নবীউল ইসলাম
গোটা বিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। এ লড়াইয়ে মানুষর হাতে আছে বেশ কয়েকটি টিকা। এই ভাইরাস ও একে ঘিরে তৈরি হওয়া টিকা বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে চাউর হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের। ইতিহাস ঘাঁটলে এমন বহু পরিস্থিতির দেখা মিলবে, যেখানে অণুজীবকে যুদ্ধের অস্ত্র বানানো বা প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে একে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে যুক্তরাষ্ট্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
বায়োলজিক্যাল ওয়ার বা জৈব যুদ্ধের কথা আধুনিককালে বেশ আলোচিত হলেও বিষয়টি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য নতুন কিছু নয়। শত্রুকে দুর্বল করতে একটি দল বা দেশ এমন অস্ত্র আগেও ব্যবহার করেছে। ঔপনিবেশিক সময়ে স্থানীয় মার্কিনদের রোগ দিয়ে কাবু করতে চেয়েছিল ব্রিটিশরা। সে সময় ব্রিটিশরা গুটিবসন্তে দূষিত কম্বল ব্যবহার করেছিল মার্কিনদের মধ্যে এর সংক্রমণ সৃষ্টির লক্ষ্যে। স্থানীয় মার্কিনরা এর আগে কখনো গুটিবসন্তের সংস্পর্শে আসেনি। তাই এই রোগ তাদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটি ১৭৭৫-৭৬ সময়ের। হিস্ট্রি অব ভ্যাকসিন নামের একটি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে সে সময়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ১৭৭৫-৭৬ সালে মার্কিন সেনাদের মধ্যে গুটিবসন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটা ঠিক সেই সময়ে, যখন জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন সেনারা বোস্টন শহর ঘিরে রেখেছিল। এই একই সময়ে সেনাদের মধ্যে এই রোগ বেড়ে যায়। কিন্তু তখনো এই রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। ড. এডওয়ার্ড জেনার এর আরও ২৫ বছর পর টিকাটি আবিষ্কার করেন। কিন্তু গুটিবসন্তের ছড়িয়ে পড়া রোধের কিছু কৌশল জানা ছিল। ওয়াশিংটন নিজে গুটি বসন্ত থেকে সেরে ওঠা লোক হওয়ায় তিনি বুঝেছিলেন, সেনাদের মধ্যে এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে বিপাকে পড়তে হবে, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার প্রশ্নটি ছিল সরাসরি জড়িত।
জর্জ ওয়াশিংটন এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় টিকা না থাকলেও টিকার মূলনীতির কাছাকাছি একটা ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সেনাদের এই অণুজীবের নিয়ন্ত্রিত সংক্রমণের আওতায় নিয়ে আসেন। এর ফল হলো বেশ কিছু সেনা মারা পড়ল। কেউ কেউ সেরে উঠল, যারা গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করল। আবার কিছু অংশ বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ল। সুস্থ হয়ে ওঠার হারটা বেশি ছিল। আর এটিই জর্জ ওয়াশিংটনকে পথ দেখায়। তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন কারণ, বোস্টন দখলের জন্য পাঠানো সেনারা এই রোগে কাবু হোক, তা তিনি চাননি। তিনি চাননি কোনো এক সেনা আক্রান্ত হবে এবং তা অন্যদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে দেবে।
১৮৯৮ সালে স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের সময় ক্যারিবিয়ানে যুদ্ধরত সৈন্যরা ম্যালেরিয়া ও হলুদ জ্বরের মতো রোগে আক্রান্ত হয়। এই সমস্যা মোকাবিলায় একটি কমিশন গঠন করা হয় সে সময়। ওয়াল্টার রিডের মতো সামরিক গবেষক ও কার্লোস ফিনলের মতো বেসামরিক চিকিৎসকদের ওপর দায়িত্ব বর্তায়। তাঁরা এই রোগগুলো মোকাবিলার কৌশল তৈরি করেন। ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য তাঁরা প্রথমে মশা নির্মূলের কৌশল নেন। পরে হলুদ জ্বরের টিকা ও ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রোফিল্যাক্সিস তৈরি করেন।
দেখা গেছে, যুদ্ধ ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়লে নানা ধরনের রোগের প্রকোপও বাড়ে। এর মূল কারণ এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা অবকাঠামো ভেঙে পড়ে। অনেক সময় নতুন নতুন রোগের আধিক্য দেখা যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় পুরোনো রোগ ফিরে আসছে। ওই সময়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে বলে এর প্রকোপও বাড়তে থাকে, যার মূল্য মানুষকে চোকাতে হয় প্রাণ দিয়ে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে ইয়েমেন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা যায়।
ইয়েমেনে ২০১৫ সাল থেকে যুদ্ধ চলছে। গৃহযুদ্ধে দেশটির অবস্থা এখন ভয়াবহ। বিদেশি দেশগুলোর হস্তক্ষেপে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং সেই সূত্রে চরম দারিদ্র্য মিলে এই অঞ্চলে একটি অকার্যকর সরকারের সৃষ্টি হয়। বিবদমান দুই গোষ্ঠীর একটিকে সৌদি আরব এবং অন্যটিকে ইরান সমর্থন করছে। যুদ্ধক্ষেত্র ইয়েমেন হলেও সেখানে আদতে যুদ্ধ করছে এই দুই দেশই। ইরান-সৌদি এই ছায়াযুদ্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ তো গেল যুদ্ধে মৃত্যুর হিসাব। এর সঙ্গে যখন চিকিৎসা অবকাঠামোর বিষয়টি যুক্ত হয়, তখন তা অনেক বড় আকার ধারণ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ইয়েমেনের স্বাস্থ্য অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে অপুষ্টি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে কলেরার প্রকোপ। এমনকি টিকা থাকা সত্ত্বেও শুধু টিকাদান কার্যক্রম না থাকা বা সেই অবকাঠামো না থাকার দরুন হামও এখন দেশটিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) থেকে টিকায় প্রতিরোধযোগ্য রোগের বিস্তার রোধে ইয়েমেনে ব্যাপক টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়ন করে। এর জন্য ইয়েমেনের যেসব জায়গায় টিকা প্রয়োজন, সে স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়। তারপর যুদ্ধরত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে টিকাদান দলের কর্মীদের সেই জায়গাগুলোতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে টিকা পৌঁছানো প্রয়োজন, এমন বহু স্থানের খবর যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে পৌঁছানো অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। ফলে টিকার আওতার বাইরে থেকে যায় অনেকে।
আবার ব্রিটিশ-মার্কিন যুদ্ধের সেই সময়কার মতো এই আধুনিককালেও ইচ্ছাকৃত সংক্রমণের ঘটনা আছে। গোপন বা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আওতায় থাকা ঘটনাগুলো বাদ দিলেও এমন বহু ঘটনার দেখা মিলবে। এ ক্ষেত্রে ১৯৮০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন অঙ্গরাজ্যের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়।
১৯৮০ সালে অরিগন অঙ্গরাজ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের অসুস্থ করার জন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সেই কর্মকর্তাদের ধর্মীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা থেকে বিরত রাখা। সাম্প্রতিককালে, জৈব অস্ত্র হিসেবে অ্যানথ্রাক্সের ব্যবহার নিয়ে একটি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপকভাবে টিকা দেওয়া হয়। সাধারণ জনগোষ্ঠীকেও এ ধরনের নানা ঝুঁকির বিপরীতে সুরক্ষিত রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ইতিহাসজুড়ে যুদ্ধ ও রোগই মানুষের সমাজের সবচেয়ে বড় ক্ষয়ের কারণ হয়ে এসেছে। প্রাণহানির মূল কারণগুলোর মধ্যে এ দুটিই প্রধান। করোনাভাইরাসের কথাই ধরা যাক। এখন পর্যন্ত এই বৈশ্বিক মহামারিতে গোটা বিশ্ব ৫০ লাখের বেশি মানুষ হারিয়েছে। স্প্যানিশ ফ্লুয়ের কথা তো এত দিনে বহুলকথিত হয়ে গেছে। এই স্প্যানিশ ফ্লুও কিন্তু হয়েছিল আরেক যুদ্ধের সময়। সেটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
যুদ্ধ ও রোগ এই দুইই মানুষের সমাজের প্রধান শত্রু। কিন্তু এই দুইই অর্থকরী। হ্যাঁ, শুনতে যেমনই লাগুক যুদ্ধ-অর্থনীতি বলে একটা বিষয় আছে, যা বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসে। কিন্তু তারপরও অস্ত্রের উৎপাদন হরদম চলে। আর রোগের অর্থনীতির বিষয়টি তেমন আলোচিত না হলেও এবারের মহামারি এ বিষয়ে গোটা বিশ্বকে সচেতন করে তুলেছে। একদিকে রোগ সৃষ্টি, অন্যদিকে তার প্রতিষেধক বা টিকা তৈরি এবং তার বাজারজাতকরণ চলছে। ফুলেফেঁপে উঠছে করপোরেটদের পকেট। এ থেকে সাধারণ মানুষের নিস্তার নেই। আবার এই দুইই মিলে যায়, যখন প্রয়োজন হয়। বিশ্বের বহু দেশের পরীক্ষাগারে নাকি এমন বহু জীবাণু অস্ত্রের নির্মাণ চলছে প্রতিনিয়ত। এও তো যুদ্ধের জন্যই। দুঃখ এই যে, আমাদের এখনো যুদ্ধের বিরুদ্ধে কোনো টিকা নেই।
গোটা বিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। এ লড়াইয়ে মানুষর হাতে আছে বেশ কয়েকটি টিকা। এই ভাইরাস ও একে ঘিরে তৈরি হওয়া টিকা বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে চাউর হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের। ইতিহাস ঘাঁটলে এমন বহু পরিস্থিতির দেখা মিলবে, যেখানে অণুজীবকে যুদ্ধের অস্ত্র বানানো বা প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে একে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে যুক্তরাষ্ট্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
বায়োলজিক্যাল ওয়ার বা জৈব যুদ্ধের কথা আধুনিককালে বেশ আলোচিত হলেও বিষয়টি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য নতুন কিছু নয়। শত্রুকে দুর্বল করতে একটি দল বা দেশ এমন অস্ত্র আগেও ব্যবহার করেছে। ঔপনিবেশিক সময়ে স্থানীয় মার্কিনদের রোগ দিয়ে কাবু করতে চেয়েছিল ব্রিটিশরা। সে সময় ব্রিটিশরা গুটিবসন্তে দূষিত কম্বল ব্যবহার করেছিল মার্কিনদের মধ্যে এর সংক্রমণ সৃষ্টির লক্ষ্যে। স্থানীয় মার্কিনরা এর আগে কখনো গুটিবসন্তের সংস্পর্শে আসেনি। তাই এই রোগ তাদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটি ১৭৭৫-৭৬ সময়ের। হিস্ট্রি অব ভ্যাকসিন নামের একটি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে সে সময়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ১৭৭৫-৭৬ সালে মার্কিন সেনাদের মধ্যে গুটিবসন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এটা ঠিক সেই সময়ে, যখন জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন সেনারা বোস্টন শহর ঘিরে রেখেছিল। এই একই সময়ে সেনাদের মধ্যে এই রোগ বেড়ে যায়। কিন্তু তখনো এই রোগের টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। ড. এডওয়ার্ড জেনার এর আরও ২৫ বছর পর টিকাটি আবিষ্কার করেন। কিন্তু গুটিবসন্তের ছড়িয়ে পড়া রোধের কিছু কৌশল জানা ছিল। ওয়াশিংটন নিজে গুটি বসন্ত থেকে সেরে ওঠা লোক হওয়ায় তিনি বুঝেছিলেন, সেনাদের মধ্যে এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে বিপাকে পড়তে হবে, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার প্রশ্নটি ছিল সরাসরি জড়িত।
জর্জ ওয়াশিংটন এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় টিকা না থাকলেও টিকার মূলনীতির কাছাকাছি একটা ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সেনাদের এই অণুজীবের নিয়ন্ত্রিত সংক্রমণের আওতায় নিয়ে আসেন। এর ফল হলো বেশ কিছু সেনা মারা পড়ল। কেউ কেউ সেরে উঠল, যারা গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করল। আবার কিছু অংশ বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ল। সুস্থ হয়ে ওঠার হারটা বেশি ছিল। আর এটিই জর্জ ওয়াশিংটনকে পথ দেখায়। তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন কারণ, বোস্টন দখলের জন্য পাঠানো সেনারা এই রোগে কাবু হোক, তা তিনি চাননি। তিনি চাননি কোনো এক সেনা আক্রান্ত হবে এবং তা অন্যদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে দেবে।
১৮৯৮ সালে স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের সময় ক্যারিবিয়ানে যুদ্ধরত সৈন্যরা ম্যালেরিয়া ও হলুদ জ্বরের মতো রোগে আক্রান্ত হয়। এই সমস্যা মোকাবিলায় একটি কমিশন গঠন করা হয় সে সময়। ওয়াল্টার রিডের মতো সামরিক গবেষক ও কার্লোস ফিনলের মতো বেসামরিক চিকিৎসকদের ওপর দায়িত্ব বর্তায়। তাঁরা এই রোগগুলো মোকাবিলার কৌশল তৈরি করেন। ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য তাঁরা প্রথমে মশা নির্মূলের কৌশল নেন। পরে হলুদ জ্বরের টিকা ও ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রোফিল্যাক্সিস তৈরি করেন।
দেখা গেছে, যুদ্ধ ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়লে নানা ধরনের রোগের প্রকোপও বাড়ে। এর মূল কারণ এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা অবকাঠামো ভেঙে পড়ে। অনেক সময় নতুন নতুন রোগের আধিক্য দেখা যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় পুরোনো রোগ ফিরে আসছে। ওই সময়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে বলে এর প্রকোপও বাড়তে থাকে, যার মূল্য মানুষকে চোকাতে হয় প্রাণ দিয়ে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে ইয়েমেন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা যায়।
ইয়েমেনে ২০১৫ সাল থেকে যুদ্ধ চলছে। গৃহযুদ্ধে দেশটির অবস্থা এখন ভয়াবহ। বিদেশি দেশগুলোর হস্তক্ষেপে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং সেই সূত্রে চরম দারিদ্র্য মিলে এই অঞ্চলে একটি অকার্যকর সরকারের সৃষ্টি হয়। বিবদমান দুই গোষ্ঠীর একটিকে সৌদি আরব এবং অন্যটিকে ইরান সমর্থন করছে। যুদ্ধক্ষেত্র ইয়েমেন হলেও সেখানে আদতে যুদ্ধ করছে এই দুই দেশই। ইরান-সৌদি এই ছায়াযুদ্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এ তো গেল যুদ্ধে মৃত্যুর হিসাব। এর সঙ্গে যখন চিকিৎসা অবকাঠামোর বিষয়টি যুক্ত হয়, তখন তা অনেক বড় আকার ধারণ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ইয়েমেনের স্বাস্থ্য অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে অপুষ্টি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে কলেরার প্রকোপ। এমনকি টিকা থাকা সত্ত্বেও শুধু টিকাদান কার্যক্রম না থাকা বা সেই অবকাঠামো না থাকার দরুন হামও এখন দেশটিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) থেকে টিকায় প্রতিরোধযোগ্য রোগের বিস্তার রোধে ইয়েমেনে ব্যাপক টিকাদান কার্যক্রমে অর্থায়ন করে। এর জন্য ইয়েমেনের যেসব জায়গায় টিকা প্রয়োজন, সে স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়। তারপর যুদ্ধরত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে টিকাদান দলের কর্মীদের সেই জায়গাগুলোতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে টিকা পৌঁছানো প্রয়োজন, এমন বহু স্থানের খবর যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে পৌঁছানো অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। ফলে টিকার আওতার বাইরে থেকে যায় অনেকে।
আবার ব্রিটিশ-মার্কিন যুদ্ধের সেই সময়কার মতো এই আধুনিককালেও ইচ্ছাকৃত সংক্রমণের ঘটনা আছে। গোপন বা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আওতায় থাকা ঘটনাগুলো বাদ দিলেও এমন বহু ঘটনার দেখা মিলবে। এ ক্ষেত্রে ১৯৮০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন অঙ্গরাজ্যের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়।
১৯৮০ সালে অরিগন অঙ্গরাজ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের অসুস্থ করার জন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সেই কর্মকর্তাদের ধর্মীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা থেকে বিরত রাখা। সাম্প্রতিককালে, জৈব অস্ত্র হিসেবে অ্যানথ্রাক্সের ব্যবহার নিয়ে একটি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপকভাবে টিকা দেওয়া হয়। সাধারণ জনগোষ্ঠীকেও এ ধরনের নানা ঝুঁকির বিপরীতে সুরক্ষিত রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ইতিহাসজুড়ে যুদ্ধ ও রোগই মানুষের সমাজের সবচেয়ে বড় ক্ষয়ের কারণ হয়ে এসেছে। প্রাণহানির মূল কারণগুলোর মধ্যে এ দুটিই প্রধান। করোনাভাইরাসের কথাই ধরা যাক। এখন পর্যন্ত এই বৈশ্বিক মহামারিতে গোটা বিশ্ব ৫০ লাখের বেশি মানুষ হারিয়েছে। স্প্যানিশ ফ্লুয়ের কথা তো এত দিনে বহুলকথিত হয়ে গেছে। এই স্প্যানিশ ফ্লুও কিন্তু হয়েছিল আরেক যুদ্ধের সময়। সেটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
যুদ্ধ ও রোগ এই দুইই মানুষের সমাজের প্রধান শত্রু। কিন্তু এই দুইই অর্থকরী। হ্যাঁ, শুনতে যেমনই লাগুক যুদ্ধ-অর্থনীতি বলে একটা বিষয় আছে, যা বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসে। কিন্তু তারপরও অস্ত্রের উৎপাদন হরদম চলে। আর রোগের অর্থনীতির বিষয়টি তেমন আলোচিত না হলেও এবারের মহামারি এ বিষয়ে গোটা বিশ্বকে সচেতন করে তুলেছে। একদিকে রোগ সৃষ্টি, অন্যদিকে তার প্রতিষেধক বা টিকা তৈরি এবং তার বাজারজাতকরণ চলছে। ফুলেফেঁপে উঠছে করপোরেটদের পকেট। এ থেকে সাধারণ মানুষের নিস্তার নেই। আবার এই দুইই মিলে যায়, যখন প্রয়োজন হয়। বিশ্বের বহু দেশের পরীক্ষাগারে নাকি এমন বহু জীবাণু অস্ত্রের নির্মাণ চলছে প্রতিনিয়ত। এও তো যুদ্ধের জন্যই। দুঃখ এই যে, আমাদের এখনো যুদ্ধের বিরুদ্ধে কোনো টিকা নেই।
কোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
১৫ ঘণ্টা আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৪ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৮ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
১১ দিন আগে