অনলাইন ডেস্ক
ইউরোপের অন্যতম ক্ষমতাধর ও বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ফ্রান্স। ২৪ এপ্রিল দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় রাউন্ডে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিনই নির্ধারিত হবে আগামী পাঁচ বছর কে থাকবেন এলিসি প্রাসাদে।
এই ঘটনার ওপর নির্ভর করছে বিশ্ব রাজনীতির অনেক হিসাব নিকাশ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফরাসিরা ২৪ এপ্রিলের ভোটে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা ব্যবসাবান্ধব প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে পুনর্নির্বাচিত করবেন নাকি কট্টর ডানপন্থী মারি লো পেনকে ক্ষমতার মসনদে বসাবেন।
এলিসি প্রাসাদে কে যাবেন তার ওপর যখন নির্ভর করছে বিশ্ব রাজনীতির অনেক হিসাব নিকাশ, ফলে বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের এই নেতাদ্বয়ের যে-ই প্রেসিডেন্ট হন তাঁদের কাছে যেসব প্রত্যাশা ঝুলে থাকছে সেগুলো সংক্ষেপে বললে এ রকম—
অর্থনীতি
বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে বড় হিস্যা হলো অর্থনীতি। ফলে এই হিস্যাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বের এই দুই নেতার মধ্যে যে-ই প্রেসিডেন্ট হন তাঁর মতাদর্শ অনুসারে অর্থনীতি কেন্দ্রিক চাওয়া পাওয়াও হবে আলাদা। সে ক্ষেত্রে—
বাবার উত্তরাধিকারী হিসেবে পেন তাঁর দলকে মুক্তবাজার অর্থনীতির সমর্থক ও ছোট পরিসরে রাষ্ট্রক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে সংরক্ষণশীল দলে পরিণত করেছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় সব ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে ‘কেবল ফরাসি পণ্য ক্রয়’ নীতি বাস্তবায়ন করতে চান। যারা অন্তত ২০ বছর আগে চাকরি শুরু করেছেন তাঁদের অবসরের ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ৬০ বছরে আনতে চান, ৩০ বছরের কম বয়সীদের আয়কর মওকুফ ও জ্বালানি খাতের ওপর থেকে ভ্যাট ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে চান। লো পেন আগামী ৫ বছরে দেশটির হাসপাতালে কর্মরতদের বেতন বাড়ানোসহ লোকবল বাড়াতে আরও ১০ হাজার জন নিয়োগ দিতে অন্তত ২০০ কোটি ইউরো ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি শিক্ষকদের বেতনও আগামী ৫ বছরে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে প্যারিস ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের (সায়েন্স-পো) রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গিলস ইভালদি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘তাঁর (লো পেন) দলের অর্থনৈতিক কর্মসূচি বিগত কয়েক দশক ধরেই বাম ঘেঁষা।’ এই পর্যবেক্ষণেরই প্রতিধ্বনি করে মুক্তবাজার অর্থনীতির সমালোচনা করে লো পেন একটি টেলিভিশন বিতর্কে মাখোঁর বক্তব্যের জবাবে বলেছিলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি এই গ্রহকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
বিপরীতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাখোঁ তাঁর প্রথম মেয়াদে যেসব প্রতিশ্রুতি এখনো বাস্তবায়নাধীন সেগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি আবার নির্বাচনে জিতলে চাকরিজীবীদের বয়স ৬৩ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছরে নিয়ে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ ছাড়া এক টিভি বিতর্কে জনগণকে তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়ে করারোপ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি কর বাড়াতে চাই না, ঋণের বোঝা বাড়াতে চাই না, এমনকি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যেসব ঋণ রয়েছে তা পরিশোধ করা শুরু করতে চাই এবং আমি চাই আমরা এই বিষয়গুলো এগিয়ে নিতে একত্রে কাজ করি।’
এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনের মতো দেশগুলোর মতো ১৫ / ২০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার শর্তে দেশের বেকার জনশক্তির জন্য বেশ কিছু কল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
তাঁর মধ্যপন্থা অবলম্বনের নীতিতে অটল থাকার লক্ষ্যে তিনি যোগ্যদের জন্য রাষ্ট্রীয় সুবিধাগুলো উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ইউরোপের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ফলে কোন প্রেসিডেন্ট ইউরোপ নিয়ে কী ভাবছেন সেটিও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সে ক্ষেত্রে কট্টর ডানপন্থী নেতা লো পেন জোর দিয়ে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এর একক মুদ্রা ইউরো বা পাসপোর্টবিহীন শেনজেন অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তাঁর দলের কোনো গোপন এজেন্ডা নেই। তবে বিরোধীদের বিশ্বাস—কোভিড মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধের পর অভিবাসন ইস্যু এবং ব্রেক্সিটের পর লো পেনের নীতিগুলো ইউরোপীয় ব্লকের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন না ছাড়ার কথা বললেও পেন বলেছেন, তিনি ইইউ বাজেটে ফরাসি অনুদানের মাত্রা কমিয়ে আনবেন, শেনজেন চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করবেন এবং ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে আমদানির ক্ষেত্রে নতুন করে শুল্কারোপ করবেন। এ ছাড়া লো পেন ইইউয়ের আইনের ওপর ফরাসি আইনের প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চান। ফলে ইউরোপের একীভূতকরণের পরিবর্তে তাঁর চাওয়া হলো—সার্বভৌম দেশগুলোর সহযোগিতার একটি উদার ও নরম সংগঠন হয়ে উঠুক ইইউ।
এ প্রসঙ্গে এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ‘এর মানে হলো—ইইউ এত বছর ধরে যা অর্জন করার চেষ্টা করছে তা সম্পূর্ণরূপে হাওয়া হয়ে যাওয়া।’
বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি নমনীয় মাখোঁ ইউরোপের ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ বাস্তবায়ন করা বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, কৃষি এবং জ্বালানি খাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক। একই সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য শক্তির ওপর থেকে ইইউয়ের নির্ভরশীলতা হ্রাসের জন্য তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানিয়েছেন।
কেবল তাই নয়, মাখোঁ ইইউকে আরও সুরক্ষাবাদী অবস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মারকোসুরের মতো অন্যান্য বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বেশ কিছু মুক্তবাণিজ্য চুক্তিকে আটকে দিয়েছে।
এ ছাড়া, মাখোঁ সম্ভবত মার্কিন টেক জায়ান্টগুলোর ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপর জন্য চাপ দেবেন, এমনকি ফেসবুকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একটি ‘ইউরোপীয় মেটাভার্স’ তৈরির কথাও তিনি বলেছেন।
মাখোঁর আদর্শ অনুসারে, আগামী দিনে প্যারিস-বার্লিন সম্পর্ক ইউরোপের ভবিষ্যৎ গঠনের চাবিকাঠি হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমি ফ্রাঙ্কো-জার্মান একীভূতকরণে বিশ্বাস করি।’
পশ্চিমা জোট নিয়ে দুই প্রার্থীর অবস্থানেও বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করছেন পর্যবেক্ষকেরা। বিশ্বজুড়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সামরিক জোট রয়েছে। সেসব জোট নিয়ে কোন নেতার কী অবস্থান সেটি বুঝতে পারাও পশ্চিমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সেদিক থেকে লো পেন স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য গঠিত ট্রান্স আটলান্টিক সামরিক জোট-ন্যাটোর সমন্বিত কমান্ড থেকে ফ্রান্সকে বের করে আনতে চান। তবে, বিরোধীদের অভিযোগ লো পেন মস্কোর খুব ঘনিষ্ঠ। এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে বিরোধীরা দাবি করেন—লো পেনের দল ২০১৪ সালে একটি রুশ ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছিল এবং ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অল্প আগে ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
মাখোঁ তো লো পেনকে পুতিনের বেতনভোগী হিসেবেও অভিযুক্ত করেছেন। বলেছেন, ‘আপনি যখন রাশিয়ার কথা বলেন তখন আপনি আপনার ব্যাংকারদের (আর্থিক সহায়তাদানকারী) কথা বলেন।’
অপরদিকে লো পেন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করলেও বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে প্যারিস-মস্কো আবার মিত্র হতে পারে। তিনি আরও বলেছেন—তিনি ওয়াশিংটন ও মস্কো উভয়ের থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখার পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবেন।
যদিও মাখোঁ ন্যাটোর পক্ষে কথা বলেন। তবে তিনিও ২০১৯ সালে ন্যাটোকে ‘ব্রেইন ডেড’ বলে অভিহিত করেছিলেন। অবশ্য তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরে ন্যাটোর ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটিকে আবারও জীবিত করার সময় এসেছে।’ তারপরও মাখোঁ ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পক্ষপাতি।
মাখোঁ ইইউকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন। এই মাখোঁই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের একটি বিশাল সাবমেরিন চুক্তি বাতিলের পর ওয়াশিংটন-লন্ডন-ক্যানবেরার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আবার তিনিই চীনের বিরুদ্ধে নতুন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তা জোট অকাসের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
রয়টার্স থেকে ভাষান্তর আব্দুর রহমান
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:
ইউরোপের অন্যতম ক্ষমতাধর ও বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ফ্রান্স। ২৪ এপ্রিল দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় রাউন্ডে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিনই নির্ধারিত হবে আগামী পাঁচ বছর কে থাকবেন এলিসি প্রাসাদে।
এই ঘটনার ওপর নির্ভর করছে বিশ্ব রাজনীতির অনেক হিসাব নিকাশ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফরাসিরা ২৪ এপ্রিলের ভোটে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা ব্যবসাবান্ধব প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে পুনর্নির্বাচিত করবেন নাকি কট্টর ডানপন্থী মারি লো পেনকে ক্ষমতার মসনদে বসাবেন।
এলিসি প্রাসাদে কে যাবেন তার ওপর যখন নির্ভর করছে বিশ্ব রাজনীতির অনেক হিসাব নিকাশ, ফলে বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের এই নেতাদ্বয়ের যে-ই প্রেসিডেন্ট হন তাঁদের কাছে যেসব প্রত্যাশা ঝুলে থাকছে সেগুলো সংক্ষেপে বললে এ রকম—
অর্থনীতি
বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে বড় হিস্যা হলো অর্থনীতি। ফলে এই হিস্যাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্বের এই দুই নেতার মধ্যে যে-ই প্রেসিডেন্ট হন তাঁর মতাদর্শ অনুসারে অর্থনীতি কেন্দ্রিক চাওয়া পাওয়াও হবে আলাদা। সে ক্ষেত্রে—
বাবার উত্তরাধিকারী হিসেবে পেন তাঁর দলকে মুক্তবাজার অর্থনীতির সমর্থক ও ছোট পরিসরে রাষ্ট্রক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে সংরক্ষণশীল দলে পরিণত করেছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় সব ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে ‘কেবল ফরাসি পণ্য ক্রয়’ নীতি বাস্তবায়ন করতে চান। যারা অন্তত ২০ বছর আগে চাকরি শুরু করেছেন তাঁদের অবসরের ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ৬০ বছরে আনতে চান, ৩০ বছরের কম বয়সীদের আয়কর মওকুফ ও জ্বালানি খাতের ওপর থেকে ভ্যাট ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে চান। লো পেন আগামী ৫ বছরে দেশটির হাসপাতালে কর্মরতদের বেতন বাড়ানোসহ লোকবল বাড়াতে আরও ১০ হাজার জন নিয়োগ দিতে অন্তত ২০০ কোটি ইউরো ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি শিক্ষকদের বেতনও আগামী ৫ বছরে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে প্যারিস ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের (সায়েন্স-পো) রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গিলস ইভালদি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘তাঁর (লো পেন) দলের অর্থনৈতিক কর্মসূচি বিগত কয়েক দশক ধরেই বাম ঘেঁষা।’ এই পর্যবেক্ষণেরই প্রতিধ্বনি করে মুক্তবাজার অর্থনীতির সমালোচনা করে লো পেন একটি টেলিভিশন বিতর্কে মাখোঁর বক্তব্যের জবাবে বলেছিলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি এই গ্রহকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
বিপরীতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাখোঁ তাঁর প্রথম মেয়াদে যেসব প্রতিশ্রুতি এখনো বাস্তবায়নাধীন সেগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি আবার নির্বাচনে জিতলে চাকরিজীবীদের বয়স ৬৩ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছরে নিয়ে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ ছাড়া এক টিভি বিতর্কে জনগণকে তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়ে করারোপ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি কর বাড়াতে চাই না, ঋণের বোঝা বাড়াতে চাই না, এমনকি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যেসব ঋণ রয়েছে তা পরিশোধ করা শুরু করতে চাই এবং আমি চাই আমরা এই বিষয়গুলো এগিয়ে নিতে একত্রে কাজ করি।’
এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনের মতো দেশগুলোর মতো ১৫ / ২০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার শর্তে দেশের বেকার জনশক্তির জন্য বেশ কিছু কল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
তাঁর মধ্যপন্থা অবলম্বনের নীতিতে অটল থাকার লক্ষ্যে তিনি যোগ্যদের জন্য রাষ্ট্রীয় সুবিধাগুলো উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ইউরোপের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ফলে কোন প্রেসিডেন্ট ইউরোপ নিয়ে কী ভাবছেন সেটিও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সে ক্ষেত্রে কট্টর ডানপন্থী নেতা লো পেন জোর দিয়ে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এর একক মুদ্রা ইউরো বা পাসপোর্টবিহীন শেনজেন অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তাঁর দলের কোনো গোপন এজেন্ডা নেই। তবে বিরোধীদের বিশ্বাস—কোভিড মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধের পর অভিবাসন ইস্যু এবং ব্রেক্সিটের পর লো পেনের নীতিগুলো ইউরোপীয় ব্লকের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন না ছাড়ার কথা বললেও পেন বলেছেন, তিনি ইইউ বাজেটে ফরাসি অনুদানের মাত্রা কমিয়ে আনবেন, শেনজেন চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করবেন এবং ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে আমদানির ক্ষেত্রে নতুন করে শুল্কারোপ করবেন। এ ছাড়া লো পেন ইইউয়ের আইনের ওপর ফরাসি আইনের প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চান। ফলে ইউরোপের একীভূতকরণের পরিবর্তে তাঁর চাওয়া হলো—সার্বভৌম দেশগুলোর সহযোগিতার একটি উদার ও নরম সংগঠন হয়ে উঠুক ইইউ।
এ প্রসঙ্গে এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ‘এর মানে হলো—ইইউ এত বছর ধরে যা অর্জন করার চেষ্টা করছে তা সম্পূর্ণরূপে হাওয়া হয়ে যাওয়া।’
বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি নমনীয় মাখোঁ ইউরোপের ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ বাস্তবায়ন করা বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, কৃষি এবং জ্বালানি খাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক। একই সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য শক্তির ওপর থেকে ইইউয়ের নির্ভরশীলতা হ্রাসের জন্য তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানিয়েছেন।
কেবল তাই নয়, মাখোঁ ইইউকে আরও সুরক্ষাবাদী অবস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য জোট মারকোসুরের মতো অন্যান্য বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বেশ কিছু মুক্তবাণিজ্য চুক্তিকে আটকে দিয়েছে।
এ ছাড়া, মাখোঁ সম্ভবত মার্কিন টেক জায়ান্টগুলোর ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপর জন্য চাপ দেবেন, এমনকি ফেসবুকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একটি ‘ইউরোপীয় মেটাভার্স’ তৈরির কথাও তিনি বলেছেন।
মাখোঁর আদর্শ অনুসারে, আগামী দিনে প্যারিস-বার্লিন সম্পর্ক ইউরোপের ভবিষ্যৎ গঠনের চাবিকাঠি হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমি ফ্রাঙ্কো-জার্মান একীভূতকরণে বিশ্বাস করি।’
পশ্চিমা জোট নিয়ে দুই প্রার্থীর অবস্থানেও বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করছেন পর্যবেক্ষকেরা। বিশ্বজুড়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সামরিক জোট রয়েছে। সেসব জোট নিয়ে কোন নেতার কী অবস্থান সেটি বুঝতে পারাও পশ্চিমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সেদিক থেকে লো পেন স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য গঠিত ট্রান্স আটলান্টিক সামরিক জোট-ন্যাটোর সমন্বিত কমান্ড থেকে ফ্রান্সকে বের করে আনতে চান। তবে, বিরোধীদের অভিযোগ লো পেন মস্কোর খুব ঘনিষ্ঠ। এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে বিরোধীরা দাবি করেন—লো পেনের দল ২০১৪ সালে একটি রুশ ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছিল এবং ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অল্প আগে ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
মাখোঁ তো লো পেনকে পুতিনের বেতনভোগী হিসেবেও অভিযুক্ত করেছেন। বলেছেন, ‘আপনি যখন রাশিয়ার কথা বলেন তখন আপনি আপনার ব্যাংকারদের (আর্থিক সহায়তাদানকারী) কথা বলেন।’
অপরদিকে লো পেন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করলেও বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে প্যারিস-মস্কো আবার মিত্র হতে পারে। তিনি আরও বলেছেন—তিনি ওয়াশিংটন ও মস্কো উভয়ের থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখার পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবেন।
যদিও মাখোঁ ন্যাটোর পক্ষে কথা বলেন। তবে তিনিও ২০১৯ সালে ন্যাটোকে ‘ব্রেইন ডেড’ বলে অভিহিত করেছিলেন। অবশ্য তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরে ন্যাটোর ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটিকে আবারও জীবিত করার সময় এসেছে।’ তারপরও মাখোঁ ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পক্ষপাতি।
মাখোঁ ইইউকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন। এই মাখোঁই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের একটি বিশাল সাবমেরিন চুক্তি বাতিলের পর ওয়াশিংটন-লন্ডন-ক্যানবেরার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আবার তিনিই চীনের বিরুদ্ধে নতুন যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তা জোট অকাসের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
রয়টার্স থেকে ভাষান্তর আব্দুর রহমান
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৩ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৭ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৯ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
১০ দিন আগে