জাহাঙ্গীর আলম
উল্কার গতিতে উত্থান ঘটেছে ভারতের গৌতম আদানির। বছর তিন আগে যেখানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ হাজার কোটি ডলার। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ সেটি প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়ায়। বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনীতে পরিণত হন তিনি।
গৌতম আদানি কি তাহলে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। এই অবিশ্বাস্য উত্থানের পেছনে অনেকে নরেন্দ্র মোদি সরকারের আশীর্বাদ আছে বলেও মনে করেন। কারণ, সরকারি বহু বড় প্রকল্প এখন আদানির হাতে। অস্ট্রেলিয়ার কয়লাখনি থেকে ভারতের ব্যস্ততম বন্দর পর্যন্ত ভারতীয় এই ব্যবসায়ীর দখল রয়েছে।
মুকেশ আম্বানিকে দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে হটিয়ে শীর্ষ বিলিয়নিয়ার হওয়ার রেকর্ড একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তো বটেই! গত বছরের জুনে আদানি এবং আম্বানির মধ্যে সম্পদের ব্যবধান দাঁড়ায় ২৭ বিলিয়ন ডলারে। যেখানে একই বছরের ২৬ মে পর্যন্ত ব্যবধান ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
শিক্ষা ছেড়ে স্বপ্নের পেছনে তাড়া
মুকেশ আম্বানির মতো গৌতম আদানিও কলেজ ড্রপআউট। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তাড়া করছিল তাঁকে। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালেই পড়াশোনা ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়ে পড়েন।
প্রথম সফর উদ্যোগ ছিল মুম্বাইয়ের লাভজনক হীরা শিল্প। তবে শিগগির ভাইকে তাঁর প্লাস্টিক ব্যবসায় সহায়তা করার জন্য নিজ রাজ্য গুজরাটে ফিরে আসেন।
১৯৮৮ সালে নিজস্ব কোম্পানি—আদানি এন্টারপ্রাইজেস প্রতিষ্ঠা করেন গৌতম আদানি। এটিই পরে সিমেন্ট থেকে মিডিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন খাতের ফ্ল্যাগশিপ গ্রুপ অব কোম্পানিতে পরিণত হয়।
অনেকই হয়তো জানা, গৌতম আদানিকে ১৯৯৭ সালে অপহরণ করে ১৫ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে যখন সন্ত্রাসীরা মুম্বাইয়ের আইকনিক তাজ হোটেলে হামলা চালায়, তখন ঘটনাস্থলে তিনিও ছিলেন।
আশা দেখানোর কৌশল
প্রচারণায় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কোম্পানির ভিশন যুক্ত করার কৌশলই আদানিকে একলাফে আকাশে তুলতে সহায়তা করেছে।
যদিও সাদাচোখে গৌতম আদানির সাফল্যের পেছনে প্রাথমিক প্রণোদনা ও চালক চিহ্নিত করা কঠিন। কিন্তু তাঁর অন্যান্য কোম্পানির কার্যক্রম মূল্যায়ন করলেই চিত্রটি স্পষ্ট হয়।
প্রাইস টু আর্নিং (পিই) অনুপাতেই নির্ধারিত হয়—কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় যদি আয় করে ১ ডলার—তাহলে বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ার কত টাকায় কিনতে ইচ্ছুক। উদাহরণস্বরূপ, পিই অনুপাত ১০ হলে এর অর্থ হলো, বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি অর্জিত প্রতি ১ ডলারের জন্য ১০ দিতে ইচ্ছুক।
উদাহরণস্বরূপ, আদানি গ্রিন এবং আদানি টোটাল গ্যাসের পিই অনুপাত বিবেচনা করা যেতে পারে। যেখানে আদানি গ্রিনের পিই অনুপাত গত বছরের জুনে দাঁড়ায় ৭০২। যেখানে এই খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গড় পিই অনুপাত ১২ দশমিক ৭৯।
একই সময় আদানি টোটাল গ্যাসের পিই অনুপাত ৫২১। অথচ এই খাতের গড় পিই অনুপাত ২৩ দশমিক ৪৮। একইভাবে, আদানি গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানিরও পিই অনুপাত একই খাতের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। স্পষ্টত পুঁজিবাজারে আদানি অতিমূল্যায়িত হয়েছে।
এই হিসাব-নিকাশ তো স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য। তাহলে এরপরও কেন বিনিয়োগকারীরা আদানি গ্রিনের মতো কোম্পানির শেয়ার এত বেশি দামে কিনেছে?
আশা এবং ফোমো সিনড্রোম
আইআইএফএল সিকিউরিটিজের সঞ্জীব ভাসিন প্রায় তিন বছর আগেই দ্য কুইন্টকে বলেছিলেন, আদানির শেয়ারের ক্ষেত্রে বাজারে ফোমো সিনড্রোম রয়েছে। এই গ্রুপের প্রায় সব ব্যবসাই কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাজেন্ডার সঙ্গে সংযুক্ত। অতএব তারা ধরেই নিয়েছে, এই সরকার যত দিন আছে, তত দিন তাদের সামনের রাস্তাটি মসৃণ।
ফোমো হলো ‘ফেয়ার অব মিসিং আউট’ এর সংক্ষিপ্ত। অর্থাৎ সুযোগ হাতছাড়া করার আতঙ্ক। ২০০৪ সালে প্রথম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই সিনড্রোম প্রথম ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। এ কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা লক্ষ করা যায়।
ফোমো সিনড্রোমের বাইরেও আদানির শেয়ার বিক্রির পেছনে রয়েছে মানুষের ‘আশা’। উদাহরণস্বরূপ, আদানি গ্রিন নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর জোর দেয়। ২০২৫ সালের মধ্যে পোর্টফোলিওতে ২৫ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি যোগ করার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য তারা ঘোষণা করেছে।
গত বছরের জুনে আদানি গ্রুপের সংস্থাটি দাবি করেছিল, বর্তমানে তার পোর্টফোলিওতে ২০ দশমিক ৩ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি রয়েছে। যদিও বাস্তবে প্রায় ১৫ গিগাওয়াট ক্ষমতার নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থা তখনো নির্মাণাধীন। অথচ আদানির প্রধান ব্যবসা কয়লা।
আদানির সম্ভবত সবচেয়ে সফল বিনিয়োগটি খাদ্যপণ্যে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং দুধ, ফল, সবজি, সোডা, বিয়ারের মতো ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডসে (এফএমসিজি) বিনিয়োগে অন্যরা খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও ভোজ্যতেলের ঊর্ধ্বমুখী বাজারে লাভ তুলে এনেছে আদানি। এ কারণে আদানির ভোজ্যতেল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আদানি উইলমারের শেয়ারের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। বলতে গেলে এই কোম্পানির কল্যাণেই দুই বছর আগেও ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানিকে হটিয়ে দেন গৌতম আদানি।
ব্যবসার দ্রুত বহুমুখীকরণ ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য বাধা
গৌতম আদানি গত বছরের শুরু থেকেই দ্রুত বৈচিত্র্যের প্রসারে নজর দিয়েছেন। হোলসিমের কাছ থেকে এসিসি এবং অম্বুজা সিমেন্ট ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ করেছে। এরপর এএমজি মিডিয়া নেটওয়ার্ক কেনার মাধ্যমে নেমেছে মিডিয়া ব্যবসায়। সম্প্রতি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির অধিকাংশ শেয়ার কেনার মাধ্যমে পুরো কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে। সব মিলিয়ে বহুমুখী ব্যবসায় গৌতম আদানি বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
তবে এই বহুমুখীকরণ প্রচেষ্টার বেশির ভাগেরই অর্থ সংস্থান করা হয়েছে ঋণ নিয়ে। এখানেই আদানি গ্রুপের মূল আর্থিক সক্ষমতার একটি নিদর্শন রয়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একাই আদানি গ্রুপকে ২৬০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। দেশের বৃহত্তর ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানটি বিধি অনুযায়ী বিতরণের জন্য নির্ধারিত ঋণের অর্ধেকই দিয়েছে আদানিকে।
এর মধ্যে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের মধ্যে ডলারের বিপরীতে রুপির ব্যাপক পতন ও মূল্যস্ফীতি সামলাতে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাধ্য হয়ে সুদের হার বাড়ায়। আদানির মতো বৃহৎ কোম্পানিগুলোর জন্য তাতে ঝুঁকি বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলো লাভের অঙ্কটি বড় করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে যে বিশাল ঋণের অর্থায়ন একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠবে, সেটি অনুমেয় ছিল।
এমন ঝুঁকি সত্ত্বেও শেয়ারবাজারে দাপটের সঙ্গেই ছিল আদানি গ্রুপ। কিন্তু গত ২৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানির বিরুদ্ধে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপনের অভিযোগ তোলে। এরপরই আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ থমকে যায়। যেখানে মূলধনি ব্যয় সংস্থান এবং ঋণ কমানোর লক্ষ্যে আদানি এন্টারপ্রাইজ পুঁজিবাজার থেকে ২৫০ কোটি ডলার তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে পড়ে যাচ্ছে। ২৭ জানুয়ারির মধ্যেই ২ দশমিক ৮৩ লাখ কোটি রুপি বাজারমূল্য হারায় আদানি। দুই দিনের ব্যবধানে ২৩ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে আদানি গ্রুপের সাতটি কোম্পানি।
সংবাদমাধ্যম মিন্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ১০ দিনে গৌতম আদানির মালিকানাধীন জ্বালানি থেকে বন্দর ব্যবসার সব সংস্থাই বাজারদর হারাচ্ছে। এ বছর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী হওয়ার পথে ছিলেন আদানি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার সূচক অনুযায়ী, তিনি এখন পুঁজিবাজার ১০৮ বিলিয়ন ডলার হারিয়ে ২১তম অবস্থানে চলে গেছেন।
উল্কার গতিতে উত্থান ঘটেছে ভারতের গৌতম আদানির। বছর তিন আগে যেখানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ হাজার কোটি ডলার। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ সেটি প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়ায়। বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনীতে পরিণত হন তিনি।
গৌতম আদানি কি তাহলে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। এই অবিশ্বাস্য উত্থানের পেছনে অনেকে নরেন্দ্র মোদি সরকারের আশীর্বাদ আছে বলেও মনে করেন। কারণ, সরকারি বহু বড় প্রকল্প এখন আদানির হাতে। অস্ট্রেলিয়ার কয়লাখনি থেকে ভারতের ব্যস্ততম বন্দর পর্যন্ত ভারতীয় এই ব্যবসায়ীর দখল রয়েছে।
মুকেশ আম্বানিকে দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে হটিয়ে শীর্ষ বিলিয়নিয়ার হওয়ার রেকর্ড একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তো বটেই! গত বছরের জুনে আদানি এবং আম্বানির মধ্যে সম্পদের ব্যবধান দাঁড়ায় ২৭ বিলিয়ন ডলারে। যেখানে একই বছরের ২৬ মে পর্যন্ত ব্যবধান ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
শিক্ষা ছেড়ে স্বপ্নের পেছনে তাড়া
মুকেশ আম্বানির মতো গৌতম আদানিও কলেজ ড্রপআউট। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তাড়া করছিল তাঁকে। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালেই পড়াশোনা ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়ে পড়েন।
প্রথম সফর উদ্যোগ ছিল মুম্বাইয়ের লাভজনক হীরা শিল্প। তবে শিগগির ভাইকে তাঁর প্লাস্টিক ব্যবসায় সহায়তা করার জন্য নিজ রাজ্য গুজরাটে ফিরে আসেন।
১৯৮৮ সালে নিজস্ব কোম্পানি—আদানি এন্টারপ্রাইজেস প্রতিষ্ঠা করেন গৌতম আদানি। এটিই পরে সিমেন্ট থেকে মিডিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন খাতের ফ্ল্যাগশিপ গ্রুপ অব কোম্পানিতে পরিণত হয়।
অনেকই হয়তো জানা, গৌতম আদানিকে ১৯৯৭ সালে অপহরণ করে ১৫ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে যখন সন্ত্রাসীরা মুম্বাইয়ের আইকনিক তাজ হোটেলে হামলা চালায়, তখন ঘটনাস্থলে তিনিও ছিলেন।
আশা দেখানোর কৌশল
প্রচারণায় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কোম্পানির ভিশন যুক্ত করার কৌশলই আদানিকে একলাফে আকাশে তুলতে সহায়তা করেছে।
যদিও সাদাচোখে গৌতম আদানির সাফল্যের পেছনে প্রাথমিক প্রণোদনা ও চালক চিহ্নিত করা কঠিন। কিন্তু তাঁর অন্যান্য কোম্পানির কার্যক্রম মূল্যায়ন করলেই চিত্রটি স্পষ্ট হয়।
প্রাইস টু আর্নিং (পিই) অনুপাতেই নির্ধারিত হয়—কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় যদি আয় করে ১ ডলার—তাহলে বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ার কত টাকায় কিনতে ইচ্ছুক। উদাহরণস্বরূপ, পিই অনুপাত ১০ হলে এর অর্থ হলো, বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি অর্জিত প্রতি ১ ডলারের জন্য ১০ দিতে ইচ্ছুক।
উদাহরণস্বরূপ, আদানি গ্রিন এবং আদানি টোটাল গ্যাসের পিই অনুপাত বিবেচনা করা যেতে পারে। যেখানে আদানি গ্রিনের পিই অনুপাত গত বছরের জুনে দাঁড়ায় ৭০২। যেখানে এই খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গড় পিই অনুপাত ১২ দশমিক ৭৯।
একই সময় আদানি টোটাল গ্যাসের পিই অনুপাত ৫২১। অথচ এই খাতের গড় পিই অনুপাত ২৩ দশমিক ৪৮। একইভাবে, আদানি গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানিরও পিই অনুপাত একই খাতের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। স্পষ্টত পুঁজিবাজারে আদানি অতিমূল্যায়িত হয়েছে।
এই হিসাব-নিকাশ তো স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য। তাহলে এরপরও কেন বিনিয়োগকারীরা আদানি গ্রিনের মতো কোম্পানির শেয়ার এত বেশি দামে কিনেছে?
আশা এবং ফোমো সিনড্রোম
আইআইএফএল সিকিউরিটিজের সঞ্জীব ভাসিন প্রায় তিন বছর আগেই দ্য কুইন্টকে বলেছিলেন, আদানির শেয়ারের ক্ষেত্রে বাজারে ফোমো সিনড্রোম রয়েছে। এই গ্রুপের প্রায় সব ব্যবসাই কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাজেন্ডার সঙ্গে সংযুক্ত। অতএব তারা ধরেই নিয়েছে, এই সরকার যত দিন আছে, তত দিন তাদের সামনের রাস্তাটি মসৃণ।
ফোমো হলো ‘ফেয়ার অব মিসিং আউট’ এর সংক্ষিপ্ত। অর্থাৎ সুযোগ হাতছাড়া করার আতঙ্ক। ২০০৪ সালে প্রথম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই সিনড্রোম প্রথম ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায়। এ কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা লক্ষ করা যায়।
ফোমো সিনড্রোমের বাইরেও আদানির শেয়ার বিক্রির পেছনে রয়েছে মানুষের ‘আশা’। উদাহরণস্বরূপ, আদানি গ্রিন নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর জোর দেয়। ২০২৫ সালের মধ্যে পোর্টফোলিওতে ২৫ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি যোগ করার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য তারা ঘোষণা করেছে।
গত বছরের জুনে আদানি গ্রুপের সংস্থাটি দাবি করেছিল, বর্তমানে তার পোর্টফোলিওতে ২০ দশমিক ৩ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি রয়েছে। যদিও বাস্তবে প্রায় ১৫ গিগাওয়াট ক্ষমতার নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থা তখনো নির্মাণাধীন। অথচ আদানির প্রধান ব্যবসা কয়লা।
আদানির সম্ভবত সবচেয়ে সফল বিনিয়োগটি খাদ্যপণ্যে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং দুধ, ফল, সবজি, সোডা, বিয়ারের মতো ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডসে (এফএমসিজি) বিনিয়োগে অন্যরা খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও ভোজ্যতেলের ঊর্ধ্বমুখী বাজারে লাভ তুলে এনেছে আদানি। এ কারণে আদানির ভোজ্যতেল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আদানি উইলমারের শেয়ারের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। বলতে গেলে এই কোম্পানির কল্যাণেই দুই বছর আগেও ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানিকে হটিয়ে দেন গৌতম আদানি।
ব্যবসার দ্রুত বহুমুখীকরণ ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য বাধা
গৌতম আদানি গত বছরের শুরু থেকেই দ্রুত বৈচিত্র্যের প্রসারে নজর দিয়েছেন। হোলসিমের কাছ থেকে এসিসি এবং অম্বুজা সিমেন্ট ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ করেছে। এরপর এএমজি মিডিয়া নেটওয়ার্ক কেনার মাধ্যমে নেমেছে মিডিয়া ব্যবসায়। সম্প্রতি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির অধিকাংশ শেয়ার কেনার মাধ্যমে পুরো কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে। সব মিলিয়ে বহুমুখী ব্যবসায় গৌতম আদানি বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
তবে এই বহুমুখীকরণ প্রচেষ্টার বেশির ভাগেরই অর্থ সংস্থান করা হয়েছে ঋণ নিয়ে। এখানেই আদানি গ্রুপের মূল আর্থিক সক্ষমতার একটি নিদর্শন রয়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একাই আদানি গ্রুপকে ২৬০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। দেশের বৃহত্তর ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানটি বিধি অনুযায়ী বিতরণের জন্য নির্ধারিত ঋণের অর্ধেকই দিয়েছে আদানিকে।
এর মধ্যে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের মধ্যে ডলারের বিপরীতে রুপির ব্যাপক পতন ও মূল্যস্ফীতি সামলাতে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাধ্য হয়ে সুদের হার বাড়ায়। আদানির মতো বৃহৎ কোম্পানিগুলোর জন্য তাতে ঝুঁকি বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলো লাভের অঙ্কটি বড় করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে যে বিশাল ঋণের অর্থায়ন একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠবে, সেটি অনুমেয় ছিল।
এমন ঝুঁকি সত্ত্বেও শেয়ারবাজারে দাপটের সঙ্গেই ছিল আদানি গ্রুপ। কিন্তু গত ২৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানির বিরুদ্ধে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপনের অভিযোগ তোলে। এরপরই আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ থমকে যায়। যেখানে মূলধনি ব্যয় সংস্থান এবং ঋণ কমানোর লক্ষ্যে আদানি এন্টারপ্রাইজ পুঁজিবাজার থেকে ২৫০ কোটি ডলার তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে পড়ে যাচ্ছে। ২৭ জানুয়ারির মধ্যেই ২ দশমিক ৮৩ লাখ কোটি রুপি বাজারমূল্য হারায় আদানি। দুই দিনের ব্যবধানে ২৩ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে আদানি গ্রুপের সাতটি কোম্পানি।
সংবাদমাধ্যম মিন্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ১০ দিনে গৌতম আদানির মালিকানাধীন জ্বালানি থেকে বন্দর ব্যবসার সব সংস্থাই বাজারদর হারাচ্ছে। এ বছর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী হওয়ার পথে ছিলেন আদানি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার সূচক অনুযায়ী, তিনি এখন পুঁজিবাজার ১০৮ বিলিয়ন ডলার হারিয়ে ২১তম অবস্থানে চলে গেছেন।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৩ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৭ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৯ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৯ দিন আগে