সম্ভাব্য সন্ত্রাসী ও ঝুঁকিপূর্ণ সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করা এবং নজরদারির মাধ্যমে সেগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
অনেক দেশ ফাইভ আইজের থার্ড পার্টি দেশ হয়ে কাজ করে থাকে। ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডসসহ অন্য দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং এসব দেশের সম্মিলিত রূপ গড়ে উঠেছে নাইন আইজ, ফোরটিন আইজ, ফোরটি ওয়ান আইজ হয়ে। এসব জোটগুলো একত্র হয়েছে একই লক্ষ্যে আর তা হলো বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিবিধ কাজের তথ্য পর্যবেক্ষণ এবং তা হস্তান্তরের মাধ্যমে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
রেডিও সিগন্যালের মতো পদ্ধতি অতীতে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কয়েক দশক ধরে প্রযুক্তি যেমন বিকশিত হয়েছে, তেমনি এই দেশগুলোর কাছে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানের উপায়ও বেড়েছে। বর্তমানে জোটের সদস্য দেশগুলো ডিজিটাল ট্র্যাকিং এবং ইন্টারসেপশন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে।
অতীত কার্যকলাপ
ভিয়েতনাম যুদ্ধে ফাইভ আইজের অন্যতম দুই সদস্য দেশ নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আমেরিকাকে সাহায্য করে। তারা উত্তর ভিয়েতনামের বিমান প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের দিকে নজরদারির মাধ্যমে আমেরিকান সৈন্যদের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহের কাজে যুক্ত থাকে।
উপসাগরীয় যুদ্ধ শেষে অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা (এসআইএস) থেকে কুয়েতি সরকারি অফিসে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। আবার সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগী অঞ্চলসহ চীনের সামরিক এবং কূটনৈতিক যোগাযোগের তথ্যাদি ব্রিটেন ও আমেরিকা তাদের নিজেদের ভেতর হস্তান্তর করেছে বলে জানা যায়।
সিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ ২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেনের মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার গোয়েন্দা নথি ফাঁস হয়। তখন বেরিয়ে আসে এই জোট শুধু জোটবহির্ভূত দেশগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তিই করছে না, বরং নিজ দেশের নাগরিকদেরও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী বিতর্কের জন্ম দেয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ভারসাম্য নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
পরিধি সম্প্রসারণ
যেহেতু চীন ও রাশিয়া ক্রমেই বিশ্বে তাদের দাপট বাড়িয়েই চলেছে, এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই ফাইভ আইজের পরিধি সম্প্রসারণের কথা ভাবা হচ্ছে। শুধু ইংরেজি ভাষাভাষী দেশের ভেতরই নয়, বরং এই গণ্ডির বাইরে গিয়ে জাপান, কোরিয়া, ভারত ও জার্মানিকে এই জোটভুক্ত করার প্রস্তাবনা উঠেছে। এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে ফাইভ আইজ পরিবর্তিত হয়ে নাইন আইজ নামে কার্য পরিচালনা করবে জোটটি।
কানাডায় ফাইভ আইজের সঙ্গে জড়িত চারটি মূল সংস্থা: ১. কমিউনিকেশন সিকিউরিটি এস্টাব্লিশমেন্ট (সিএসই)। ২. রয়্যাল কানাডীয় মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি)। ৩. কানাডীয় সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (সিএসআইএস)। ৪. কানাডীয় ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স কমান্ড১
হরদীপের মামলা নিয়ে ফাইভ আইজের অবস্থান
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হরদীপ হত্যা মামলায় ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার সাম্প্রতিক অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় জোটের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে বিবৃতি জারি করেছে। হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল কানাডার তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব জেমস ক্লেভারলি কানাডীয় তদন্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি তিনি চলমান তদন্তের ফলাফল আসার আগ পর্যন্ত সব জাতির সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।
খালিস্তান টাইগার ফোর্সের (কেটিএফ) প্রধান ও কানাডীয় নাগরিক হরদীপ সিং নিজার হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ তুলেছে কানাডা। এ অভিযোগ ওঠার পর আলোচনায় এসেছে ইংরেজি ভাষাভাষী বাঘা বাঘা গোয়েন্দা সংস্থার মিলিত জোট ‘ফাইভ আইজ’।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অভিযোগের পর কানাডীয় কর্তৃপক্ষ নিজারের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে। এতে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্রও। বিষয়টি এখন কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।
ইতিমধ্যে ফাইভ আইজ গোয়েন্দা জোট ভারতের বিরুদ্ধে আনীত কানাডার দাবিকে সমর্থন করেছে এবং অভিযোগগুলোকে গুরুতর বলে মনে করছে। তবে হরদীপ হত্যার বিষয়ে যৌথ নিন্দা জানাতে কানাডার অনুরোধের ক্ষেত্রে জোটটির অনাগ্রহ দেখা গেছে।
ফাইভ আইজ কী?
ফাইভ আইজ অ্যালায়েন্স হলো গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের একটি নেটওয়ার্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও কানাডা এই জোটের সদস্য।
এই জোটটি ১৯৪৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের চুক্তিতে সূচনা হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে কানাডা এবং পরে ১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সদস্য হয়। পাঁচ দেশ মূল সদস্য হলেও তৃতীয় পক্ষের অনেক দেশই এই জোটের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিক অংশীদার নয়।
ফাইভ আইজ জোটের কাজ কী?
কঠোর গোপনীয়তা ও শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে ফাইভ আইজের কর্মপরিকল্পনা বা কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে ফাইভ আইজে কৌশলগত পরিবর্তন আসে।
জন্মলগ্ন থেকেই রাশিয়া ও চীনকে ঝুঁকি হিসেবেই দেখে আসছে এই সংস্থাটি। ফাইভ আইজের পাঁচটি দেশের মধ্যে সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন তারা প্রত্যেকেই একই জাতীয় স্বার্থ ও সংস্কৃতি লালন করে এবং উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। প্রকৃতপক্ষে এসব সাদৃশ্যই এই পাঁচ দেশকে একই সুতোয় গাঁথতে সক্ষম হয়েছে।
ফাইভ আইজের এই জোটে যুক্ত আছে এফবিআই, এনএসএ, এম ফিফটিন, এম সিক্সটিন, সিএইচকিউ, সিআইএয়ের মতো বড় বড় গোয়েন্দা ও গোপন সংস্থাগুলো।
ফাইভ আইজ রাশিয়া, চীন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো থেকে তাদের জোটভুক্ত ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোর নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব সময় বদ্ধপরিকর। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনসমষ্টির বিভিন্ন তথ্য পর্যবেক্ষণ ও যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে এই জোটভুক্ত দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণই ফাইভ আইজের উদ্দেশ্য। এই গোয়েন্দা জোটের প্রতিটি দেশই বিশ্বের আলাদা আলাদা এবং সুনির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোর ওপর পর্যালোচনা করে থাকে এবং সেসব সুনির্দিষ্ট অঞ্চলের গোয়েন্দা তৎপরতা সম্পর্কেও জবাবদিহি করতে হয়।
যেমন—আমেরিকার দায়িত্বে আছে রাশিয়া, চীন, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলগুলো। আবার ব্রিটেন নিয়ন্ত্রণ করে মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম রাশিয়ার অঞ্চলগুলো, হংকং এবং ইউরোপ। এভাবে কানাডা নিয়ন্ত্রণ করে লাতিন আমেরিকার অংশ এবং চীন ও রাশিয়ার মধ্যভাগ। নিউজিল্যান্ড যেখানে দেখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর, অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্বে আছে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া।
তবে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ওপর নজর রাখার মানে এই নয় যে এই পাঁচটি দেশ নির্দিষ্ট করে রাখা অঞ্চলের বাইরে নজরদারি করতে পারবে না। বরং তারা সর্বদা একে অন্যকে সর্বাত্মক সাহায্য করতে সচেষ্ট থাকে। দায়িত্ব এ রকম ভাগ করা থাকলেও ফাইভ আইজ একসঙ্গেই কাজ করে এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত জোটভুক্ত সব দেশের সম্মতিতেই গ্রহণ করে থাকে।
ফাইভ আইজ গোয়েন্দা জোটের কার্যপ্রণালি বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত। এই জোটের মেরিটাইম ডোমেইনের কাজ হলো কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক অঞ্চলগুলোতে জাহাজ স্থানান্তর-সংক্রান্ত কার্যকলাপ অনুসরণ করা। আবার যুদ্ধবিমান-সংক্রান্ত কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে আছে তাদের অ্যারিয়েল ডোমেইন।
অ্যারিয়েল ডোমেইনে তাদের যুদ্ধবিমান দুই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন পরিচালনা করে, যার মধ্যে আছে বিভিন্ন গুপ্তচর স্যাটেলাইটের প্রতিস্থাপন করা; আরেকটি হলো ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করা। অস্ত্র ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে এই সংস্থাটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে, তাই এসব বিষয়ে কোনো তথ্য পেলে তারা তাদের দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের অবহিত করে।
আবার ফাইভ আইজ সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার ডেটা সরবরাহকরণ ও পর্যালোচনার মতো কাজও করে থাকে। এই গোয়েন্দা জোটের আরেকটি প্রধান কাজ হলো সম্ভাব্য সন্ত্রাসী ও ঝুঁকিপূর্ণ সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করা এবং নজরদারির মাধ্যমে সেগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
অনেক দেশ ফাইভ আইজের থার্ড পার্টি দেশ হয়ে কাজ করে থাকে। ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডসসহ অন্য দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং এসব দেশের সম্মিলিত রূপ গড়ে উঠেছে নাইন আইজ, ফোরটিন আইজ, ফোরটি ওয়ান আইজ হয়ে। এসব জোটগুলো একত্র হয়েছে একই লক্ষ্যে আর তা হলো বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিবিধ কাজের তথ্য পর্যবেক্ষণ এবং তা হস্তান্তরের মাধ্যমে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
রেডিও সিগন্যালের মতো পদ্ধতি অতীতে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কয়েক দশক ধরে প্রযুক্তি যেমন বিকশিত হয়েছে, তেমনি এই দেশগুলোর কাছে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানের উপায়ও বেড়েছে। বর্তমানে জোটের সদস্য দেশগুলো ডিজিটাল ট্র্যাকিং এবং ইন্টারসেপশন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে।
অতীত কার্যকলাপ
ভিয়েতনাম যুদ্ধে ফাইভ আইজের অন্যতম দুই সদস্য দেশ নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আমেরিকাকে সাহায্য করে। তারা উত্তর ভিয়েতনামের বিমান প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের দিকে নজরদারির মাধ্যমে আমেরিকান সৈন্যদের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহের কাজে যুক্ত থাকে।
উপসাগরীয় যুদ্ধ শেষে অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা (এসআইএস) থেকে কুয়েতি সরকারি অফিসে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। আবার সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগী অঞ্চলসহ চীনের সামরিক এবং কূটনৈতিক যোগাযোগের তথ্যাদি ব্রিটেন ও আমেরিকা তাদের নিজেদের ভেতর হস্তান্তর করেছে বলে জানা যায়।
সিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ ২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেনের মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার গোয়েন্দা নথি ফাঁস হয়। তখন বেরিয়ে আসে এই জোট শুধু জোটবহির্ভূত দেশগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তিই করছে না, বরং নিজ দেশের নাগরিকদেরও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী বিতর্কের জন্ম দেয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ভারসাম্য নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
পরিধি সম্প্রসারণ
যেহেতু চীন ও রাশিয়া ক্রমেই বিশ্বে তাদের দাপট বাড়িয়েই চলেছে, এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই ফাইভ আইজের পরিধি সম্প্রসারণের কথা ভাবা হচ্ছে। শুধু ইংরেজি ভাষাভাষী দেশের ভেতরই নয়, বরং এই গণ্ডির বাইরে গিয়ে জাপান, কোরিয়া, ভারত ও জার্মানিকে এই জোটভুক্ত করার প্রস্তাবনা উঠেছে। এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে ফাইভ আইজ পরিবর্তিত হয়ে নাইন আইজ নামে কার্য পরিচালনা করবে জোটটি।
কানাডায় ফাইভ আইজের সঙ্গে জড়িত চারটি মূল সংস্থা: ১. কমিউনিকেশন সিকিউরিটি এস্টাব্লিশমেন্ট (সিএসই)। ২. রয়্যাল কানাডীয় মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি)। ৩. কানাডীয় সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (সিএসআইএস)। ৪. কানাডীয় ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স কমান্ড১
হরদীপের মামলা নিয়ে ফাইভ আইজের অবস্থান
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হরদীপ হত্যা মামলায় ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার সাম্প্রতিক অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় জোটের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে বিবৃতি জারি করেছে। হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল কানাডার তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব জেমস ক্লেভারলি কানাডীয় তদন্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি তিনি চলমান তদন্তের ফলাফল আসার আগ পর্যন্ত সব জাতির সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৩ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৭ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৯ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
১০ দিন আগে