মারুফ ইসলাম
একটি তথ্যচিত্র ঘিরে ভারতে তোলপাড় চলছে। গত ১৭ জানুয়ারি দুই পর্বের তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। এরপর ২৪ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। কী এমন আছে তথ্যচিত্রে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল ভারতজুড়ে?
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল নয়। ক্ষমতাসীন কারও বিরুদ্ধে কিছু প্রকাশিত হবে গণমাধ্যমে, আর তা নিয়ে হইচই হবে না, তা হয় না। বিবিসি বলছে, তাদের তথ্যচিত্রটি যুক্তরাজ্য সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। তথ্যচিত্রটির নাম ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’।
তথ্যচিত্রে ভারতের গুজরাটের দাঙ্গাকে প্রতিপাদ্য করা হয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল। তিন দিনের সেই দাঙ্গায় অন্তত ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এ দাঙ্গার মূল ইন্ধনদাতা ছিলেন নরেদ্র মোদি। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদি তখন ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। বিবিসির দাবি, ওই দাঙ্গাই পরবর্তী সময়ে মোদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম করেছে।
বিবিসির দাবি কতটা সঠিক, তা নিশ্চয় তর্কসাপেক্ষ। শুধুই গুজরাট দাঙ্গায় ‘অবদানের’ পুরস্কারস্বরূপ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে, এমনটা নিশ্চয় জোর দিয়ে বলা যায় না। এর পেছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে নিশ্চয়। গুজরাট দাঙ্গাকে অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে।
তবে বিবিসির সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র যে ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তা নিয়ে কোনো তর্ক নেই। ভারত সরকার তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন বন্ধ করতে প্রায় সব ধরনের পদক্ষেপই নিয়েছে। যদিও বিবিসি তথ্যচিত্রটি ভারতে প্রদর্শন করেনি। কিন্তু তা হলে কী হবে? ভারতে ব্যাপকভাবেই ছড়িয়েছে সেটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই উত্তুঙ্গ সময়ে এসব ঠেকানো বেশ কঠিনই। তারপরও মোদি সরকার ইউটিউব ও টুইটারকে তথ্যচিত্রটি দেখানো বন্ধ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
এসব নির্দেশে কি কাজ হবে? মানুষের পকেটে পকেটে ঘুরেছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। সেসব ফোনে কেউ যদি ভিন্ন মাধ্যমে (ভিপিএন ও অন্যান্য) তথ্যচিত্রটি দেখেন, সরকার ঠেকাবে কী করে?
কী আছে তথ্যচিত্রে
যুক্তরাজ্যের ‘বিবিসি ২’ নামের চ্যানেলে গত ১৭ জানুয়ারি রাতে ব্রিটেনে সম্প্রচারিত হয়েছে তথ্যচিত্রটি। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদির বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের ওপর আলো ফেলা হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে। তবে মূল ফোকাস হচ্ছে, গুজরাট দাঙ্গার পিঠে সওয়ার হয়ে মোদির প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা।
তথ্যচিত্রটির ব্যাপ্তি এক ঘণ্টা। দীর্ঘ এ তথ্যচিত্রের একটি অংশে বলা হয়েছে, মোদির দল বিজেপি, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীরা ও ভারতের বিচারব্যবস্থা—সবাই মিলেমিশে মোদিকে সাহায্য করেছে।
তবে বিস্ময়কর শোনালেও সত্য, ওই সময়ে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোদিবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁদের জেলে পোরা হয়েছিল। কীভাবে তাঁদের জেলে ভরা হয়েছিল, সেটাই দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। এমন এক ব্যক্তির নাম সঞ্জীব ভাট। তাঁকে একটি পুরোনো মামলায় আজীবনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এই সবকিছুর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন নরেন্দ্র মোদি—এমনটাই দাবি করা হয়েছে তথ্যচিত্রে।
গুজরাটের ওই দাঙ্গায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের অনেকের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। এ ছাড়া ওই দাঙ্গার সময় কোনোমতে প্রাণে বেঁচেছেন, এমন বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকারও দেখানো হয়েছে।
ভারতের বিচারব্যবস্থার দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে বিবিসির তথ্যচিত্রে। কীভাবে নরেদ্র মোদিকে যাবতীয় অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে, সেসব নিয়েও আলোচনা রয়েছে তথ্যচিত্রটিতে।
টানা তিন দিন ধরে চলেছিল গুজরাটের দাঙ্গা। ওই পুরোটা সময় নীরব ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। কেন তিনি সময়মতো প্রশাসনকে কাজে লাগাননি দাঙ্গা থামাতে, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
তথ্যচিত্রে আরও যে বিষয়টি স্থান পেয়েছে, সেটি হচ্ছে মোদির মুসলিমবিদ্বেষ। যুক্তরাজ্যের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন (অবশ্যই নাম ও ছবি প্রকাশ না করার শর্তে)। সেই সাক্ষাৎকারকে উদ্ধৃত করে দ্য মোদি কোশ্চেন তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, গুজরাট দাঙ্গার সময় মুসলিমদের ওপর পরিকল্পনামাফিক হামলা করা হয়েছিল। আর এ কাজ করেছিল উগ্রপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’।
হিন্দু পরিষদ একা ওই দাঙ্গার নেতৃত্ব দিতে পারত না, গুজরাট রাজ্য সরকার তাদের সাহায্য করেছে বলেও বিবিসির তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে। তথ্যচিত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ওই দাঙ্গার জন্য নরেন্দ্র মোদি সরাসরি দায়ী।
বিবিসির তথ্যচিত্রে বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতারও সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছে। গুজরাট দাঙ্গার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বিজেপি নেতা স্বীকার করেছেন, তাঁরা কীভাবে মানুষ হত্যা করেছেন এবং অন্যদের দিয়ে করিয়েছেন। তবে জাতীয় স্তরের অনেক নেতাকে এসব অভিযোগ খারিজ করে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে তথ্যচিত্রে।
কেন নিষিদ্ধ করলেন মোদি
ব্রিটেনে তথ্যচিত্রটি সম্প্রচার করার পরপরই ভারতে সেটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ইউটিউব ও টুইটার থেকে ওই তথ্যচিত্রসংক্রান্ত যাবতীয় ভিডিও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের একটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনী হচ্ছিল। সেখানে ইন্টারনেট সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু কেন এমন কঠোর অবস্থানে গেল মোদি সরকার? দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এর পেছনে নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডা রয়েছে। আমরা মনে করি, এই প্রোপাগান্ডা ডকুমেন্টারির উদ্দেশ্যই হলো একটি বিশেষ বিকৃত ন্যারেটিভকে তুলে ধরা। এখানে পক্ষপাত, বস্তুনিষ্ঠতার অভাব এবং অব্যাহত ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণার ছাপ একেবারে স্পষ্ট।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি বিবিসির এ তথ্যচিত্রকে ভারতে বিভাজন তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। গত ২৮ জানুয়ারি তিনি দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের কারিয়াপ্পা ময়দানে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বিদেশি সংবাদমাধ্যমের তৈরি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে বিভাজন এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এসব করে দেশের জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা যাবে না।’
গত ১৯ জানুয়ারি তথ্যচিত্রকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ ও ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন’ বলে নিন্দা জানানো হয়েছে ভারত সকারের পক্ষ থেকে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘এটি প্রচারণাধর্মী। সম্মানহানির উদ্দেশ্যেই এসব কাহিনি তৈরি করা হয়েছে।’
ভারতে তিন শ জনের বেশি সাবেক বিচারপতি, আমলা এবং সুপরিচিত নাগরিকও একটি খোলা চিঠি লিখে এই তথ্যচিত্র বানানোর জন্য বিবিসির তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং ভারতে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত উসকে দেওয়ার জন্য তাদের দায়ী করেছেন।
তবে বিবিসি জানিয়েছে, ‘তথ্যচিত্রটি তৈরির আগে বহু মানুষের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। এতে ওই সময়ের বহু প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত যেমন রয়েছে, তেমনই বিজেপির সদস্যদের প্রতিক্রিয়াও নেওয়া হয়েছে।’
এক বিবৃতিতে বিবিসি আরও বলেছে, ‘সর্বোচ্চ সম্পাদকীয় মান অনুসরণ করে নিরলস গবেষণার ফসল এই তথ্যচিত্র, যেখানে বিজেপিসহ নানা পক্ষের বক্তব্যই প্রতিফলিত হয়েছে।’
নিষিদ্ধের পর কী হচ্ছে ভারতে
তথ্যচিত্রটি বন্ধের নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় ভারত সরকারের তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি জনপরিসরেও।
বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতা এবং সরকারের সমালোচক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই তথ্যচিত্রটির লিংক শেয়ার করেছেন।
গত ২৪ জানুয়ারি ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (জেএনইউ) রাত ৯টায় তথ্যচিত্রটি দেখার আয়োজন করেছিল বামপন্থী ছাত্রসংগঠন এসএফআই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্র দেখানোর অনুমতি দেবে না।
শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যানটিনে গিয়ে মোবাইল ফোনে ওই তথ্যচিত্র দেখতে শুরু করে। তখন কর্তৃপক্ষ সেখানে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে।
এসএফআইয়ের সভাপতি ঐশী ঘোষ বলেছেন, ‘আমরা কিউআর কোড ব্যবহার করে তথ্যচিত্র দেখব।’ এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ শাখাও জানিয়েছে, রাজ্যজুড়ে সমস্ত কলেজে এই তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে কবে দেখানো হবে, সেই নির্দিষ্ট দিন তারা জানায়নি।
শুধু জেএনইউ নয়, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা এই তথ্যচিত্র দেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তাদের এ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। এ ছাড়া কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ তথ্যচিত্র দেখেছে। এ সময় তাঁদের ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তথ্যচিত্র দেখা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও। তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর সময় শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে অন্তত ২৪ শিক্ষার্থীকে। ক্যাম্পাসে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
এদিকে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা নির্দেশিকা না মানলে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ কিন্তু শিক্ষার্থীরা মানছেন না এসব হুঁশিয়ারি।
সামাজিক মাধ্যমে তথ্যচিত্রের ভিডিও লিংক বন্ধ করার সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদও চলছে ভারতে। হায়দরাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি টুইটারে লিখেছেন, সরকার বিবিসির তথ্যচিত্র ব্লক করতে পারে, কিন্তু জাতির জনকের হত্যাকারী নাথুরাম গার্ডসকে নিয়ে চলচ্চিত্র আটকাতে পারে না।
তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি মহুয়া মৈত্র টুইটারে লিংক শেয়ার করে লিখেছেন, ‘দুঃখিত, সেন্সরশিপ মেনে নেওয়ার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করতে নির্বাচিত হইনি। এই দিলাম লিংক। যতক্ষণ আছে, তার মধ্যে দেখে নিন।’
এদিকে তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক এন রাম, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র। তাঁদের আবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিধি অনুযায়ী জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তথ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী, সাংবাদিক এন রাম ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের টুইট মুছে দেওয়া হয়েছে। অথচ, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশটি জনসমক্ষে জারি করেনি।
আইনজীবী শর্মার আবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের নির্দেশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, স্বৈরতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এই নির্দেশ মৌলিক অধিকার হরণ করছে।
কী লাভ হলো মোদির
গত কয়েক দিনের এসব ঘটন ও অঘটনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কী লাভ হলো নরেদ্র মোদির। তিনি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করে, সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও লিংক বন্ধ করে খুব বেশি লাভবান হতে পারলেন কি? বরং বুমেরাংই হয়েছে। বিভিন্ন অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম (ভিপিএন) ব্যবহার করে মানুষ ঠিকই দেখছে এই তথ্যচিত্র। বরং নিষিদ্ধ করার ফলে বিপুল মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্রটি দেখার ব্যাপারে। মোদি সরকার যদি এতটা প্রতিক্রিয়া না দেখাত, তাহলে হয়তো অনেকেই জানত না বিবিসির এই তথ্যচিত্রের ব্যাপারে।
শিবসেনার এমপি প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী টুইটারে লিখেছেন, ‘আজকের এই ভিপিএনের যুগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আইনের যে বিশেষ ধারা প্রয়োগ করে বিবিসি ডকুমেন্টারি নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাতে কি আদৌ কাজ হবে? বরং আপনি যত বাধা সৃষ্টি করতে চাইবেন, যত প্রতিবাদসূচক চিঠি লিখবেন, ততই মানুষ সেটি দেখার জন্য উৎসুক হয়ে উঠবেন।’
সুতরাং বিবিসির তথ্যচিত্র ঘিরে ভারত সরকারের পদক্ষেপ বরং এই বার্তাই দিল যে, অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে কোনো কিছু নিষিদ্ধ করে ভালো ফল পাওয়া যায় না। কোনা না কোনো মাধ্যমে সেটি মানুষের কাছে পৌঁছায়ই। ফলে ‘দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি’ নীতি থেকে ক্ষমতাধরদের বের হয়ে আসাই বরং সমীচীন।
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি, দ্য ডিপ্লোম্যাট, বিবিসি, ডয়চে ভেলে, এনডিটিভি, দ্য ওয়াল ও নিউজ ১৮
একটি তথ্যচিত্র ঘিরে ভারতে তোলপাড় চলছে। গত ১৭ জানুয়ারি দুই পর্বের তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)। এরপর ২৪ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। কী এমন আছে তথ্যচিত্রে, যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল ভারতজুড়ে?
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল নয়। ক্ষমতাসীন কারও বিরুদ্ধে কিছু প্রকাশিত হবে গণমাধ্যমে, আর তা নিয়ে হইচই হবে না, তা হয় না। বিবিসি বলছে, তাদের তথ্যচিত্রটি যুক্তরাজ্য সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। তথ্যচিত্রটির নাম ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’।
তথ্যচিত্রে ভারতের গুজরাটের দাঙ্গাকে প্রতিপাদ্য করা হয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল। তিন দিনের সেই দাঙ্গায় অন্তত ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এ দাঙ্গার মূল ইন্ধনদাতা ছিলেন নরেদ্র মোদি। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদি তখন ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। বিবিসির দাবি, ওই দাঙ্গাই পরবর্তী সময়ে মোদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম করেছে।
বিবিসির দাবি কতটা সঠিক, তা নিশ্চয় তর্কসাপেক্ষ। শুধুই গুজরাট দাঙ্গায় ‘অবদানের’ পুরস্কারস্বরূপ ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে, এমনটা নিশ্চয় জোর দিয়ে বলা যায় না। এর পেছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে নিশ্চয়। গুজরাট দাঙ্গাকে অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে।
তবে বিবিসির সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র যে ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তা নিয়ে কোনো তর্ক নেই। ভারত সরকার তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন বন্ধ করতে প্রায় সব ধরনের পদক্ষেপই নিয়েছে। যদিও বিবিসি তথ্যচিত্রটি ভারতে প্রদর্শন করেনি। কিন্তু তা হলে কী হবে? ভারতে ব্যাপকভাবেই ছড়িয়েছে সেটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই উত্তুঙ্গ সময়ে এসব ঠেকানো বেশ কঠিনই। তারপরও মোদি সরকার ইউটিউব ও টুইটারকে তথ্যচিত্রটি দেখানো বন্ধ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
এসব নির্দেশে কি কাজ হবে? মানুষের পকেটে পকেটে ঘুরেছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। সেসব ফোনে কেউ যদি ভিন্ন মাধ্যমে (ভিপিএন ও অন্যান্য) তথ্যচিত্রটি দেখেন, সরকার ঠেকাবে কী করে?
কী আছে তথ্যচিত্রে
যুক্তরাজ্যের ‘বিবিসি ২’ নামের চ্যানেলে গত ১৭ জানুয়ারি রাতে ব্রিটেনে সম্প্রচারিত হয়েছে তথ্যচিত্রটি। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদির বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের ওপর আলো ফেলা হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে। তবে মূল ফোকাস হচ্ছে, গুজরাট দাঙ্গার পিঠে সওয়ার হয়ে মোদির প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা।
তথ্যচিত্রটির ব্যাপ্তি এক ঘণ্টা। দীর্ঘ এ তথ্যচিত্রের একটি অংশে বলা হয়েছে, মোদির দল বিজেপি, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীরা ও ভারতের বিচারব্যবস্থা—সবাই মিলেমিশে মোদিকে সাহায্য করেছে।
তবে বিস্ময়কর শোনালেও সত্য, ওই সময়ে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোদিবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁদের জেলে পোরা হয়েছিল। কীভাবে তাঁদের জেলে ভরা হয়েছিল, সেটাই দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। এমন এক ব্যক্তির নাম সঞ্জীব ভাট। তাঁকে একটি পুরোনো মামলায় আজীবনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এই সবকিছুর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন নরেন্দ্র মোদি—এমনটাই দাবি করা হয়েছে তথ্যচিত্রে।
গুজরাটের ওই দাঙ্গায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের অনেকের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রে। এ ছাড়া ওই দাঙ্গার সময় কোনোমতে প্রাণে বেঁচেছেন, এমন বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকারও দেখানো হয়েছে।
ভারতের বিচারব্যবস্থার দিকেও অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে বিবিসির তথ্যচিত্রে। কীভাবে নরেদ্র মোদিকে যাবতীয় অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে, সেসব নিয়েও আলোচনা রয়েছে তথ্যচিত্রটিতে।
টানা তিন দিন ধরে চলেছিল গুজরাটের দাঙ্গা। ওই পুরোটা সময় নীরব ছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। কেন তিনি সময়মতো প্রশাসনকে কাজে লাগাননি দাঙ্গা থামাতে, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
তথ্যচিত্রে আরও যে বিষয়টি স্থান পেয়েছে, সেটি হচ্ছে মোদির মুসলিমবিদ্বেষ। যুক্তরাজ্যের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন (অবশ্যই নাম ও ছবি প্রকাশ না করার শর্তে)। সেই সাক্ষাৎকারকে উদ্ধৃত করে দ্য মোদি কোশ্চেন তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, গুজরাট দাঙ্গার সময় মুসলিমদের ওপর পরিকল্পনামাফিক হামলা করা হয়েছিল। আর এ কাজ করেছিল উগ্রপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’।
হিন্দু পরিষদ একা ওই দাঙ্গার নেতৃত্ব দিতে পারত না, গুজরাট রাজ্য সরকার তাদের সাহায্য করেছে বলেও বিবিসির তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে। তথ্যচিত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ওই দাঙ্গার জন্য নরেন্দ্র মোদি সরাসরি দায়ী।
বিবিসির তথ্যচিত্রে বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতারও সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছে। গুজরাট দাঙ্গার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বিজেপি নেতা স্বীকার করেছেন, তাঁরা কীভাবে মানুষ হত্যা করেছেন এবং অন্যদের দিয়ে করিয়েছেন। তবে জাতীয় স্তরের অনেক নেতাকে এসব অভিযোগ খারিজ করে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে তথ্যচিত্রে।
কেন নিষিদ্ধ করলেন মোদি
ব্রিটেনে তথ্যচিত্রটি সম্প্রচার করার পরপরই ভারতে সেটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ইউটিউব ও টুইটার থেকে ওই তথ্যচিত্রসংক্রান্ত যাবতীয় ভিডিও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের একটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনী হচ্ছিল। সেখানে ইন্টারনেট সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু কেন এমন কঠোর অবস্থানে গেল মোদি সরকার? দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এর পেছনে নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডা রয়েছে। আমরা মনে করি, এই প্রোপাগান্ডা ডকুমেন্টারির উদ্দেশ্যই হলো একটি বিশেষ বিকৃত ন্যারেটিভকে তুলে ধরা। এখানে পক্ষপাত, বস্তুনিষ্ঠতার অভাব এবং অব্যাহত ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণার ছাপ একেবারে স্পষ্ট।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি বিবিসির এ তথ্যচিত্রকে ভারতে বিভাজন তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। গত ২৮ জানুয়ারি তিনি দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের কারিয়াপ্পা ময়দানে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বিদেশি সংবাদমাধ্যমের তৈরি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ভারতীয় সমাজে বিভাজন এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এসব করে দেশের জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা যাবে না।’
গত ১৯ জানুয়ারি তথ্যচিত্রকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ ও ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন’ বলে নিন্দা জানানো হয়েছে ভারত সকারের পক্ষ থেকে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘এটি প্রচারণাধর্মী। সম্মানহানির উদ্দেশ্যেই এসব কাহিনি তৈরি করা হয়েছে।’
ভারতে তিন শ জনের বেশি সাবেক বিচারপতি, আমলা এবং সুপরিচিত নাগরিকও একটি খোলা চিঠি লিখে এই তথ্যচিত্র বানানোর জন্য বিবিসির তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং ভারতে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত উসকে দেওয়ার জন্য তাদের দায়ী করেছেন।
তবে বিবিসি জানিয়েছে, ‘তথ্যচিত্রটি তৈরির আগে বহু মানুষের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। এতে ওই সময়ের বহু প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত যেমন রয়েছে, তেমনই বিজেপির সদস্যদের প্রতিক্রিয়াও নেওয়া হয়েছে।’
এক বিবৃতিতে বিবিসি আরও বলেছে, ‘সর্বোচ্চ সম্পাদকীয় মান অনুসরণ করে নিরলস গবেষণার ফসল এই তথ্যচিত্র, যেখানে বিজেপিসহ নানা পক্ষের বক্তব্যই প্রতিফলিত হয়েছে।’
নিষিদ্ধের পর কী হচ্ছে ভারতে
তথ্যচিত্রটি বন্ধের নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় ভারত সরকারের তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি জনপরিসরেও।
বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতা এবং সরকারের সমালোচক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই তথ্যচিত্রটির লিংক শেয়ার করেছেন।
গত ২৪ জানুয়ারি ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (জেএনইউ) রাত ৯টায় তথ্যচিত্রটি দেখার আয়োজন করেছিল বামপন্থী ছাত্রসংগঠন এসএফআই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে তথ্যচিত্র দেখানোর অনুমতি দেবে না।
শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যানটিনে গিয়ে মোবাইল ফোনে ওই তথ্যচিত্র দেখতে শুরু করে। তখন কর্তৃপক্ষ সেখানে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে।
এসএফআইয়ের সভাপতি ঐশী ঘোষ বলেছেন, ‘আমরা কিউআর কোড ব্যবহার করে তথ্যচিত্র দেখব।’ এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ শাখাও জানিয়েছে, রাজ্যজুড়ে সমস্ত কলেজে এই তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে কবে দেখানো হবে, সেই নির্দিষ্ট দিন তারা জানায়নি।
শুধু জেএনইউ নয়, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা এই তথ্যচিত্র দেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তাদের এ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। এ ছাড়া কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ তথ্যচিত্র দেখেছে। এ সময় তাঁদের ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তথ্যচিত্র দেখা ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও। তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর সময় শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে অন্তত ২৪ শিক্ষার্থীকে। ক্যাম্পাসে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।
এদিকে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ‘তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীরা নির্দেশিকা না মানলে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ কিন্তু শিক্ষার্থীরা মানছেন না এসব হুঁশিয়ারি।
সামাজিক মাধ্যমে তথ্যচিত্রের ভিডিও লিংক বন্ধ করার সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদও চলছে ভারতে। হায়দরাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি টুইটারে লিখেছেন, সরকার বিবিসির তথ্যচিত্র ব্লক করতে পারে, কিন্তু জাতির জনকের হত্যাকারী নাথুরাম গার্ডসকে নিয়ে চলচ্চিত্র আটকাতে পারে না।
তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি মহুয়া মৈত্র টুইটারে লিংক শেয়ার করে লিখেছেন, ‘দুঃখিত, সেন্সরশিপ মেনে নেওয়ার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করতে নির্বাচিত হইনি। এই দিলাম লিংক। যতক্ষণ আছে, তার মধ্যে দেখে নিন।’
এদিকে তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক এন রাম, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও তৃণমূল সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র। তাঁদের আবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিধি অনুযায়ী জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তথ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী, সাংবাদিক এন রাম ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের টুইট মুছে দেওয়া হয়েছে। অথচ, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশটি জনসমক্ষে জারি করেনি।
আইনজীবী শর্মার আবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের নির্দেশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, স্বৈরতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এই নির্দেশ মৌলিক অধিকার হরণ করছে।
কী লাভ হলো মোদির
গত কয়েক দিনের এসব ঘটন ও অঘটনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কী লাভ হলো নরেদ্র মোদির। তিনি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করে, সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও লিংক বন্ধ করে খুব বেশি লাভবান হতে পারলেন কি? বরং বুমেরাংই হয়েছে। বিভিন্ন অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম (ভিপিএন) ব্যবহার করে মানুষ ঠিকই দেখছে এই তথ্যচিত্র। বরং নিষিদ্ধ করার ফলে বিপুল মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্রটি দেখার ব্যাপারে। মোদি সরকার যদি এতটা প্রতিক্রিয়া না দেখাত, তাহলে হয়তো অনেকেই জানত না বিবিসির এই তথ্যচিত্রের ব্যাপারে।
শিবসেনার এমপি প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী টুইটারে লিখেছেন, ‘আজকের এই ভিপিএনের যুগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আইনের যে বিশেষ ধারা প্রয়োগ করে বিবিসি ডকুমেন্টারি নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাতে কি আদৌ কাজ হবে? বরং আপনি যত বাধা সৃষ্টি করতে চাইবেন, যত প্রতিবাদসূচক চিঠি লিখবেন, ততই মানুষ সেটি দেখার জন্য উৎসুক হয়ে উঠবেন।’
সুতরাং বিবিসির তথ্যচিত্র ঘিরে ভারত সরকারের পদক্ষেপ বরং এই বার্তাই দিল যে, অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে কোনো কিছু নিষিদ্ধ করে ভালো ফল পাওয়া যায় না। কোনা না কোনো মাধ্যমে সেটি মানুষের কাছে পৌঁছায়ই। ফলে ‘দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি’ নীতি থেকে ক্ষমতাধরদের বের হয়ে আসাই বরং সমীচীন।
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি, দ্য ডিপ্লোম্যাট, বিবিসি, ডয়চে ভেলে, এনডিটিভি, দ্য ওয়াল ও নিউজ ১৮
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
২ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৮ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৯ দিন আগে